ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি নেতাদের ঘৃণাবাদী বক্তব্যের প্রতি পক্ষপাতের অভিযোগ ওঠার পর ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে তলবের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দিল্লি বিধানসভা। আম আদমি পার্টির নেতৃত্বাধীন বিধানসভার ‘শান্তি ও সম্প্রীতি’ বিষয়ক কমিটি ওই অভিযোগ খতিয়ে দেখবে। সোমবার (১৭ আগস্ট) বিধানসভার এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, আখি দাসসহ ফেসবুকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়ে তলব করবে এই কমিটি। পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু করতে এই সপ্তাহে বৈঠকে বসবে কমিটি। সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
গত শুক্রবার (১৪ আগস্ট) মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে অভিযোগ তোলা হয়, ভারতের ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপি নেতারা ঘৃণাবাদী বক্তব্য পোস্ট করলেও ব্যবস্থা নেয়নি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি। সংবাদমাধ্যমটির দাবি এক আইনপ্রণেতাসহ দলটির অন্তত তিন নেতার পোস্টকে ফেসবুকের কর্মীরা ‘ঘৃণাবাদী বক্তব্য সংক্রান্ত নিয়মের লঙ্ঘনকারী ও বিপদজনক’ বলে চিহ্নিত করে। তবে ভারতে ফেসবুকের পাবলিক পলিসি বিষয়ক শীর্ষ নির্বাহী আখি দাসের বিরোধিতার কারণে ওইসব পোস্টের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শুধু ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের অনুসন্ধানের পর ওইসব পোস্ট মুছে দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর অভিযোগ ওঠে বিজেপি নেতাদের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। রবিবার (১৬ আগস্ট) বিরোধী দল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে যৌথ পার্লামেন্টারি কমিটির মাধ্যমে এই অভিযোগ খতিয়ে দেখার দাবি তোলা হয়। তবে তা নিয়ে এখন পর্যন্ত মুখ খোলেনি ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি।
সোমবার ভারতের দিল্লি রাজ্য সরকারের পার্লামেন্টের (বিধানসভা) এক বিবৃতিতে বলা হয়, শান্তি ও সম্প্রীতি কমিটি ফেসবুকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখবে। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে কমিটির সামনে আখি দাসসহ ফেসবুকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে তলব করা হবে। প্রক্রিয়াটি এগিয়ে নিতে এই সপ্তাহে বৈঠকে বসবে কমিটি।’
এদিকে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতে কোম্পানির ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে- এমন আশঙ্কা থেকেই বিজেপি নেতাদের ঘৃণাবাদী বক্তব্যে নিজেদের প্লাটফর্মে অনুমোদন করেন ফেসবুক কর্মকর্তা আখি দাস। অভিযোগ সামনে আসার ভারতে অনলাইনে বিদ্রুপের শিকার হচ্ছেন ফেসবুকের এই নারী কর্মকর্তা। হত্যার হুমকি পাওয়ার অভিযোগে সোমবার পুলিশের কাছে মামলা দায়ের করেছেন তিনি।
আখি দাসের অভিযোগে পাঁচ জনের নাম উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘এ বছরের ১৪ আগস্ট বিকেল থেকে আমি জীবন ও শরীরের ওপর সহিংসতার হুমকি পাচ্ছি। অভিযুক্তদের ব্যক্তিদের বিরামহীন হয়রানিতে আমি চরম বিরক্ত। আমার ছবিসহ বিভিন্ন কন্টেন্ট স্পষ্টতই আমার জীবন ও শরীরের জন্য হুমকি স্বরুপ। ফলে আমি নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত।’
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিবৃতি দিয়ে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বাধ্য হয়েছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। কোম্পানিটির এক বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটিতে ঘৃণাবাদী বক্তব্য এবং সহিংসতায় উস্কানিমূলক কন্টেন্ট নিষিদ্ধ। কারো রাজনৈতিক অবস্থান কিংবা দলীয় অন্তর্ভুক্তি বিবেচনা ছাড়াই বিশ্বজুড়ে এই নীতি মেনে চলা হয় বলেও দাবি করা হয় ওই বিবৃতিতে। বলা হয়, ‘আমরা জানি আমাদের আরও অনেক কিছু করণীয় রয়েছে। আর তা বাস্তবায়নে উন্নতি করতে এবং নিরপেক্ষতা ও নির্ভুলতা নিশ্চিত করতে আমাদের প্রক্রিয়ার ওপর নিয়মিত নিরীক্ষণ চালানো হচ্ছে।’