X
শনিবার, ০৩ মে ২০২৫
২০ বৈশাখ ১৪৩২

মাছ ধরা দেখতে শুক নদীর বুড়ির বাঁধে বেড়ানো

জাকির মোস্তাফিজ মিলু, ঠাকুরগাঁও
২৭ অক্টোবর ২০২০, ১৭:০০আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০২০, ১৭:২৪

ঠাকুরগাঁওয়ে বুড়ির বাঁধে মাছ ধরার উৎসব ১৯৮০ সালের কথা। শুষ্ক মৌসুমে কৃষি জমি সেচের সুবিধার্থে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ও চিলারং ইউনিয়নের মাঝামাঝি এলাকায় শুক নদীর ওপর একটি জলকপাট (স্লুইসগেট) নির্মাণ করা হয়। এতে আটকে থাকা পানিতে প্রতিবছর বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা ছাড়ে মৎস্য অধিদফতর। শীতের শুরুতে বাঁধের পানি ছেড়ে মাছ ধরার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে প্রতিবছর বুড়ির বাঁধে দেখা যায় প্রাণের উৎসব। মাছ ধরার এই আয়োজন অনেকের কাছে নিয়ে আসে বেড়ানোর আনন্দ।
এবারও গ্রাম-শহরসহ বিভিন্ন এলাকার নারী, পুরুষ ও শিশুসহ শত শত মানুষ মাছ ধরেছেন। মাছ রাখার পাত্র (খলই) নিয়ে বাদ যাননি বৃদ্ধরা। কারও হাতে পলো, কারও হাতে জাল, খইয়া জাল, চাবিজাল, খেয়াজাল, টানাজাল বা ছেঁকাজাল। যাদের মাছ ধরার সরঞ্জাম নেই, তারাও বসে নেই। খালি হাত দিয়েই কাঁদায় মাছ খুঁজেছেন।
মাছ ধরার উৎসব উপভোগ করতে আশেপাশের বিভিন্ন এলাকার কয়েক হাজার মৎস্যপ্রেমী দলে দলে নদীর পাড়ে ভিড় জমান। অনেকে বন্ধুবান্ধব ও স্বজনদের উৎসাহ দিয়েছেন। এছাড়া একটু সস্তায় দেশি মাছ কেনার জন্য এসেছেন, এমন দর্শনার্থীও কম ছিল না। সবার মধ্যে দেখা যায় বেড়ানোর আমেজ।

নীলফামারীর ডোমারের বাসিন্দা সাহাব উদ্দিন ঠাকুরগাঁওয়ে মাছ ধরতে অপেক্ষায় থাকেন সারাবছর। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগের বছরও এখানে মাছ ধরতে এসেছিলাম, এবারও এসেছি। আমার সঙ্গে তিন বন্ধু এসেছে। ভোর থেকে সকাল ১০টার মধ্যে বিভিন্ন জাতের প্রায় ২৫ কেজি মাছ ধরেছি।’
দিনাজপুরের খানসামা উপজেলা থেকে এসেছেন মনোয়ার। তার সঙ্গী ভগ্নিপতি আবু তাহের, ছোট চাচা সারোয়ার এবং গ্রামের আরও চারজন। তারা ফিকাজাল ও পোলো নিয়ে ভোর ৬টার দিকে বুড়ির বাঁধ এলাকায় মাছ ধরতে আসেন। সকাল ৮টা পর্যন্ত গচি, বাইম, পুইয়া, শোল, জাপানি রুই, ট্যাংরা, পুটি, শিং, তেলাপিয়াসহ বিভিন্ন জাতের প্রায় সাত কেজির মতো মাছ ধরেন খানসামা উপজেলার বাসিন্দারা। 
ঠাকুরগাঁও শহরের পৌর এলাকার নিশ্চিন্তপুরের শৌখিন মৎস্য শিকারি আনোয়ার হোসেন আরজু মনে করেন, এ বছর ভালো বৃষ্টিপাতের ফলে বাঁধে প্রচুর পরিমাণ মাছ হয়েছে। তার বন্ধু ঠাকুরগাঁও শহরের গোধূলি বাজারের আতাউল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা টিকিট করে হুইল দিয়ে মাছ ধরে থাকি। তবে এখানে গ্রামের সাধারণ মানুষের সঙ্গে মাছ ধরার অভিজ্ঞতা অন্যরকম।’
শহরের বড় মাঠ থেকে বুড়ির বাঁধ এলাকায় মাছ কিনতে আসেন পাইকার অরিন্দম ও মিন্টু। তাদের কথায়, ‘অনেক মানুষ মাছ ধরেছেন, অনেকে মাছ ধরে বিক্রি করেছেন। তাদের কাছ থেকে কম মূল্যে মাছ কিনতে পেরেছি। এগুলো বাজারে বিক্রি করবো।’

ঠাকুরগাঁওয়ে গত ১৭ অক্টোবর থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত মাছ ধরার এই আয়োজনকে ঘিরে শুক নদীর তীরে বুড়ির বাঁধ পরিণত হয় মেলায়। দর্শনার্থীদের জন্য খাবারের হোটেল, ফলের দোকান, খেলনা ও প্রসাধনীর দোকান সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা। স্থানীয় তরুণরা মোটরসাইকেল ও সাইকেল রাখতে তৈরি করেন অস্থায়ী গ্যারেজ।










জেলা মৎস্য অধিদফতরের জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক আব্দুল আজিজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতিবছর জুলাই মাসের দিকে বুড়ির বাঁধ এলাকায় আমাদের উদ্যোগে পোনা ছাড়া হয়। শীতের শুরুতেই ফের বাঁধের পানি ছেড়ে দেওয়ার পর মাছ ধরার জন্য উন্মুক্ত থাকে।’
এ বছর বিভিন্ন জাতের ১৬ কেজি মাছের রেণু ছাড়া হয়েছে বলে জানান জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কৃষিবিদ আফতাব হোসেন। 

/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইউক্রেনের কাছে এফ-১৬ প্রশিক্ষণ বিমান বিক্রয়ের অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
ইউক্রেনের কাছে এফ-১৬ প্রশিক্ষণ বিমান বিক্রয়ের অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
৫০০ কর্মীর সমন্বয়ে ডিএসসিসির মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা অভিযান
৫০০ কর্মীর সমন্বয়ে ডিএসসিসির মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা অভিযান
বার্সার বিপক্ষে ফিরতি লেগে অনিশ্চিত মার্তিনেজ
বার্সার বিপক্ষে ফিরতি লেগে অনিশ্চিত মার্তিনেজ
শুকনো মরিচের দাম কেজিতে কমলো ১০০ টাকা
শুকনো মরিচের দাম কেজিতে কমলো ১০০ টাকা
সর্বাধিক পঠিত
কেন আবারও আন্দোলনে যাচ্ছেন সহকারী প্রাথমিক শিক্ষকরা?
কেন আবারও আন্দোলনে যাচ্ছেন সহকারী প্রাথমিক শিক্ষকরা?
‘নারী সংস্কার কমিশনের প্রতি ঘৃণা উসকে দেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন’
‘নারী সংস্কার কমিশনের প্রতি ঘৃণা উসকে দেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন’
সাবেক এমপি ও বিএনপি নেতার ওপর দিনে সশস্ত্র হামলা, রাতে বাড়িতে আগুন
সাবেক এমপি ও বিএনপি নেতার ওপর দিনে সশস্ত্র হামলা, রাতে বাড়িতে আগুন
আগে রওনা দিয়েও এড়ানো গেলো না ‘নোটাম’, শাহজালালের ফ্লাইট গেলো ওসমানীতে
আগে রওনা দিয়েও এড়ানো গেলো না ‘নোটাম’, শাহজালালের ফ্লাইট গেলো ওসমানীতে
‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় ফার্মাসিস্ট যুক্ত করার কথা ভাবছে সরকার’
‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় ফার্মাসিস্ট যুক্ত করার কথা ভাবছে সরকার’