গাজা উপত্যকার রাফাহ শহরের তেল আল-সুলতান এলাকায় একটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের আশপাশে গুলিবর্ষণের ঘটনায় অন্তত ছয় ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৯৯ জন আহত হয়েছেন। গাজায় হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) পরিচালিত একটি ত্রাণকেন্দ্রের দিকে যাওয়ার সময় ফিলিস্তিনি বন্দুকধারী ও ইসরায়েলি সেনারা গুলি চালায়। এই প্রথমবারের মতো ওই এলাকায় ফিলিস্তিনি বন্দুকধারীদের গুলির ঘটনা ঘটলো বলে জানান তারা।
এক প্রত্যক্ষদর্শী হিশাম সাঈদ সালেম বলেন, আমরা ভেবেছিলাম, ওরা স্থানীয় যুবক, যারা সাহায্যের কাজে সাহায্য করছে। কিন্তু হঠাৎ করেই ওরা আমাদের দিকে গুলি চালানো শুরু করে। যারা ত্রাণ নিতে পেরেছিল, তাদেরও লক্ষ্য করা হয়।
মোহাম্মদ সাকুত নামে অপর একজন বলেন, আমার পাশেই কয়েকজন যুবক নিহত হয়। গুলি আমার মাথার একদম পাশ দিয়ে চলে যায়। আমরা প্রথমে ভাবছিলাম শুধু ইসরায়েলি বাহিনী গুলি করছে, কিন্তু আজ দেখতে পেলাম সশস্ত্র গ্যাং ও মিলিশিয়া জড়িত।
রাফাহের নিকটবর্তী খান ইউনুসের নাসের হাসপাতালের চিকিৎসাধীন আহত মোহাম্মদ কাবাগা জানান, আমরা লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ একদল মুখোশ পরা অস্ত্রধারী আমাদের দিকে গুলি ছোড়ে। গুলিতে আমার ঘাড়ে আঘাত লাগে।
ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখছে।
তবে জিএইচএফ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সোমবার তেল আল-সুলতান ত্রাণকেন্দ্র খোলা হয়নি এবং রাফাহর সৌদি পাড়া ও মধ্যাঞ্চলের ওয়াদি গাজায় ত্রাণ বিতরণ নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়েছে।
তবে সংগঠনের ফেসবুক পেজে জানানো হয়েছে, তেল আল-সুলতান কেন্দ্র জনতার বিশৃঙ্খলার কারণে বন্ধ রাখা হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ মে থেকে জিএইচএফ গাজায় ত্রাণ বিতরণ শুরু করার পর প্রায় প্রতিদিনই কোনও না কোনও কেন্দ্রে প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। শুধু তেল আল-সুলতান এলাকার একটি কেন্দ্রে ইসরায়েলি সামরিক এলাকার মধ্য দিয়ে প্রবেশ করতে গিয়ে বহু মানুষ নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি স্বীকার করেছেন, হামাসবিরোধী কিছু ফিলিস্তিনি গোত্রকে তারা অস্ত্র দিচ্ছেন। এই ঘটনার পর সন্দেহ বাড়ছে যে, গুলিবর্ষণে জড়িত বন্দুকধারীরা ওই গোষ্ঠীর সদস্য হতে পারে।
এদিকে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত দুই সপ্তাহে ত্রাণকেন্দ্রসংলগ্ন এলাকাগুলো থেকে ১২৭ জনের মরদেহ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে এবং ১ হাজার ২৮৭ জন আহত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, জিএইচএফ যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় পরিচালিত একটি বিতরণব্যবস্থা, যা জাতিসংঘকে পাশ কাটিয়ে ত্রাণ বিতরণের লক্ষ্যে গঠিত হয়েছে। জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবিক সংস্থা এই ব্যবস্থায় অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। কারণ হিসেবে তারা বলছে, এটি নিরপেক্ষতা ও মানবিক নীতির পরিপন্থি।