X
বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫
২ শ্রাবণ ১৪৩২

হল ত্যাগ না করার সিদ্ধান্ত ঢামেক শিক্ষার্থীদের

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট 
২১ জুন ২০২৫, ২০:৩১আপডেট : ২১ জুন ২০২৫, ২০:৫৩

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) বন্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন না বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তারা ঘোষণা দিয়েছেন, প্রশাসনের একতরফা সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন এবং হল ত্যাগ করবেন না। শনিবার (২১ জুন) সন্ধ্যায় ঢামেক শিক্ষার্থীরা তাদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।

আবাসন সংকট নিয়ে এর আগে সকাল থেকে পাঁচ দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি ও মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। দুপুরে কলেজ প্রশাসন এক বিজ্ঞপ্তিতে কলেজ বন্ধ ঘোষণা করে এবং রবিবার (২২ জুন) দুপুর ১২টার মধ্যে সব ছাত্রছাত্রীকে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে।

শিক্ষার্থীরা জানান, মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা হল ত্যাগ করছি না। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করে একতরফাভাবে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ করে আমাদের হল থেকে বের করে দিতে চাওয়া সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। আমরা আমাদের যৌক্তিক দাবির পক্ষে অবস্থান নিয়েছি—এটি অন্যায় নয়।

তাদের মতে, পরিত্যক্ত ভবনে জীবনের ঝুঁকি থাকলেও সেটার বিকল্প ব্যবস্থা না করে উল্টো আন্দোলন দমন করতে প্রশাসন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা এটা মেনে নিচ্ছি না। শান্তিপূর্ণভাবে হলে অবস্থান চালিয়ে যাবো এবং দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে।

এর আগে দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল আলমের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘কলেজের চলমান অচলাবস্থা নিরসনে রবিবার (২২ জুন) থেকে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলো। সব শিক্ষার্থীকে দুপুর ১২টার মধ্যে হোস্টেল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হলো।’

তবে ওই নির্দেশনায় পেশাগত এমবিবিএস পরীক্ষার্থীদের এবং বিদেশি শিক্ষার্থীদের বন্ধের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা তাদের পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। তারা বলেন, শুধু আবাসন নয়, নিরাপদ শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

তাদের দাবিগুলো হচ্ছে—

১। দ্রুত নতুন ছাত্রাবাস ও ছাত্রীনিবাসের বাজেট পাস করা। 

২। নতুন ভবন চালু না হওয়া পর্যন্ত বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা করা। 

৩। নতুন অ্যাকাডেমিক ভবনের বাজেট অনুমোদন দেওয়া। 

৪। পৃথক বাজেট ও দ্রুত বাস্তবায়ন পরিকল্পনা করা।  

৫। কার্যক্রমে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা।

প্রসঙ্গত, ঢামেকের অ্যাকাডেমিক ভবন এবং আবাসিক হল ঝুঁকিপূর্ণ মনে করায়, তা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা। বিকল্প আবাসন এবং ছাত্রাবাস ও অ্যাকাডেমিক ভবন সংস্কারের দাবিতে গত ২৮ মে থেকে সব ধরনের ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে আসা নবীন ব্যাচ ‘কে-৮২’ তাদের সিনিয়র ব্যাচদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে অরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানও বর্জন করে।

শিক্ষার্থীরা জানান, ফজলে রাব্বী হলের মূল ভবনের তৃতীয় তলায় ওয়াশরুম ও টয়লেটের সিলিং থেকে পলেস্তারা খসে পড়ায় বিপজ্জনক পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। বেশিরভাগ জানালার কাচ ভেঙে গেছে এবং এর আগের একটি ঘটনা—ঝড়ের সময় পুরো জানালার গ্রিল ভেঙে পড়লে এক শিক্ষার্থী আহত হয়েছিলেন। তৃতীয় তলার বেশ কয়েকটি কক্ষ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। গত ৬ জুন ঢামেক শিক্ষার্থীরা তাদের আবাসিক হলগুলোতে জীবনের ঝুঁকির কথা জানিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন।

বিবৃতিতে তারা বলেন, ফজলে রাব্বি ছাত্রাবাসসহ গার্লস হোস্টেল ও অ্যাকাডেমিক ভবনসহ আরও কয়েকটি ভবন এখন মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে। গণপূর্ত বিভাগ সাত মাস আগে ফজলে রাব্বি হলকে বসবাসের অনুপযোগী এবং পরিত্যক্ত ঘোষণা করা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীরা এখনও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখানে বসবাস করছেন। পরিস্থিতি এতটাই নাজুক যে, রানা প্লাজা বা জগন্নাথ হলের ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তি হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না—যা হবে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য একটি লজ্জাজনক ঘটনা।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বিবৃতি

এদিকে ঢামেক কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ঢামেকের অ্যাকাডেমিক ভবন ও হোস্টেলের অবকাঠামোগত দুরবস্থা নিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে চলমান অচলাবস্থা নিরসনে শনিবার (২১ জুন) অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে এবং সেজন্য এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের সঙ্গে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। দৃশ্যমান ফলাফল প্রাপ্তির টাইমফ্রেম নিয়ে শিক্ষার্থীদের যে অনড় অবস্থান রয়েছে, সেটাও আমরা অনুধাবন করি।

উপরন্তু, বারবার নোটিশ দেওয়া সত্ত্বেও এবং বিকল্প আবাসন নিশ্চিত না করায় বিভিন্ন ব্যাচের ছাত্রদের অসহযোগিতার কারণে ডা. ফজলে রাব্বি ছাত্রাবাসের মূল ভবনের গণপূর্ত বিভাগ পরিত্যক্ত ঘোষণা করার পরেও চতুর্থ তলা খালি করা সম্ভব হচ্ছে না; যা তাদের জীবনের জন্য অত্যন্ত হুমকি স্বরূপ। এরই ধারাবাহিকতায় নতুন ব্যাচ কে-৮২ স্বপ্রণোদিত হয়ে অথবা প্ররোচিত হয়ে তাদের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম বয়কট করেছে; যা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের জন্য একটি কালো অধ্যায়।

ফলে কলেজের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা দেশের অন্যান্য মেডিক্যাল কলেজের বিবেচনায় অ্যাকাডেমিক পিয়ার প্রেসারে ভুগছে। সর্বোপরি মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল পরিদর্শন অন্য মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঢামেক অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল বিশ্বাস করে—শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় এই সংকট কাটিয়ে উঠবে।

/এসও/এমকেএইচ/
সম্পর্কিত
ঢাকা মেডিক্যালে হাজতির মৃত্যু
গোপালগঞ্জে রিকশাচালক গুলিবিদ্ধ, ঢামেকে চিকিৎসাধীন
গোপালগঞ্জে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ যুবক ঢামেকে, অবস্থা আশঙ্কাজনক
সর্বশেষ খবর
ডালাসে পর্দা উঠছে ৮ম বাংলা চলচ্চিত্র উৎসবের
ডালাসে পর্দা উঠছে ৮ম বাংলা চলচ্চিত্র উৎসবের
ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান আইসিইউতে
ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান আইসিইউতে
ট্রায়ালে খেলোয়াড় বাছাই, থাকবেন বিদেশি কোচ!
ট্রায়ালে খেলোয়াড় বাছাই, থাকবেন বিদেশি কোচ!
গোপালগঞ্জে বাড়লো কারফিউয়ের সময়
গোপালগঞ্জে বাড়লো কারফিউয়ের সময়
সর্বাধিক পঠিত
গোপালগঞ্জে এনসিপির ওপর হামলার ঘটনায় ট্রল করে ফেসবুকে পোস্ট, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রত্যাহার
গোপালগঞ্জে এনসিপির ওপর হামলার ঘটনায় ট্রল করে ফেসবুকে পোস্ট, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রত্যাহার
মোহাম্মদপুরে ১ ঘণ্টার ব্যবধানে গুলি ও কুপিয়ে দুজনকে হত্যা, আটক ২
মোহাম্মদপুরে ১ ঘণ্টার ব্যবধানে গুলি ও কুপিয়ে দুজনকে হত্যা, আটক ২
জীবন-মৃত্যুর মতো পরিস্থিতি না হলে ঘর থেকে বের হবেন না: আসিফ মাহমুদ
জীবন-মৃত্যুর মতো পরিস্থিতি না হলে ঘর থেকে বের হবেন না: আসিফ মাহমুদ
আপনাদের অপদস্থ হতে দেখাটা আমাদের জন্য কষ্টের: উমামা
আপনাদের অপদস্থ হতে দেখাটা আমাদের জন্য কষ্টের: উমামা
গোপালগঞ্জে সহিংসতার দায় কার
গোপালগঞ্জে সহিংসতার দায় কার