X
বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫
১৯ আষাঢ় ১৪৩২

করোনা মোকাবিলায় কেরালার সফলতার নেপথ্যে

বিদেশ ডেস্ক
১৩ এপ্রিল ২০২০, ০০:৩০আপডেট : ১৩ এপ্রিল ২০২০, ০১:০৮
image

ভারতে প্রথম করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল কেরালা রাজ্যে, জানুয়ারির শেষের দিকে। ১২ মার্চ (রবিবার) বাংলাদেশ সময় রাত ১১ টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা ৯ হাজার ১৬৬। মৃত্যু হয়েছে ৩২৫ জনের। তবে কেরালায় মৃত্যু হয়েছে মাত্র ২ জনের। সেখানে আক্রান্তদের ৩৪ শতাংশই সুস্থ হয়ে উঠেছে। ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদন বলছে, কেরালায় সুস্থ হওয়ার হার ভারতের বাকি রাজ্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিআই-এম)শাসিত রাজ্য সরকারের দৃঢ় কিছু পদক্ষেপের সংক্রমণের বিস্তার ঠেকানো গেছে।

করোনা মোকাবিলায় কেরালার সফলতার নেপথ্যে

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দ্রুত রোগ শনাক্তকরণ পরীক্ষা, তীব্র মাত্রায় সংক্রমিতদের শনাক্ত করা, দীর্ঘ সময়ের কোয়ারেন্টিন জারি রাখা, কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষিত শাটডাউনের শিকার আটকা পড়া অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য হাজারো আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ এবং খাদ্য সংকটে থাকা লাখ লাখ মানুষের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ করে গোটা ভারতের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে কেরালা।

করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে ভারতজুড়ে বড় আকারে শাটডাউন দেওয়ার পরও এর বিস্তার ঠেকাতে পারছে না কেন্দ্রীয় সরকার। দিন দিন সংক্রমণের হার বেড়েই চলেছে। ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উচ্চ ঘন বসতি এবং স্বল্প স্বাস্থ্য সুরক্ষাজনিত সুবিধাসহ অনেকগুলো কারণে করোনার বিস্তার ঠেকাতে ভারতের চ্যালেঞ্জটা একটু বেশি। তবে দ্রুত রোগ শনাক্তকরণ ও বড় আকারে সামাজিক সমর্থনমূলক যে পদক্ষেপগুলো কেরালা রাজ্যে নেওয়া হয়েছে তা ভারতের বাকি অংশের জন্য মডেল হতে পারে।

কেরালা অনেক বেশি বিপর্যয়ের ঝুঁকিতে ছিল। কারণ, সেখানে বিদেশ থেকে আসা-যাওয়া করা মানুষের সংখ্যা অনেক। উপকূলীয় এ রাজ্যটিতে প্রতি বছর ১০ লাখের বেশি পর্যটক আসে। রাজ্যটির ৩ কোটি ৩০ লাখ নাগরিকের ছয় ভাগের এক অংশ প্রবাসী। সেখানকার শত শত শিক্ষার্থী চীনে পড়াশোনা করে। তবে সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো মোকাবিলা করতে পেরেছে কেরালা সরকার।

রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে.কে শাইলাজা বলেন, ‘আমরা সবচেয়ে ভালো কিছুর আশা বুকে বেঁধে রেখেছিলাম ঠিকই, কিন্তু প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম সবচেয়ে বাজে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারার মতো।’ 

করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হওয়ার পর পরই ইরান ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ করোনাভাইরাসের হটস্পট হিসেবে পরিচিত ৯টি দেশ থেকে কেরালায় ফেরা মানুষকে বিমানবন্দরে অনেক কড়াকড়ি ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। ১০ ফেব্রুয়ারির পর এসব দেশ থেকে যারা ফিরেছেন তাদেরকে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়। অথচ গোটা ভারতে এসব কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছিল আরও দুই সপ্তাহ পরে।

পর্যটক ও অন্য নন রেসিডেন্টদের জন্য অস্থায়ী কোয়ারেন্টিন শেল্টার স্থাপন করেছিল কেরালা। তবে এতো কড়াকড়ির মধ্যেও ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে ইতালিফেরত এক দম্পতিকে থামাতে পারেনি তারা। ওই দম্পতি স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের কাছে রিপোর্ট করেনি। তাদেরকে শনাক্ত করার আগেই তারা বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিল, বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করেছিল। তাদের সংস্পর্শে এসে থাকতে পারে এমন ৯০০ মানুষকে শনাক্ত করে আইসোলেশনে পাঠানো হয়।

ওই দম্পতির জামাতা ৩৪ বছর বয়সী রবিন থমাসের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। তার স্ত্রী, দাদা শ্বশুর ও দাদি শাশুড়ির শরীরেও করোনার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। রবিন থমাস জানান, কেরালার চিকিৎসাকর্মীদের কাছ থেকে তিনি ‘অসাধারণ চিকিৎসা’ পেয়েছেন। ‘লোকজন ফেসবুক ও হোয়াটস অ্যাপে আমাদেরকে গালি দিচ্ছিলো, তবে কাউন্সেলররা নিয়মিত আমাদেরকে ফোন করেছেন, আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছেন।’ থমাস ও তার স্ত্রী সুস্থ হয়েছেন।

থমাসের দাদা শ্বশুর ও শাশুড়ির বয়স যথাক্রমে ৮৮ বছর ও ৯৩ বছর। তারাও হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। থমাস বলেন ‘আমরা তাদেরকে নিয়ে চিন্তায় ছিলাম, মনে হচ্ছিলো তারা মনে হয় আর বাঁচবেন না। এমনকি দাদা যখন হার্ট অ্যাটাক করলেন তখনও চিকিৎকরা আমাদের বললেন তারা চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।’

করোনা মোকাবিলায় কেরালার সফলতার নেপথ্যে

কেরালায় ৩০ হাজারেরও বেশি স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োজিত রয়েছেন। কোয়ারেন্টিনে থাকা মানুষদের কাছে গিয়ে তাদের নিয়মিত খোঁজখবর নেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। তাদের কাছে জানতে চাইছেন, শরীরের অবস্থা কী, মনের অবস্থা কেমন, পর্যাপ্ত খাবার তাদেরকে সরবরাহ করা হচ্ছে কিনা। 

সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ শাহিদ জামিল মনে করেন, কেরালার পদক্ষেপ কার্যকর হয়েছে কারণ রাজ্য সরকার একইসঙ্গে কঠোর ও মানবিক ছিল। তিনি বলেন, ‘গণহারে পরীক্ষা, আইসোলেশনে নেওয়া, আক্রান্ত শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা করা-এগুলো হলো প্রাদুর্ভাব ঠেকানোর উপায়।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী শালিজা জানিয়েছেন, এরইমধ্যে ছয়টি রাজ্য সরকার তাদের কাছে পরামর্শ চেয়েছে। তবে শালিজা মনে করেন, তাদের রাজ্যের পদক্ষেপগুলো ভারতের অন্য কোথাও প্রয়োগ করা সহজ হবে না। কারণ কেরালায় ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা কমিউনিস্ট শাসনামলে জনগণের শিক্ষা ও সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা খাতে বিপুল বিনিয়োগ করেছে রাজ্য।

কেরালায় শিক্ষার হার সবচেয়ে বেশি। দেশের সবচেয়ে ভালো স্বাস্থ্যসেবা পেয়ে থাকে রাজ্যবাসী। শক্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থার কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী বিপুল হারে পরীক্ষা চালাতে পেরেছে তারা। অথচ কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলো বলে আসছিলো ভারতের মতো দেশে গণহারে পরীক্ষা সম্ভব নয়। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে কেরালায় ১৩ হাজারের বেশি পরীক্ষা হয়েছে। গোটা ভারতে যত পরীক্ষা হয়েছে তার ১০ শতাংশ এটি। দ্রুত রোগ শনাক্তকরণ কিটও ব্যবহার করছে রাজ্যটি। হটস্পটগুলোতে এ কিটগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে।

মহামারি পরিস্থিতি মোকাবিলায়  ২৬০ কোটি ডলার মূল্যের অর্থনৈতিক প্যাকেজও ঘোষণা করেছে কেরালা সরকার। স্কুল শিক্ষার্থীদের মাঝে কাঁচা অবস্থায় লাঞ্চ পৌঁছে দেওয়া, বাড়িতে বাড়িতে ইন্টারনেট সুবিধা অব্যাহত রাখতে সার্ভিস প্রোভাইডারদের সঙ্গে সমন্বয় করার কাজ করেছে তারা। দুই মাসের পেনশন অগ্রিম দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার।

এত কিছুর পরেও সরকার নিশ্চিন্তে বসে নেই। কেরালা থেকে করোনা একেবারে নির্মূল হয়ে যায়নি বলেও সতর্ক রয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী শাইলাজা। তিনি বলেন, ‘এখন প্রকোপ কমেছে, কিন্তু আগামি সপ্তাহে পরিস্থিতি কী হবে তা তো আমরা আগে থেকে বলতে পারি না।’ 

/এফইউ/বিএ/
সম্পর্কিত
চীনের হাসপাতালে চালু হলো ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস ওয়ার্ড
আদানির ৪৩ কোটি ডলার বকেয়া শোধ করেছে বাংলাদেশ: পিটিআই
চীনের প্রভাব মোকাবিলায় ওয়াশিংটনে কোয়াড বৈঠক, প্রশ্নের মুখে ঐক্য
সর্বশেষ খবর
ভোট ছাড়াই চেয়ার দখল করতে বগুড়া চেম্বারের কার্যালয়ে তালা
বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিভোট ছাড়াই চেয়ার দখল করতে বগুড়া চেম্বারের কার্যালয়ে তালা
ফিরে দেখা: ৩ জুলাই ২০২৪
ফিরে দেখা: ৩ জুলাই ২০২৪
টিভিতে আজকের খেলা (৩ জুলাই, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (৩ জুলাই, ২০২৫)
কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় এনসিপির তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ
কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় এনসিপির তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ
সর্বাধিক পঠিত
নবম পে-কমিশন গঠনের কার্যক্রম শুরুর আশ্বাস অর্থ উপদেষ্টার
সংযুক্ত কর্মচারী প‌রিষ‌দের জরু‌রি সভানবম পে-কমিশন গঠনের কার্যক্রম শুরুর আশ্বাস অর্থ উপদেষ্টার
বরখাস্ত হলেন সেই ম্যাজিস্ট্রেট তাবাসসুম ঊর্মি
বরখাস্ত হলেন সেই ম্যাজিস্ট্রেট তাবাসসুম ঊর্মি
পরীক্ষার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, তদন্তে কমিটি
পরীক্ষার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, তদন্তে কমিটি
কার দোষে শ্রমবাজার বন্ধ হয় জানালেন আসিফ নজরুল
কার দোষে শ্রমবাজার বন্ধ হয় জানালেন আসিফ নজরুল
কেমন কেটেছিল ডিবি হেফাজতে ছয় সমন্বয়কের সাত দিন
কেমন কেটেছিল ডিবি হেফাজতে ছয় সমন্বয়কের সাত দিন