রাজধানীর আসাদ গেট নিউ কলোনিবাসী তাদের পঞ্চাশ বছরের আবাস হারানোর শঙ্কায় দিন যাপন করছেন। প্রতিনিয়ত হামলা-মামলার ভয়ে রয়েছে এই কলোনির ১১৪পরিবার। আর তাদের উচ্ছেদ করতে মরিয়া ক্ষমতাশালীদের সঙ্গে হাত মেলানো তাদেরই প্রতিবেশীদের কেউ-কেউ। যারা তাদের নামে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছেন।
গত মাসের শেষদিকে এই কলোনির বাসিন্দাদের ওপর হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। ১০টি মোটরসাইকেল নিয়ে কমপক্ষে ৩০/৩৫ জনের একটি দল হামলা চালায় বলে জানিয়েছেন কলোনিবাসীরা। এতে নারী ও শহীদ পরিবারের সদস্যসহ অনেকে আহত হন।পুরনো তিন ভবনের ফ্ল্যাট খালি করতে ভীতি প্রদর্শনের জন্য স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার যোগসাজসে এ হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
আর তারা এই হামলার সঙ্গে জড়িত বলে মাসুদ বারীর বিরুদ্ধে করলেও মাসুদ বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলছেন, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কলোনিতে আমিও বাস করে আসছি। কিন্তু কতিপয় পরিবারের সদস্য বিনা পয়সায় এখানে থাকতে গিয়ে অভ্যাস খারাপ করে ফেলেছেন। তারা ন্যূনতম ভাড়া যেমন দেন না, ইউটিলিটি বিলও পরিশোধ করেন না। তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, এখানে পুরনো সাতটা ফ্ল্যাট ভেঙে বহুতল ভবন বানিয়ে কম দামে আমাদের দেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। কিন্তু কিছু সুবিধাবাদী লোক সেটা তো হতে দিচ্ছেনই না, বরং তারা গভীর রাতে চিল্লাচিল্লি করে সমাবেশের নামে এলাকার পরিবেশ নষ্ট করছেন।
এদিকে, আন্দোলনকারীরা বলছেন, আমরা আইনের আশ্রয় নিয়েছি।আদালতে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কলোনি ভাঙতে কোনও উদ্যোগ না নেওয়ার কথা থাকলেও প্রায়শ নানাভাবে আমাদের উত্যক্ত করা হচ্ছে। এলাকার ক্ষমতাশালীদের ভয়ে কেউই পরিচয় দিয়ে কোনও কথা বলতে ভয় পান।
আন্দোলনকারীদের একজন বলেন, গত ৯তারিখ একদল কর্মকর্তা এই ভবনগুলো ভাঙতে আসলে আমরা স্থাগিত-আদেশ দেখান। কেউ যেন আমাদের বিপদে না ফেলে সেজন্য আমরা সবাই ভবনে-ভবনে স্টে-অর্ডার ঝুলিয়ে রেখেছি। কিন্তু আমাদের পানি বন্ধ করতে চাইছে, কোনওদিন এসে গ্যাসের লাইন বন্ধ করতে চাইছে। মাসুদ বারী রাতের বেলা এলাকাবাসীকে উত্যক্ত করার যে অভিযোগ তুলেছেন সে সম্পর্কে জানতে চাইলে এলাকায় চল্লিশ বছর ধরে বাস করছেন, এমন একজন নারী বলেন, কলোনির পরিবেশ কিভাবে রক্ষা করা যায়। সে বিষয়ে আমরা সচেষ্ট। বরং এখানে কমিশনারের নেতৃত্বে অনেক কিছুই ঘটে যা আমরা বলতে চাই না। তবে, সামনের খেলার মাঠ নানা কারণে ভাড়া দিয়ে কলোনির পরিবেশ নষ্ট করছেন তারা এই অভিযোগও করেন এই নারী। লালমাটিয়ায় কলোনির এই মাঠটিতে গাড়ি মেলা থেকে শুরু করে চা পানের দোকান-বাজার বসানোর কাজে ব্যবহৃত হয়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত বিভাগের কিছু লোক এক যোগে এই হামলা করেছেন।
আসাদগেট কলোনির ৯ এবং ১৫ নম্বর ভবনে ১৯৬২ সাল থেকে বাস করছে ১শ ১৪টি পরিবার। চলতি বছর পুরোনো ভবনগুলো ভাঙার টেন্ডার দেয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত কর্তৃপক্ষ। এর বিরুদ্ধে রিট করা হলে আদালত ভবন ভাঙার ওপর স্থগিত আদেশ দেন। এ নিয়ে পরবর্তী শুনানির তারিখ ছিল ৭ জানুয়ারি। ওই দিন শুনানি না হওয়ায় পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ জানুয়ারি। মাসুদ বারীকে বিষয়টি জানানো হলে তিনি বলেন, আদালতে সব নিষ্পত্তি হয়ে গেছে বলেই আমি জানি। এখন গায়ের জোরে এটা আটকে রাখা হচ্ছে। লালমাটিয়ার মতো জায়গায় ফ্ল্যাট পাবেন—এমন আশ্বাস দেওয়ার পরও হাতে গোনা কয়েকটা পরিবার কেন এ ধরনের বাধা দিচ্ছে, তা তার বোধগম্য নয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে, আন্দোলনকারীরা বলছেন, আমাদের বলা হয়েছিল ৩০বছর ভাড়া পরিশোধ করলে এই ফ্ল্যাট আমাদের দিয়ে দেওয়া হবে। সে অনুযায়ী পরিশোধ করে আসছিলাম। এরই মধ্যে কিছু স্বার্থান্বোষী মহল এখানে সরকারি ফ্ল্যাট বানানোর তোড়জোড়ের পাশাপাশি আমাদের জন্য সাড়ে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা স্কয়ার ফিটে ফ্ল্যাট দেওয়ার কথা জানান। এত টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কেনার সামর্থ্য আমাদের নেই। তাই এখন আমাদের উচ্ছেদ করাটাই মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উল্লেখ্য, নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ষাট-এর দশকে বানানো এসব ফ্ল্যাটে মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবার, সাংবাদিকসহ সরকারি চাকরিজীবদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
/এমএনএইচ/