চলমান রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে পাঁচ দফা প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় ২১ সেপ্টেম্বর, বিকালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার সময় তিনি এই প্রস্তাব করেন। ভাষণের শুরুতেই রাখাইন রাজ্যের বিপন্ন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রসঙ্গ তুলে ধরেন তিনি। তার এই ভাষণ জাতিসংঘের ওয়েব টেলিভিশনে সরাসরি প্রচার করা হয়।
রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ৫ দফা প্রস্তাব হলো:
এক: কোনও শর্ত আরোপ ছাড়াই অবিলম্বে রোহিঙ্গাদের ওপর সব ধরনের সহিংসতা ও জাতিগত নিধন স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে,
দুই: জাতিসংঘ মহাসচিবের মাধ্যমে একটি অনুসন্ধানী কমিটি গঠন করতে হবে
তিন: জাতি ও ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজিত রাখাইনের সব নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিককে সুরক্ষা দিতে হবে। এজন্য মিয়ানমারের ভেতরে নিরাপদ এলাকা তৈরি করা যেতে পারে
চার: বল প্রয়োগের মাধ্যমে বাস্তুচ্যুত সব রোহিঙ্গা যেন নিরাপদ ও মর্যাদার সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে তাদের বাড়িতে ফিরতে পারে, সে ব্যবস্থা করা।
পাঁচ: রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে কফি আনান কমিশনের পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ অবিলম্বে নিঃশর্তভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
ভাষণের শুরুতে নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি সমবেদনা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া ক্ষুধার্ত-দুর্দশাগ্রস্ত আশাহীন রোহিঙ্গাদের মুখগুলো দেখার পরপরই আমি এখানে এসেছি। শত শত বছর ধরে মিয়ানমারে বসবাসকারী ওই রোহিঙ্গারা জাতিগত নিধনের শিকার।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ৮ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। রাখাইন রাজ্যের চলমান অস্থিরতা ও মানবাধিকার লংঘন আবারও বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের পরিস্থিতিকে নৃশংস করে তুলেছে। রাখাইন রাজ্যের সহিংসতা থেকে বাঁচতে প্রতিদিন বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা। আইএমও এরইমধ্যে সাম্প্রতিক সহিংসতা থেকে বাঁচতে ৪লাখ ৩০ হাজার মানুষের পালিয়ে আসার তথ্য দিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘‘আমরা বিস্মিত যে তাদের ফিরে যেতে না দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে মাইন পুতে রেখেছে মিয়ানমার। এইসব মানুষকে অবশ্যই নিরাপত্তা সুরক্ষা ও মর্যাদার সঙ্গে রাখাইনে ফেরার সুযোগ দিতে হবে। একইসঙ্গে আমরা সব ধরনের সহিংস ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানাচ্ছি। এ ব্যাপারে আমাদের সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে।’’
৭৫-এর ১৫ আগস্টে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার বাবা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের প্রায় সব সদস্যকে হত্যার পর আমি আমার ছোট বোনকে নিয়ে ৬ বছরের শরণার্থী জীবনের পথে পা বাড়াতে বাধ্য হয়েছিলাম। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু এই বিশ্বসভায় দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, এমন এক বিশ্বব্যবস্থা গঠনে বাঙালি জাতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, যা মানুষের শান্তি ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে। এই প্রতিজ্ঞায় আমাদের লাখো শহীদের বিদেহী আত্মার স্মৃতি জড়িয়ে আছে।’
উল্লেখ্য, সন্ধ্যায় নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার জাতিসংঘ সফরের ওপর সাংবাদিকদের ব্রিফ করবেন।