X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রের ‘আমিষ’ খাওয়া গরুর দুধ আমদানিতে আপত্তি আরএসএস’র

বিদেশ ডেস্ক
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৬:৪৬আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২০:৫৬
image

গবাদিপশুকে খাদ্য হিসেবে আমিষ দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে দুগ্ধজাত পণ্য আমদানিতে আপত্তি জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) শাখা স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফরের ঠিক আগ মুহূর্তে এ ব্যাপারে ভারত সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছে তারা। রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) নিজেদের আপত্তির কথা জানায় সংস্থাটি।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘আমিষ’ খাওয়া গরুর দুধ আমদানিতে আপত্তি আরএসএস’র

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের এই সফরে ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বড়সড় কোনও বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাবনা না থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র যেসব পণ্যের জন্য ভারতের বাজার ধরতে আগ্রহী, তার মধ্যে আছে দুগ্ধজাত পণ্যও। এমন প্রেক্ষাপটে স্বদেশী জাগরণ মঞ্চ বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের গবাদি পশুদের আমিষ খাদ্য দেওয়া হয়। তাই সেই দুধ ভারতে এলে নিরামিষাশীরা তা খাবেন না এবং পূজাতেও তা ব্যবহার করা যাবে না। তবে পশুখাদ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গবাদি পশু খাদ্য হিসেবে আমিষ খেলেও তাদের দুধের মান কোনওভাবে বদলে যায় না।

স্বদেশী জাগরণ মঞ্চ দীর্ঘদিন ধরেই বিদেশী পণ্য আমদানির বদলে দেশীয় পণ্য উৎপাদনকে উৎসাহ দেওয়ার কথা বলে আসছে। সংগঠনটির জাতীয় সমন্বয়ক অশ্বিনী মহাজন বিবিসি বাংলার কাছে প্রশ্ন রাখেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র থেকে দুগ্ধজাত পণ্য আমদানি শুরু হলে ভারতে যে কোটি কোটি মানুষ গবাদি পশু পালন করেন আর দুধের ব্যবসায় জড়িত, তারা কী করবেন? এরা তো যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো বড় কর্পোরেট সংস্থা নয়, ছোট ব্যবসায়ী বা কৃষক। তাদের স্বার্থহানি ঘটবে, সেটা সরকারকে জানানো হয়েছে।’

মহাজন আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে দুধের আরেকটা সমস্যা আছে, ওখানে মাংস আর রক্তের উপাদান দিয়ে তৈরি পশুখাদ্য খাওয়ানো হয় গরুকে। সেই দুধ যদি ভারতে আসে, তাহলে যে বহুসংখ্যক মানুষ নিরামিষাশী, তারা সেই দুধ খেতে অস্বস্তিবোধ করবেন, তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগবে। আবার পূজাতেও দুধ ব্যবহার হয়, সেটাও করা যাবে না।’

পশুখাদ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশীয় বা শঙ্কর প্রজাতির গরুরা ভারতে যে পরিমাণ দুধ দেয়, তাতে মাংসের উপাদান থেকে তৈরি পশুখাদ্য দেওয়ার প্রয়োজন হয় না।

পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎসবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুখাদ্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও অধ্যাপক বরুণ রায় বলেন, ‘দেশীয় যেসব গরু দৈনিক ৫-১০ লিটার দুধ দেয়, তাদের এমনি ঘাসেই পুষ্টি হয়ে যায়। আর যেসব গরু কিছুটা বেশী দুধ দেয়, আর শঙ্কর প্রজাতির গরু, তাদের খাদ্যে ঘাসের সঙ্গে আর কিছু পুষ্টিকর উপাদান মেশাতে হয়। আমাদের দেশের গরুর এর থেকে বেশী দুধ সংরক্ষণ করা সম্ভবও নয়।’

অধ্যাপক বরুণ রায় বলেন, ‘কিন্তু দৈনিক ৫০-৬০ এমনটি ৮০ বা ১০০ লিটারও দুধ দেবে, এমন গরুকে সেরকম পুষ্টিও দিতে হবে। তবে খাদ্যের পরিমাণ তো নির্দিষ্ট। তাই খাদ্যের মধ্যে পুষ্টিকর উপাদান মেশাতে হয়। বিদেশে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে ছাঁট মাংস থেকে প্রক্রিয়াজাত উপাদান খাওয়ানো হয়।’ তিনি বলেন, ‘খাদ্য যাই দেওয়া হোক, তাতে দুধের মানের পরিবর্তন হয় না। দুধটা দুধই থাকে। এখন যদি কেউ মনে করেন আমিষ খাদ্য খেয়েছে বলে সেই গরুর দুধ আমিষ হয়ে গেছে; এটা তো কাউকে যুক্তি দিয়ে বোঝানো যায় না। তার নিজের বিশ্বাসের ব্যাপার সেটা।’

অর্থনীতির বিশেষজ্ঞরাও বলছেন যেকোনও ক্ষেত্রেই আমদানি বন্ধ করলেই যে দেশের স্বার্থ রক্ষিত হবে, তা নয়। ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইন্সটিটিউটের অর্থনীতির অধ্যাপক অভিরূপ সরকার মনে করেন, স্বদেশী জাগরণ মঞ্চ সবসময়েই মুক্ত বাণিজ্যের বিরুদ্ধে, এবং তাদের যুক্তি যে সেটা দেশীয় উৎপাদনকে ক্ষতি করবে। তিনি বলেন, ‘অর্থশাস্ত্র দিয়ে এর বিচার করলে এটা সম্পূর্ণ ভুল কথা। দুগ্ধজাত পণ্যের ক্ষেত্রে যারা দেশের উৎপাদনকারী, তারা গুণমান উন্নত করুন না- লোকে এমনিই কিনবে তাদের পণ্য। একটা শুল্কের দেয়াল কেন তুলে দেওয়া হবে?’ তিনি আরও বলেন, ‘এছাড়াও দুগ্ধজাত পণ্য আমদানির ব্যাপারে তারা আবার ধর্মবিশ্বাসকেও টেনে এনেছে। যুক্তরাষ্ট্রের গরু আমিষ খেলো না কী খেলো- সেসব প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। আমার মতে এটা আরও আপত্তিকর।’

প্রসঙ্গত, ভারতে দুগ্ধজাত পণ্যের বাজার ২০১৯ সালে এক হাজার কোটি রুপি ছাড়িয়ে গেছে। এ খাতের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত এক কোটি মানুষ। এছাড়াও প্রায় এক লাখ স্থানীয় দুগ্ধ সমবায় আছে, যারা আবার বড় সমবায় সমিতিগুলোর কাছে দুধ বিক্রি করে। ২০১৯ সালে সারা বিশ্বে দুগ্ধজাত পণ্যের বাজার যেখানে বছরে প্রায় দুই শতাংশ হারে বেড়েছে,  সেখানে ভারতে এই বাজার বেড়েছে প্রায় সাড়ে ছয় শতাংশ হারে। উল্লেখ্য, ভারতে পশুখাদ্যে মাংসজাত খাদ্য খাওয়ানো আইনত নিষিদ্ধ।

/এইচকে/বিএ/
সম্পর্কিত
যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভস্নাতক অনুষ্ঠান বাতিল করলো ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় কোনও পরিবর্তন হবে না: ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট
পশ্চিমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চীনকে যা করতে হবে
সর্বশেষ খবর
ব্রাজিলের জার্সিতে এই বছরই শেষ মার্তার
ব্রাজিলের জার্সিতে এই বছরই শেষ মার্তার
৩ মে ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ ডেকেছে ইসলামী আন্দোলন
৩ মে ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ ডেকেছে ইসলামী আন্দোলন
ইসলামী ব্যাংকের নোয়াখালী জোনের কর্মকর্তা সম্মেলন
ইসলামী ব্যাংকের নোয়াখালী জোনের কর্মকর্তা সম্মেলন
ওলামা দলের আংশিক কমিটি দিয়েছে বিএনপি
ওলামা দলের আংশিক কমিটি দিয়েছে বিএনপি
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী