প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পে বাংলাদেশ ও ভারতের পূর্বাঞ্চলের প্রায় ১৪ কোটি মানুষের জীবন ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে কবে নাগাদ এ ভূমিকম্প ঘটবে তা নিয়ে আরও গবেষণা করা প্রয়োজন। সোমবার প্রকাশিত এক গবেষণায় এ আশঙ্কার বিষয়টি উঠে এসেছে।
নেচার জিওসায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত ওই গবেষণায় দেখা যায়, ভূ-গাঠনিক অবস্থানের কারণেই বাংলাদেশে বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের একদল গবেষকের ওই গবেষণায় অংশগ্রহণ করেন। গবেষণায় প্রদত্ত তথ্যমতে, তেমন ভূমিকম্প ঘটলে তা এ অঞ্চলের ১৪ কোটি মানুষকে বিপদের মুখে ঠেলে দিতে পারে।
ওই গবেষণাপত্রের বরাতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্স জানিয়েছে, এখনই বাংলাদেশ বড় ভূমিকম্পে কেঁপে উঠবে এমন কথা বলা না গেলেও, দুটি গতিশীল ভূ-গাঠনিক প্লেট পরস্পরের ওপর চেপে বসতে থাকায় সেখানে শক্তিশালী ভূমিকম্পের শক্তি জমা হচ্ছে।
গবেষক দলের প্রধান নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিদ মাইকেল স্টেকলার টমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে বলেন, ‘ওই ধরনের ভূমিকম্প কবে ঘটতে পারে, সে পূর্বাভাস জানাতে আরও গবেষণা করতে হবে।’
গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ভারতের পূর্বাঞ্চল ও বাংলাদেশের যে অঞ্চল সেই সম্ভাব্য ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র প্রায় ১০০ কিলেমিটার ব্যাসের মধ্যে প্রায় ১৪ কোটি মানুষের বসবাস। বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এই অঞ্চলে এ ধরনের একটি ভূমিকম্প মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
তেমন কোনও ভূমিকম্প হলে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা ভবন, ভারী শিল্প, বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং গ্যাস ক্ষেত্রগুলো ধ্বংসের মুখে পড়তে পারে বলে গবেষকরা আশঙ্কা করছেন।
গবেষক দলের অন্যতম সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েল অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার বলছেন, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় ১৯ কিলোমিটার গভীর পলি জমে বাংলাদেশের যে ভূ-খণ্ড তৈরি হয়েছে, তা সেই ভূমিকম্পের প্রভাবে জেলাটিনের মত কেঁপে উঠতে পারে এবং কিছু কিছু জায়গায় তরলে পরিণত হয়ে গ্রাস করতে পারে ভবন, রাস্তাঘাট আর মানুষের বসতি।
এই গবেষণায় প্রায় ৬২ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে ভূমিকম্পের ঝুঁকির আওতায় বলা হয়েছে।
অধ্যাপক আখতার রয়টার্সকে বলেন, তেমন মাত্রার ভূমিকম্প সত্যিই হলে তার ক্ষয়ক্ষতি এতোটাই ভয়াবহ হবে যে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা হয়ত বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে।
২০০৪ সালে যে ফল্ট লাইনের ভূমিকম্পে সৃষ্ট সুনামিতে ২ লাখ ৩০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল, সেই একই ফল্ট লাইনে নতুন এই ভূমিকম্পের আশঙ্কা দেখছেন বিজ্ঞানীরা।
দশ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে একটি কম্পিউটার মডেল তৈরির মাধ্যমে তারা দেখিয়েছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের পূর্ব অংশের ভূ-গাঠনিক প্লেট উত্তর-পূর্ব দিকে সরে গিয়ে মিয়ানমারের পশ্চিম অঞ্চলের ভূ-গাঠনিক প্লেটে চাপ সৃষ্টি করছে, যাতে সৃষ্টি হচ্ছে অস্থিরতা।
ওই গবেষণা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিজ্ঞানীরা টেকটোনিক প্লেটের ওই সরে যাওয়া জিপিএস এর মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করছেন ২০০৩ সাল থেকে। সেই তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশ ও ভারতের পূর্ব অংশের প্লেট মিয়ানমারের পশ্চিম অঞ্চলের প্লেটকে বছরে ৪৬ মিলিমিটার করে ঠেলছে।
অধ্যাপক আখতারকে উদ্ধৃত করে রয়টার্সের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দুই প্লেটের সংযোগ স্থলে ভূমিকম্পের শক্তি জমা হচ্ছে অন্তত ৪০০ বছর ধরে। ওই শক্তি একসঙ্গে মুক্ত হলে তা প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পের কারণ হতে পারে।
অধ্যাপক আখতার বলেন, ‘আমরা জানি না, ঠিক কবে সেই বিপদ আসবে, কারণ আমরা জানি না শেষ কবে ওই এলাকায় এরকম পরিস্থিতি হয়েছিল। আমরা বলতে পারছি না – এখনই হবে, না ৫০০ বছর পরে সেই ভূমিকম্প হবে। কিন্তু আমরা নিশ্চিতভাবে দেখতে পাচ্ছি – ওখানে শক্তি জমা হচ্ছে।’
বিভিন্ন কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করে ওই গবেষণা চালানো হয় বলে জানা গেছে। তাতে ভারতের পূর্বাঞ্চল, মায়ানমার এবং বাংলাদেশের প্রয়োজনীয় ভূতাত্ত্বিক তথ্য সংগ্রহ করে তা কম্পিউটার মডেলের সাহায্যে বিশ্লেষণ করা হয়। সূত্র: রয়টার্স।
/এসএ/এএ/