মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে বিশাল পরিসরে প্রযুক্তিচালিত একটি মল নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এটি হতে যাচ্ছে খুচরা ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিপণি বিতান। এর মোট দৈর্ঘ্য হবে ১০০টি ফুটবল মাঠের সমান! এটি নির্মাণের বাজেট ধরা হয়েছে ২০০ কোটি ডলার (১৬ হাজার ৭৪৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা)। এর নাম রাখা হয়েছে ‘দুবাই স্কয়ার’।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডেভেলপার ইমার প্রপার্টিজ জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের চায়নাটাউন হিসেবে নির্মাণাধীন দুবাই ক্রিক হারবারের অংশ হিসেবে ৮০ লাখ বর্গফুট জায়গায় গড়ে তোলা হবে এই বিপণি বিতান। সব মিলিয়ে এর আকৃতি হবে ৩ কোটি বর্গফুট। আকারের দিক থেকে এটি হবে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শপিং সেন্টার দুবাই মলের দ্বিগুণ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা বেড়ানোর পাশাপাশি সেখানে জিনিসপত্র কেনেন।
দুবাই হোল্ডিংয়ের সঙ্গে মিলে গড়ে তোলা হচ্ছে দুবাই ক্রিক হারবার। কারণ দুবাইয়ে পর্যটনের সবচেয়ে বড় বাজারের দিক থেকে চীনের অবস্থান চতুর্থ।
পুরোদস্তুর প্রযুক্তিবান্ধব হিসেবে ডিজাইন করা হচ্ছে দুবাই স্কয়ার। সেখানে ঢুকলেই মনে হবে যেন কোনও ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড! নিচতলায় রাখা হবে থ্রিডি প্রজেকশন ম্যাপিং, সিনেমা হলের মতো সাউন্ড ও লাইটিংয়ের সঙ্গে কনসার্ট ও থিয়েটার শোসহ অত্যাধুনিক বিনোদনমূলক আয়োজন। মলে আগত পরিবারের জন্য থাকবে সিনেমা, ওয়াটার পার্ক, স্পোর্টস জোন, শীতকালীন মেজাজের ইনডোর অ্যাডভেঞ্চার পার্ক ও সুপারমার্কেট।
সব মিলিয়ে প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে এই জায়গায় এলে বিহ্বল হয়ে যাবে ছোটবড় সবাই। বিখ্যাত সব ব্র্যান্ডের শো-রুমকে জায়গা দেওয়া হবে সেখানে। ভোজনরসিকদের জন্যও দুবাই স্কয়ার হয়ে উঠবে তীর্থস্থান!
ইমার প্রপার্টিজের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সংযোজনের মাধ্যমে কেনাকাটা ও অবকাশযাপনে নতুন মাত্রা তৈরি করবে দুবাই স্কয়ার। নতুন প্রজন্মের গ্রাহকদের কথা ভেবেই এটি ডিজাইন করা হচ্ছে; যারা ডিজিটাল, সবসময় অনলাইন দুনিয়ায় যুক্ত থাকতে চায় ও প্রযুক্তিগত দিকে যাদের ব্যাপক আগ্রহ আছে।’
পুরো মল জুড়ে ত্রিমাত্রিক আবহ পাবেন দর্শনার্থী ও ক্রেতারা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভিআইপি ড্রেসিং রুম, ইন্টারেক্টিভ আয়নাসমৃদ্ধ স্মার্ট ফিটিং রুম ও প্রাইভেট ফ্যাশন কালেকশন। স্টোর কাউন্টার ছাড়াও মোবাইল ফোন আর ডেস্কটপের মাধ্যমে এখানকার জিনিসপত্র কেনা যাবে। স্বতন্ত্র মোবাইল অ্যাপ, বারকোড স্ক্যানিং অ্যাপ্লিকেশন্স ও রেডিও-ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশনের মাধ্যমে কেনাকাটায় উদ্দীপনা জোগাবে ক্রেতাদের। উদ্ভাবনী প্রযুক্তির অংশ হিসেবে মার্কেটে ক্যাশিয়ারের কাছে টাকা দেওয়ার লাইন না ধরেই চেক-আউট করার সুযোগ থাকবে।
সব বয়সীদের জন্য দুবাই স্কয়ারে কিছু না কিছু থাকবে বলে আশ্বাস দিয়েছে ইমার প্রপার্টিজ। তবে তারা স্বীকার করেছে, প্রযুক্তিপ্রেমী নতুন প্রজন্মের গ্রাহকরাই তাদের মূল লক্ষ্য। কারণ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বয়স ২৫ বছরের নিচে। এই তরুণ ভোক্তাদের মধ্যে অনেকেই উচ্চবিত্ত পরিবারের।
দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা ভবন বুর্জ খলিফা থেকে বিপণি বিতানটির দূরত্ব হবে ১০ মিনিট। ৩ হাজার ৪৫ ফুট উঁচু দুবাই ক্রিক টাওয়ারের ঠিক পাশেই থাকবে ‘দুবাই স্কয়ার’।
নির্মাণকাজ শেষ হলে দুবাই ক্রিক টাওয়ার হবে বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা ভবন। এটি ডিজাইন করেছেন স্প্যানিশ স্থপতি সান্তিয়াগো কালাত্রাভা।
শহুরে অবকাঠামো হলেও দবাই ক্রিক টাওয়ার থেকে রাস আল খোর বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের দূরত্ব অল্প। শীতে মৌসুমি পাখিরা বাসা বাঁধে সেখানে।
দুবাই ক্রিক ম্যারিনার উদ্বোধন হওয়ার কথা শিগগিরই। ২০১৯ সালে সেখানে ভ্রমণপিপাসুদের আনাগোনা দেখা যাবে।
ম্যারিনা থেকে দুবাই শহরের কেন্দ্রস্থল দেখা যায়।
দুবাই ক্রিক হারবারের আবাসিক এলাকার অংশ হিসেবে ৬২ তলা দ্য গ্র্যান্ড তৈরি হচ্ছে। দুই লাখ মানুষের বসতি থাকবে দুবাই ক্রিকে।
সূত্র: সিএনএন