করোনাভাইরাস সংক্রমণের চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপি ব্যবহার নিয়ে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তিদের রক্তরস অন্য আক্রান্তদের চিকিৎসায় ব্যবহারের এই পদ্ধতিটিকে গত রবিবার জরুরি অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার (২৪ আগস্ট) ডব্লিউএইচও জানিয়ে দিয়েছে, করোনা চিকিৎসায় এই পদ্ধতিটির কার্যকারিতা যে ‘একেবারেই কম’ তার প্রমাণ রয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্লাজমা চিকিৎসা এমন এক পদ্ধতি, যেখানে করোনা থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তির দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার পর তার দেহ থেকে প্লাজমা নিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দেওয়া হয়। এতে করে আক্রান্ত ব্যক্তি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় দীর্ঘদিন ধরেই পদ্ধতিটি ব্যবহার হয়ে আসছে। গত রবিবার গুরুতর করোনা আক্রান্তদের জন্য প্লাজমা চিকিৎসার অনুমোদন দেয় যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষ।
তবে সোমবার ডব্লিউএইচও’র প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথান জানিয়েছেন, কেবল অল্প কয়েকটি ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় প্লাজমা থেরাপি ফল দিয়েছে বলে দেখা গেছে। আর এখন পর্যন্ত যে প্রমাণ হাতে রয়েছে তাতে পরীক্ষামূলক ব্যবহারের বাইরে এর কার্যকারিতা যথেষ্ট আশ্বাসযোগ্য নয়। তিনি বলেন, কয়েকটি পরীক্ষায় কিছু সুফল দেখা গেলেও এসব পরীক্ষা খুবই সীমিত আকারের এবং সেগুলোর তথ্য এখন পর্যন্ত অসম্পূর্ণ।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই বিজ্ঞানী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এই মুহূর্তে এটির কার্যকারিতার প্রমাণ খুবই কম। সেকারণে আমাদের সুপারিশ হলো প্লাজমা থেরাপি এখনও পরীক্ষামূলক থেরাপি আর সুপরিকল্পিত ক্লিনিক্যান পরীক্ষার মাধ্যমে এর মূল্যায়ন চালিয়ে যাওয়া উচিত।’
প্লাজমা থেরাপির কার্যকারিতার প্রমাণ নিয়ে সাংঘর্ষিক তথ্য পাওয়া যায়। চীনের এক গবেষণায় দেখা গেছে করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের অবস্থার উন্নতি করতে ব্যর্থ হয়েছে থেরাপিটি। তবে আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, প্লাজমা থেরাপির ফলে কোভিড-১৯ রোগীদের মৃত্যুঝুঁকি কিছুটা হলেও কমে।
এমন বাস্তবতায় এই থেরাপির অন্য দিক নিয়েও সতর্ক করেন ডব্লিউএইচও’র সিনিয়র উপদেষ্টা ব্রুস আইলার্ড। তিনি মনে করেন, কার্যকারিতা ছাড়াও প্লাজমা থেরাপির অন্যান্য সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলোও বিবেচনায় রাখতে হবে। তিনি বলেন, ‘বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে।’ প্লাজমা থেরাপির পর সামান্য জ্বর থেকে শুরু করে ফুসফুসে ক্ষত পর্যন্ত পারে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সেকারণে ক্লিনিক্যাল পরীক্ষাগুলোর ফলাফল চরমভাবে গুরুত্বপূর্ণ।’