X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১

তাদের জন্য কি হেলমেট ব্যবহারের আইন নেই?

রাফসান জানি
১১ নভেম্বর ২০১৮, ২১:৪১আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০১৮, ২১:৪৮

শোডাউনে অংশ নেওয়া কর্মী-সমর্থকরা নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পর রাজধানীতে ট্রাফিকে শৃঙ্খলা রক্ষায় তিন দফায় বিশেষ সপ্তাহ পালন করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হয় আইন। এই আইন প্রয়োগের সময় সবচেয়ে বেশি মামলা দায়ের করা হয় হেলমেট না ব্যবহারকারী মোটরসাইকেল চালকদের বিরুদ্ধে। রাজধানীতে এ বিষয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশ সফলও হয়েছে বলে দাবি তাদের। কিন্তু, গত শুক্রবার (৯ নভেম্বর) থেকে রাজপথে মোটরসাইকেল চালকদের শৃঙ্খলিত চিত্র পাল্টে গেছে। হেলমেট ছাড়াই চলছে শতশত মোটরসাইকেল। দুজনের বেশি আরোহীও চড়ছে।

একাদশ নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরুর পর থেকে এ আইন ভাঙ্গার চিত্র দেখা গেছে রাজধানীজুড়ে। মনোনয়ন কিনতে আসা নেতাদের সঙ্গে থাকা কর্মীরা এ আইন ভাঙছেন। মনোনয়ন ফরম কেনার জন্য আসা নেতাদের মোটরসাইকেল বহরে অধিকাংশ চালক ও পেছনে থাকা ব্যক্তিদের হেলমেট ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। এছাড়া বহরে থাকা মোটরসাইকেলগুলোতে দুই জনের অধিক চড়তে দেখা যায়।

রবিবার (১১ নভেম্বর) সরেজমিনে দেখা গেছে, এসব বহরে থাকা নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে আইন ভাঙলেও নীরব ভূমিকায় থেকেছে ট্রাফিক পুলিশ। ট্রাফিক আইনানুযায়ী, একটি মোটরসাইকেলে দুই জনের অধিক চলাচল নিষেধ ও প্রত্যেকের হেলমেট ব্যবহার বাধ্যতামূলক। কিন্তু, এর কোনোটাই মানছেন না ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। উল্টো মিছিল ও মোটরসাইকেল বহর চলাচলের সময় রাজধানীজুড়ে প্রচণ্ড যানজট সৃষ্টি করছেন তারা।

বিগত কয়েকমাসে সাধারণ মোটরসাইকেল চালকদের শৃঙ্খলিত করার জন্য অসংখ্য মামলা দেওয়া হলেও গত দুইদিনে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বহরে থাকা চালকদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সাধারণ চালকরা। তাদের দাবি, আইন সবার জন্য সমান হওয়া উচিত। বিশেষ কাউকে ছাড় দেওয়া ঠিক না।

মিরপুর থেকে আসা মোটরসাইকেল চালক আসিফুর রহমান ধানমন্ডি-২৭ এ এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আইন সবার জন্যই সমান হওয়া উচিত। সড়কে শৃঙ্খলা ধরে রাখতে সবসময়ই আইনের প্রয়োগ করা দরকার। নয়তো এই বিষয়ে প্রশ্ন উঠবে।’

এদিকে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা নিজেদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন এই প্রতিবেদকের কাছে। তারা বলেন, আমরা নগরীতে যানবাহনের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু, মনোনয়ন বিক্রি শুরুর পর থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। হাজারো নেতাকর্মী প্রতিদিন একসঙ্গে আইন ভাঙছে। এতজন মানুষের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যথেষ্ট কঠিন। ফলে, চোখের সামনে ঘটে যাওয়া অপরাধ নীরবে সহ্য করতে হচ্ছে।

ডিএমপি রমনা ট্রাফিক জোনের এডিসি মেহেদী হাসান বলেন, ‘আমাদের প্রথম কাজ সড়কে যান চলাচলে শৃঙ্খলা রাখা। আমরা সেটা করার চেষ্টা করছি। তবে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ ও আইন প্রয়োগ দুটোই একসঙ্গে করা কঠিন। আমরা দুটোই একসঙ্গে করার চেষ্টা করছি।’

শোডাউনে অংশ নেওয়া কর্মী-সমর্থকরা ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, বিগত কয়েকমাসে অন্যান্য যানবাহনের তুলনায় মোটসাইকেল চালকদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বেশি। নিয়মিত মামলা ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করায় রাজধানীতে মোটরসাইকেল চলাচল শৃঙ্খলার মধ্যে এসেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ট্রাফিক কর্মকর্তা বলেন, ‘কয়েকজন মানুষের পক্ষে হাজারো মানুষের বিরুদ্ধে একসঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়। মিছিল যখন আসে, তখন অনেকগুলো মোটরসাইকেল একসঙ্গে আসে। এগুলো একেকটা মুভের (ভিড়) মতো। এসব মুভ আটকিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন। তারপরও তাদের শৃঙ্খলিত হয়ে চলাচল করতে বলা হচ্ছে। কিন্তু, তারা সেটা খুব একটা মানছেন না।’  

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিয়মিতভাবে ট্রাফিক আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগের এডিশনাল কমিশনার মীর রেজাউল আলম। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না। আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। যেখানে যে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, তা নেওয়া হচ্ছে।’

উল্লেখ্য, সড়কে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার জন্য ও দৃশ্যমান উন্নতির জন্য গত ২৪ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত তৃতীয়বারের মতো ট্রাফিক শৃঙ্খলা সপ্তাহ পালন করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এর আগে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পর ৫ থেকে ১৪ আগস্ট ১০ দিনের একটি ট্রাফিক সপ্তাহ ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে ৫ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর মাসব্যাপী ট্রাফিক সচেতনতা তৈরিতে কাজ করে পুলিশ। সেপ্টেপম্বর মাসজুড়ে পালিত হওয়া ট্রাফিক কর্মসূচির ২৯ দিনে মোট ১ লাখ ৬৮ হাজার ১১২টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ১৩ কোটি ৭১ লাখ ২৭ হাজার ৪১৫ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

/এনআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
অসময়ে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে ভাঙন, আতঙ্কে এলাকাবাসী
অসময়ে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে ভাঙন, আতঙ্কে এলাকাবাসী
গাজা ইস্যুতে আবারও কায়রোতে ইসরায়েলি প্রতিনিধিরা, এবার চুক্তি হবে?
গাজা ইস্যুতে আবারও কায়রোতে ইসরায়েলি প্রতিনিধিরা, এবার চুক্তি হবে?
এই বর্ষায় নির্ধারিত হবে মিয়ানমার জান্তা ও বিদ্রোহীদের পরিণতি?
এই বর্ষায় নির্ধারিত হবে মিয়ানমার জান্তা ও বিদ্রোহীদের পরিণতি?
শেখ হাসিনাই হচ্ছেন ভারতে নতুন সরকারের প্রথম বিদেশি অতিথি
শেখ হাসিনাই হচ্ছেন ভারতে নতুন সরকারের প্রথম বিদেশি অতিথি
সর্বাধিক পঠিত
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, অগ্রহণযোগ্য বলছে ইসরায়েল
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, অগ্রহণযোগ্য বলছে ইসরায়েল
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা
আসছে ব্যয় কমানোর বাজেট
আসছে ব্যয় কমানোর বাজেট