X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

সর্দি-কাশি দীর্ঘায়িত হচ্ছে কেন?

সাদ্দিফ অভি
৩০ মার্চ ২০২৪, ২৩:৫৯আপডেট : ৩১ মার্চ ২০২৪, ০১:১৬

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী ফারুক আহমেদ ১৬ দিন ধরে ঠান্ডাজনিত রোগে ভুগছেন। মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে তার সর্দি-কাশি ও শরীরে ব্যথা শুরু হলেও, তা স্বাভাবিক হতে সময় লেগেছে দুই সপ্তাহের বেশি। ঠান্ডা কাশিজনিত অসুস্থতার এমন ধরন নিয়ে বেশ চিন্তিত ফারুক।

তিনি বলছেন, অফিসকে জানালাম ঠান্ডা কাশি লেগেছে। তাদের প্রশ্ন, ‘এত দিন ধরে কেন?’ আমিও কোনও উত্তর দিতে পারিনি। সাধারণত তিন থেকে চার দিনেই আগে ভালো হয়ে যেত। ওষুধও কাজ করছে না বলে মনে করেন তিনি।

প্রচলিত আছে, আবহাওয়া বদলালে ঠান্ডা কাশি লেগে যায় এবং সেটি বেশ কিছুদিন স্থায়ী হয়। সাধারণ গরম থেকে ঠান্ডা কিংবা ঠান্ডা থেক গরম মৌসুমে প্রবেশের সময় এই ধরনের মৌসুমি ফ্লুতে মানুষ আক্রান্ত হয়। তবে বেশ কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে ব্যতিক্রম। অনেকেরই সর্দি-কাশি হচ্ছে, তবে তা সম্পূর্ণ সারতে সময় লাগছে কয়েক সপ্তাহ, এমনকি মাসও। চিকিৎসকরা এ নিয়ে দ্বিধার মধ্যে আছেন। সন্দেহ আছে নতুন ধরনের ভাইরাস নিয়ে। তবে সেই সম্পর্কে জানেন না কেউই।

চিকিৎসকদের মতে, সাধারণ সর্দিজ্বর ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। একসময় ধারণা করা হতো একটি বিশেষ ক্যাটাগরির ভাইরাসের মাধ্যমেই শুধু সর্দি হয়। তবে আশির দশকে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হন যে মোট সাতটি ক্যাটাগরির ভাইরাসের কারণে সর্দিজ্বর হয়ে থাকে। ঠান্ডার মৌসুমে বা শীতের সময় এই ভাইরাসগুলো দ্রুত সংক্রমিত হওয়ার মতো পরিবেশ পায় বলে শীতের সময় সর্দি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায় এবং শীতের সময় মানুষের বেশি সর্দি হওয়ার আশঙ্কাও থাকে।

অন্যদিকে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের মাধ্যমে সংক্রমিত হওয়া ফ্লু ও সর্দিজ্বরের উপসর্গ একই হওয়ায় এই দুই রোগের মধ্যে পার্থক্য করা অনেক সময় অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই পরীক্ষা ছাড়া এ ক্ষেত্রে বোঝার উপায় নেই। তবে বছরব্যাপী ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণ নজরদারি করে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)।

প্রতিষ্ঠানটির গত জানুয়ারির মনিটরিং প্রতিবেদন বলছে, সারা দেশের ১০টি বিভাগীয় হাসপাতাল থেকে সংগ্রহ করা ৫০৬টি নমুনার মধ্যে কোনও প্রকার ফ্লুর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তবে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে এই সময়ে।

প্রতিষ্ঠানটির বছরব্যাপী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এই বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত পরীক্ষা করা ১১ হাজার ১৬৫ নমুনার মধ্যে মাত্র ৮ দশমিক ১১ শতাংশে বিভিন্ন ধরনের ফ্লু পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জা ‘এ’ এবং ‘বি’ সংক্রমণের হার বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চার ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস রয়েছে, সেগুলো হচ্ছে এ, বি, সি এবং ডি ইনফ্লুয়েঞ্জা। এ এবং বি ভাইরাস যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় প্রতি শীতকালে মানুষের মধ্যে রোগের মৌসুমি মহামারি সৃষ্টি করে, জেটি ফ্লু মৌসুম হিসেবে পরিচিতি। ইনফ্লুয়েঞ্জা এ ভাইরাস হচ্ছে একমাত্র ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, যা ফ্লু মহামারি সৃষ্টি করতে পরিচিত।

প্রতিষ্ঠানটির মতে, একটি মহামারি দেখা দিতে পারে, যখন একটি নতুন এবং ভিন্ন ইনফ্লুয়েঞ্জা ‘এ’ ভাইরাস আবির্ভূত হয়, যা মানুষকে সংক্রমিত করে, মানুষের মধ্যে দ্রুততার সঙ্গে ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে এবং যার বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিরোধক্ষমতা খুব কম বা কোনও প্রতিরোধক্ষমতা নেই। ইনফ্লুয়েঞ্জা সি ভাইরাস সংক্রমণ সাধারণত হালকা অসুস্থতা সৃষ্টি করে এবং মানুষের মহামারি সৃষ্টি করে বলে মনে করা হয় না। ইনফ্লুয়েঞ্জা ডি ভাইরাসগুলো প্রাথমিকভাবে গবাদিপশুসহ অন্যান্য প্রাণীতে ছড়িয়ে পড়ে। তবে মানুষকে সংক্রামিত করতে পারে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ আরাফাত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এই মুহূর্তে যে নতুন ‘ভাইরাস’ চলছে, সেটির লক্ষণগুলো অন্য রকম। কাশি, সর্দি, জ্বর, শরীর ব্যথা থাকছেই। কোনও ভাইরাসের কারণে সুনির্দিষ্টভাবে এমন হচ্ছে, এটা বলা কঠিন। আমাদের দেশে সাধারণত ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসে আক্রান্ত হয় মানুষ। 

তিনি আরও বলেন, আইইডিসিআর সারভেইলেন্স করে দেখেছে যে ১ থেকে ২ শতাংশ মানুষের মধ্যে তা হয়। নতুন ধরনে দেখা যাচ্ছে যে সংক্রমণের পর আমাদের গলার সংবেদনশীলতা বেড়ে যায়। যার জন্য কাশি তৈরি হচ্ছে। আবার অনেকের আগে থেকে এলার্জি কিংবা শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রে হচ্ছে। সুতরাং সুনির্দিষ্ট করে বলা খুব কঠিন, কেন হচ্ছে।

যে ভাইরাসের কারণে হচ্ছে, সেটির নির্দিষ্ট নাম আমরা জানি না। এই ভাইরাস নিয়ে ভবিষ্যতে হয়তো কাজ করে কিছু জানাতে পারবে আইইডিসিআর। তবে এই ভাইরাসের কারণেই দীর্ঘায়িত হচ্ছে সর্দি-কাশি, বলেন তিনি।

প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, সর্দি-কাশি দীর্ঘায়িত হওয়ার পেছনে আমরা কয়েকটি কারণ ভাবছি। তার মধ্যে একটি হচ্ছে, যে ভাইরাসের কারণে ফ্লু বা ঠান্ডা কাশি হচ্ছে, এর বোধহয় কোনও রূপান্তর বা মিউটেশন হয়েছে। যে কারণে এবারের ঠান্ডা কাশি দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, করোনার পর যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছিল, তাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ও শ্বাসতন্ত্রীয় ব্যবস্থায় নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে। এ নিয়ে অবশ্য দেশে কোনও গবেষণা হয়নি। ফলে ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে মানুষের ঠান্ডা কাশি সহজে যাচ্ছে না।

আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন বলেন, আমরা ইনফ্লুয়েঞ্জার যে সারভেইলেন্স করি, সেখানে এখনও সেভাবে মৌসুম শুরু হয়নি। আর সব তো আমরা করি না, অন্য যেসব ইভেন্ট নির্ভর সারভেইল্যান্স আসে, সে ক্ষেত্রে দেখা যায় বেশির ভাগই আইসিইউ রোগীর নমুনা আসে। সুতরাং ওখানের প্রাপ্ত তথ্য তো আর সাধারণ জনসংখ্যার মতো হবে না। এ ক্ষেত্রে হয়তো নতুন ধরনের ভাইরাস নয়।

তিনি আরও বলেন, আইইডিসিআর সবকিছু করে না, সেই সক্ষমতাও আমাদের নেই। শুধু আমাদের কেন, কোনও দেশেই সম্ভব নয়। আমরা যেসব বিষয় দেখি বা আমাদের সারভেইলেন্সের মধ্যে প্রাদুর্ভাব কিংবা সংখ্যায় বেশি, তেমন কিছু আমরা দেখছি না।

/এনএআর/
সম্পর্কিত
ধানমন্ডিতে ছাদ থেকে পড়ে গৃহকর্মী আহত 
জোরে সালাম শুনেই ঘাড় ফিরিয়ে উত্তর দেন খালেদা জিয়া
বাসায় ফিরেছেন খালেদা জিয়া
সর্বশেষ খবর
প্রথমবার মেজর লিগ সকারের প্লেয়ার অব দ্য মান্থ মেসি
প্রথমবার মেজর লিগ সকারের প্লেয়ার অব দ্য মান্থ মেসি
গাজায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে ১৪১
গাজায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে ১৪১
উদ্বোধক মেরিল স্ট্রিপ, পাচ্ছেন স্বর্ণপাম
কান উৎসব ২০২৪উদ্বোধক মেরিল স্ট্রিপ, পাচ্ছেন স্বর্ণপাম
রাজধানীতে মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ২৯
রাজধানীতে মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ২৯
সর্বাধিক পঠিত
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ