X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১

নিউ ইয়র্ক টাইমসকে আবার শ্রেষ্ঠত্ব দিলেন ট্রাম্প!

বিদেশ ডেস্ক
২৫ নভেম্বর ২০১৬, ২০:৩৭আপডেট : ২৫ নভেম্বর ২০১৬, ২০:৩৭

নিউ ইয়র্ক টাইমসকে আবার শ্রেষ্ঠত্ব দিলেন ট্রাম্প! নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারণার স্লোগান ছিল ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’। অর্থাৎ, আমেরিকাকে আবারও মহিমান্বিত করুন। তবে অসাধারণ সাংবাদিকতা দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মিথ্যা ও প্রতারণার বেসাতি হাজির করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস। তারা সমালোচনামূলক বিষয়গুলোর গভীরে প্রবেশ করেছে। যেসব মার্কিন নাগরিক এসব তথ্য পেতে আগ্রহী বিষয়গুলো তাদের কাছে উপস্থাপন করেছে এ সংবাদমাধ্যম।

নির্বাচিত হওয়ার পর ট্রাম্প এখন আর শুধু সম্ভাব্য ক্ষমতাবান ব্যক্তি নন। এখন তিনি প্রকৃত অর্থেই ক্ষমতাবান। মঙ্গলবার নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নানা বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি।

ট্রাম্প প্রশাসনের চিফ অব স্টাফ-এর দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটির সভাপতি রেইন্স প্রিবাস। নিউ ইয়র্ক টাইমসের সূত্র বলছে, মঙ্গলবার নিউ ইয়র্ক টাইমসের সঙ্গে ট্রাম্পের সাক্ষাৎকার বাতিলের চেষ্টা করেন রেইন্স প্রিবাস। কারণ প্রিবাসের উদ্বেগ ছিল ট্রাম্প হয়তো এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে পারেন যার উত্তর দিতে তিনি প্রস্তুত নন। শেষ পর্যন্ত ওই সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন নিউ ইয়র্ক টাইমসের সম্পাদক ডিন ব্যাকুয়েট।

ডিন ব্যাকুয়েট: আপনি এদেশের অনেক মানুষকে সক্রিয় করেছেন যারা আসলেই ওয়াশিংটনে একটা পরিবর্তন দেখতে আগ্রহী। কিন্তু এর পাশাপাশি এটা আপনার জন্য একটা চতুর বিষয় তৈরি করতে যাচ্ছে। আপনি স্বল্প সংখ্যক এমন কিছু মানুষকেও সক্রিয় করেছেন যারা চলতি সপ্তাহে ওয়াশিংটনে উগ্র ডানপন্থীরা (যুক্তরাষ্ট্রের নব্য নাৎসীবাদী গ্রুপ যারা ট্রাম্পের জয়ে তাকে নাৎসী স্যালুট দিয়েছিল) সম্মেলনে এর প্রমাণও দিয়েছেন। যাদের খুব...

ট্রাম্প: আমি আজকেই এটা দেখলাম।

ডিন ব্যাকুয়েট: তাহলে আপনার কাছে আমি এটা শুনতে চাইবো যে, এ ধরনের গ্রুপের লোকজনকে আপনি কিভাবে ম্যানেজ করবেন? এটা হয়তো অপেক্ষাকৃত বড় কোনও গ্রুপ নয়; তবে আপনার কাছে তাদের একটা প্রত্যাশা রয়েছে। এই দেশ নিয়ে তাদের ক্ষোভ আছে এবং পাশাপাশি তাদের বর্ণবাদী বক্তব্যও রয়েছে। আমার প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, আপনি কি এটা মনে করেন যেমনটা আপনি বলছিলেন যে, তারা সুনির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি? আপনি কিভাবে এ বিষয়টি ম্যানেজ করবেন?

এমন প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্প সম্ভত বলেছেন, ‘আমি এ গ্রুপকে অস্বীকার করি।’ নব্য নাৎসীবাদীরা কেন তাকে ভালোবাসে এ বিষয়ে নিজের কোনও ধারণা নেই বলেও জানান ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, যেটা ঘটছে এটা তার দোষ নয়।

তবে বাকুয়েট এ বিষয়ে আরও ভালো প্রশ্ন করতে পারতেন। তার প্রশ্নটি হতে পারত এ রকম:

২০০৮ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার সময় বারাক ওবামা জাতীয়ভাবে টেলিভিশনে এক ভাষণে তার চার্চের প্যাস্টর জেরেমিয়াহ রাইটকে অস্বীকার করেছিলেন। ওবামা ব্যাখ্যা করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের বর্ণবাদী ইতিহাসের প্রেক্ষিতে তার অবস্থান। আপনিও (ট্রাম্প) কি একই ধরণের ভাষণ দিয়ে গোড়া ও শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী, যারা আপনাকে ব্যাপকভাবে সমর্থন জানাচ্ছে তাদের অস্বীকার করবেন?

অপর সম্পাদক ও প্রতিবেদকদের প্রশ্নগুলোর বেশিরভাগ (সব নয়) ছিল এরকমই খারাপ। থমাস ফ্রেইডম্যানের প্যাচানো ও বালিশের মতো নরম অনুসন্ধান ট্রাম্পকে উন্মোচিত করার সুযোগ নষ্ট করেছে। ফ্রেইডম্যান নিজেকে খুব প্রভাবশালী মনে করেন।

ফলো-আপ সামান্য

ট্রাম্প ইতোমধ্যে প্রমাণ করেছেন যে তিনি প্রশ্নের জবাব দেন না। তিনি মুখ খোলেন এবং তার মাথায় যা থাকে তা বলতে থাকেন। এরপরও নিউ ইয়র্ক টাইমসের কর্মীরা এ বিষয়ে অপ্রস্তুত ছিলেন।

যেমন, হোয়াইট হাউস প্রতিনিধি জুলি ডেভিস ট্রাম্পকে স্টিভ ব্যানন সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। ব্যানন ব্রেইটবার্ট নিউজ-এর চেয়ারম্যান এবং ট্রাম্পের প্রধান হোয়াইট হাউস কৌশলবিদ হচ্ছেন। জুলির প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, আমি যদি মনে করতাম তিনি একজন বর্ণবাদী কিংবা উগ্র ডানপন্থী অথবা আমরা যা করতে পারি, শব্দটা আপনি জানেন; আমি তাকে নিয়োগ দিতাম না।

  ডোনাল্ড ট্রাম্প

ট্রাম্পের এ জবাবের পর জুলি জিজ্ঞেস তুলে ধরেননি যে মাত্র চার মাস আগে ব্যাননের অধীনে ব্রেইটবার্ট নিজেদের উগ্র-ডানপন্থী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

একইভাবে কেউ-ই জিজ্ঞেস করেননি কেন ট্রাম্পের কাছে তার কোম্পানি গুরুত্বপূর্ণ নয়। কেন ট্রাম্প কোনও ট্রাস্টের কাছে তার সম্পদ হস্তান্তর করবেন না কিংবা কেন তিনি মনে করেন তার আবাসন প্রকল্পগুলো বিক্রি করা সম্ভব নয়।

টাইমসের প্রতিবেদক মাইকেল বারবারো চেষ্টা করেছিলেন ট্রাম্প সাম্রাজ্য নিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা জানতে। কিন্তু বারবারো ব্যর্থ হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত বারবারো জিজ্ঞেস করতে বাধ্য হন যে, আপনি কি প্রতিশ্রুতি দিতে পারেন যে যখন সিদ্ধান্ত নেবেন তা নিউ ইয়র্ক টাইমসকে জানাবেন?

গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হয়নি

বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা যেত। কিন্তু করা হয়নি। সেগুলোর মধ্যে কয়েকটা হতে পারত:

কংগ্রেসের রিপাবলিকানরা যদি সামাজিক নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা অথবা বেসরকারিকরণের বিল আনে, তাহলে আপনি কি ভেটো দেবেন।

আয়কর নিয়ে আপনার পরিকল্পনায় এক সন্তানের অভিভাবকদের কর বাড়বে। অথচ আপনি যখন নিজের সম্পদ ছেলে-মেয়েদের হাতে তুলে দিচ্ছেন তখন কর দিচ্ছেন না। এটা কি নিরপেক্ষ?

প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে আপনি বলেছেন অবশ্যই আপনি আইনের ফাঁকগলে কর দেওয়া থেকে নিজেকে বিরত রেখেছেন। এখন কি আপনি আইনের এসব ফাঁকফোপর বন্ধ করবেন?

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে মাইকেল ফ্লিনকে আপনি নিয়োগ করছেন, যিনি বলেছেন মুসলিমদের নিয়ে আতঙ্ক যৌক্তিক এবং একটি ভিডিওতে জানিয়েছেন, ইসলাম চায় ৮০ শতাংশ মানবিকতা হারিয়ে যাক। আপনি কি তার সঙ্গে একমত?

জাতীয় নিরাপত্তা এজেন্সির পরিচালক উইকিলিকসকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, বেশ কয়েকজন ডেমোক্র্যাট নেতার ইমেইল হ্যাক করা হয়েছে এটি রাষ্ট্র দ্বারা। আপনি এ বিষয়ের প্রমাণ প্রকাশ করবেন এবং যা ঘটেছে তারে জন্য কংগ্রেসশনাল তদন্ত সমর্থন করবেন?

অপর সংবাদমাধ্যমে ইচ্ছে মতো কাভারেজ

নিউ ইয়র্ক টাইমসে ট্রাম্পের সাক্ষাৎকার নিয়ে লস অ্যাঞ্জেলস টাইমস শিরোনাম করেছে, গুরুত্বপূর্ণ তিনটি ইস্যু: জলবায়ু, নির্যাতন ও হিলারির বিচার নিয়ে অবস্থান পরিবর্তন ট্রাম্পের।

অপর শিরোনামগুলোর মধ্যে রয়েছে, নিউ ইয়র্ক টাইমসের সঙ্গে বৈঠকে জলবায়ু পরিবর্তন, হিলারি ক্লিনটন নিয়ে মনোভাব পরিবর্তন ডোনাল্ড ট্রাম্পের, আশ্চর্যজনকভাবে ট্রাম্প জিজ্ঞাসাবাদে নির্যাতন নিয়ে নিজের অবস্থান পরিবর্তন করেছেন, ক্লিনটনে নিয়ে অবস্থান পাল্টালেন ইত্যাদি।

যদিও এসব খবরে সংশ্লিষ্ট তথ্য দেওয়া হয়েছে নবম অনুচ্ছেদে। যারা শুধু সারাংশটা পড়বেন তারা অনেক ভুল তথ্য দ্বারা প্রভাবিত হবেন।

প্রথমত ট্রাম্পের বলা মানে কোনও কিছু সুনির্দিষ্ট করে বলা নয়। ট্রাম্প সমর্থক পিটার থিয়েল এটাকে বিকানোর একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।

দ্বিতীয়ত, ট্রাম্প সত্যিকার অর্থে এসব ইস্যুতে তার মত পরিবর্তনের কথা বলেননি।

সত্যিকার অর্থে ট্রাম্প বলেছেন, তার সম্ভাব্য প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস জানিয়েছেন জিজ্ঞাসাবাদে নির্যাতন ফিরিয়ে আনার ধারণাটা মারাত্মক হবে। আমি বলছি না যে আমি মত পাল্টেছি।

হিলারি ক্লিনটনের বিচার সম্পর্কে এবং বিচার প্রক্রিয়া চালিয়ে না যাওয়া প্রসঙ্গেও ট্রাম্প স্পষ্ট করে কিছু জানাননি।

বৈশ্বিক উষ্ণতা সম্পর্কে ট্রাম্প বলেন, আমি যে কোনও মত গ্রহণে রাজি এবং আমি মনে করি মানুষের কর্মকাণ্ড ও জলবায়ুর কোনও যোগসূত্র আছে। হতে পারে এটা ট্রাম্পের নতুন উপলব্ধি। কারণ এর আগে তিনি চীনকে বৈশ্বিক উষ্ণতার জন্য দায়ী করেছেন। আবার নাও হতে পারে।

তাই, সম্ভাব্য সব দিক বিবেচনা করে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ভালো কর্পোরেট মিডিয়া প্রতিষ্ঠান ভয়াবহভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এটা প্রমাণ করে যে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সংগঠক মারিয়ামে কাবাই সঠিক ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলো ট্রাম্প ও তার সমর্থকদের ঠেকাতে পারবে না। তাদের উপর আস্থা আপনাদের উচিত না। সূত্র: দ্য ইন্টারসেপ্ট।

/এমপি/এএ/

সম্পর্কিত
এ বছর পুলিৎজার পেলো ৩ সংবাদমাধ্যম
পুতিনের পঞ্চম মেয়াদের শপথ অনুষ্ঠান বয়কট করলেন পশ্চিমা নেতারা
ইসরায়েলকে অস্ত্রের চালান দেওয়া স্থগিত করলো যুক্তরাষ্ট্র?
সর্বশেষ খবর
প্রকল্প নেওয়ার আগে জনগণের উপকার বিবেচনার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
প্রকল্প নেওয়ার আগে জনগণের উপকার বিবেচনার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
গাবতলীতে হবে মাল্টি মোডাল বাস টার্মিনাল: স্থানীয় সরকারমন্ত্রী
গাবতলীতে হবে মাল্টি মোডাল বাস টার্মিনাল: স্থানীয় সরকারমন্ত্রী
নির্বাচনের আগের দিন ফরিদপুরের উপজেলা চেয়ারম্যানপ্রার্থী শামসুল আলম কারাগারে
নির্বাচনের আগের দিন ফরিদপুরের উপজেলা চেয়ারম্যানপ্রার্থী শামসুল আলম কারাগারে
সব কর্মচারীর জন্য আবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে: মেয়র তাপস
সব কর্মচারীর জন্য আবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে: মেয়র তাপস
সর্বাধিক পঠিত
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
ছাত্রলীগ সহসভাপতি সাদ্দামের বছরে আয় ২২ লাখ, ব্যাংকে ৩২ লাখ, উপহারের স্বর্ণ ৩০ ভরি
হরিরামপুর উপজেলা নির্বাচনছাত্রলীগ সহসভাপতি সাদ্দামের বছরে আয় ২২ লাখ, ব্যাংকে ৩২ লাখ, উপহারের স্বর্ণ ৩০ ভরি
বৃষ্টি ও বন্যার কী পূর্বাভাস পাওয়া গেলো?
বৃষ্টি ও বন্যার কী পূর্বাভাস পাওয়া গেলো?
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, অগ্রহণযোগ্য বলছে ইসরায়েল
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, অগ্রহণযোগ্য বলছে ইসরায়েল