নতুন করে বলা নিষ্প্রয়োজন, দেশে রবীন্দ্রসংগীত চর্চার অন্যতম পথিকৃৎ কলিম শরাফী। পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিভিন্ন শাখায় তার সরব বিচরণ ছিল। নন্দিত এই শিল্পীর শততম জন্মদিন ছিল গত ৮ মে। এ উপলক্ষে দু’দিন পর ১০ মে বর্ণিল এক আয়োজন করেছিলেন তারই কন্যা আলিয়া শরাফী। সঙ্গে ছিল বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর।
বিশেষ এই আয়োজন নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে আলিয়া শরাফী জানান, একেবারে ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিজের অর্থায়নে তিনি অনুষ্ঠানটি করেছেন। বাবার শততম জন্মদিনকে স্মরণীয় করে রাখতেই তার এমন প্রচেষ্টা। উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এত সুন্দর অনুষ্ঠান হয়েছে, বলে বোঝাতে পারবো না। সবাই বলেছিল, এটা ম্যাজিক! অনুষ্ঠানের প্রতিটা দিক এত সুন্দরভাবে সাজানো গোছানো ছিল, প্রত্যেকে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল। এর জন্য আমি গত সাত মাস টানা পরিশ্রম করেছি। যেহেতু আমি দেশের বাইরে থাকি দীর্ঘ দিন ধরে, ফলে দেশের মানুষজনের সঙ্গে আমার যোগাযোগ খুবই কম। তাই এদিক-ওদিক অনেক ছুটোছুটি করতে হয়েছিল। তবু শেষমেশ সুন্দরভাবে অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হয়েছিল, এটা স্বস্তির।’
কলিম শরাফীকে নিয়ে একটি বইও প্রকাশ করেছেন আলিয়া শরাফী। যেটার নাম ‘আমার বাবা’। বইটি নিয়ে আলিয়া শরাফীর ভাষ্য, ‘এটা তার জীবনী নয়, তার জীবন নিয়ে। তিনি বাবা, দাদু, ভাই ইত্যাদি পরিচয়ে পরিবার-স্বজনের কাছে যেমন ছিলেন, সেসব দিক তুলে ধরা হয়েছে। আছে কিছু অদেখা ছবিও। সবমিলিয়ে যারা কলিম শরাফীকে জানতে চান, তাদের জন্য এটা চমৎকার একটা উপায় হতে পারে।’
সে দিনের অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা তার জীবন সম্পর্কে শুনেছি। এখানে যারা বসে আছেন, তারা সবাই আমার চেয়ে কলিম শরাফীকে কাছ থেকে জানতেন। আমার দূর থেকে চেনা, বিশেষ করে তার গলার স্বর দিয়ে। রবীন্দ্রনাথের গান শুনতে তো ভালো লাগে। কিন্তু সেই গান তার (কলিম শরাফী) গলায় শুনতে অন্যরকম লাগে। আমার কাছে সবসময় মনে হয়েছে, তার গায়কীতে রবীন্দ্রনাথের কথাগুলো জীবন্ত হয়ে ওঠে।’
কলিম শরাফীর সংগ্রামী জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন নাট্যজন ও নির্মাতা নাসির উদ্দীন ইউসুফ। তিনি বলেন, ‘এমন একজন গুণী শিল্পীকে নিয়ে কথা বলতে দাঁড়িয়েছি, যার সঙ্গে বাংলাদেশের পাহাড়ি জাতিসত্তার একটা বিশাল সম্পর্ক রয়েছে। আমরা কলিম শরাফীর ভক্ত গানের জন্য। কিন্তু তার একটি সংগ্রামী জীবন আছে। ১৯৪২ সালে ভারত ছাড় আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ছিলেন এবং কারাবন্দী হয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি রাজনীতিতে যেতে পারতেন, কিন্তু যাননি। তিনি বাংলাদেশে এসে এখানকার শেকড়ের সঙ্গে, সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান, জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান প্রমুখ।
জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের আয়োজনটি আরও স্মৃতিময় হয়ে ওঠে কলিম শরাফীকে নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে। যেটার নাম ‘পথে পথে দিলাম ছড়াইয়া’; এটি নির্মাণ করেছেন নিশাত জাহান রানা।
বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে ছিল সংগীত পরিবেশনা। এ দিন গান পরিবেশন করেছিলেন ফাহিম হোসেন চৌধুরী, কিশওয়ার কামাল, ডালিয়া নওশীন, মিজানুর রহমান তাসলিম, লুভা নাহিদ চৌধুরী, মহাদেব ঘোষ, শারমিন সাথী ইসলাম ও বুলবুল ইসলাম।