X
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

অল্প সময়ে বিসিএস প্রিলিমিনারির প্রস্তুতি নেওয়ার উপায়

গাজী মিজানুর রহমান
০৭ মার্চ ২০২২, ১৬:১৭আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২২, ২০:০৬

বিসিএস ক্যাডার বা একটি ভালো সরকারি চাকরি এমন এক জিনিস যা আপনার সারাজীবন, এমনকি আপনার পরিবার ও পরিবারের সামাজিক অবস্থান ও মর্যাদা নিমিষে বদলে দিতে পারে।

আর সেটা সম্ভব আপনি যদি একটু বেশি কষ্ট করতে পারেন, একটু বেশি যদি ত্যাগ স্বীকার করতে পারেন! আপনি যদি অন্যদের চেয়ে খানিকটা ব্যতিক্রমী হতে পারেন। আর যদি জীবনে বড় হওয়ার অনেক বড় স্বপ্ন ও তীব্র ইচ্ছা থাকে! তখনই আপনি পারবেন, তখনই আপনার দ্বারা সম্ভবপর হবে।

অনেকে মনে করেন, বিসিএস পাস করা অনেক কঠিন। অনেক বই পড়তে হয়। অনেক বেশি পড়তে হয়। আবার যারা কম পড়ে বিসিএস ক্যাডার হয়ে গেছে তারা মনে করে, বিসিএস ক্যাডার হতে বেশি পড়া লাগে না; শুধু কিছু টেকনিক ফলো করে পরিকল্পনা মাফিক পড়লেই ক্যাডার হওয়া সম্ভব।

আমার দৃষ্টিকোণ থেকে বলবো, উপরিউক্ত দুটি মতামতই সঠিক।

তবে, আপনি কম পড়েন কিংবা বেশি পড়েন কিছু কৌশল অনুসরণ না করলে আপনি অনেক পড়ার পরও দেখবেন বিসিএস প্রিলিতে উত্তীর্ণ হতে পারছেন না।

বিসিএস ক্যাডার হতে গেলে তিনটি ধাপ ধারাবাহিকভাবে সাফল্যের সাথে অতিক্রম করতে হয়। যথা- প্রিলি, রিটিন ও ভাইভা। আমি ৩৪তম-৪০তম বিসিএস পর্যন্ত মোট ৬টি বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৬টিতেই উত্তীর্ণ হয়েছি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে থেকে বলছি– বিসিএস ক্যাডার হওয়ার ক্ষেত্রে এই তিনটি ধাপের মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং মনে হয়েছে বিসিএস প্রিলি পাস করাটা। কারণ এই ধাপে সবচেয়ে প্রতিযোগী থাকে।  বিসিএস পরীক্ষার প্রথম ধাপ প্রিলিতেই সবচেয়ে বেশি প্রতিযোগী ছিটকে পড়ে। কিন্তু আপনি যদি দুটি বিষয় অনুসরণ করতে পারেন তাহলে সহজেই উত্তীর্ণ হতে পারবেন। সেই দুটি বিষয়ের একটি হলো আত্মবিশ্বাস, আর অপরটি হলো কৌশল।

অনেকে মনে করেন, ‘বিসিএস ক্যাডার হতে গেলে অনেক বেশি পড়তে হয়। যেহেতু আমি অন্যদের মতো এত বেশি পড়তে পারি না বা পড়ার সুযোগ নেই; অতএব আমার দ্বারা বিসিএস ক্যাডার হওয়া সম্ভবপর নয়।’

> এটা ভাবলে সত্যিই আপনি আর বিসিএস ক্যাডার হতে পারবেন না। কারণ আপনি পরীক্ষা দেওয়ার আগেই নিজেই নিজের কাছে ফেল করে ফেলেছন!

আগে নিজের কাছে নিজেকে পাস করতে হয়; তারপর পরীক্ষার হলে! আপনাকে ইতিবাচক কিছু ভাবতে হবে। আপনাকে ভাবতে হবে, ‘আমার দ্বারাই হবে। যারা বিসিএস ক্যাডার হয় তারা ভিনগ্রহ থেকে আসেন নাই; তারা আমার মতোই একজন মানুষ। তারা পারলে আমি পারবো না কেন?’

তাহলে দেখবেন আপনার জন্য কাজটা অনেক সহজ হয়ে গেছে! কারণ যে কোনও কাজ শুরু করার আগে নিজের প্রতি নিজের এই বিশ্বাসটুকু খুবই প্রয়োজন যে, ‘এই কাজটি আমি পারবো; আমাকে যে পারতেই হবে।’

বিসিএস প্রিলির সিলেবাস অনেক বিশাল। আপনি যদি অল্প সময়ে এই বিশাল সিলেবাস শেষ করতে যান, আপনাকে হাবুডুবু খেতে হবে। পরে দেখা যাবে, সময় চলে গেছে; তারপরও আপনি হাতড়ে কূল পাচ্ছেন না!

অল্প সময়ে বিসিএস প্রিলির জন্য গুছিয়ে প্রস্তুতি নিতে যা যা করবেন-

> অপ্রয়োজনীয় টপিকগুলো বাদ দিন: বিসিএস প্রিলির প্রস্তুতি জন্য কী কী পড়বেন?– এটার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো- কী কী বাদ দেবেন?

আপনাকে আগে দেখতে হবে বিসিএস প্রিলিমিনারিতে কোন কোন টপিক থেকে বেশি প্রশ্ন আসে। অর্থাৎ, যে টপিকগুলো অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেই টপিকগুলো  সিলেক্ট করা। আর আপনি সেটা করতে পারবেন ৩৫ তম বিসিএস প্রিলি থেকে ৪৩তম বিসিএস প্রিলির প্রশ্নগুলো ‘অ্যানালাইসিস’ করে। অথবা বাজার থেকে সাজেশনভিত্তিক কোনও বই থেকেও আপনি সেটা পেতে পারেন।

> অধিক গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো কয়েকবার পড়ে নিন: অধিক গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো সিলেক্ট করার পর তা পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে বেশ কয়েকবার পড়ে ফেলুন। এর পর পরীক্ষার মাঝেমধ্যে আসে, কিন্তু সবসময় আসে না; সেই টপিকগুলো পড়ে ফেলুন! এভাবে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ভালো করে পড়ে ফেললে আপনার বিসিএস প্রিপারেশন ৬০-৮০% পর্যন্ত কাভার হয়ে যাবে!

> যাই পড়ুন, মনে রাখার চেষ্টা করুন: যে পড়াগুলো মনে থাকে না; কিন্তু পরীক্ষার জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো বার বার পড়ুন এবং পড়ার সময় হালকা শব্দ করে পড়ুন যেন কান পর্যন্ত শব্দ পৌঁছায়। এরপরও মনে না থাকলে লিখে লিখে পড়ুন।

> কনফিউজিং প্রশ্নগুলো পাশাপাশি রেখে পড়ুন: বিসিএস প্রিলিতে প্রায় দেখা যায়, পরীক্ষার্থীরা জানা বিষয়গুলো নিয়েও পরীক্ষার হলে কনফিউজড হয়ে যায়। এই কনফিউশান এড়ানো জন্য পরীক্ষার আগেই প্রস্তুতি নিতে হবে এমন করে, যেন পরীক্ষার হলে কনফিউশান তৈরি না হয়। সেই ক্ষেত্রে কনফিউজিং প্রশ্নগুলো পাশাপাশি রেখে পড়বেন। যেমন- ‘শেষের কবিতা’ উপন্যাসটি লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর; কিন্তু ‘শেষের পরিচয়’ উপন্যাসটি লিখেছেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয় ১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর; কিন্তু যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন হয় ১৯৫৪ সালের ৮ মার্চ।

এই ধরনের কনফিউজিং প্রশ্নগুলো পাশাপাশি রেখে পড়লে অল্প গুছিয়ে প্রস্তুতি নিতে অনেক বেশি হেল্প করে। না হয় দেখা যায় যায়- অল্প সময়ে দ্রুত পড়ে পরীক্ষার হলে গিয়ে কনফিউজড হয়ে যায় অনেকে।

> নতুন বিষয়গুলো লিখে পড়ুন: আপনার সামনে যদি গুরুত্বপূর্ণ সাল, তারিখ ও অপরিচিত কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কোনও ব্যক্তি নাম আসে (যেমন- জাতি সংঘের মহাসচিবের নাম), যেগুলো পড়ার পর ভুলে যান। তাহলে সেগুলো বার বার খাতায় লিখে শব্দ করে পড়ুন।

> পড়া রিভিশন দিন: প্রতিদিন যা পড়েন, সেগুলো ঘুমাতে যাওয়ার আগে কমপক্ষে একবার রিভিশন দিন। আরও বেশি দিতে পারলে আরও ভালো। এবং প্রত্যেক সপ্তাহে একদিন আগের পড়াগুলো রিভিশন দিন। সম্ভব হলে রিভিশনের পড়ার ওপর মডেল টেস্ট দিন।

> পড়ার সময় ইন্টারনেট ও মোবাইল ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন: পড়ার সময় আপনি ফেসবুক বা মেসেঞ্জার চালু রেখে পড়তে বসবেন না। অর্থাৎ, আপনি পড়ছেনও আবার ফেসবুকও চালাচ্ছেন বা মেসেঞ্জারেও চ্যাটিং করছেন এমনটি করবেন না। আপনি কত ঘণ্টা পড়ছেন; তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনি কতটুকু পড়ছেন।

> পরীক্ষার হলে নেগেটিভ মার্কস হ্রাস করুন: পরীক্ষার হলে না জেনে কোনোভাবে আন্দাজের ওপর ভিত্তি করে প্রশ্নের উত্তর করবে না। এতে করে আপনার প্রাপ্ত নম্বর থেকে অনেক নম্বর মাইনাস হয়ে যাবে। কারণ, বিসিএস প্রিলিতে প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.৫০ করে নম্বর কাটা হয়।

শেষ কথা হলো, বিসিএস ক্যাডার হতে গেলে অনেক বেশি পড়তে হয়; যারা বলে থাকেন, তাদের সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত নই। আমি মনে করি, পরিকল্পনা মাফিক সঠিক গাইডলাইন অনুযায়ী কেবল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো গুছিয়ে পড়লেই সহজে প্রিলি পাস করা যায়। কারণ ২০০ নম্বরের বিসিএস প্রিলিতে আপনার ১৮০-১৯০ পাওয়ার দরকার নেই। ১২০ নম্বর পেলেই সাধারণত বিসিএস প্রিলির যেকোনও পরীক্ষায় ‘সেইফ জোন’ ধরা যায়।

আপনি দেখবেন, ৪৩তম বিসিএস প্রিলিতে অনেকেই প্রথম প্রথম বলেছে, প্রশ্ন সহজ হয়েছে এই প্রশ্নে ১৩০-১৪০ না পেলে প্রিলি পাস করা পসিবল না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কী হলো? দেখা গেলো ১০৮-১১০ নম্বর পেয়ে টিকেছে।

কিন্তু এত সহজ প্রশ্নেও এত কমন নম্বর পাওয়ার কারণ কী?

মূল কারণ হলো, উল্টাপাল্টা প্রয়োজনীয়– অপ্রয়োজনীয় সব প্রশ্ন পড়ে মাথা নষ্ট করার পর পরীক্ষার হলে গিয়ে কমন ও সহজ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়েও ভুল করে কিংবা কনফিউজড হয়ে যায়! কিন্তু পরীক্ষার হলে শুধু পারা বিষয়গুলোর উত্তর সঠিকভাবে দিয়ে আসতে পারলে পাশ করা সম্ভব বলে আমি মনে করি।

তাই আমি বলি, "কম পড়বেন কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো গুছিয়ে পড়বেন।"

আরেকটি বিষয় খেয়াল করবেন কেউ এমন আছে যে, অল্প পড়েও বার বার বিসিএস পাস করছে, আমার কেউ কেউ এমন আছে ৫-৬ বছর ধরে রাত-দিন পড়েও একবারও বিসিএস প্রিলি পাস করতে পারে না। এখানে মূল কারণ হলো আত্মবিশ্বাস ও পড়ার কৌশিল। বিসিএসে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনি সকল টপিক না পড়ে কি কি টপিক পড়বেন আর কি কি টপিক বাদ দিবেন সেটা সঠিকভাবে সিলেক্ট করা। আর আপনি যদি এই কাজটি করে ফেলতে পারবেন, এখানেই আপনার বিসিএস প্রিলি প্রস্তুতি অর্ধেক শেষ! আর বাকি অর্ধেক হলো আপনার পরিশ্রম ও ভাগ্য।

লেখক: ৩৫ তম বিসিএস ক্যাডার; মোটিভেশনাল স্পিকার ও ক্যারিয়ার স্পেশালিস্ট।

/ইএইচ/
আজ আবেদনের শেষ দিন যে সকল চাকরির
বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
মসজিদে যাওয়ার পথে একদল কুকুরের আক্রমণে যুবকের মৃত্যু
মসজিদে যাওয়ার পথে একদল কুকুরের আক্রমণে যুবকের মৃত্যু
১২:৩৬ পিএম
বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিনের মৃত্যু: অধিকতর প্রতিবেদনের নতুন তারিখ
বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিনের মৃত্যু: অধিকতর প্রতিবেদনের নতুন তারিখ
১২:৩২ পিএম
হিমায়িত মাংস আমদানিতে নীতিমালা হচ্ছে
হিমায়িত মাংস আমদানিতে নীতিমালা হচ্ছে
১২:০৪ পিএম
আজ মধ্যরাত থেকে আগামী ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরা বন্ধ
আজ মধ্যরাত থেকে আগামী ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরা বন্ধ
১১:৫৩ এএম
চাকরি বিভাগের সর্বশেষ
অভিজ্ঞতা ছাড়াই ট্রাস্ট ব্যাংকে ৬০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি
অভিজ্ঞতা ছাড়াই ট্রাস্ট ব্যাংকে ৬০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি
এক পদে ১০ জনকে চাকরি দেবে ওয়ালটন
এক পদে ১০ জনকে চাকরি দেবে ওয়ালটন
সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিতে চাকরি, আবেদন ফি ৫০০ টাকা
সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিতে চাকরি, আবেদন ফি ৫০০ টাকা
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ইসলামী ব্যাংক, পদসংখ্যা অনির্ধারিত
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ইসলামী ব্যাংক, পদসংখ্যা অনির্ধারিত
ঢাকা কর কমিশনারের কার্যালয়ে চাকরির সুযোগ
ঢাকা কর কমিশনারের কার্যালয়ে চাকরির সুযোগ