X
বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
১২ আষাঢ় ১৪৩২

যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থি রাজনীতি জোরদার করলো মামদানির নিউ ইয়র্ক জয়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৬ জুন ২০২৫, ১৮:১৬আপডেট : ২৬ জুন ২০২৫, ১৮:৩১

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র পদপ্রার্থী জোহরান মামদানি ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে বড় জয় পেয়েছেন। মঙ্গলবার (২৪ জুন) অনুষ্ঠিত ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে মামদানি বিরোধী অ্যান্ড্রু কুয়োমোর চেয়ে সাত শতাংশ পয়েন্টেরও বেশি এগিয়ে আছেন। যদিও এখনও আনুষ্ঠানিক ফলাফল প্রকাশিত হয়নি। তবে প্রায় সব ভোট গণনা হয়ে গেছে। ফলে তার মনোনয়ন নিশ্চিত বলেই ধরা হচ্ছে।

কুয়োমো ইতোমধ্যে পরাজয় স্বীকার করেছেন এবং মামদানি বিজয় ঘোষণা করেছেন, যা তাকে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শহরের পরবর্তী মেয়র হিসেবে প্রতিষ্ঠার পথে এগিয়ে দিয়েছে। প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ মামদানির এই বিজয় শুধু স্থানীয় রাজনীতির এক মাইলফলক নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থি রাজনীতির জন্য এক বড় সাফল্য বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

মেয়র প্রার্থী মামদানি নিউ ইয়র্ককে বদলে দেওয়ার জন্য বেশ কিছু সাহসী পরিকল্পনা দিয়েছেন— যেমন: সরকারি মালিকানাধীন গ্রোসারি দোকান চালু, আরও ঘর নির্মাণ, বাস ভাড়া সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করা এবং ভর্তুকিপ্রাপ্ত ভাড়াটিয়াদের জন্য ভাড়া স্থির রাখা। তবে ভোটের আগে তার এসব পরিকল্পনার চেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল ফিলিস্তিন-ইসরায়েল প্রসঙ্গে তার অবস্থান।

মামদানি শুরু থেকেই ফিলিস্তিনিদের অধিকার সমর্থন করে এসেছেন। তিনি গাজার ওপর ইসরায়েলের হামলাকে ‘গণহত্যা’ বলে আখ্যায়িত করেন, যা মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মূল্যায়নের সাথেও সংগতিপূর্ণ। তার এই স্পষ্ট অবস্থানের কারণে সমালোচনার মুখে পড়লেও তিনি পিছু হটেননি। বরং দৃঢ় অবস্থান নিয়েই সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমোর মতো প্রভাবশালী প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে দেন। অথচ কুয়োমো প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বেশি সমর্থিত ছিলেন এবং তাকে রেকর্ড পরিমাণে অর্থায়ন করা হয়েছিল।

মামদানির সমর্থকদের মতে, তার এই বিজয় যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে—যা প্রমাণ করে যে বামপন্থি নীতিমালা ও ফিলিস্তিনপন্থি অবস্থানও নির্বাচনে কার্যকর হতে পারে।

জাস্টিস ডেমোক্র্যাটস নামের প্রগতিশীল দলের মুখপাত্র উসামাহ আন্দ্রাবি বলেছেন, ‘এটি এক বিরাট ঘটনা।’

নিউ ইয়র্ক সিটির র‍্যাঙ্কড-চয়েস ভোটিং পদ্ধতির পরবর্তী ধাপের গণনায় তার ব্যবধান আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া নিউ ইয়র্ক মূলত ডেমোক্র্যাটিক প্রভাবসম্পন্ন শহর। তাই একবার ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন নিশ্চিত হলে, সাধারণ নির্বাচনে জেতা অনেকটাই সহজ। সেই হিসেবে মামদানির নভেম্বরে মেয়র হওয়া প্রায় নিশ্চিত বলেই ধারণা করা হচ্ছে- যা ফেব্রুয়ারিতে যখন তার জনসমর্থন ছিল মাত্র ১ শতাংশ, তখন প্রায় অসম্ভব বলে মনে হয়েছিল।

ডিজিটাল মিডিয়া ব্যবহারে দক্ষ, ক্যারিশমেটিক ও সহজপ্রাপ্য মামদানি- ৩৩ বছর বয়সী রাজ্য আইনপ্রণেতা-ভাইরাল ভিডিও ও নিউ ইয়র্কের রাস্তায় তৃণমূল প্রচারণার মাধ্যমে নিজের সমর্থন বাড়াতে শুরু করেন। তিনি উগান্ডায় জন্মগ্রহণ করেন, তবে তার পিতামাতার শিকড় ভারতীয়। ২০২১ সাল থেকে তিনি নিউ ইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির সদস্য।

তার নির্বাচনি প্রচারণা ছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দারুণভাবে সক্রিয়, সরাসরি জনগণের সাথে কথা বলে তাদের মন জয় করেছেন। হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবক তার পক্ষে দরজায় দরজায় গিয়ে প্রচার করেছেন।

নিউ ইয়র্কের সিটি ইউনিভার্সিটির সমাজতত্ত্বের অধ্যাপক হেবা গোয়ায়েদ কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে বলেন, ‘ফিলিস্তিন নিয়ে নিজের অবস্থান থেকে পিছিয়ে না আসা একটা বিশাল ব্যাপার। তিনি যেভাবে ফিলিস্তিন প্রশ্নে পিছু না হটে অবস্থান ধরে রেখেছেন, তা তরুণদের আকৃষ্ট করেছে। যদি তিনি সমঝোতার পথে যেতেন, তাহলে এই জয় সম্ভব হতো না।’

তিনি আরও বলেন, ‘যদি মামদানি সমালোচকদের খুশি করতে নিজের অবস্থান পরিবর্তন করতেন, তাহলে তিনি যে উদ্দীপনা ও সমর্থন পেয়েছেন, তা হারিয়ে ফেলতেন। বরং ফিলিস্তিনের প্রতি তার সমর্থনই সম্ভবত তার প্রচারণাকে জোরদার করেছে।’

মামদানির ডেমোক্র্যাটিক মনোনয়ন পেতে লড়াই ছিল একপ্রকার অসম্ভব মনে হওয়া যুদ্ধ। তিনি কেবল অর্থের দিক থেকে পিছিয়েছিলেন না, তার পরিচিতিও ছিল খুবই কম।

তার প্রতিদ্বন্দ্বী কুয়োমো ছিলেন নিউ ইয়র্কের রাজনৈতিক রাজবংশের একজন সদস্য ও সাবেক গভর্নর — যাকে অনেকেই চেনেন।

কুয়োমো তার প্রচারণায় ইসরায়েলপন্থি অবস্থানকেই মূল বিষয় করে তুলেছিলেন। তিনি দাবি করেন, ফিলিস্তিনপন্থি বক্তব্য ইহুদি-বিরোধিতাকে উসকে দেয়। তিনি মামদানির বক্তব্যকে ঘিরে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং বলেছিলেন, ‘গণহত্যা’, ‘যুদ্ধাপরাধী’ এসব শব্দ ব্যবহারে ঘৃণা ছড়ায়।

কুয়োমোর পিতা মারিও ম্যাথিউ কুয়োমোও নিউ ইয়র্কের গভর্নর ছিলেন। নির্বাচনের আগে তিনি জাতীয় ডেমোক্র্যাটিক পার্টির গুরুত্বপূর্ণ কিছু ব্যক্তিত্বের সমর্থন পেয়েছিলেন—যার মধ্যে ছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও কংগ্রেসম্যান জিম ক্লাইবার্ন।

অন্যদিকে মামদানিকে সমর্থন দিয়েছিল ডেমোক্র্যাটিক সোশালিস্টস অব আমেরিকার নিউ ইয়র্ক শাখা। এ কারণেই মামদানির বিজয় তার সমর্থকদের জন্য এত বিস্ময়কর। এটি যেন এক দাউদ বনাম গোলিয়াত যুদ্ধ, পুরোনো গার্ড বনাম নতুন প্রজন্মের সংঘর্ষ।

একজন রাজ্য আইনপ্রণেতা হিসেবে মামদানি গাজার বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের বিরোধিতা করে মুখ খুলেছেন, যেখানে অন্তত ৫৬,০৭৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এমনকি ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে তিনি ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউজের বাইরে যুদ্ধবিরতির দাবিতে অনশন ধর্মঘটও করেন।

তবে মেয়র প্রার্থী হিসেবে তার প্রচারণার মূল ফোকাস ছিল স্থানীয় ইস্যুতে। তবুও যৌন হয়রানির অভিযোগে ২০২১ সালে গভর্নরের পদ থেকে পদত্যাগ করা কুয়োমো মামদানির ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বিষয়ে অবস্থানকে কেন্দ্র করে তার প্রচারণা চালাতে চেষ্টা করেন।

ফলে নির্বাচনি প্রচারণায় মামদানির ফিলিস্তিনপন্থী অবস্থান অনেক ভোটার, বিশেষ করে মুসলিম ও প্রগতিশীল ইহুদি তরুণদের উদ্দীপ্ত করেছে।

এদিকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর পক্ষে কাজ করা কুয়োমোর পক্ষে বিলিয়নিয়ার বিল অ্যাকম্যান ও মাইকেল ব্লুমবার্গের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তি ও সুপার প্যাক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ এসেছে। কিন্তু তারাও মামদানির গণভিত্তিকে হারাতে পারেননি।

জিউয়িশ ভয়েস ফর পিস অ্যাকশনের রাজনৈতিক পরিচালক বেথ মিলার বলেন, ‘মামদানির অবস্থান তাকে দুর্বল করেনি, বরং আরও শক্তিশালী করেছে। এটি দেখিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের মধ্যে ইসরায়েলের নিপীড়নমূলক নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি হচ্ছে।’

সূত্র: আল জাজিরা

/এস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
নিউ ইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে মুসলিম প্রার্থী কে এই মামদানি?
আইইপি বৈশ্বিক শান্তি সূচকে ৩৩ ধাপ পেছালো বাংলাদেশ
ডাকসুতে ইনক্লুসিভ প্যানেল দেবে বাগছাস
সর্বশেষ খবর
‘যে সংস্কারে সংবিধান পরিবর্তন হবে, সেটা নির্বাচনের আগে সম্ভব না’
‘যে সংস্কারে সংবিধান পরিবর্তন হবে, সেটা নির্বাচনের আগে সম্ভব না’
নিসাঙ্কাকে দেখে বাংলাদেশের ব্যাটারদের শিখতে বললেন সিমন্স
নিসাঙ্কাকে দেখে বাংলাদেশের ব্যাটারদের শিখতে বললেন সিমন্স
অবৈধ গুলি ও চোরাই গাড়ি উদ্ধারসহ গ্রেফতার ১
অবৈধ গুলি ও চোরাই গাড়ি উদ্ধারসহ গ্রেফতার ১
পিএসজির বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগে আইনি লড়াইয়ে এমবাপ্পে
পিএসজির বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগে আইনি লড়াইয়ে এমবাপ্পে
সর্বাধিক পঠিত
৮ আগস্ট ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ ঘোষণা নিয়ে ক্ষোভ হাসনাত-সারজিসের
৮ আগস্ট ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ ঘোষণা নিয়ে ক্ষোভ হাসনাত-সারজিসের
মাসদার হোসেন মামলার রিভিউ আবেদনের রায় রবিবার
মাসদার হোসেন মামলার রিভিউ আবেদনের রায় রবিবার
মব না, এটি প্রেসার গ্রুপ: প্রেস সচিব
মব না, এটি প্রেসার গ্রুপ: প্রেস সচিব
সারজিস আলমের পোস্টের পর সেই সাব-রেজিস্ট্রারের অফিসে দুদকের অভিযান
সারজিস আলমের পোস্টের পর সেই সাব-রেজিস্ট্রারের অফিসে দুদকের অভিযান
কনা দিলেন বিচ্ছেদের খবর, স্বামী বললেন ‘না’!
কনা দিলেন বিচ্ছেদের খবর, স্বামী বললেন ‘না’!