X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থনৈতিক দুর্দশা ঘোচাতে গাঁজা চাষের বৈধতা দিতে যাচ্ছে লেবানন

বিদেশ ডেস্ক
০৯ আগস্ট ২০১৮, ১৯:৩৯আপডেট : ০৯ আগস্ট ২০১৮, ১৯:৪৪

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে লেবাননের ওপর। বিপন্নতার মধ্যে পড়েছে দেশটির কৃষি। এক সময় মধ্যপ্রাচ্যের রুটির ঝুড়ি হিসেবে খ্যাত দেশটির কৃষকরা বর্তমানে পরিবর্তিত জলবায়ুর সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে গাঁজা চাষকেই অর্থনৈতিক দুর্দশা ঘোচানোর উপায় করেছেন। খরাপ্রবণ আবহাওয়া আর অপেক্ষাকৃত কম পানিতে এর চাষ সম্ভব বলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় গাঁজাকে বৈধতা দেওয়ার কথা ভাছে দেশটির সরকার। তবে যেহেতু এখনও গাজা চাষ বৈধতা পায়নি, সেহেতু চাষিদের একটু সতর্ক হয়ে চলতে হয়। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন লিখেছে, ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ দেশটিতে প্রভাবশালী হলেও তারা গাঁজা চাষের বিরুদ্ধে কিছু বলে না। অর্থনীতির বিশ্লেষকরাও গাঁজার বৈধতাকে সেখানকার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথ হিসেবে দেখছেন। অর্থনৈতিক দুর্দশা ঘোচাতে গাঁজা চাষের বৈধতা দিতে যাচ্ছে লেবানন
আবু সালিম নামে এক ব্যক্তির গাঁজা ক্ষেত সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন সিএনএন-এর প্রতিবেদক। জানিয়েছেন, ওই ক্ষেতটি তিনটি ফুটবল মাঠের সমান। এখনও ফসল কাটার সময় আসেনি। তবে গাঁজা চাষিদের জন্য ভালো খবর হচ্ছে, দেশটি চিকিৎসার কাজে ব্যবহার্য হিসেবে গাঁজার ব্যবহার বৈধ করে দেওয়ার চিন্তা করছে। আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ম্যাককিনজে তাদেরকে এই পরামর্শ দিয়েছে। লেবাননের অর্থমন্ত্রী রাইদ খৌরি বলেছেন, গাঁজা চাষ বৈধতা পেয়ে গেলে ৮০০ কোটি ডলারের বিশাল এক শিল্পের জন্য নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে দেশটিতে। এতে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও কিছুটা ভালো হবে। তিনি সিএনএনকে বলেছেন, ‘অনেক বিশেষজ্ঞ এই গাঁজার মান পরীক্ষা করে দেখেছেন। তারা সবাই বলেছেন এই গাঁজাই পৃথিবীর সেরা। গাঁজা রফতানি করে লেবানন বছরে ৪০ থেকে ৮০ কোটি ডলার আয় করতে পারে।’
লেবাননের কৃষকরা জানিয়েছেন, মাউন্ট লেবানন ও সিরিয়ার মাঝখানে থাকা যে বেকা উপত্যকায় ফসলের চাষ হয়, তা খরায় আক্রান্ত। সেখানকার কুয়াগুলো পর্যন্ত শুকিয়ে যাচ্ছে। আলু ও রসুনের মতো ফসলগুলো এখন ওই এলাকায় চাষ করা যেকোনও সময়ের তুলনায় অনেক বেশি কঠিন। কিন্তু গাঁজা চাষে সমস্যা নেই। খরাতে গাঁজা চাষের সমস্যা হয় না। এতে পানি খুবই কম লাগে। আর কীটনাশক তো একেবারেই লাগে না। গাঁজা চাষের বৈধতাই তাদের প্রত্যাশা, গাঁজা চাষ ছেড়ে দেওয়ার আশা খুবই দূরবর্তী একটি বিষয় তাদের কাছে।
বেঁকা উপত্যকার কৃষকরা আলুর বদলে গাঁজা চাষ করলেও গাঁজার ব্যবসায় ‘আলু’ শব্দটি বিদ্যমান! স্থানীয় কৃষকরা গাঁজার নাম দিয়েছে আলু! সিএনএনের সামনেই এক কৃষক আবু সালিমকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আলু বৈধ করে দেওয়ার বিষয়টির খবর কী? জবাবে আবু সালিম জানিয়েছেন, ‘খবর ভালো!’ অপর কৃষক তখন বলেছিলেন, ‘তারা যদি এটা বৈধ করে না দেয় তাহলে আমাদের আর কোনও পথ থাকবে না।’
বেকাতে গাঁজার ইতিহাস অনেক পুরাতন। আবু সালিম এমন কি এটাও বলেছেন, তার দাদা না কি একবার প্রাচীন ফোনেশিয়ান শহরেরে ধ্বংসাবশেষের মধ্যে গাঁজা ফুলের শিল্পকর্ম পেয়েছেন। গাঁজার খ্যাতি লেবাননেই নয়, তার খ্যাতি ছড়িয়ে আছে ইউরোপেও। আমসটারডামের কফির দোকানগুলোতে থাকা মেন্যুতে প্রায় অবধারিত একটি পদ হচ্ছে ‘লেবাননের সোনা’ নামে পরিচিত গাঁজা। এর মূল চিত্তপ্রভাবক উপাদান টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনোল (টিএইচএস) আবিষ্কার হয়েছিল ১৯৬৪ সালে লেবানন থেকে যাওয়া হাশিশের চালান থেকেই। ওই আবিষ্কারের পর চিকিৎসার কাজে গাঁজার বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করার বিষয়টি নতুন মাত্রা পায়।
লেবাননের সরকারি কর্মকর্তারা মনে করেন, গাঁজাকে বৈধতা দিলে রফতানি আয় বাড়বে। আর তা সহায়তা করবে লেবাননের দুর্বল অর্থনীতিকে উঠে দাঁড়াতে। দেশটির মোট দেশজ উৎপাদন ও ঋণের অনুপাত এখন বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ। অবকাঠামোগত দিক থেকেও দেশটি পিছিয়ে রয়েছে। দিন দিন বাড়ছে বেকারত্ব। সংশ্লিষ্টরা তাই মনে করছেন, লেবানন যদি গাঁজা চাষকে বৈধ করে দেয় তাহলে তা দেশটির অর্থনীতির উন্নতিতে ভূমিকা রাখতে পারবে।
আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বৈরুতের গাঁজা বিষয়ক অধ্যাপক মুস্তাফা হায়দার মন্তব্য করেছেন, ‘বেকা উপত্যকার মানুষ গাঁজা চাষ করতে পারে। তাদের বিপণন কৌশল হয়তো ভালো নয় কিন্তু সরকার যদি চিকিৎসার কাজে গাঁজার ব্যবহারকে অনুমোদন দেয় তাহলে সেটা তো ভালোই।’
লেবাননের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গাঁজা চাষের বিষয়ে খুব সহসা গাঁজা চাষিদের বিরুদ্ধে কও ব্যবস্থা নেয় না। তবে এখনও যেহেতু আইনত বৈধ নয়, সেহেতু গাঁজা চাষিরা চাষিরা একটু সতর্ক হয়ে চলে। লেবাননের হেজবুল্লাহকে গাঁজা চাষের বিরুদ্ধে কোন বাধা দিতে দেখা যায় না। বরং অনেক গাঁজা চাষি হেজবুল্লাহর সমর্থক। হেজবুল্লাহ খোলাখুলি গাঁজা চাষকে সমর্থন না করলেও তাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক সহযোগী হাউজ স্পিকার নাবিহ বেরি গত মাসে গাঁজা চাষের পক্ষে সমর্থন দিয়েছেন।
হায়দার নামের স্থানীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, ‘গাঁজা চাষে মুনাফা অনেক বেশি। আলু ও রসুনের মতো ফসলের তুলানায় গাঁজা চাষে অন্তত তিনগুন বেশি লাভ হয়। কেউ এর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারবে না। এমন কি হেজবুল্লাহও নয়। যদি তারা গাঁজা চাষে বাধা দেয় তাহলে বরং তাদের বিরুদ্ধেই অভ্যুত্থান হয়ে যাবে।’
গাঁজা চাষ বৈধ করতে দেশটির রাজনীতিবিদদের নিয়ে নিজের পর্যবেক্ষণ জানিয়েছেন ব্লগার ও গাঁজা বৈধকরণ আন্দোলনের কর্মী জিনো রেইদি। তার ভাষ্য, ম্যাককিনজে যে অর্থনৈতিক প্রতিবেদনে গাঁজা বৈধ করে দেওয়ার কথা উল্লেখ করেছে, লেবাননের রাজনীতিবিদরা সেটার পেছেনে আশ্রয় নিয়েছেন। তারা কেউ খোলাখুলি গাঁজা চাষে সমর্থন দিতে পারছিলেন না বলে এখন ওই প্রতিবেদনের দোহাই দিয়ে গাঁজা চাষ বৈধকরণের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। রাইদির ভাষ্য, ‘তারা সবাই এর বৈধতা দিয়ে দিতে চান। কিন্তু রক্ষণশীলতার জন্য পারছেন না। পরিস্থিতি অবশ্য কিছুটা পাল্টেছে। দশ বছর আগে হাশিশ নিয়ে কৌতুক বলাটাও সমস্যার বিষয় ছিল।’ গাঁজা চাষের বৈধতা দানের সমর্থকরা গাঁজার ঐতিহাসিক ব্যহারের কথা তুলে ধরে বলেন, ১৯২৩ সালে যখন লেবানন ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করছিল তখনও গাঁজা বিনিময়ের মাধ্যম, অর্থাৎ মুদ্রা হিসেবে ব্যবহৃত হতো!
এখনও লেবানন গাঁজা চাষকে বৈধতা দেয়নি। সুতরাং আবু সালিমের মতো কৃষকরা ঝুঁকিতে থেকেই যাবেন। তবু তারা গাঁজা চাষ করবেন, গাছের যত্ন নেবেন আর সময় হলে ঘরে তুলবেন ফসল। আবু সালিম মন্তব্য করেছেন, ‘গাঁজাচাষী সব সময়ই অর্থ আয় করে!’

/এএমএ/বিএ/
সম্পর্কিত
চুক্তি হোক বা না হোক রাফাহতে ইসরায়েলি অভিযান চলবে: নেতানিয়াহু
হামাসকে ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মেনে নেওয়ার আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
গাজায় যুদ্ধবিরতি নাকি রাফাহতে হামলারাজনৈতিক সংশয়ের মুখোমুখি নেতানিয়াহু
সর্বশেষ খবর
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
কোরিওগ্রাফার ইভানের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন ২৩ মে
কোরিওগ্রাফার ইভানের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন ২৩ মে
শহর থেকে গ্রামে ফেরা মানুষের সংখ্যা দুই বছরে দ্বিগুণ
শহর থেকে গ্রামে ফেরা মানুষের সংখ্যা দুই বছরে দ্বিগুণ
টানা দ্বিতীয় জয়ের খোঁজে সন্ধ্যায় মাঠে নামছে বাংলাদেশ
টানা দ্বিতীয় জয়ের খোঁজে সন্ধ্যায় মাঠে নামছে বাংলাদেশ
সর্বাধিক পঠিত
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি