X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১
ট্রাভেলগ

চাঁদপুরে জোছনার স্নিগ্ধতা ও মচমচে ইলিশ ভাজা

মাসুদ সরকার রানা
০৩ আগস্ট ২০১৮, ১৯:৩২আপডেট : ০৩ আগস্ট ২০১৮, ২০:০৯

সবারই জানা ইলিশের জন্য চাঁদপুর প্রসিদ্ধ। বঙ্গোপসাগরের মোহনার পরে চাঁদপুরেই বেশি ইলিশ ধরা পড়ে। মেঘনার পাড় ঘেঁষে জেলেদের বসবাস। সারা রাত জাল ফেলে ইলিশ শিকার করেন তারা। এই সংগ্রহশালা নিয়ে সকালে নদীর পাড়ে বসে যায় জমজমাট ইলিশের হাট। চাঁদপুরের বাইরের মানুষরা তাজা ইলিশ পায় না বললেই চলে। তবে চাঁদপুর ভ্রমণ সেই সুযোগ এনে দেয় হাতের মুঠোয়।

জোছনা রাতে চাঁদপুরগামী লঞ্চের সৌন্দর্য (ছবি: জাকারিয়া পারভেজ) কখনও বিশাল নদীর বুকে শুয়ে জোছনা দেখেছেন? লঞ্চের ছাদে বসে চাঁদের সৌন্দর্য চোখে লেগেছে? এসব উপভোগ করতে হলে ভরা পূর্ণিমার রাতে যেতে হবে চাঁদপুরে। রাতের স্নিগ্ধতা ছড়ানো চাঁদকে সঙ্গে নিয়ে যখন বুড়িগঙ্গা থেকে ধলেশ্বরীর দিকে এগিয়ে যাবেন, তখন মনে হবে কোনও স্বপ্নপুরীতে আছেন! ধলেশ্বরীর দু’কূল দাপিয়ে মুন্সীগঞ্জের কাছে গিয়ে পড়বেন বিশাল মেঘনা নদীতে।

মেঘনায় নামতেই চাঁদ তার সৌন্দর্যের ভাণ্ডার থেকে সবটুকু উজাড় করে দেবে। নদীর বুক চিরে এগিয়ে চলছে বিশাল নৌ-যান। আর ওপরে চাঁদের রূপ। জোছনার আলোয় ছিটকে পড়া জলকণাগুলোকে লাগে মুক্তোদানার মতো। নদীর দুই পাশের ঘরবাড়িকে মনে হয় নিস্তব্ধ কোনও জনপদ। এমন নয়নাভিরাম ও মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতে করতে পৌঁছাবেন চাঁদপুরে।

ভোরবেলায় চাঁদপুরে ইলিশের আড়ত, তিন নদীর মোহনা, মোলহেড ও রক্তধারা স্মৃতিস্তম্ভ, অঙ্গীকার ভাস্কর্য ও চাঁদপুর ঘাটের পাশে অনেক সুন্দর সুন্দর চর দেখা যায়। মেঘনার চরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে চাঁদপুর শহরে ফিরে এসে মচমচে ইলিশ ভাজা মুখে দিতেই লাগলো স্বর্গীয় স্বাদ। মনে হচ্ছিল, এতদিন ইলিশের নামে সার্ডিন খেয়েছি। ইলিশের মনমাতানো সুগন্ধ এককথায় অভূতপূর্ব। সবশেষ ওয়ান মিনিটের আইসক্রিম খেলে মনে হবে চাঁদপুরে আসাটা বৃথা যায়নি।

চাঁদপুরে দেখার মতো বেশ কিছু আকর্ষণীয় ও মনোরম জায়গা আছে। সেগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ থাকলো।

তিন নদীর মোহনা (ছবি: জুয়েল রানা) তিন নদীর মোহনা

চাঁদপুরের কাছে একসঙ্গে মিলে গেছে মেঘনা, ডাকাতিয়া ও পদ্মা। সেখানে তিন নদীর স্রোত একসঙ্গে মিশে মেঘনা নাম ধারণ করে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। এখানে দাঁড়িয়ে দেখা যায় কীভাবে তিনটি নদী একত্রে মিশে যাচ্ছে। বড় স্টেশন পার্ক থেকে তিন নদীর মোহনা চোখে পড়বে। চাইলে ট্রলার নিয়েও মাঝ নদীতে গিয়ে তা দেখে আসা যায়।

মোলহেড ও রক্তধারা স্মৃতিস্তম্ভ (ছবি: জুয়েল রানা) মোলহেড ও রক্তধারা স্মৃতিস্তম্ভ

মেঘনা-ডাকাতিয়ার মোহনায় চমৎকার একটি ত্রিকোণাকৃতির জায়গা আছে। সেই স্থানটি চাঁদপুরবাসীর কাছে ‘মোলহেড’ নামে পরিচিত। এখানে বসে ক্ষুদ্র সাগরপাড়ের স্বাদ পাওয়া যায়। নদীভাঙন রোধে নিচে পাথর বসানো হয়েছে। নদীর ঢেউ এসে পাথরে লেগে চমৎকার এক দৃশ্যের অবতারণা করে। বিকালবেলায় পশ্চিমমুখী হয়ে সূর্যাস্ত দেখাটাও বেশ উপভোগ্য সেখানে। সম্প্রতি মোলহেডে ‘রক্তধারা’ নামে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। রক্তের ফোটার মাধ্যমে মানুষের শরীর থেকে রক্ত ঝরার প্রতীকী ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এতে।

ইলিশের আড়ত
মোলহেডের পাশেই সামান্য পূর্বদিকে অবস্থিত ইলিশের আড়ত। এখানে প্রতিদিন প্রচুর ইলিশ বেচাকেনা হয়। জেলেরা নদী থেকে ইলিশ ধরে এনে আড়তে বিক্রি করে থাকে। সেখানে থরে থরে সাজানো থাকে বিপুল পরিমাণ ইলিশ। চাইলে এখান থেকে ইলিশ কেনা যায় দরদাম করে।

জনপ্রিয় ওয়ান মিনিট আইসক্রিম ওয়ান মিনিট আইসক্রিম
এটা অবশ্য দেখার মতো কোনও জায়গা নয়। তবে সেখানে না গেলে মিস করবেন! চাঁদপুরের ওয়ান মিনিট আইসক্রিম বেশ প্রসিদ্ধ। একবার খেয়ে স্বাদটা নেওয়া যেতে পারে। সেখানকার স্পঞ্জ গোল্লা খেতেও ভুলবেন না।

মেঘনার বিভিন্ন চর
চাঁদপুর শহরের কাছেই মেঘনা নদীতে বেশ কিছু চর জেগেছে। সেগুলো দেখতে বেশ সুন্দর। চারদিকে সবুজের সমারোহ। তবে চর দেখতে হলে যেতে হয় শীতকালে। কারণ, বর্ষাকালে পানি বেড়ে গেলে সব চরই ডুবে যায়। বড় স্টেশন ঘাট থেকে ট্রলার রিজার্ভ নিয়ে যেকোনও চরেই যাওয়া যায়।

অঙ্গীকার ভাস্কর্য
চাঁদপুর শহরে অবস্থিত স্বাধীনতা ভাস্কর্যটি লেকের ওপর নির্মিত। চাঁদপুরের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান জানাতেই এটি গড়ে তোলা হয়েছে। প্রতিদিন বিকালে এখানে প্রচুর জনসমাগম হয়। সেখানে খানিকটা সময় কাটিয়ে এলে মন্দ লাগবে না।

জেলেরা ইলিশ ধরে বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছে আড়তে (ছবি: জুয়েল রানা) ইলিশ খাবেন যেখানে
চাঁদপুরে প্রায় সব হোটেলেই ইলিশ পাওয়া যায়। তবে সবচেয়ে ভালো হলো হোটেল তাজ, ক্যাফে কর্নার, আল-আরাফ ও আল-ইমরান। ক্যাফে কর্নারে সর্ষে ইলিশও পাবেন। হোটেলভেদে প্রতি পিস ইলিশ নেবে ৮০-১০০ টাকা। তবে লোকজন বেশি হলে আস্ত ইলিশ কিনে নেওয়াই ভালো। ৫০০ থেকে ৬০০ টাকাতেই ৬০০ গ্রাম সাইজের দুটি ইলিশ পাওয়া যায়। হোটেলের বাবুর্চি ক্রেতার সামনেই ইলিশ ভেজে দেয়। এসব হোটেলে ইলিশের লেজের ভর্তা খেতে ভুলবেন না।

যেভাবে যাবেন
জোছনা বিলাসের জন্য লঞ্চ বেছে নিলেই ভালো। নদীপথে চাঁদপুর যেতে হলে সদরঘাট থেকে লঞ্চে চড়তে হয়। প্রতিদিন ঢাকা থেকে চাঁদপুরের উদ্দেশে বড় বড় লঞ্চ ছেড়ে যায়। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত লঞ্চ পাবেন।
লঞ্চের ভাড়া ডেক ১০০ টাকা, সেকেন্ড ক্লাস চেয়ার ১৫০ টাকা, ফার্স্ট ক্লাস এসি চেয়ার ২০০ থেকে ২২০ টাকা, বিজনেস ক্লাস এসি চেয়ার ২৭০ টাকা, সিঙ্গেল নন-এসি কেবিন ৪০০-৪৫০ টাকা আর এসি সিঙ্গেল কেবিন ৫০০ টাকা। আপনার সুবিধামতো যেকোনও একটির টিকিট নিন। চাঁদপুর থেকেও একইভাবে আপনাকে ফিরে আসতে হবে। ভাড়াও একই।

খরচ
চাঁদপুরে ঘুরতে তেমন বেশি খরচ হয় না। ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা হলেই চাঁদপুরে বেশ ভালোভাবে ঘুরে ইলিশ খেয়ে আসা যায়। অবশ্য লঞ্চে আরাম-আয়েশ করতে চাইলে বাজেট আরও বাড়াতে হবে। খরচ কেমন হবে তা নির্ভর করে কে কীভাবে ট্যুর করে তার ওপর। তবে মোটামুটি মান বজায় রেখেই ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায় ঘুরে আসা যাবে।

 

/জেএইচ/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মীরসরাই প্রেসক্লাবের নতুন কমিটি ঘোষণা
মীরসরাই প্রেসক্লাবের নতুন কমিটি ঘোষণা
এআইইউবিতে সিএস ফেস্ট
এআইইউবিতে সিএস ফেস্ট
সিটি ক্লাবের সঙ্গে অবনমন হলো গাজী টায়ার্সের
সিটি ক্লাবের সঙ্গে অবনমন হলো গাজী টায়ার্সের
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
সর্বাধিক পঠিত
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ