X
মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
৩ আষাঢ় ১৪৩২

মাছ ধরা দেখতে শুক নদীর বুড়ির বাঁধে বেড়ানো

জাকির মোস্তাফিজ মিলু, ঠাকুরগাঁও
২৭ অক্টোবর ২০২০, ১৭:০০আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০২০, ১৭:২৪

ঠাকুরগাঁওয়ে বুড়ির বাঁধে মাছ ধরার উৎসব ১৯৮০ সালের কথা। শুষ্ক মৌসুমে কৃষি জমি সেচের সুবিধার্থে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ও চিলারং ইউনিয়নের মাঝামাঝি এলাকায় শুক নদীর ওপর একটি জলকপাট (স্লুইসগেট) নির্মাণ করা হয়। এতে আটকে থাকা পানিতে প্রতিবছর বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা ছাড়ে মৎস্য অধিদফতর। শীতের শুরুতে বাঁধের পানি ছেড়ে মাছ ধরার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে প্রতিবছর বুড়ির বাঁধে দেখা যায় প্রাণের উৎসব। মাছ ধরার এই আয়োজন অনেকের কাছে নিয়ে আসে বেড়ানোর আনন্দ।
এবারও গ্রাম-শহরসহ বিভিন্ন এলাকার নারী, পুরুষ ও শিশুসহ শত শত মানুষ মাছ ধরেছেন। মাছ রাখার পাত্র (খলই) নিয়ে বাদ যাননি বৃদ্ধরা। কারও হাতে পলো, কারও হাতে জাল, খইয়া জাল, চাবিজাল, খেয়াজাল, টানাজাল বা ছেঁকাজাল। যাদের মাছ ধরার সরঞ্জাম নেই, তারাও বসে নেই। খালি হাত দিয়েই কাঁদায় মাছ খুঁজেছেন।
মাছ ধরার উৎসব উপভোগ করতে আশেপাশের বিভিন্ন এলাকার কয়েক হাজার মৎস্যপ্রেমী দলে দলে নদীর পাড়ে ভিড় জমান। অনেকে বন্ধুবান্ধব ও স্বজনদের উৎসাহ দিয়েছেন। এছাড়া একটু সস্তায় দেশি মাছ কেনার জন্য এসেছেন, এমন দর্শনার্থীও কম ছিল না। সবার মধ্যে দেখা যায় বেড়ানোর আমেজ।

নীলফামারীর ডোমারের বাসিন্দা সাহাব উদ্দিন ঠাকুরগাঁওয়ে মাছ ধরতে অপেক্ষায় থাকেন সারাবছর। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগের বছরও এখানে মাছ ধরতে এসেছিলাম, এবারও এসেছি। আমার সঙ্গে তিন বন্ধু এসেছে। ভোর থেকে সকাল ১০টার মধ্যে বিভিন্ন জাতের প্রায় ২৫ কেজি মাছ ধরেছি।’
দিনাজপুরের খানসামা উপজেলা থেকে এসেছেন মনোয়ার। তার সঙ্গী ভগ্নিপতি আবু তাহের, ছোট চাচা সারোয়ার এবং গ্রামের আরও চারজন। তারা ফিকাজাল ও পোলো নিয়ে ভোর ৬টার দিকে বুড়ির বাঁধ এলাকায় মাছ ধরতে আসেন। সকাল ৮টা পর্যন্ত গচি, বাইম, পুইয়া, শোল, জাপানি রুই, ট্যাংরা, পুটি, শিং, তেলাপিয়াসহ বিভিন্ন জাতের প্রায় সাত কেজির মতো মাছ ধরেন খানসামা উপজেলার বাসিন্দারা। 
ঠাকুরগাঁও শহরের পৌর এলাকার নিশ্চিন্তপুরের শৌখিন মৎস্য শিকারি আনোয়ার হোসেন আরজু মনে করেন, এ বছর ভালো বৃষ্টিপাতের ফলে বাঁধে প্রচুর পরিমাণ মাছ হয়েছে। তার বন্ধু ঠাকুরগাঁও শহরের গোধূলি বাজারের আতাউল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা টিকিট করে হুইল দিয়ে মাছ ধরে থাকি। তবে এখানে গ্রামের সাধারণ মানুষের সঙ্গে মাছ ধরার অভিজ্ঞতা অন্যরকম।’
শহরের বড় মাঠ থেকে বুড়ির বাঁধ এলাকায় মাছ কিনতে আসেন পাইকার অরিন্দম ও মিন্টু। তাদের কথায়, ‘অনেক মানুষ মাছ ধরেছেন, অনেকে মাছ ধরে বিক্রি করেছেন। তাদের কাছ থেকে কম মূল্যে মাছ কিনতে পেরেছি। এগুলো বাজারে বিক্রি করবো।’

ঠাকুরগাঁওয়ে গত ১৭ অক্টোবর থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত মাছ ধরার এই আয়োজনকে ঘিরে শুক নদীর তীরে বুড়ির বাঁধ পরিণত হয় মেলায়। দর্শনার্থীদের জন্য খাবারের হোটেল, ফলের দোকান, খেলনা ও প্রসাধনীর দোকান সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা। স্থানীয় তরুণরা মোটরসাইকেল ও সাইকেল রাখতে তৈরি করেন অস্থায়ী গ্যারেজ।










জেলা মৎস্য অধিদফতরের জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক আব্দুল আজিজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতিবছর জুলাই মাসের দিকে বুড়ির বাঁধ এলাকায় আমাদের উদ্যোগে পোনা ছাড়া হয়। শীতের শুরুতেই ফের বাঁধের পানি ছেড়ে দেওয়ার পর মাছ ধরার জন্য উন্মুক্ত থাকে।’
এ বছর বিভিন্ন জাতের ১৬ কেজি মাছের রেণু ছাড়া হয়েছে বলে জানান জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কৃষিবিদ আফতাব হোসেন। 

/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘ওয়াস বাজেট বণ্টনে গভীর বৈষম্য’ 
‘ওয়াস বাজেট বণ্টনে গভীর বৈষম্য’ 
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকার বিভাগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠি 
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকার বিভাগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠি 
কালীগঞ্জে ককটেলসহ বিএনপি কর্মী আটক
কালীগঞ্জে ককটেলসহ বিএনপি কর্মী আটক
উপদেষ্টা আসিফ তার পদে বহাল থাকার নৈতিকতা হারিয়েছেন: ইশরাক
উপদেষ্টা আসিফ তার পদে বহাল থাকার নৈতিকতা হারিয়েছেন: ইশরাক
সর্বাধিক পঠিত
ক্রিকেটার সাকিবসহ ১৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
ক্রিকেটার সাকিবসহ ১৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
শপথের সুযোগ নেই, পরিপক্ব আচরণ প্রত্যাশা করি: আসিফ মাহমুদ
শপথের সুযোগ নেই, পরিপক্ব আচরণ প্রত্যাশা করি: আসিফ মাহমুদ
ইরানের ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা ‘অবমূল্যায়ন’ করেছে ইসরায়েল
ইরানের ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা ‘অবমূল্যায়ন’ করেছে ইসরায়েল
তেহরানের আকাশসীমায় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দাবি ইসরায়েলের
তেহরানের আকাশসীমায় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দাবি ইসরায়েলের
জয়ের পথে ইসরায়েল: নেতানিয়াহু
জয়ের পথে ইসরায়েল: নেতানিয়াহু