X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ভিত্তি হবে ১৯৯২ সালের ঘোষণা: মিয়ানমার

বিদেশ ডেস্ক
০৩ অক্টোবর ২০১৭, ১৮:০৯আপডেট : ০৩ অক্টোবর ২০১৭, ১৯:২৩

১৯৯২ সালের যৌথ ঘোষণার ভিত্তিতেই রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন হবে বলে জানিয়েছে মিয়ানমার। মঙ্গলবার দেশটির রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টার দফতর থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়েছে। সোমবার ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চির দফতরের মন্ত্রী টিন্ট সোয়ের বৈঠকের পর এই বিবৃতি দেওয়া হয়।  

বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক সোমবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়

উল্লেখ্য, ১৯৯২ সালের দুই দেশের মধ্যেকার যৌথ ঘোষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশে নিবন্ধিত রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের বৈধ কাগজপত্রসহ ফিরতে পারবে রাখাইনে।

সোমবার দুপুরে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায়  পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে  বৈঠকে অংশ নেন  মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টার দফতরের মন্ত্রী টিন্ট সোয়ে।  বাংলাদেশের পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ও পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক। 

বৈঠকের বিষয়ে মিয়ানমারের মন্ত্রী ঢাকায় কোনও মন্তব্য না করলেও একদিন পর দেশটির রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টার দফতর এই আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হলো।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মিয়ানামরের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা  অং সান সু চির ১৯ সেপ্টেম্বর দেওয়া প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন তার দফতরের মন্ত্রী । সু চির প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী,  মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের যাচাই ও প্রত্যাবাসনে প্রস্তুত রয়েছে। ১৯৯২ সালের ২৮ এপ্রিল বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের যৌথ ঘোষণা অনুসারে তাদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে।

এই যৌথ ঘোষণা অনুসারে ১৯৯২ থেকে ২০০৫ সালের জুলাই পর্যন্ত ২ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৫ জনকে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বৈঠকে  ২০০০ সালের ১৪ জানুয়ারি ইয়াঙ্গুনে অনুষ্ঠিত দুই দেশের সিনিয়র কর্মকর্তাদের মধ্যকার বৈঠকে সম্পাদিত চুক্তির প্রসঙ্গটিও তুলে ধরেন।  এতে আরও বলা হয়েছে, উভয় দেশের স্বার্থের কথা বিবেচনায় রেখে দ্বিপক্ষীয়ভাবে দুই দেশের মধ্যে এই ইস্যুগুলো বন্ধুত্বপূর্ণ উপায়ে সমাধান করা সম্ভব।

মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টার দফতরের বিবৃতি অনুযায়ী, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উভয় দেশের ঐতিহ্যগত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি আরসাকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সাধারণ শত্রু বলে উল্লেখ করে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির কথাও জানিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বৈঠকের শেষ দিকে মিয়ানমারের মন্ত্রী বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নেপিদো সফরের আমন্ত্রণ জানান। সীমান্ত সুরক্ষা, ১৯৯২ সালের এপ্রিলের যৌথ বিবৃতি অনুসারে যেসব রোহিঙ্গা মিয়ানমার ফিরতে চায়, তাদের যাচাইকরণ বিষয়ে পদক্ষেপ চূড়ান্ত করতে বাংলাদেশের মন্ত্রীকে এই সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন।

বৈঠকের পর একটি মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন মিয়ানমারের মন্ত্রী। এতে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন। মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে একটি আমন্ত্রণপত্র তুলে দেন। এতে বিস্তারিত আলোচনার জন্য বাংলাদেশের মন্ত্রীকে মিয়ানমার সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এতে আর বলা হয়েছে,  আলোচনা বন্ধুত্বপূর্ণ ও উষ্ণ ছিল।

এদিকে, বৈঠক শেষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে মিয়ানমার। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য দুই পক্ষ একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনে সম্মত হয়েছে। এই জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপে কারা থাকবেন তা দুই পক্ষ মিলে ঠিক করবে।’ তবে এটি কবে নাগাদ হবে সেটি এখনও ঠিক হয়নি, তবে দ্রুত হবে বলেও জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

উল্লেখ্য, অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজ জানিয়েছে, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে মাত্র ৫ হাজার ৮০০ জনের নিবন্ধন হয়েছে। তারাও সবাই রাখাইনে ফিরতে পারবে, এমন নয়। কেননা নিবন্ধিত হওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে নাগরিকত্বের প্রমাণ থাকা ব্যক্তিরাই কেবল ফিরে যেতে পারবে। ফ্রন্টিয়ার মিয়ানমারের ২০১৫ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী রাখাইনে তখন থাকা ১০ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড (এনভিসি) পেয়েছিল মাত্র  ৭ হাজার ৫৪৮জন। এর বাইরে আর কোনও কাগজপত্রই রোহিঙ্গাদের নেই। তাই ৭ হাজার ৫৪৮ জনের বেশি মানুষের মিয়ানমারে ফেরার সুযোগ নেই।

বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মতে, এই পর্যন্ত পালিয়ে আসার রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ৯ লাখ। এরমধ্যে চার লাখ আগে থেকেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাস করছিল। আর চলতি বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনে সামরিক অভিযান শুরু হলে আরও ৫ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা পালিয়ে আসে।

 

/এএ/এমএনএইচ/বিএ/
সম্পর্কিত
তাইওয়ান প্রণালিতে আবারও চীনা সামরিক বিমান শনাক্ত
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে থাইল্যান্ড সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
চীনের দক্ষিণাঞ্চলে সড়ক ধসে নিহত ৩৬
সর্বশেষ খবর
লড়াই করেও কিংসের কাছে হারলো আবাহনী
লড়াই করেও কিংসের কাছে হারলো আবাহনী
গণতান্ত্রিক যেকোনও বিষয়কে বিএনপি ফাঁদ মনে করে: ওবায়দুল কাদের
গণতান্ত্রিক যেকোনও বিষয়কে বিএনপি ফাঁদ মনে করে: ওবায়দুল কাদের
২২ বছর পর প্রিমিয়ার লিগে ইপসউইচ
২২ বছর পর প্রিমিয়ার লিগে ইপসউইচ
৩২ ঘণ্টা পর লাইন ক্লিয়ার, ট্রেন চালুর অপেক্ষা
৩২ ঘণ্টা পর লাইন ক্লিয়ার, ট্রেন চালুর অপেক্ষা
সর্বাধিক পঠিত
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের এখন কী হবে
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের এখন কী হবে
বিসিএসে সফলতায় এগিয়ে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা
বিসিএসে সফলতায় এগিয়ে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা
চট্টগ্রামে যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
চট্টগ্রামে যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
লিথুয়ানিয়ার ড্রোন হামলা ব্যর্থ হয়েছে: বেলারুশ
লিথুয়ানিয়ার ড্রোন হামলা ব্যর্থ হয়েছে: বেলারুশ