X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১
ট্রাভেলগ

কক্সবাজারে সাগরের গর্জন, চাঁদের আলো, মৃদু হাওয়া

মাসুদ সরকার রানা
১৬ আগস্ট ২০১৮, ২০:৪৫আপডেট : ১৬ আগস্ট ২০১৮, ২১:১১

সাগর থেকে ধেয়ে আসছে বিশাল বিশাল ঢেউ শীত মৌসুমে সাধারণত সাগর বেশ শান্ত থাকে। তাই ঢেউয়ের আকারও দেখা যায় অনেক ছোট। আগে দু’বার কক্সবাজারে গিয়েছিলাম। দু’বারই ছিল শীতকাল। তাই এবার বর্ষাকালে উত্তাল সমুদ্র দেখার ইচ্ছে ছিল অনেকদিনের। ছোট বোনও একদিন একই আবদার করতেই তা বাস্তবে রূপ দিয়ে ফেলি। সাগরে তখন তিন নম্বর সতর্ক সংকেত চলছে। বিশাল বিশাল ঢেউ দেখার জন্য এর চেয়ে মোক্ষম সময় আর হতে পারে না।

দিনক্ষণ ঠিক করে কুমিল্লা থেকে রওনা হয়ে গেলাম কক্সবাজারের উদ্দেশে। বাস দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। আকাশ ভরা চাঁদ, রাতের নিস্তব্ধতা, স্নিগ্ধ বাতাস—সব মিলিয়ে এক মনোরম অনুভূতি। বাসের সঙ্গে দুলতে দুলতে কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম টেরও পাইনি। ঘুম ভাঙলো কক্সবাজার পৌঁছার পর।

বাস থেকে নামলাম সুগন্ধা বিচের কাছে। বাইরে তখন অঝোর ধারায় বৃষ্টি। তাই হোটেলে খানিকটা সময় ঘুমিয়ে নিলাম। ঘুম থেকে উঠে চললাম সৈকতের দিকে। ততক্ষণে আকাশ পরিষ্কার। নাশতা করেই নেমে গেলাম সাগরের জলে। বিশাল একেকটা ঢেউ যেন আস্ত মানুষ উড়িয়ে নিয়ে যাবে! এত বড় ঢেউ দেখে মনটা আনন্দে নেচে উঠলো। পয়সা খরচ করে কক্সবাজারে আসা সার্থক মনে হলো।

বিকালবেলায় সাগরপাড়ে জনতার উপচেপড়া ভিড় যারা বর্ষায় কক্সবাজার যাননি তারা সমুদ্রের সত্যিকারের রূপ দেখেননি। এই সময়ে ঢেউয়ের আকার শীতকালের চেয়ে দ্বিগুণ হবেই। আমরা ঢেউয়ের তালে তালে পানিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছি। একেকটা ঢেউ এসে সবাইকে নাকানিচুবানি খাওয়ায় আর অমনি সবার হৈহুল্লোড়! মাঝে মধ্যে এত বড় ঢেউ এসেছিল যে, লাফিয়েও হার মানতে হলো। ঢেউয়ের তোপের মুখে বেশ কয়েকবার সমুদ্রের লবণাক্ত পানি গিলতে হয়েছে। প্রায় ঘণ্টাখানেক জলকেলির পর বেলা পড়ে যাচ্ছে দেখে উঠে আসতে হলো। তবে মোটেও মন চাচ্ছিল না।

হোটেলে ফিরে বিকালে বৌদ্ধ মন্দিরে ঘুরতে গেলাম। রাতে ফের সৈকতে গিয়ে দেখি সমুদ্র মহাশয় বড়ই ক্ষেপেছেন! দিনের চেয়ে রাতে অনেক বড় বড় ঢেউ। একেকটা ঢেউ তো অন্তত ফুট বিশেক হবেই। ভয়ানক গর্জন ঝেড়ে একের পর এক বিশাল ঢেউ তীরে আছড়ে পড়ছে। সমুদ্রের যেন কোনও ক্লান্তি নেই, তার বিশ্রামেরও প্রয়োজন নেই। অনবরত গর্জন করেই চলছে আর মুখ থেকে আছড়ে ফেলছে সাদা ফণা।

সুরমা মাছের বারবিকিউ কক্সবাজার ট্যুরকে অন্য মাত্রা দিয়েছিল লাবণী বিচ থেকে সুগন্ধা বিচে সমুদ্রের কিনার ধরে হেঁটে এলাম। পুরো পথই কেটেছে দারুণ মুগ্ধতায়। উপভোগ করেছি সাগরের ভয়ানক রূপ। এরপর সুরমা মাছের বারবিকিউ খেয়ে আবারও পা রাখলাম বালুকাবেলায়। ততক্ষণে মাথার ওপর থেকে চাঁদমামা জোছনার স্নিগ্ধতা ছড়াচ্ছে। জোয়ার আসায় সাগরের ঢেউ আরও বড় হয়েছে। আর সাগর থেকে মৃদু ঠান্ডা হাওয়া বইছে। ওপর থেকে নামছে চাঁদের আলো, নিচে সাগরের ঢেউ, সামনে বইছে মৃদু হাওয়া। আর কী চাই!

হিমছড়ি পাহাড় থেকে সূর্যাস্ত এমন সময়ে একটা চেয়ার নিয়ে বসে গেলাম। তখন মনে হচ্ছিল, অন্য কোনও রাজ্যে হারিয়ে গেছি! সেই মুহূর্তটি ছিল চোখের জন্য প্রশান্তিদায়ক, মনের জন্য তৃপ্তিকর, কানের জন্য শ্রুতিমধুর। একেই বুঝি বলে সুখকর মুহূর্ত! ঢেউয়ের ফণায় চাঁদের আলো প্রতিফলিত হয়ে সাগরকে করে তুলেছিল আরও মোহনীয়। সাগরের এমন দারুণ সৌন্দর্য উপভোগ করেছিলাম আরও ঘণ্টাদেড়েক। এরপর ফিরে আসি হোটেলে।

ওইবার আরও দু’দিন ছিলাম কক্সবাজারে। এখনও মনে পড়ে হোটেল ম্যানেজারের আন্তরিকতা, সাগরের একেকটি বিশাল ঢেউ, জোছনার ঝলক, বারবিবিকিউর ঘ্রাণ। বর্ষাকালে কক্সবাজারে ঘুরতে গেলে সবই মিলবে।

* ভিডিওতে কক্সবাজারের উত্তাল সমুদ্র:

/জেএইচ/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী