X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রে আগ্রহ কমছে

তৈয়ব আলী সরকার, নীলফামারী
১৮ এপ্রিল ২০১৯, ১৭:৩৮আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০১৯, ১৮:১৪

বাঁশের তৈজসপত্র বিক্রি ঘর ও গৃহস্থালীর কাজে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার বাড়ায় বাঁশের তৈরি জিনিজসপত্রের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমছে। তারপরও অনেকে এখনও এই পেশাটি ধরে রেখেছেন। তারা বলছেন, এটা তাদের বাপ-দাদার পেশা। আবার অনেকে অন্য পেশায়ও চলে যাচ্ছেন।

রমানাথ হাজেরার (৪৭) বাড়ি নীলফামারী সদরের রামনগর ইউনিয়নের বাহালী পাড়া গ্রামে। তিনি বলেন, ‘ছোট বেলায় বাবা-মায়ের হাত ধরে এ পেশায় কাজ শুরু করি। এমন একটা সময় ছিল, রাতে কাজ করেও মানুষের চাহিদা মেটানো যেত না। এখন আধুনিকতার ছোঁয়ায় বাঁশের পরিবর্তে প্লাস্টিকের তৈরি ডালা, কুলা, চাইলন, ধান ও চাল রাখার জন্য পাস্টিকের ড্রাম ব্যবহার হচ্ছে বেশি। ফলে গ্রামের মানুষের ঐতিহ্যবাহী বাঁশের তৈরি ধানের গোলা, ডালি, কুলা, মাছের খলই ও মাছ ধরার পলো, টুশি, বাঁশের তৈরি পাখা ইত্যাদির জায়গা দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিক। হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশের তৈরি মাছ ধরার বিভিন্ন যন্ত্র ও বিয়ে বাড়ির চাইলোন, বিয়ে বাড়িতে ফোঁড়ন ডোবানোর চালা ও হাত পাখার কদর।’

বাঁশের তৈজসপত্র বিক্রি সদরের বাহালী পাড়া গ্রামের বুলবুলি বালা (৬৫) বলেন, ‘আগের মতো বাঁশের তৈরি ধানের গোলা বা ঢুলি বিক্রি হয় না। বিভিন্ন প্রকার প্লাস্টিকের জিনিসপত্র বাজারে আসায় বাঁশের জিনিসপত্র এখন আর কিনছেনা ক্রেতারা। সংসার অতি কষ্টে চলছে। পাশাপাশি অনেকেই এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। এটা আমাদের বাবা-দাদার পেশা। এ পেশার রোজগারে আমাদের সংসার ভালোই চলছিল। তবে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহারের ফলে এটি বিলুপ্তির পথে।’

সদরের টুপামারী ইউনিয়নের রামগঞ্জ পশ্চিম পাড়ার অনিল চন্দ্র রায় (৬৫) বলেন, ‘গ্রাম বাংলার বাঁশের তৈরি ঢুলি ও ঢাকি কুলার চাহিদা কমে গেলেও নীলফামারীর ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরগঞ্জ ও সৈয়দপুরের বিভিন্ন হাট-বাজারে এসব জিনিস পাওয়া যায়। ২৫ বছর ধরে বাঁশ-বেতের ব্যবসা করি। আগে এ পেশার গুরুত্ব ছিল। অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাসে দোন ও ডালির ব্যাপক চাহিদা থাকে। রাতদিন কাজ করেও সামাল দেওয়া যেত না। বিক্রিও ভালোই হতো।’

জেলা শহরের বড় বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী (বাঁশ ও বেত) কানাইলাল (৪৮) বলেন, ‘সংসারের চাহিদা মেটানোর জন্য পরের বাড়িতে দিন-মজুরের কাজ করেও অবসর সময়ে বাঁশের ঢুলি মাছ ধরার বিভিন্ন যন্ত্র তৈরির কাজ করি।’

নীলফামারী যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আব্দুল ফারুক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উপজেলা পর্যায়ে ৭-১০ দিনের অপ্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ নিয়ে যুব উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে আর্থিক সুবিধা পেতে পারে। তবে, প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। প্রশিক্ষণের সনদপত্র দেখে সুফলভোগীদের ঋণ দেওয়া হয়। নীলফামারীতে কুটির শিল্পের আওতায় বাঁশ ও বেতের কাজের সুফলভোগীদের দক্ষতা উন্নয়নে কোনও প্রশিক্ষক নেই।’

বাঁশের তৈজসপত্র বিক্রি জেলা ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উপ-ব্যবস্থাপক হোসনেরা খাতুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের আওতায় গত অর্থবছরে জেলায় ৯০ জনের নামের তালিকা রয়েছে। ওই শিল্পের সদস্যদের নির্দিষ্ট কোনও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। তবে সতরঞ্জি, মাধুর, শাড়িতে পুঁথিসহ নানা ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। এর মধ্য থেকে তাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। সেটাও পর্যাপ্ত নয়। বাঁশ ও বেতের যারা কাজ করেন, তাদের জন্য আলাদা কোনও সুযোগ-সুবিধা নেই। তবে এই পেশাকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। ওই শিল্পের উন্নয়ন করতে হলে দক্ষ প্রশিক্ষকের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের এগিয়ে নেওয়া যেতে পারে।

নীলফামারী জেলা সদরের রামনগর, কচুকাটা, টুপামারী, খোকশাবাড়ী ও জলঢাকা উপজেলার মিরগঞ্জ, টেংগনমারী, পাঠানপাড়া দক্ষিণ দেশিবাই, সৈয়দপুরের খাতা মধুপুর, বেলপুকুর ও কামারপুকুর; ডোমার উপজেলার চিকমাটি, সোনারয়সহ অন্যান্য এলাকার ঐতিহ্যবাহী বাঁশের তৈরি ধানের ঢুলি, মাছ ধরার পলো, খলাই, ঢাকি, কুলা, বিয়ে বাড়ির চাইলন, খাঁচা, দাঁড়িপাল্লা, ডারকি, ঢুশিসহ মাছ ধরার বিভিন্ন যন্ত্র তৈরি করা হয়।

 

 

/এনআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
বাজারে এলো বাংলা ভাষার স্মার্টওয়াচ ‘এক্সপার্ট’
বাজারে এলো বাংলা ভাষার স্মার্টওয়াচ ‘এক্সপার্ট’
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ