ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকা না থাকার প্রশ্নে মঙ্গলবার সবশেষ বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘মহাবিতর্ক’তে অংশ নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসার পক্ষের প্রচারণাকারী লন্ডনের সাবেক মেয়র টোরি নেতা বরিস জনসনের বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নেন লন্ডনের বর্তমান মেয়র ও লেবার পার্টির নেতা সাদিক খান। স্কটিশ টোরি নেত্রী রুথ ডেভিডসনের সমর্থন পান তিনি। সবমিলে জমে ওঠে বিতর্ক।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের থাকা না থাকার প্রশ্নে গণভোটকে সামনে রেখে মঙ্গলবার টিভি বিতর্কে শেষবারের মতো মুখোমুখি লড়াই চালান তারা।
২৩ জুন (বৃহস্পতিবার) ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের আলাদা হওয়া না হওয়ার প্রশ্নে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। এ গণভোটকে সামনে রেখে দলগুলো হ্যাঁ কিংবা না অর্থ্যাৎ লিভ ক্যাম্পেইন এবং রিমেইন ক্যাম্পেইন এ দুটি ভাগে ভাগ হয়ে কয়েক মাস ধরেই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। এ গণভোটকে কেন্দ্র করে কখনও একই দলের ভেতরেই যেমন ভিন্ন ভিন্ন মত তৈরি হয়েছে তেমনি আবার ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শভিত্তিক দলের নেতাদের কেউ কেউ আবার এক জোট হয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। মঙ্গলবারের টিভি বিতর্কটি ছিল মূলত ইইউ গণভোট নিয়ে প্রচারণায় ভোটারদের কাছে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরবার শেষ সুযোগ।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবর অনুযায়ী, স্মরণকালের বৃহত্তম এই সরাসরি টিভি বিতর্কটি অনুষ্ঠিত হয় ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে। ছয় হাজারের মতো দর্শক সেখানে উপস্থিত ছিলেন। বিবিসিতে সরাসরি সম্প্রচারিত এই মহাবিতর্কে (গ্রেট ডিবেট) দুই ঘন্টা ধরে অভিবাসন, অর্থনীতি ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে তর্কযুদ্ধ করেন দুই পক্ষের নেতারা। যারা ইউরোপ থেকে বেরিয়ে যেতে চান সেই ‘লিভ’ পক্ষে ছিলেন লন্ডনের সাবেক মেয়র ও টোরি নেতা বরিস জনসন। অন্য অংশ, অর্থাৎ ‘রিমেইন’ পক্ষে ছিলেন স্কটিশ টোরি নেত্রী রুথ ডেভিডসন এবং লন্ডনের মেয়র সাদিক খান। এছাড়া দুই পক্ষের আরও বেশ কয়েকজন নেতা ছিলেন।
বরিস জনসন ভোটারদের মধ্যে অভিবাসনবিরোধী ভীতি ছড়িয়ে নিজেদের পক্ষে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন সাদিক। বরিস জনসন এক্ষেত্রে বিদ্বেষের প্রকল্প হাতে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। জবাবে জনসন বলেন, কিছুদিন আগে অভিবাসীদের নিয়ে জনগণের উদ্বেগকে ভ্রান্ত ধারণা না ভেবে তা গুরুত্বের সঙ্গে শোনা উচিত বলে দাবি করেছিলেন সাদিক খান।
বিতর্কে নিজ দল টোরির স্কটল্যান্ডের নেত্রী ডেভিডসনের আক্রমণেরও শিকার হন জনসন। ডেভিডসন ‘লিভ’ প্রচারণাকে বর্ণনা করেন ‘মিথ্যে’র পক্ষ হিসেবে। ডেভিডসন বলেন, বরিস জনসনকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়, ‘লোকজন চাকরি হারাতে যাচ্ছে কিনা তখন উনি নির্দিষ্ট করে উত্তর দিতে পারেন না। শুধু বলেন, হারাতেও পারে নাও হারাতে পারে।’
সমাপনী বক্তব্যে জনসন বলেন, ব্রিটেনবাসী যদি ‘লিভ’কে ভোট দেয় তাহলে বৃহস্পতিবারের দিনটি হবে দেশের স্বাধীনতা দিবস। এসময় তার সমর্থকেরা উঠে দাঁড়িয়ে তাকে জয়ধ্বনি দেন।
‘রিমেইন’ পক্ষের হয়ে সমাপনী বক্তব্যে ডেভিডসন সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘শতভাগ নিশ্চিত হতে হবে। নইলে আমাদের শুক্রবার সকালে আর ফেরার সুযোগ থাকবে না’।
সাদিক খান বলেন, ‘আমরা থাকব এবং লড়াই করব।’
উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্যে অভিবাসীদের আধিক্য নিয়ে ব্রিটিশ নাগরিকদের একাংশের মধ্যে এক ধরণের অস্বস্তি রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিয়ম অনুযায়ী ইইউভুক্ত ২৮টি দেশের নাগরিক ভিসা ছাড়াই এক দেশ থেকে আরেক দেশে প্রবেশ করতে পারে। আর সে কারণে গত মেয়াদে ডেভিড ক্যামেরন সরকার ইইউর বাইরের দেশ থেকে আসা অভিবাসীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনতে সক্ষম হলেও ইইউভুক্ত নাগরিকদের প্রবেশ ঠেকাতে পারেনি।
নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এবারের মেয়াদে ইইউভুক্ত দেশের নাগরিকদের যুক্তরাজ্যে প্রবেশ নিরুৎসাহিত করতে চার বছরের জন্য সুবিধা ভাতা বন্ধ রাখার প্রস্তাব দেন ক্যামেরন। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান ইইউভুক্ত দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা। তাদের দাবি, সদস্য দেশের নাগরিকদের সুবিধা ভাতা প্রদানে বৈষম্য করা হলে তা হবে ইইউর প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্যের সাথে সাংঘর্ষিক।
এই প্রশ্নে যুক্তরাজ্যকে ইইউতে রাখা না রাখার ব্যাপারে সংশয় তৈরী হয়।
ব্রেক্সিট প্রশ্নে ইইউভুক্ত নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিয়ে অভিবাসীদের সুবিধা সীমিত করাসহ চারটি সংস্কার প্রস্তাব দেন ক্যামেরন। পরে সে প্রস্তাব নিয়ে ক্যামেরনের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছান ইইউ নেতারা। ইইউ’র সঙ্গে সমঝোতার পর দেশে ফিরে গণভোটের তারিখ ঘোষণা করেন ক্যামেরন।
ব্রিটিশ আইন অনুযায়ী, গণভোটের ১৬ সপ্তাহ আগে তারিখ ঘোষণা করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে হিসেবে ২৩ জুন তারিখটি নির্ধারণ করা হয়। ব্রিটেনের ইইউতে থাকা না থাকার প্রশ্নে দেশটির জনগণই ওই গণভোটে চূড়ান্ত রায় দেবেন। ব্রেক্সিট প্রশ্নে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য তাই ওই গণভোটের রায় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আর তাই ২৩ জুন হয়ে উঠেছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সূত্র: বিবিসি, গার্ডিয়ান
আরও পড়ুন: যুক্তরাজ্য কি ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকছে
/এফইউ/বিএ/