X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১
ট্রাভেলগ

ঘসেটি বেগমের বন্দিশালায় একদিন

ওয়ালিউল বিশ্বাস
০৮ জানুয়ারি ২০১৯, ২২:২৭আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০১৯, ২৩:২৭

ঘসেটি বেগমের বন্দিশালায় একদিন মনের ভেতর ভীষণ ক্ষোভ ছিল ঘসেটি বেগমের। কারণ বোনের ছেলে নবাব সিরাজউদ্দৌলা সিংহাসনে বসেছেন। সারাজীবন নবাবের মৃত্যুকামনা করেছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত তার মনের ইচ্ছে পূর্ণ হয়।

১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে সিরাজউদ্দৌলার পতনের মধ্য দিয়ে বাংলা সূর্য অস্তমিত হয়ে যায়। পাশাপাশি বেঈমানির জন্য ইতিহাসে আলাদাভাবে নাম ওঠে কয়েকজনের। তারা হলেন রাজবল্লভ, জগৎশেঠ ও মীরজাফর। তাদের সঙ্গে নাম আসে ঘসেটি বেগমের। তবে প্রকৃতির নির্মম পরিহাস, শক্রপক্ষ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তার এই মিত্রকে (ঘসেটি) বিশ্বাস করেনি!

সিরাজদৌল্লাকে হত্যার পর তার মা আমেনা বেগম, খালা ঘসেটি বেগম, স্ত্রী ও সন্তানকে আটকে রাখা হয়েছিল ঢাকার কেরানীগঞ্জের জিনজিরা প্রাসাদে। মীরজাফর পুত্র মীরনের নির্দেশে নৌকায় তুলে দেওয়া হয় দুই বোনকে। মাঝ বুড়িগঙ্গায় তারা পৌঁছালে বেঈমানির সবচেয়ে বড় ‘পুরস্কার’ হিসেবে নৌকাটি ফুটো করে দেওয়া হয়। পানিতে ডুবে মারা যান ঘসেটি ও আমেনা বেগম।

ঘসেটি বেগমের বন্দিশালায় একদিন ঘসেটিসহ নবাব পরিবারের বন্দিশালা হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া রাজপ্রাসাদ দেখতে গিয়েছিলাম আমরা কয়েকজন। উদ্দেশ্য ছিল, ঘসেটি বেগমকে আটকে রাখা ঐতিহাসিক স্থানটি ঘুরে দেখা। যাত্রাবাড়ীতে একটি কাজ শেষ করে আমরা যাই কেরানীগঞ্জ উপজেলায়। এরপর জিনজিরা বাজারে। মোটরসাইকেল থাকায় যানবাহনের ঝক্কি পোহাতে হয়নি।

মজার বিষয় হলো, স্থানীয়রা জিনজিরা প্রাসাদ বলতে তেমন কিছু চেনেন না। দু’একজনের কাছে বলেকয়ে বহু কষ্টে কাঙ্ক্ষিত প্রাসাদের অবস্থান জানতে পারলাম। পরে জানতে পেরেছি, প্রাসাদকে তারা ‘ঘোরা’ নামে চেনেন। তাদের মতে, মূল প্রাসাদ হলো বড় ঘোরা। এছাড়া অন্যগুলোকে ছোট ঘোরা বলা হয়।

প্রাসাদটিতে গিয়ে চিহ্ন অনুযায়ী বোঝা গেলো, প্রথম ঘোরায় ছিল সুবিশাল ফটক। রাজপ্রাসাদের প্রধান দরজা ছিল এটাই। এর প্রাচীর বেশ চওড়া। কিন্তু স্থানীরা এখানে বাড়ি তৈরি করে বসে আছে! এ চিত্র বেশ হতাশার।

তবে বড় ঘোরায় গিয়ে আমরা মুগ্ধ হয়েছি। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া এই প্রাসাদের কয়েকটি কক্ষ এখনও অক্ষত রয়েছে। এগুলোর নির্মাণশৈলী অবাক করার মতো।

ঘসেটি বেগমের বন্দিশালায় একদিন উপজেলা প্রশাসক পুরো প্রাসাদ দেখভালের কথা নোটিশে উল্লেখ থাকলেও তা নামেমাত্র মনে হলো। বরং বড় ঘোরার অংশটুকু গুছিয়ে রেখেছেন স্থানীয় একজন বাসিন্দা।

এই রাজপ্রাসাদে অনেকের বসবাস থাকলেও নবাবি শাসনামলের শেষ দিকে এসে এটি মূলত ঘৃণার প্রতীক হয়ে ওঠে। কারণ ছিল ঘসেটি বেগম। সময় পেলে কেরানীগঞ্জে তার এই বন্দিশালা ঘুরে আসতে পারেন। অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা হবে।
যেভাবে যাবেন
জিনজিরা প্রাসাদ বা ঘোরায় দুইভাবে যাওয়া যায়। গুলিস্তান থেকে জিনজিরায় বাসে চড়ে যেতে পারেন। এছাড়া বাবুবাজার গিয়ে নৌকায় চড়ে জিনজিরায় যাওয়ার সহজ পথ আছে। নৌকায় গেলে সময় ও টাকা দুটোই কম লাগবে।
* ভিডিওতে দেখুন ঘসেটি বেগমের বন্দিশালা:

ছবি: লেখক
/জেএইচ/

/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টোল আদায়ে দেড় হাজার কোটির মাইলফলকে পদ্মা সেতু
টোল আদায়ে দেড় হাজার কোটির মাইলফলকে পদ্মা সেতু
যে সাফল্যে নতুন ইতিহাস গড়লেন বাংলাদেশের মাসফিয়া আফরিন 
যে সাফল্যে নতুন ইতিহাস গড়লেন বাংলাদেশের মাসফিয়া আফরিন 
সারা দেশে আবারও ৩ দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
সারা দেশে আবারও ৩ দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
গরমে পথচারীদের মাঝে শরবত বিতরণ করছে ‘স্বপ্ন’
গরমে পথচারীদের মাঝে শরবত বিতরণ করছে ‘স্বপ্ন’
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু