এটা কোনও নতুন খবর নয় যে, পুরনো যুদ্ধযুগ ফুরিয়ে গেছে। মানব জাতি এখন নতুন যুদ্ধযুগে এসে পড়েছে। আর এই লড়াইয়ের নতুন পথ এখন সাইবার স্পেস। ইন্টারনেটের দ্রুত প্রসারের সুবাদে বিভিন্ন বিষয়ের প্রচার-প্রচারণা, অস্ত্র কেনাবেচা থেকে শুরু করে সন্ত্রাসী হামলা নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ারও এই অনলাইন। অস্ত্র হাতে যুদ্ধের পুরনো কৌশল বদলে সাইবার স্পেসে মতাদর্শিক যুদ্ধও চলছে বিভিন্ন পক্ষের। এরই অংশ হিসেবে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন অনলাইনে নিজেদের কর্মী সংগ্রহ করছে। আবার জঙ্গি কর্মকাণ্ড মোকাবিলায়ও বিভিন্ন রাষ্ট্রকে নির্ভর করতে হচ্ছে এই অনলাইনের ওপরেই।
অনলাইনে যুদ্ধ আর যুদ্ধবিরোধিতা নতুন নয়। তবে আইএস আত্মপ্রকাশ করার পরই তা নতুন মাত্রা পায়। যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ার হামলায় অভিযুক্তরাসহ আল-কায়েদার মুখপাত্র ও শীর্ষ নেতারা তাদের বক্তব্যের অডিও-ভিডিও বার্তা ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেন।
এদিকে, জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস নিজেদের কর্মী সংগ্রহ ও মতাদর্শ প্রচারের কাজে জনপ্রিয় মাইক্রো ব্লগিং সাইট টুইটারকে কাজে লাগায়। বিভিন্ন বিদেশি নাগরিক ও সাংবাদিকের শিরশ্ছেদের ভিডিও প্রকাশ করে অনলাইনে। ফলে সশস্ত্র যুদ্ধের পাশাপাশি অনলাইনে আইএসকে মোকাবিলা করাও হয়ে ওঠে গুরুত্বপূর্ণ।
পেন্টাগনের দাবি, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে জিহাদি সংগ্রহের জন্য আইএস অনলাইনকে কাজে লাগাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে আইএসের বিরুদ্ধে অনলাইন যুদ্ধ শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। নিজেদের সাইবার সক্ষমতা বাড়িয়ে আইএসের কম্পিউটারে ম্যালওয়্যার পাঠানোর পরিকল্পনা করে দেশটির সরকার। এছাড়া আইএসের ওয়েবসাইটে ডিওডিএস আক্রমণ ও তাদের ইন্টারনেট বন্ধ করার উদ্যোগও নেয়। একইসঙ্গে জিহাদিদের মোবাইল ফোনে আড়িপাতারও চেষ্টা চালায়।
ওবামা প্রশাসন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আহ্বান জানায়। যুক্তরাষ্ট্রের এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে গত বছর প্যারিসে নৃশংস হামলার পর আইএসের বিরুদ্ধে সাইবার যুদ্ধ ঘোষণা করে অ্যানোনিমাস নামের হ্যাকারদের একটি গ্রুপ। নীরবে বিভিন্ন রাষ্ট্রকে সহযোগিতা করে ফেসবুক ও টুইটার। যোগ দেয় সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্ট গুগলও।
জানা গেছে, আইএসের সাড়ে পাঁচ হাজারের ওপর টুইটার অ্যাকাউন্ট অকার্যকর করে দিয়েছে হ্যাকার গ্রুপ অ্যানোনিমাস। আর সন্ত্রাসবাদে সংশ্লিষ্টতা ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে ১ লাখ ২৫ হাজারের বেশি অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে টুইটার।
এখন পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে অনলাইনে। এর ফলে মিসাইল সিস্টেম হ্যাক করে বিশ্বকে ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারেন হ্যাকাররা।
যুক্তরাষ্ট্রের অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল জেমস কার্টাইট বার্তা সংস্থা এপিকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, সাইবার হামলার কারণেই রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। মিসাইল সিস্টেম ইন্টারনেটনির্ভর। অভাবনীয় অগ্রগতি ঘটেছে হ্যাকিং প্রযুক্তিতেও। এর ফলে সন্ত্রাসীরা চাইলেই সাইবার হামলা চালিয়ে দুই দেশের মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধ লাগিয়ে দিতে পারে।
আশঙ্কার বিপরীতে সম্ভাবনা নিয়েও দাঁড়িয়েছে অনলাইন। এরই নজির হিসেবে দেখা যেতে পারে, মধ্যপ্রাচ্যের সেই আরব জাগরণ কিংবা দুনিয়াজুড়ে প্রাণ-প্রকৃতি বাঁচানোর লড়াইও।
এদিকে, সন্ত্রাসীদের গোপন আস্তানা চিহ্নিত করে গোপনে ড্রোন হামলা চালিয়ে নিষ্ক্রিয় করা হচ্ছে। সামনে আসছে বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড। আইএসসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শান্তিকামীরাও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: দুই বছর পূর্তি তিন বছরে পা
পুরো পত্রিকা পড়তে ক্লিক করুন: কাগজে ছাপা বিশেষ সংখ্যা