ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের নিরাপত্তা বাহিনীর পৃথক অভিযানের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৯ জনে দাঁড়িয়েছে। নিহতদের মধ্যে ১২ জন কাশ্মিরের স্বাধীনতাকামী বিদ্রোহী। তিনজন ভারতীয় বাহিনীর সদস্য। বাকি চারজন বেসামরিক নাগরিক। এছাড়া নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক মানুষ। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি ও দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া’র প্রতিবেদনে নিহত বিদ্রোহীদের ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
শনিবার রাতে অনন্তনাগের একটি ও সোফিয়ান জেলার দুইটি লক্ষ্যবস্তুতে অভিযান শুরু করে ভারতীয় বাহিনী। তবে সোফিয়ানের একটি অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনীকে রবিবার দিনভর বেগ পোহাতে হয়।
পুলিশ সূত্রে এনডিটিভি জানিয়েছে, শনিবারের অভিযানে সোফিয়ান জেলার দ্রাগাদ গ্রামে নিহত হয় ৮ জন। অপর একজন নিহত হয় অনন্তনাগের দয়ালগামের অভিযানে।
সোফিয়ানের কাচদোরা এলাকায় বিদ্রোহীদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে ভারতীয় বাহিনী। সেখানে ১৫ ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে তিন বিদ্রোহী, এক সেনাসদস্য এবং চার বেসামরিক নাগরিক নিহত হন।
রবিবার কাশ্মিরের শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা এসপি বৈদ্য টুইটারে দাবি করেন, অনন্তনাগের দয়ালগ্রামে নিহত ব্যক্তিকে আত্মসমর্পণ করাতে তার পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি পুলিশও চেষ্টা চালায়। তবে তা ব্যর্থ হয়। ওই ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে। সোফিয়ানের দ্রাগাদ গ্রামের অভিযানে এক কমান্ডারসহ সাতজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে হতাহতের ঘটনায় কাশ্মিরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে বিক্ষোভ। বিশেষ করে দক্ষিণ কাশ্মিরে বিক্ষোভের তীব্রতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এসব বিক্ষোভ থেকে পাথর ছুড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের পাল্টা জবাব দেওয়া হচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে কেউ যেন বিক্ষোভের ডাক দিতে না পারে সেজন্য রবিবার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শ্রীনগর ও বানিহালের মধ্যে ট্রেন চলাচলও বন্ধ রাখা হয়েছে। বিক্ষোভ ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা আল জাজিরা’কে জানিয়েছেন, উপত্যকার গ্রামগুলো থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। ভারতীয় বাহিনীর অভিযানের লক্ষ্যবস্তু কাশ্মিরের মুক্তির জন্য লড়াই করা বিদ্রোহীদের সাহায্যের উদ্দেশ্যে তারা অভিযানস্থলের দিকে অগ্রসর হন। এ সময় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
বিক্ষোভকারীদের একজন দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’কে বলেন, ‘১০ জন নিহত হলে ভারতীয় দখলদারিত্ব থেকে এই ভূমিকে মুক্ত করতে নতুন করে আরও ২০ জন লড়াইয়ে যোগ দেবে।’
মানজুর আহমেদ নামের একজন গ্রামবাসী আল জাজিরা’কে বলেন, নিরাপত্তা বাহিনী বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। কয়েকজন তরুণের চোখে নিরাপত্তা বাহিনীর ছররা গুলি আঘাত করে। আমার চোখের সামনেই দুইজন বুলেটবিদ্ধ হয়েছেন। বহু বেসামরিক নাগরিকের ঘরবাড়ি তছনছ হয়ে যাওয়ায় তাদের রাস্তায় আশ্রয় নিতে হয়েছে। এই রক্তপাত আর কতদিন চলবে! আমরা ক্লান্ত।
টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে কাশ্মিরের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হুররিয়াত নেতা মিরওয়াইজ ওমর ফারুক বলেছেন, ভারত সরকার যতদিন সামরিক উপায়ে কাশ্মিরের রাজনৈতিক ও মানবিক সংকট মোকাবেলা করবে ততদিন কাশ্মিরিদের হয় সামরিক বাহিনীর হাতে মরতে হবে কিংবা তাদের প্রতিরোধের জন্য অস্ত্র হাতে তুলে নিতে হবে। এর দায়দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে তাদের (ভারতীয় কর্তৃপক্ষ) ওপরই বর্তায়।
এদিকে ভারতীয় বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে দুই দিনের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে কাশ্মিরের স্বাধীনতাকামী সংগঠনগুলো। স্বতঃস্ফূর্তভাবে এতে সাড়া দিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
২০১৬ সালের ৮ জুলাই বন্দুকযুদ্ধের নামে কাশ্মিরের স্বাধীনতাকামী তরুণ হিজবুল কমান্ডার বুরহান মুজাফফর ওয়ানিকে হত্যা করে ভারতীয় সেনারা। ওই হত্যাকাণ্ডের পর কাশ্মিরের জনগণ প্রতিবাদে ফুঁসে উঠে। এ হত্যাকাণ্ডের জেরে নারী ও শিশুসহ শতাধিক মানুষ নিহত ও ১২ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। নিরাপত্তা বাহিনীর ছররা গুলির আঘাতে চোখ হারান শত শত মানুষ। ওই সময় থেকেই সোফিয়ান, পালওয়ামা ও অনন্তনাগ এলাকা স্বাধীনতাকামীদের শক্ত ঘাঁটি হয়ে উঠে। সূত্র: আল জাজিরা, টিআরটি ওয়ার্ল্ড, এনডিটিভি, দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া।