গাজায় চলমান যুদ্ধের অবসানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন করে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন। নেদারল্যান্ডসের হেগ-এ ন্যাটো সম্মেলনের প্রাক্কালে বুধবার তিনি বলেছেন, গাজা নিয়ে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
২০ মাস ধরে চলা ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের মধ্যেই যুদ্ধবিরতির জন্য নতুন আলোচনার উদ্যোগ শুরু হয়েছে। ট্রাম্প বলেন, তার মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ জানিয়েছেন, গাজা খুব কাছেই অর্থাৎ যুদ্ধবিরতির পথ প্রায় তৈরি।
ট্রাম্প মনে করেন, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সদ্য ঘোষিত যুদ্ধবিরতির ফলে গাজাতেও যুদ্ধ থামার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার এই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসে। ইসরায়েল ইরানের পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা এবং বিদেশে সংযুক্ত মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলোর ওপর হামলা চালায়। পাল্টা ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায় ইরান। পরে উভয় দেশ যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইরানে সফল অভিযান গাজার যুদ্ধ শেষ করতেও ভূমিকা রাখবে।
নেতানিয়াহু সরকার এখন চরম চাপের মুখে। বিরোধী দল, জিম্মিদের স্বজন এবং নিজের জোটসঙ্গীরাও যুদ্ধ বন্ধের দাবি তুলেছেন।
মঙ্গলবার গাজার দক্ষিণাঞ্চলে খান ইউনুসে এক অভিযানে সাত ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়। যা যুদ্ধের অন্যতম রক্তক্ষয়ী দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তারা একটি টহল পরিচালনার সময় বিস্ফোরণের কবলে পড়ে।
অন্যদিকে, গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৫৬ হাজার ১৫৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই সাধারণ মানুষ।
মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার মঙ্গলবার নতুন করে যুদ্ধবিরতির উদ্যোগের ঘোষণা দেয়। হামাস বুধবার জানিয়েছে, তারা কাতার ও মিসরের সঙ্গে আলোচনা জোরদার করেছে।
তবে হামাসের মুখপাত্র বলেন, আমরা এখনও যুদ্ধ শেষ করার কোনও নতুন প্রস্তাব পাইনি।
ইসরায়েল সরকার এ বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য না করলেও জানিয়েছে, গাজায় আটক জিম্মিদের উদ্ধারে সামরিক ও কূটনৈতিক উভয় পথেই চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলোর হাতে অপহৃত ২৫১ জনের মধ্যে এখনও ৪৯ জন গাজায় রয়েছেন, যাদের ২৭ জনকে মৃত ঘোষণা করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
ইসরায়েলি অবরোধে গাজার ২০ লাখ মানুষের খাদ্যসংকট দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছে। প্রায় প্রতিদিনই খাদ্য সহায়তার লাইনে গুলি ও গোলায় মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।
বুধবার গাজার সিভিল ডিফেন্স জানায়, কেন্দ্রীয় গাজার এক এলাকায় খাদ্য সহায়তা নিতে আসা মানুষদের ওপর ইসরায়েলি গুলি ও ট্যাংকের গোলাবর্ষণে অন্তত ২০ জন নিহত হন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, মে মাসের শেষ থেকে এখন পর্যন্ত খাদ্যসামগ্রীর লাইনে দাঁড়িয়ে প্রায় ৫৫০ জন নিহত হয়েছেন।
এই সহিংসতার জন্য অনেকেই দায়ী করছেন গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)-কে। মে মাসের শেষদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমর্থনে গাজায় সহায়তা কার্যক্রম শুরু করে। জাতিসংঘ মঙ্গলবার এই সংস্থার কার্যক্রমের সমালোচনা করে বলেছে, খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা অমানবিক। জিএইচএফ যদিও এসব মৃত্যুর দায় অস্বীকার করেছে।