যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ার ফিলাডেলফিয়ার এক গির্জায় এক সন্ধ্যায় হাজারো মানুষ জড়ো হয়েছিলেন একটি দাতব্য অনুষ্ঠানে। সবার দৃষ্টি একজন ‘তারকা’র দিকে। তবে তিনি কোনও অভিনেতা বা রাজনীতিবিদ নন, বরং গাজার এক তরুণ ফটোসাংবাদিক মোতাজ আজাইজা।
কালো টি-শার্ট, জিন্স, স্নিকার্স আর সোনালি ফ্রেমের চশমা পরা ২৬ বছর বয়সী এই তরুণের ইনস্টাগ্রামে অনুসারীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরু হলে গাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে ধারণ করা তার ছবি ও ভিডিও তাকে এনে দেয় বৈশ্বিক খ্যাতি।
যুদ্ধ শুরুর আগে পর্যন্ত তিনি ছিলেন এক সাধারণ তরুণ। দেইর আল-বালাহ এলাকার নিজ শহরের ছবি ও দৈনন্দিন জীবনের মুহূর্ত শেয়ার করতেন মাত্র ২৫ হাজার অনুসারীর সঙ্গে। কিন্তু প্রথম বোমা পড়ার পরেই ফটোসাংবাদিক হয়ে ওঠেন তিনি। নিজ শহরের ধ্বংস, মানুষের কান্না, মৃত্যুর প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠে তার ক্যামেরা।
আজাইজা বলেন, ফটো সাংবাদিক হিসেবে অন্য যে কারও মতো এগুলো দেখা আমার জন্য কঠিন।কারণ আমি এখানকারই মানুষ, এটাই আমার বাড়ি।
১০৮ দিন টানা বোমাবর্ষণ ও ধ্বংসের মধ্যে বেঁচে থেকে তিনি গাজা ছেড়েছেন মিসরের সীমান্ত দিয়ে। এখন তিনি যেন এক প্রবাসী প্রতিনিধি, গাজার কণ্ঠস্বর, বিশ্বজুড়ে গাজার গল্প বলছেন মানুষের কাছে।
আজাইজা বলেন, প্রতিবার মনে হয় চলে এসে ভুল করেছি। কিন্তু এরপর কোনও বন্ধু বা পরিবারের সদস্য মারা গেলে বুঝি যে, না, অন্তত আমি বেঁচে গেছি।
গাজা ছাড়ার আগে তিনি কাজ করতেন জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা’র ডিজিটাল মিডিয়া বিভাগে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সেই সংস্থাকেই সহায়তা করতে তিনি এখন যুক্তরাষ্ট্র সফর করছেন অর্থ সংগ্রহে।
ফিলাডেলফিয়ার অনুষ্ঠান থেকে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে আজাইজা বলেন, এই খ্যাতি আমার জন্য খুবই কষ্টকর। এটা বিশাল দায়িত্ব। এটা আমি না। আমি শুধু চাই গণহত্যা থেমে যাক। আমি গাজায় ফিরে যেতে চাই, ছবি তুলতে চাই।
দাতা নাবিল সারোয়ার বলেন, আজাইজার ছবি গাজার মানুষদের মানবিক রূপটি আমাদের সামনে আনে। একটা শিশুর ছবি দেখলেই তা আমাদের ছুঁয়ে যায়। ওর চোখ, ওর মুখের ধুলা, ক্ষুধা আর দুঃখ আমাদের ভাষাহীন করে তোলে।
ফিলাডেলফিয়ার ২৫ বছর বয়সী মেডিক্যাল শিক্ষার্থী ভেরোনিকা মরগুলেস্কু বলেন, মোতাজের মতো সাংবাদিকদের ছবি ও ভিডিও আমাদের হৃদয় ছুঁয়ে যায় কারণ এগুলো বাস্তব। এখানে আমরা যে মূলধারার মিডিয়া দেখি, তাতে সেই বাস্তবতা নেই।
মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাহার খামিস বলেন, মোতাজ আজাইজা ও গাজার অন্যান্য সাংবাদিকেরা কেবল আরব বিশ্বেই নয়, বরং গোটা বিশ্বজুড়েই জনমত পাল্টে দিচ্ছেন। তারা এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রভাবশালী কণ্ঠস্বর।
তিনি আরও বলেন, একটি ছবি হাজার শব্দের সমান, এটা পুরোনো কথা। কিন্তু যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে একটি ছবি কখনও কখনও দশ লাখ শব্দের সমান শক্তি রাখে।
সূত্র: এএফপি