X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গি সাইফুলের বোমা ৩২ নম্বরে ফাটলে কী হতো?

নুরুজ্জামান লাবু
১৫ আগস্ট ২০১৭, ২৩:১৮আপডেট : ১৬ আগস্ট ২০১৭, ১০:৩৭

 

হোটেলের বারান্দায় পড়ে আছে সাইফুলের মরদেহ

রাজধানীর পান্থপথে শোক দিবসের দিনে আত্মঘাতী বোমা হামলার যে পরিকল্পনা জঙ্গি সাইফুল করেছিল, তা যদি বাস্তবায়ন করতে পারতো, তাহলে কী হতো? কত লোক মারা যেতেন এই আত্মঘাতী বোমা হামলায়? কতটা শক্তিশালী ছিল জঙ্গি সাইফুলের সঙ্গে থাকা তিনটি বোমা? কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘এই বোমা ব্যবহারের সুযোগ পেলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়ে যেতে পারতো। তারপর যেখানে ব্যবহার বা হামলার পরিকল্পনা করেছিল জঙ্গিরা, তাতে স্বাভাবিকের চাইতে ক্ষয়-ক্ষতি হতো অনেক বেশি। হতাহতের সংখ্যা ছাড়িয়ে যেত শতাধিক।’ ফলে হামলার আগেই সাইফুলকে পরাস্ত করতে পারাকে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সাফল্য হিসেবেই দেখছেন অভিযানে অংশ নেওয়া কর্মকর্তারা।

সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘জঙ্গি সাইফুল ইসলামের কাছে যে তিনটি বোমা ছিল তা মাঝারি মানের শক্তিশালী ছিল। এগুলো যেহেতু শোক দিবস উপলক্ষে ৩২ নম্বরের গণজমায়েতে হামলার জন্য ব্যবহার করা হতো, তাহলে স্পটেই অন্তত ১৫/২০ জন মারা যেত। আহত হতো আরও শতাধিক ব্যক্তি।’

দীর্ঘ দিন বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের দায়িত্বে থাকা এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বোমার আঘাতে কত লোকের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে, এটা নির্ভর করে ঘটনাস্থলে মানুষের ঘনত্বের ওপর। ১৫ আগস্ট শোক দিবস হিসেবে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে অনেক লোকের সমাগম হয়েছিল। এখানে হামলা করতে পারলে অনেক বেশি ক্ষয়-ক্ষতি হতে পারতো।’

অভিযানে অংশ নেওয়া সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘জঙ্গি সাইফুল একটি কম দামি ট্রাভেল ব্যাগে করে বোমাগুলো বহন করেছিল। অভিযানে তার মৃত্যু হওয়ায় কোথা থেকে এসব বোমা সংগ্রহ করেছিল, তা জানা যাচ্ছে না। তবে তাদের ধারণা ঢাকার আশেপাশে বা ঢাকার ভেতরের কোনও আস্তানা থেকেই এসব বোমা সে হামলার জন্য নিজের কাছে নিয়ে থাকতে পারে।

হামলার পূর্ব-প্রস্তুতি হিসেবে হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে সাইফুল উঠেছিল, সেই হোটেলের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘রবিবার দুপুরের পর সাইফুল নিজ নাম-পরিচয় দিয়েই হোটেলটিতে ওঠে। এমনকি হোটেল কর্তৃপক্ষের চাহিদা অনুযায়ী নিজের একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুলিপিও জমা দিয়েছিল, যা ফেক আইডি নয় বলে নিশ্চিত হয়েছেন কর্মকর্তারা।’ যদিও এর আগে বিভিন্ন অভিযানে জঙ্গিদের বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় জমা দেওয়া জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুলিপিগুলো ফেক বলে জানতে পারেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।

সিটিটিসির কর্মকর্তারা বলছেন, কোণঠাসা হয়ে আসা নব্য জেএমবি নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা তাদের ভাবিয়ে তুলেছে। চাপাইনবাবগঞ্জের সীমান্ত এলাকার যে রুট দিয়ে জঙ্গিরা পাশ্ববর্তী দেশ থেকে অস্ত্র-বিস্ফোরক আনতো, মাস কয়েক আগে সেই রুটটি বন্ধ করে দেওয়ার দাবি করছে সিটিটিসি কর্মকর্তারা। তবে কর্মকর্তারা মনে করছেন, অন্যান্য সীমান্ত পয়েন্ট এবং দেশের ভেতর থেকেই জঙ্গিরা বিস্ফোরকের উপাদান সংগ্রহ করছে। আর এখনও অল্প যে কয়েকজন নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা পলাতক রয়েছে, তাদের মধ্যে কয়েকজন বোমা তৈরিতে দক্ষও।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, পান্থপথের এই হোটেলে যে দু’টি বোমা বিস্ফোরিত হয়েছে, পরে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট একটি নিষ্ক্রিয় করেছে, এগুলোতে আগের বোমাগুলোর চেয়ে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। বিশেষ করে বোমা তৈরির কনটেইনার হিসেবে আগে লোহার তৈরি জিআই পাইপ ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এখানে কোনও জিআই পাইপের উপাদান পাওয়া যায়নি। তবে স্প্লিন্টার হিসেবে ছোট ছোট লোহার বল ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া বিস্ফোরক উপাদানের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে, তিন তলার সেই হোটেল কক্ষটির দেয়াল ও দরজা ভেঙে পড়েছে।

সিটিটিসির এডিসি ছানোয়ার হোসেন বলছেন, ‘তারা ধারণা করছেন বোমাটি প্লাস্টিকের কোনও কনটেইনারের ভেতরে রাখা ছিল। বা কাপড়ের ভেতরেও থাকতে পারে। ঘটনাস্থল থেকে অনেক উপাদান সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।’

 

বোমা বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত হোটেল ওলিও’র পুরনো ভবন
এর আগে চাপাইনবাবগঞ্জে ও মৌলভিবাজারের পৃথক অভিযানেও সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের কর্মকর্তারা অভিযান শেষে বোমার এমন কিছু উপাদান পেয়েছেন, যা সচরাচর জঙ্গিদের আগে ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। মৌলভিবাজারে মেডিক্যাল উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত বেল্টের ভেতর বিস্ফোরক ও স্প্লিন্টার ঢুকিয়ে বোমা তৈরি করা হয়েছিল। আর চাপাইনবাবগঞ্জে একটি প্রেসার কুকারের মাধ্যমে বোমা তৈরি করা হয়েছিল।

হোটেল ওলিওতে থাকা জঙ্গি সাইফুল যে ব্যাগে বোমা বহন করছিলেন, তা নিয়েই কি সে হামলার পরিকল্পনা করছিল? বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যাগ নিয়ে ভিড়ের মধ্যে যাওয়াটা তার জন্য কষ্টকর হতো। তবে সুযোগ পেলে হয়তো সে বোমাগুলো নিজের শরীরের মধ্যে বেঁধে গিয়ে আত্মঘাতী হতো। তবে যেহেতু অভিযান চালানোর সময় সোয়াত সদসদ্যের গুলিতে ও নিজের বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সে আত্মঘাতী হয়েছে, ফলে তার পরিকল্পনা পুরোটা জানা সম্ভব নয়। 

বোমাগুলো তৈরি করছে কারা?

নব্য জেএমবির শীর্ষ অনেক নেতাসহ বোমা তৈরিতে দক্ষ নেতাদরা গত এক বছরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে হয় ধরা পড়েছে, নয়তো অভিযানে নিহত হয়েছে। কিন্তু এরপরও জঙ্গিদের বোমাগুলো তৈরি করছে কারা?

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা বলছেন, তাদের কাছে এখনও অন্তত ৪-৫ জনের নাম রয়েছে, যারা বোমা তৈরিতে দক্ষ এবং দীর্ঘ দিন ধরে পলাতক। পলাতক বোমা বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অন্যতম হলো হাদীসুর রহমান সাগর। গুলশান হামলার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড হিসেবে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত নূরুল ইসলাম মারজান ও সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া আরেক মাস্টারমাইন্ড সোহেল মাহফুজের আত্মীয় সে। সাগর বেশ কয়েক বছর ধরে পলাতক থেকে নব্য জেএমবির কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। বোমা তৈরির পাশাপাশি ভারত থেকে বিস্ফোরক আনার রুটগুলোও তার চেনা। যদিও সিটিটিসির কোনও কোনও কর্মকর্তা মনে করেন, নব্য জেএমবিতে ভাঙনের কারণে সাগর নিজে আলাদা দল করেছে। কিন্তু এ বিষয়ে নিশ্চিত কোনও তথ্য জানা যায়নি।

সাগরের পাশাপাশি মামুন নামে আরেকজন যুবকের নাম বিভিন্ন আলাপচারিতায় জানিয়েছেন সিটিটিসির কর্মকর্তারা। বলছেন, তাকেও নব্য জেএমবির বোমা বিশেষজ্ঞ হিসেবে ধরা হয়। আরেকজন পিচ্চি শফিক। এছাড়া মাহফুজ নামে পলাতক রয়েছে আরেকজন শীর্ষ নেতা। তারা সবাই বোমা তৈরিতে বিশেষভাবে দক্ষ।

ছবি: নাসিরুল ইসলাম ও সাজ্জাদ হোসেন

/এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আগামী বছর হজের খরচ আরও কমবে: ধর্মমন্ত্রী
আগামী বছর হজের খরচ আরও কমবে: ধর্মমন্ত্রী
জয়পুরহাটে হত্যা মামলায় ১৯ জনের যাবজ্জীবন
জয়পুরহাটে হত্যা মামলায় ১৯ জনের যাবজ্জীবন
শৈশব কেন অনিরাপদ?
শৈশব কেন অনিরাপদ?
জালিয়াতির মামলায় সিটি ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
জালিয়াতির মামলায় সিটি ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
সর্বাধিক পঠিত
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ