X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১
খাশোগি হত্যা

কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া সৌদি ‘টাইগার স্কোয়াড’র অজানা কথা

বিদেশ ডেস্ক
২২ অক্টোবর ২০১৮, ২৩:৫৩আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০১৮, ১৭:২৬

তুরস্কের ইস্তানবুলে জামাল খাশোগিকে হত্যা করেছে সৌদি আরবের ১৫ সদস্যের একটি ডেথ স্কোয়াড। তবে খাশোগি এই স্কোয়াডের প্রথম শিকার নন এবং এটি পরিচালিত হয় প্রভাবশালী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের (এমবিএস) নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে। এই ডেথ স্কোয়াডের নাম টাইগার স্কোয়াড, আরবিতে ফিরকাত এল-নেমর। সৌদি আরবের গোয়েন্দা সংস্থা সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রের বরাত দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক সংবাদমাধ্যম মিডলইস্ট আই এসব তথ্য জানিয়েছে।

খাশোগি হত্যায় প্রতিবাদ

এই টাইগার স্কোয়াড সম্পর্কে বেশ ভালোভাবেই জানে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এক বছর আগে এই স্কোয়াড গঠন করা হয়। সৌদি আরবের বিভিন্ন গোয়েন্দা ও সামরিক সংস্থার দক্ষ ও বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্ন ৫০ জন সদস্যকে নিয়ে গঠিত হয়েছে স্কোয়াডটি। এদের প্রত্যেকেই যুবরাজের প্রতি অনুগত। 

সূত্রটি জানায়, এই টাইগার স্কোয়াডের প্রধান কাজ হচ্ছে গোপনে সৌদি আরবের ভেতরে ও বাইরে ভিন্নমতাবলম্বীদের হত্যা করা। এমনভাবে হত্যা করা যেন তা সংবাদমাধ্যম, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও রাজনীতিবিদদের মনোযোগ আকর্ষণ না করে। সৌদি নেতৃত্ব বিশ্বাস করে, সমালোচকদের গ্রেফতার করলে তাদের ওপর চাপ বাড়বে। তাই তারা গোপনে ভিন্নমতাবলম্বীদের হত্যা শুরু করেছে। টাইগার স্কোয়াড বিভিন্ন উপায়ে হত্যা করে। তবে মাঝে মাঝেই কদর্য আকার ধারণ করে। যেমনটা হয়েছে খাশোগির ক্ষেত্রে।

বিভিন্ন গোয়েন্দা ও সামরিক সংস্থার দক্ষ ও বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্ন ৫০ জনকে নিয়ে স্কোয়াডটি গঠিত

সূত্রটি জানায়, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হত্যার পরিকল্পনা করা হয় যাতে নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছাকাছি যেতে না হয়। আর তা যেন দুর্ঘটনা হিসেবে দেখা যায়। যেমন- গাড়ি দুর্ঘটনা বা বাড়িতে অগ্নিসংযোগ। টাইগার স্কোয়াড একবার এক ভিন্নমতাবলম্বীকে ভয়ঙ্কর ভাইরাস শরীরে ঢুকিয়ে হত্যা করেছে। হাসপাতালে নিয়মিত চেকআপের সময় এই ভাইরাস তার শরীরে প্রবেশ করানো হয়েছিল।

ব্যাপক আন্তর্জাতিক চাপের মুখে শনিবার খাশোগি কনস্যুলেটে নিহত হয়েছেন বলে স্বীকার করে সৌদি আরব এবং সৌদি গোয়েন্দা সংস্থার উপ-প্রধান মেজর জেনারেল আসিরিকে এই হত্যায় দায়ী করে বরখাস্ত করা হয়েছে। সৌদি সূত্রটি জানায়, সহকর্মীদের মধ্যে জেনারেল আসিরি ‘দক্ষিণের বাঘ’ (টাইগার অব দ্য সাউথ) বলে সুপরিচিত। ইয়েমেনে সৌদি জোটের যুদ্ধ শুরু হওয়ার হওয়ার পর সৌদি সংবাদমাধ্যমে আসিরিকে ‘জানোয়ার’ আখ্যায়িত করা হয়। আসিরিও এই ডাকনাম পছন্দ করতেন।

টাইগার স্কোয়াড কীভাবে নির্দেশনা পায় তা জানা নেই বলে জানিয়েছে সূত্রটি। তবে জানিয়েছে, আসিরি ও যুবরাজের ঘনিষ্ঠ সৌদ আল-কাহতানি স্কোয়াডটির কমান্ড কাঠামোতে রয়েছেন। কাহতানিকেও শনিবার বরখাস্ত করা হয়েছে। যুবরাজ তার একেবারে অনুগত ও বিশ্বস্ত পাঁচ দেহরক্ষীকে এই টাইগার স্কোয়াডে রেখেছেন। এদের মধ্যে তিনজন খাশোগি হত্যায় ইস্তানবুলে কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া ১৫ জনের মধ্যে ছিলেন। তারা হলেন, মাহের আব্দুলআজিজ মুতরিব, মোহাম্মদ আল-জাহরানি ও ডার আল-হারিবি।

মাহের আব্দুলআজিজ মুতরিব

মুতরিব একজন কূটনীতিক ও মেজর জেনারেল। তিনি এই বছরের শুরুতে যুবরাজের বোস্টন, হউস্টন ও নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সফরে সঙ্গে ছিলেন। মুতরিবকে টাইগার স্কোয়াডের মেরুদণ্ড বলে আখ্যায়িত করেছে সূত্রটি। জানায়, তাকে এমবিএস নিজেই করেছেন। মুতরিবের ওপর নির্ভরশীল ও ঘনিষ্ঠ যুবরাজ। নিজের কাছের দেহরক্ষীদের এই স্কোয়াডে নির্বাচন করেছেন যুবরাজ, যাতে তারা সরাসরি যোগাযোগের মধ্যে থাকে এবং হত্যাকাণ্ড তদারকি করতে পারেন।

সূত্রটি জানায়, ২ অক্টোবর মুতরিবের অন্তত ১৪টি ফোনকল আড়ি পেতে শুনেছে তুরস্ক। এই ১৪টির মধ্যে অন্তত সাতটি ফোনকল করা হয়েছে যুবরাজের কার্যালয়ে। তবে এই ফোনকল খাশোগি হত্যা সংশ্লিষ্ট কিনা তা স্পষ্ট করেনি সূত্রটি। তবে জানিয়েছে, যদি তুর্কি কর্তৃপক্ষ এসব ফোনকলের কথোপকথন ফাঁস করে তাহলে তা হবে একেবারে ‘বিস্ফোরক’ তথ্য। এই সূত্রের মতে, খাশোগির শরীরে ভয়ঙ্কর মাদক ইনজেকশন পুশ করেন মুতরিব। এরপর কনস্যুলেটের একটি টেবিলে তার শরীর টুকরো টুকরো করা হয়।

মিডলইস্ট আই জানায়, সূত্রটি যা জানিয়েছে তাতে ধারণা করা হচ্ছে মরফিন দেওয়া হয় খাশোগিকে। তুর্কি তদন্তকারীরাও জানিয়েছেন, একটি টেবিলে খাশোগিকে টুকরো করা হয়।

খাশোগি হত্যায় অংশ নেওয়া যুবরাজের দেহরক্ষীদের কয়েকজন

এদিকে, তুর্কি সংবাদপত্র ইয়েনি সাফাক সোমবার জানিয়েছে, খাশোগিকে হত্যার আগে যুবরাজের সঙ্গে কথা বলেছেন মুতরিব। অন্যান্য তুর্কি সংবাদমাধ্যমও খাশোগি তদন্তের বিভিন্ন তথ্য ফাঁস করে চলেছে। ইয়েনি সাফাক জানায়, খাশোগিকে যখন হত্যা করা হয় তখন যুবরাজের ব্যক্তিগত কার্যালয়ের প্রধানের সঙ্গে অন্তত চারবার ফোনে কথা বলেছেন মুতরিব।

টাইগার স্কোয়াডের প্রথমদিকের গোপন কিলিং অপারেশনগুলোর একটি পরিচালনা করা হয় সৌদি সীমান্তের কাছে। গত বছর নভেম্বরে সাবেক যুবরাজ ও আসির প্রদেশের ডেপুটি গভর্নর প্রিন্স মনসুর বিন মকরিনকে হত্যা করে স্কোয়াডটি। প্রিন্স মনসুর সৌদি যুবরাজের বিরোধিতাকারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সৌদি আরবের ইয়েমেন সীমান্তে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হন তিনি। প্রিন্স মনসুর দেশ ছেড়ে পালাতে চেয়েছিলেন। ৪ নভেম্বর সৌদিতে রাজপরিবারে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নিহত হন তিনি।

সূত্রটি জানায়, খাশোগি হত্যায় ১৫ সদস্যের একজন ও টাইগার স্কোয়াডের সদস্য মেশাল সাদ আল-বোস্তানি জড়িত প্রিন্স মনসুরের হত্যাকাণ্ডে। সূত্রমতে, সৌদি আরবের রয়্যাল এয়ারফোর্সের লেফটেন্যান্ট বোস্তানি। আরেকটি হেলিকপ্টার থেকে মিসাইল নিক্ষেপ করে প্রিন্স মনসুরের হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত করেন তিনি। তাকে হত্যা করা হয়েছে একেবারে স্বাভাবিক দুর্ঘটনার মতো করেই।

সৌদি আরবের রয়্যাল এয়ার ফোর্সের লেফটেন্যান্ট বোস্তানি

৩১ বছরের বোস্তানি ১৮ অক্টোবর রিয়াদে কার দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন খবর বেরিয়েছে। তবে সূত্রটি এ বিষয়ে জানায়, এটা মিথ্যা। তাকে একটি কারাগারে বন্দি করা হয়েছিল এবং তার খাবারে বিষ দেওয়া হয়। প্রিন্স মনসুর ও খাশোগি হত্যার গোপন বিষয় জানতেন বোস্তানি।

টাইগার স্কোয়াডের আরেকটি গোপন হত্যাকাণ্ড পরিচালিত হয় সৌদি আরবের ভেতরেই। তারা মক্কার সরকারি আদালতের প্রেসিডেন্ট, বিচারক শেখ সুলাইমান আব্দুল রহমান আল থুনিয়ানকে ১ অক্টোবর রিয়াদের একটি হাসপাতালে হত্যা করে। সূত্রটি জানায়, তাকে প্রাণঘাতী ভাইরাস শরীরে ঢুকিয়ে হত্যা করা হয়েছে নিয়মিত মেডিক্যাল চেকআপের সময়। স্কোয়াডটি জানতো হাসপাতালে যাবেন শেখ এবং তার মৃত্যু স্বাভাবিক হিসেবে ঘটানো হয়েছে। যুবরাজের ভিশন ২০৩০-এর বিরোধিতা করে একটি চিঠি দিয়েছিলেন এই বিচারক। টাইগার স্কোয়াড ভিন্নমতাবলম্বীদের হত্যায় এইচআইভি বা অন্যান্য প্রাণঘাতী ভাইরাস ব্যবহার করে।

 মিডলইস্ট আই আল থুনিয়ানের অসুস্থতার কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি।

খাশোগি হত্যায় অংশ নেওয়া ডেথ স্কোয়াডের ১৫ সদস্য

সৌদি সূত্রটি জানায়, তার জানামতে বিদেশের মাটিতে খাশোগিকে হত্যাই টাইগার স্কোয়াডের প্রথম অভিযান। তবে বিদেশে স্কোয়াডটি এর আগেও বেশ কয়েকটি হত্যার উদ্যোগ নিয়েছিল। সূত্রের ভাষ্য, একটি অভিযানের কথা জানি আমি। কানাডায় সৌদি ভিন্নমতাবলম্বী ওমর আব্দুলআজিজকে কনস্যুলেটে হত্যা করতে চেয়েছিল। কিন্তু তিনি সেখানে অস্বীকৃতি জানান এবং অভিযানটি ব্যর্থ হয়।

এর আগে বিভিন্ন খবরে জানা গেছে কীভাবে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সফটওয়্যার দিয়ে আব্দুলআজিজকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে সৌদি আরব।

সূত্রটি জানায়, কিলিং মিশন যে সফল হয়েছে তা প্রমাণ করতে টাইগার স্কোয়াডের সদস্যরা খাশোগির একটি আঙুল সৌদি আরবে নিয়ে আসে। আঙুলটি সৌদি আরবের যুবরাজের কাছে উপস্থাপন করা হয়। এমবিএস সর্বদাই বলে থাকেন, যেসব লেখক তার সমালোচনা করবেন তাদের আঙুল তিনি কেটে ফেলবেন।

 

/এএ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
চুক্তি হোক বা না হোক রাফাহতে ইসরায়েলি অভিযান চলবে: নেতানিয়াহু
হামাসকে ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মেনে নেওয়ার আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
গাজায় যুদ্ধবিরতি নাকি রাফাহতে হামলারাজনৈতিক সংশয়ের মুখোমুখি নেতানিয়াহু
সর্বশেষ খবর
স্থানীয়ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি দেবে বিশেষ কমিটি, হবে নীতিমালা
স্থানীয়ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি দেবে বিশেষ কমিটি, হবে নীতিমালা
বঁটির কোপে দুই বছরের শিশুর মাথা বিচ্ছিন্ন, চাচি আটক
বঁটির কোপে দুই বছরের শিশুর মাথা বিচ্ছিন্ন, চাচি আটক
আইনে স্বীকৃত অনেক অবিচার এখনও আছে: এম এ মান্নান
আইনে স্বীকৃত অনেক অবিচার এখনও আছে: এম এ মান্নান
অফিস টাইমে চিকিৎসক প্রাইভেট প্র্যাকটিসে থাকলে ব্যবস্থা
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারিঅফিস টাইমে চিকিৎসক প্রাইভেট প্র্যাকটিসে থাকলে ব্যবস্থা
সর্বাধিক পঠিত
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
ট্রাকের চাকায় পিষে দেওয়া হলো ৬ হাজার কেজি আম
ট্রাকের চাকায় পিষে দেওয়া হলো ৬ হাজার কেজি আম
বেতন বৈষম্যে উচ্চশিক্ষার মান হারাচ্ছে বেসরকারি কলেজগুলো
বেতন বৈষম্যে উচ্চশিক্ষার মান হারাচ্ছে বেসরকারি কলেজগুলো
সিএনজির রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম চালু করতে বিআরটিএ অফিস ঘেরাও
সিএনজির রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম চালু করতে বিআরটিএ অফিস ঘেরাও
সিস্টেম লস কমাতে সার্বক্ষণিক ম্যাজিস্ট্রেট চায় পেট্রোবাংলা
সিস্টেম লস কমাতে সার্বক্ষণিক ম্যাজিস্ট্রেট চায় পেট্রোবাংলা