X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্তরাজ্যের নটিং হিল উৎসবেও এসিড হামলা

অদিতি খান্না, যুক্তরাজ্য
৩০ আগস্ট ২০১৭, ২০:৫৬আপডেট : ৩০ আগস্ট ২০১৭, ২০:৫৮

যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বার্ষিক নটিং   হিল উৎসবে এসিড হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই এসিড হামলায় তিন ব্যক্তি আহত হয়েছেন। হামলার পর আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি করতে গিয়ে দু’জন পদদলিত হয়েছেন। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড জানিয়েছে, উৎসবে যোগ দেওয়া মানুষদের লক্ষ্য করে কোনও ব্যক্তি ‘হালকা’ তরল এসিড ছুঁড়ে মারতে শুরু করে। এতে চামড়া পুড়ে যাওয়ায় তিনজনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের নটিং হিল উৎসবেও এসিড হামলা

যুক্তরাজ্যে পুলিশের ওপর বেশ কয়েকটি হামলার পর নটিং হিল উৎসবে এসিড হামলার ঘটনা ঘটলো। যদিও সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন স্থানে হামলার পর অবশ্য উৎসবেও এসিডসহ সহিংস হামলার আশঙ্কা করা হচ্ছিল।

প্রতিবছর আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে পশ্চিম লন্ডনে নটিং হিল উৎসব আয়োজিত হয়। মূলত ক্যারিবিয়ান সংস্কৃতির উদযাপনের অংশ হিসেবেই পালন করা হয় এই উৎসব। এ বছর ২৭ ও আগস্ট পালিত হয়েছে উৎসবটি। এতে গ্রেনফেল টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। উৎসবের পথেই পড়েছে গ্রেনফেল টাওয়ার।

মঙ্গলবার লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, উৎসবের দুই দিনে মোট ৩১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে এসিড হামলায় জড়িত সন্দেহে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।

উৎসবে উপস্থিত হওয়া এক ব্যক্তি হামলার পর বলেন, ‘আমি ও আমার বন্ধুরা যেখানে দাঁড়িয়েছিলাম সেখানেই অনেক মানুষ চিৎকার করতে ও দৌড়াতে শুরু করেন। পরে আমরাও তাদের সঙ্গে একই দিকে দৌড়াতে শুরু করি। কিছুক্ষণ পর আমরা থেমে যাই। এরপর আরও মানুষ আমাদের দিকে দৌড়ে আসে। তখন আমরা আবারও দৌড়াতে থাকি।’

সাম্প্রতিক সময়ে এসিড হামলার মতো সহিংস হামলার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে লন্ডন। সরকারি হিসাবে ২০১৪ সালে এসিড হামলার সংখ্যা দুইশর কম থাকলেও ২০১৬ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৪৩১।

মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ক্রেসিডা ডিক উৎসবে এসিড হামলাকে চূড়ান্ত নৃশংসতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা উদ্বিগ্ন। কারণ হামলার সংখ্যা বাড়ছেই।’

পুরো ইংল্যান্ডে এসিড ও দাহ্য পদার্থ দিয়ে হামলার সংখ্যা ২০০০ সালের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৭ সালে ছয় মাসেই হামলা হয়েছে চারশটি।

উদ্বেগজনক আরেকটি ঘটনা ঘটেছে ওয়েস্ট ইয়র্কশায়ারে। ব্রডফর্ড এলাকার ম্যানিংহাম এলাকায় মুসলিমদের ওপর এসিড হামলার হুমকি দিয়ে বেনামি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিগুলোতে মুসলিমদের হত্যা ও কেউ বোরকা পরলে এসিড হামলার হুমকি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, যারা আপনাদের স্কয়ার ও ব্রডফর্ডসহ অন্যান্য স্থানে হাস্যকর কালো মুখোশ পরবে, তাদের ওপর এসিড দিয়ে হামলা চালানো হবে।

এই ঘটনায় পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, বিষয়টিকে তারা গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছে। মুসলিম অধ্যুষিত হ্যানোভার স্কয়ার এলাকায় পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। গত সপ্তাহে দুই বাসিন্দা এই বেনামি হুমকি পাওয়ার পর এসব পদক্ষেপ নিয়েছে পুলিশ।

যুক্তরাজ্যের নটিং হিল উৎসবেও এসিড হামলা

ওয়েস্ট ইয়র্কশায়ার পুলিশের মুখপাত্র জানান, এই ঘটনায় বড় ধরনের তদন্ত শুরু হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তারা স্থানীয় কমিউনিটিকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করছে। এই অপরাধে জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

মুখপাত্র বলেন, বিদ্বেষমূলক অপরাধ ও হামলায় আমাদের কমিউনিটি ও ব্যক্তির ওপর যে প্রভাব পড়বে তা আমরা বুঝতে পারছি। এ ধরনের অপরাধ সহ্য করা হবে না।

অপরাধ বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, অপরাধী চক্রের সদস্যরা আগ্নেয়াস্ত্র ও ছুরির পরিবর্তে এসিডকে বেছে নিচ্ছে। আগ্নেয়াস্ত্র ও ছুরির তুলনায় এসিড বহন করা ও পুলিশের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখাও সহজ। এছাড়া এসিড হামলায় ভুক্তভোগীদের ওপর প্রভাব থাকে দীর্ঘদিন।

মিডলসেক্স ইউনিভার্সিটির ড. সিমন হার্ডিং বলেন, একসময় অস্ত্র হিসেবে এসিডের কথা সবার পরে মানুষ ভাবত। কিন্তু তালিকায় সবার আগেই থাকছে এসিড। তিনি বলেন, কোনও লেনদেনে সমস্যা হলে ও কারও কাছে অর্থ পাওনা থাকলে অপরাধী চক্রের সদস্যরা এসিড ব্যবহার করছে। ছুরি হাতে হামলা হচ্ছে হত্যা চেষ্টার অপরাধ। কিন্তু যদি এসিড হাতে কেউ গ্রেফতার হয়, তার বিরুদ্ধে শারীরিক জখমের অভিযোগ আনা হতে পারে।

এসিড হামলার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পর এ ধরনের হামলার ক্ষেত্রে করণীয় ও ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে চিকিৎসা পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। রয়্যাল কলেজ অব এমার্জেন্সি মেডিসিন ও বার্টস হেলথ এনএইচএস ট্রাস্ট ‘ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল’-এ লিখেছে, হামলার শিকার ব্যক্তির পোশাক দ্রুত পাল্টে ফেলতে হবে। শরীরের আক্রান্ত স্থানে প্রচুর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব। আক্রান্তদের প্লাস্টিক সার্জারির প্রয়োজন হবে।

ওই নিবন্ধে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে এসিড হামলার সংখ্যা অনেক বেড়েছে। আগের হামলাগুলো বেশিরভাগই ছিল ডাকাতির সময়। কিন্তু এখন হামলার অস্ত্র হিসেবে ছুরির বদলে এসিড ব্যবহার করা হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যজুড়ে এসিড হামলার বেড়ে যাওয়ায় ব্রিটিশ এমপিরাও এই অপরাধ কঠোরভাবে মোকাবিলা করা নিয়ে বিতর্ক করছেন। আশা করা হচ্ছে, ব্রিটিশ সরকার এসিড বিক্রির বিরুদ্ধে অভিযান চালাবে।

 

/এএ/টিআর/
সম্পর্কিত
লন্ড‌নের মেয়র প‌দে হ্যাটট্রিক জ‌য়ের প‌থে সা‌দিক খান
গাজায় যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাজ্যকে পাশে চায় বাংলাদেশ
মার্কিন ও ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের ওপর ইরানের নিষেধাজ্ঞা
সর্বশেষ খবর
‘তীব্র গরমে’ মারা যাচ্ছে মুরগি, অর্ধেকে নেমেছে ডিম উৎপাদন
‘তীব্র গরমে’ মারা যাচ্ছে মুরগি, অর্ধেকে নেমেছে ডিম উৎপাদন
ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ করলো তুরস্ক
ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ করলো তুরস্ক
তিউনিসিয়ায় নৌকাডুবিতে মারা যাওয়া ৮ যুবকের লাশের অপেক্ষায় স্বজনরা
তিউনিসিয়ায় নৌকাডুবিতে মারা যাওয়া ৮ যুবকের লাশের অপেক্ষায় স্বজনরা
‘বাংলাদেশ ও ভারত একই লক্ষ্যে এগোচ্ছে’
‘বাংলাদেশ ও ভারত একই লক্ষ্যে এগোচ্ছে’
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
শিগগিরই শুরু হচ্ছে উন্মুক্ত কারাগার তৈরির কাজ: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
শিগগিরই শুরু হচ্ছে উন্মুক্ত কারাগার তৈরির কাজ: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী