X
বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪
২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

কারাগার থেকে সরকারি কর্মকর্তা-আ.লীগ নেতাদের বাসায় ডাকাতির নির্দেশ!

নুরুজ্জামান লাবু
৩০ মার্চ ২০২১, ১৭:১৩আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২১, ১৭:৩০

কারাগার থেকে শীর্ষ জঙ্গি নেতারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারি কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বাসায় ডাকাতি করার নির্দেশ দিয়েছিল। নির্দেশনা অনুযায়ী জঙ্গিদের একটি গ্রুপ পেশাদার ডাকাত সদস্যদের সঙ্গে মিশে ডাকাতি করে বেড়াতো। পরে ডাকাতির অর্থের একটি অংশ কারাগারে শীর্ষ জঙ্গি নেতাদের কাছে যেত। বাকি অংশ ব্যয় করা হতো জঙ্গিদের দাওয়াতি কার্যক্রমে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও জোনাল টিম সোমবার (২৯ মার্চ) সন্ধ্যায় দুই জঙ্গিকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য পেয়েছে। দুই জঙ্গিকে মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) আদালতে সোপর্দ করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে আনা হয়েছে।

গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহাদাত হোসেন সুমা জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে দুই জঙ্গিকে গ্রেফতারের পর তাদের কাছে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। একই সঙ্গে তাদের সহযোগীদের গ্রেফতারেও অভিযান চালানো হচ্ছে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, সোমবার সন্ধ্যায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও জোনাল টিমের সদস্যরা ফার্মগেট এলাকার পূর্ব তেজতুরী বাজার এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় আসিফুর রহমান আসিফ (২৬) ও পিয়াস শেখ (২৮) নামে দুই জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে দুই রাউন্ড গুলিসহ একটি পিস্তল, কয়েকটি মোবাইল ও ৩৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত দুই জঙ্গি জানায়, তারা পুরাতন জেএমবির সক্রিয় সদস্য। কাশিমপুর কারাগারে বন্দি তাদের শীর্ষ নেতা আব্দুল্লাহ আল তাসনিম ওরফে নাহিদ, আবু সাঈদ, আল-আমিন ও ফয়সালের নির্দেশে তারা সংগঠনের তহবিল সংগ্রহের জন্য ডাকাতি করে বেড়াতো। পুলিশের অভিযানের সময় তাদের সঙ্গে আনোয়ার আলী ওরফে হৃদয়, তানজিল বাবু, হাফিজুল শেখ ওরফে সকাল, আবু সালেহ, পাভেল ওরফে রাহুল, জোসেফ, রোজীসহ বেশ কয়েকজন বৈঠকের জন্য মিলিত হয়েছিল। ডাকাত সেজে ঘুরে বেড়ানো জঙ্গিরা

গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় একাধিক ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে হাতিরঝিল, তেজগাঁও থানাধীন এলাকায় ছয়টি ডাকাতির ঘটনায় তারা পেশাদার ডাকাত দলের সঙ্গে জঙ্গি সম্পৃক্ততা পেয়েছিলেন। সে সময় পেশাদার কয়েকজন ডাকাত সদস্যকে গ্রেফতারের পর হৃদয়, তানজিল বাবু, সকালসহ কয়েক জনের নাম পান তারা। তবে ঘটনার পর থেকেই তারা আত্মগোপনে ছিল।

গ্রেফতারকৃত আসিফকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আরও জানান, তারা আসিফের মোবাইল ফোনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন অ্যাপ ঘেঁটে কিছু তথ্য পেয়েছেন। জেলখানা থেকে কারাবন্দি শীর্ষ জঙ্গি নেতারা তাদের এসব বার্তা পাঠিয়েছিল। এরমধ্যে একটি বার্তায় সরকারি কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগ নেতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বাসায় ডাকাতি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ডাকাতি করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লে কী করতে হবে সে বিষয়েও নির্দেশনা রয়েছে।

গোয়েন্দা পুলিশের সংশ্লিষ্ট ওই কর্মকর্তা জানান, আসিফের কাছ থেকে যে ৩৫ হাজার টাকা পাওয়া গেছে, তা ২০ ও ১৫ হাজার করে দুই ভাগে ভাগ করে প্যাকেটে রাখা ছিল। প্যাকেটের ওপর তাসনিম নাহিদ ও আল-আমিন, কাশিমপুর লেখা ছিল। ডাকাতি করা এসব টাকা কারাবন্দি দুই জঙ্গি নেতার কাছে পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল তাদের। জিজ্ঞাসাবাদে আসিফ জানিয়েছে, এর আগেও তারা ডাকাতি করা অর্থ কারাগারে তাদের শীর্ষ নেতাদের কাছে পাঠিয়েছে।

জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে গঠিত বিশেষায়িত ইউনিট কাউন্টার টেরোরিজমের একজন কর্মকর্তা জানান, কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগার থেকে যারা ডাকাতির নির্দেশনা দিয়েছে তারা শীর্ষ জঙ্গি নেতা। এরমধ্যে আবু সাঈদ ২০০৫ সালে সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। সে ২০০৭ সালে ভারতে পালিয়ে গিয়ে নদীয়া, বীরভূম ও বর্ধমান জেলার জেএমবি কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। ২০১৪ সালে বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণে তার সম্পৃক্ততা পাওয়ায় কলকাতা পুলিশের ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) তাকে ধরতে ১০ লাখ রূপি পুরষ্কার ঘোষণা করে। ২০১৫ সালে আবু সাঈদ দেশে ফিরে এলে দুই বছরের মাথায় ২০১৭ সালের ২৯ ডিসেম্বর বগুড়া জেলা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।

ওই কর্মকর্তা জানান, কারাবন্দি আব্দুল্লাহ আল তাসনিম ওরফে নাহিদও পুরাতন জেএমবির শীর্ষ পর্যায়ের নেতা। ২০১০ সালে জেএমবির আমির মাওলানা সাইদুর রহমান গ্রেফতার হওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব পালন করে তাসনিম। ২০১৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে তাসনিম গ্রেফতার হয়। আবু সাঈদ ও তাসনিম ছাড়াও বাকি দুই শীর্ষ জঙ্গি নেতার একজন আল-আমিন আনসার আল ইসলামের নেতা ও ফয়সাল হরকাতুল জিহাদ নেতা।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা জানান, জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ ও আনসার আল ইসলামের মতাদর্শ প্রায় একই হওয়ার কারণে তারা যৌথভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে কিছু তথ্য আগেই পেয়েছিলেন। জেলখানায় বসে তারা এক হয়ে ডাকাতি করে তহবিল সংগ্রহ করা সেই তথ্যকে আরও পোক্ত করেছে বলে তিনি মনে করছেন।

 

/এফএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সড়কে অসুস্থ হয়ে আনসার সদস্যের মৃত্যু
বুদ্ধ পূর্ণিমা ঘিরে কোনও ‘নিরাপত্তা ঝুঁকি’ দেখছে না ডিএমপি
কচুরিপানার মধ্যে ভাসছিল বস্তাবন্দি লাশ: ২১ বছর পর ৩ জনের যাবজ্জীবন
সর্বশেষ খবর
সড়কে অসুস্থ হয়ে আনসার সদস্যের মৃত্যু
সড়কে অসুস্থ হয়ে আনসার সদস্যের মৃত্যু
খাগড়াছড়িতে ভোট বর্জনের লিফলেট বিতরণের সময় বিএনপি নেতা আটক
খাগড়াছড়িতে ভোট বর্জনের লিফলেট বিতরণের সময় বিএনপি নেতা আটক
এতিমখানার অনুদানের টাকা দিতেও ঘুষ গ্রহণ: দুদকের অভিযান
এতিমখানার অনুদানের টাকা দিতেও ঘুষ গ্রহণ: দুদকের অভিযান
গাজায় যুদ্ধবিরতির উদ্যোগ এড়িয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল: মিসর
গাজায় যুদ্ধবিরতির উদ্যোগ এড়িয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল: মিসর
সর্বাধিক পঠিত
১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলির ফল প্রকাশ
১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলির ফল প্রকাশ
শিক্ষার্থী ভর্তির টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ
শিক্ষার্থী ভর্তির টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ
বাবার নির্বাচনি প্রচারণায় নামা মেয়ের গাড়ির ধাক্কায় শিশু নিহত
বাবার নির্বাচনি প্রচারণায় নামা মেয়ের গাড়ির ধাক্কায় শিশু নিহত
ফুল দিয়ে বরণ, রিট দিয়ে শুরু কোন্দল!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিফুল দিয়ে বরণ, রিট দিয়ে শুরু কোন্দল!
সৌরবিদ্যুতের দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় সরকার
সৌরবিদ্যুতের দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় সরকার