প্রশ্ন: আমার বয়স ৩০ বছর। আত্নবিশ্বাসের যথেষ্ট ঘাটতি আছে আমার। কেউ আমার সাথে অন্যায় করলেও আমি প্রতিবাদ করতে পারি না। এরপর এই ঘটনা মনে করে গ্লানিতে ভুগি। কেন পারলাম না প্রতিবাদ করতে সেটা ভেবে আফসোস হয়। কীভাবে আত্নবিশ্বাসী হওয়া যায়?
উত্তর: ১) নিজের প্রতি সহানুভূতিশীল হোন: আপনার সকল আবেগ-অনুভূতি ও বৈশিষ্ট্য আপনারই অংশ। তাই এদেরকে ভালো বা মন্দ হিসেবে বিচার না করে নিরপেক্ষভাবে গ্রহণ করুন। যদি নেতিবাচক চিন্তাভাবনা বা আবেগ অনুভূতি আসে, সেগুলোকে বাধা না দিয়ে আনন্দ ও ভালোবাসার সাথে গ্রহণ করুন। অপরাধবোধ আমাদের মানসিক শান্তি নষ্ট করে, অন্যের সাথে সুসম্পর্ক তৈরি করতে বাধা দেয় এবং কর্মদক্ষতা কমিয়ে দেয়। অপরাধবোধ থেকে মুক্তি পেতে, নিজের সকল কৃতকর্মকে প্রাকৃতিক নিয়মে সংঘটিত হয়েছে বলে মনে করুন। অনুশোচনা থেকে মুক্ত হতে পারলেই আমরা অন্যদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে পারব।
২) মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন: আপনি যেখানে আছেন এবং যা করছেন, সেখানেই মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন করতে পারেন, আলাদা সময় ব্যয় না করেই। দৈনন্দিন কাজ করার সময় বর্তমান মুহূর্তে থাকার চেষ্টা করুন। যেমন খাওয়ার সময় খাবারের স্বাদ ও গন্ধ উপভোগ করুন, হাঁটার সময় চারপাশের দৃশ্য লক্ষ্য করুন। আপনার চারপাশে যা ঘটছে তা লক্ষ্য করুন। আপনার শরীরের সাথে মেঝে, চেয়ার, আসবাবপত্র বা অন্য যা কিছু স্পর্শ করছে, সেগুলো সচেতনভাবে অনুভব করুন। আপনার শরীরে রোদ বা বাতাসের স্পর্শ অনুভব করুন। পায়ের মাটির স্পর্শ এবং পোশাকের স্পর্শ অনুভব করুন।
৩) শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম: শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম মানসিক চাপ কমাতে এবং মনকে শান্ত করতে অত্যন্ত কার্যকর। প্রথমে নাক দিয়ে লম্বা শ্বাস নিন এবং ১ থেকে ৪ পর্যন্ত গুনুন। এরপর শ্বাস ধরে রাখুন এবং ১ থেকে ৪ পর্যন্ত গুনুন। তারপর ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন এবং ১ থেকে ৬ পর্যন্ত গুনুন, এ সময় পেট ভেতরের দিকে টানুন। এই প্রক্রিয়াটি কয়েকবার পুনরাবৃত্তি করুন। এটি আপনার শরীর ও মনকে শিথিল করবে এবং আপনাকে আরও সতেজ অনুভব করতে সাহায্য করবে। নিয়মিত এই ব্যায়ামটি করলে আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে এবং আপনি আরও শান্ত ও স্থির অনুভব করবেন।
৪) প্রকৃতির সাহচর্য: প্রতিদিন কিছু সময় প্রকৃতির মাঝে কাটানোর চেষ্টা করুন। প্রকৃতির সাথে সংযোগ স্থাপন আমাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ১৫ থেকে ৩০ মিনিট খালি পায়ে ঘাস বা মাটির উপর হাঁটুন বা দাঁড়ান। এটি আপনাকে প্রকৃতির সাথে আরও ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত করবে এবং আপনার মনকে শান্ত করবে। এছাড়াও বড় কোনও গাছের কাণ্ড জড়িয়ে ধরে রাখুন (ট্রি হাগিং) কিছু সময়ের জন্য। গাছের সাথে এই সংযোগ আপনাকে প্রাকৃতিক শক্তির অনুভূতি দেবে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে। প্রকৃতির মাঝে সময় কাটানোর মাধ্যমে আপনি নিজেকে আরও সতেজ ও পুনরুজ্জীবিত অনুভব করবেন।
প্রশ্ন: আমার বয়স ২২ বছর। আমি যে ছেলেটাকে পছন্দ করি, তার সাথে সম্পর্কে যাওয়া সম্ভব নয়। আমি তবুও তাকে ভুলতে পারছি না। সারাক্ষণ তাকে নিয়েই ভাবি। মন খারাপ হয়, পড়াশোনাও হচ্ছে না। কীভাবে এই সমস্যা থেকে বের হবো?
উত্তর: ১) ধৈর্য্য ধরুন: ধৈর্য্য একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ যা আপনার জীবনে অনেক সমস্যা সমাধানে সাহায্য করতে পারে। আপনার জীবনে যা কিছু ঘটছে সেগুলো অবধারিত ভাবে প্রকৃতির নিয়মেই ঘটছে। সুতরাং এখন আপনার মধ্যে যে মন খারাপ হচ্ছে সেটাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা না করে আপন করে নিতে হবে। জীবনে আনন্দ যেমন আমরা উপভোগ করি, তেমনি কষ্টের সময় কষ্টকেও আলিঙ্গন করতে শুরু করুন। তাহলেই আপনার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে যথাযথ সিদ্ধান্ত যথাযথ সময়ে আপনাআপনি আপনার ভিতর থেকে বেরিয়ে আসবে।
২) নতুন সম্পর্ক গড়ে তুলুন: ইতিবাচক এবং সমর্থনশীল মানুষের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলুন। আপনার পরিবার এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সাথে সময় কাটান। বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করুন যেমন ক্লাব, ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক সংগঠন বা স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম। শরীরচর্চা, মেডিটেশন, বইপড়া, রান্না, বা এ ধরনের কোনও আত্মউন্নয়নমূলক কোর্সে অংশগ্রহণ করুন। নতুন কিছু শিখুন বা এমন কিছু করুন যা আপনাকে আনন্দ দেয়।
৩) নিজেকে ভালোবাসুন: নিজেকে নিঃশর্ত ভালোবাসুন এবং নিজের প্রতি সহানুভূতিশীল হোন। আপনার সমস্ত গুণ এবং ত্রুটিগুলোকে গ্রহণ করুন। আপনি যেমন আছেন, ঠিক তেমনই নিজেকে ভালোবাসুন। আপনার অনুভূতি এবং চিন্তাগুলোকে পর্যবেক্ষণ করুন, কিন্তু সেগুলোকে বিচার করবেন না। নিজেকে সময় দিন এবং নতুন কিছু শিখুন বা এমন কিছু করুন যা আপনাকে আনন্দ দেয়। নিজের প্রতি ভালোবাসা ও সহানুভূতি প্রদর্শন করা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিজের প্রতি যত্নশীল হলে আপনি আরও আত্মবিশ্বাসী ও সুখী হতে পারবেন।
৪) নিজের যত্ন নিন: স্বাস্থ্যকর খাবার খান এবং পর্যাপ্ত পানি পান করুন। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো নিশ্চিত করুন। প্রতিদিন কিছু সময় ব্যায়াম করুন যেমন হাঁটা, দৌড়ানো, বা সাইকেল চালানো। প্রকৃতির সাথে সময় কাটান। প্রতিদিন পনেরো মিনিট থেকে আধা ঘণ্টা খালি পায়ে মাটিতে বা ঘাসের উপর হাঁটুন বা দাঁড়িয়ে থাকুন। অথবা দুই হাতের তালু দিয়ে বড় কোনও গাছের কান্ড কিছু সময়ের জন্য জড়িয়ে ধরে রাখুন (ট্রি-হাগিং)।
