গাজা এবং লেবাননে চলমান সংঘাত আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় ইরাক সরকার ইরানপন্থি শক্তিশালী গোষ্ঠীগুলোর লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা করছে। এর ফলে আঞ্চলিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়গার ঝুঁকি রয়েছে ইরাকের। সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম আরব নিউজ এ নিয়ে এক বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
ইরাকে ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর একটি শিথিল জোট ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স ইন ইরাক। সম্প্রতি এই দলটি ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি ড্রোন হামলার দাবি করেছে। তারা বলছে, এসব হামলা গাজার ফিলিস্তিনি মিত্র হামাসকে সমর্থন জানিয়ে চালানো হয়েছে।
যদিও বেশিরভাগ হামলা প্রতিহত করা হয়েছে। তবে ইসরায়েল দাবি করেছে, গত সপ্তাহে ইরাক থেকে নিক্ষেপ করা ড্রোন হামলায় তাদের দুই সেনা নিহত হয়েছে।
পরের দিন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক ভাষণে বলেছিলেন, তার দেশ সাতটি ফ্রন্টে আত্মরক্ষা করছে। আর এই সাতটি ফ্রন্টের মধ্যে ইরাকের শিয়া গোষ্ঠীগুলোও রয়েছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ হঠাৎ অন্যদিকে মোড় নেয় গত সেপ্টেম্বরে। ওই সময় ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে আক্রমণ বৃদ্ধি করে ইসরায়েল এবং দক্ষিণ লেবাননে স্থল সেনা প্রেরণ করে।
এর ফলে ইরান গত ১ অক্টোবর ইসরায়েলে দ্বিতীয়বারের মতো ২০০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এর প্রতিশোধের প্রতিশ্রুতি দেয় ইসরায়েল। ফলে আঞ্চলিক যুদ্ধের সতর্কতা বাড়তে থাকে।
এমন পরিস্থিতিতে ইরানপন্থি সমন্বয় কাঠামো (কোঅর্ডিনেশন ফ্রেমওয়ার্ক) দ্বারা পরিচালিত ইরাক সরকারের পক্ষে এই সংঘাতের বিস্তৃতি থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখা কঠিন হতে পারে। যদিও দশকের পর দশক ধরে যুদ্ধ ও সংকটে বিধ্বস্ত ইরাক চায় এই সহিংসতা তাদের দেশে ছড়িয়ে না পড়ুক।
আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বাড়াতে মধ্যপ্রাচ্য সফররত ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ আব্বাস আরাগাছি রবিবার বাগদাদে ইরাকের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুয়াদ হুসেইনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের প্রথম বছরে ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানি বলেন, এই অঞ্চলকে বিধ্বংসী এই যুদ্ধের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। তার সরকার বড় প্রচেষ্টা চালিয়েছে যাতে ইরাক সংঘাতের হাত থেকে বাঁচতে পারে।
তবে ইরাকি রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাজাদ জিয়াদ বলেন, বাগদাদ বুঝতে পেরেছে যে তারা নিজেদের এলাকায় ঘটনার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না এবং তারা দেশের বাইরে থেকে আসা কোনও প্রতিক্রিয়া প্রতিরোধও করতে পারবে না।
একটি সূত্র জানিয়েছে, ইরাকের ইরানপন্থি গোষ্ঠীগুলোর কর্মকর্তারা সম্প্রতি কিছু সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। ইরাকি সশস্ত্র গোষ্ঠী কাতাইব হিজবুল্লাহর মহাসচিব আহমাদ আল-হামিদাভি বলেছেন, তারা ইসরায়েলের কেন্দ্রস্থলে নির্ভুল হামলা চালিয়ে যাবে।
ইরাকের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা কাসিম আল-আরাজি ইরাকি টেলিভিশন চ্যানেল আল-রাবিয়াকে বলেন, সরকারই একমাত্র যুদ্ধ ও শান্তির সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রাখে এবং ইরাক এমন কোনও যুদ্ধে প্রবেশ করতে চায় না যা ভয়াবহ পরিণতি নিয়ে আসতে পারে।
তবে নিউ ইয়র্ক-ভিত্তিক সেঞ্চুরি ইন্টারন্যাশনাল থিংক ট্যাংকের ফেলো জিয়াদ বলেন, শেষ পর্যন্ত এটি ইরাকের ওপর নির্ভর করবে না যে তারা যুদ্ধে জড়াবে কিনা।
ইসরায়েল যদি ইরাকের আকাশসীমা ব্যবহার করে ইরানের ওপর হামলা চালায় তাহলে বাগদাদে মার্কিন ঘাঁটিকে লক্ষ্যবস্তু করার হুমকি দিয়েছে ইসরায়েলি হামলার মুখে ইরাকি প্রতিরোধ সমন্বয় কমিটি
অবশ্য ইরাকি সামরিক বিশেষজ্ঞ মুনকিথ দাগের বলেন, ইরানের মিত্র গোষ্ঠীগুলো জানে,ইসরায়েলের গোয়েন্দা ও সামরিক দক্ষতা অনেক বেশি। ফলে ইসরায়েলের সঙ্গে কোনও ধরনের সংঘাতই সমান লড়াই হবে না।তার মতে, ইরাকে গোষ্ঠীগুলো তাদের সামরিক সক্ষমতার সীমা জানে। তাই এটি হবে একটি অজুহাতের যুদ্ধ।