তীব্র গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা সবার। গ্রীষ্মের তাপ আমাদের শুধু ক্লান্তই করে না, পাশাপাশি বাড়ায় অনেক ধরনের রোগের ঝুঁকি। অতিরিক্ত তাপমাত্রায় ডায়রিয়া, হিট স্ট্রোকসহ নানা রকম অসুস্থতার ঝুঁকি এড়াতে চাইলে সচেতনতা জরুরি। এই গরমে সুস্থ থাকতে চাইলে কিছু জরুরি টিপস জেনে নিন।
১। ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ওয়ানাইজা রহমান জানান, মারাত্মক পানিশূন্যতা হয় গরমে। এ সময় শরীর থেকে প্রচুর ঘাম বেরিয়ে যায়। এতে করে পানির পাশাপাশি লবণ বা ইলেকট্রোলাইটসের অভাবও দেখা দেয়। ইলেকট্রোলাইটস হচ্ছে সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের সম্মিলন। শরীর থেকে এই খনিজ কমে গেলে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাকের মতো ঘটনা ঘটতে পারে। এ সময় শরীরের কোষ সজীব রাখতে প্রচুর পানি খেতে হবে। ইলেকট্রোলাইটসের অভাব পূরণ করতে খাবার স্যালাইন খাওয়া যেতে পারে। শরীরে পানি কম হলে প্রস্রাব হলুদ হবে ও পরিমাণে কম হবে এবং জ্বালাপোড়া করবে। যতক্ষণ না প্রস্রাব স্বাভাবিক রঙ ফিরে পাবে, ততক্ষণ পর্যাপ্ত পানি, ডাব ও শরবতের মতো তরল পদার্থ খেতে হবে।
২। হালকা রঙের ঢিলেঢালা পোশাক পরুন। হালকা রঙ সূর্যের তাপকে আকর্ষণ করে না। ত্বকের ঘাম দ্রুত বাষ্পীভূত হয় সুতির নরম পোশাক পরলে।
৩। ব্যায়ামের রুটিন পরিবর্তন করুন। গরমের কারণে ব্যায়াম বন্ধ করার দরকার নেই, কিছুটা পরিবর্তন আনতে পারেন। এমন ব্যায়াম করুন যা অতিরিক্ত ঘামের কারণ হবে না। সাঁতার কাটতে পারেন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণে ইনডোর ওয়ার্কআউট বেছে নিন বা দিনের শীতলতম অংশে, যেমন ভোরে বা সন্ধ্যায় ওয়ার্কআউট করুন।
৪। বারডেম জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা.কামরুজ্জামান নাবিল পরামর্শ দেন কাজ না থাকলে অপ্রয়োজনে বাইরে না যাওয়ার, বিশেষ করে দুপুর ১২টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত। যদি একান্তই বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হয়, ছাতা নিয়ে বের হবেন এবং চোখ রক্ষায় সানগ্লাস ব্যবহার করবেন। খুব ভিড় হয় এমন এলাকায় যাবেন না।
৫। ঠান্ডা কম্প্রেস করতে পারেন নিজেকে শীতল রাখতে। ঠান্ডা পানিতে একটি ওয়াশক্লথ ভিজিয়ে নিন বা বরফ দিয়ে একটি ব্যাগ ভরে তারপর কপালে, ঘাড়ের পেছনে বা কব্জিতে রাখুন। যদি বরফ ব্যবহার করেন তবে বরফ এবং ত্বকের মাঝে একটি তোয়ালে রাখুন।
৬। এসময় বাড়ে ডায়রিয়ার প্রকোপ। তাই পরিবারের সদস্যরা পর্যাপ্ত পানি পান করছেন কিনা, নিরাপদ খাবার খাচ্ছেন কিনা সেদিকে খেয়াল রাখার পরামর্শ দেন ডা. ওয়ানাইজা রহমান। বিশেষ করে অতিরিক্ত তেল মশলার খাবার, বাসি খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। গরমে আরামদায়ক পোশাকের মতো আরামদায়ক খাবার নির্ধারণ করে খাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। শিশুদের জন্য ইনস্ট্যান্ট নুডুলস, চপ, কাটলেট, নাগেটসের মতো খাবার না দিয়ে চিড়া, দই, তরমুজ, বাঙ্গি, লেবু জাতীয় ফল দিন বেশি করে।
৭। গরমে শরীরে ঘাম জমে ছত্রাক সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। ঘাম শরীরের বিভিন্ন ভাঁজে বিশেষ করে কুঁচকিতে, আঙুলের ফাঁকে ও যৌনাঙ্গে জমা হয়ে সেখানে ছত্রাক সংক্রমণের পথ বিস্তার করে দেয়। তাই এ সময় ছত্রাক সংক্রমণ এড়াতে হলে শরীরের ভাঁজগুলোতে ঘাম জমতে দেওয়া যাবে না। যতবার সম্ভব গোসল করে ঘাম ধুয়ে ফেলতে হবে। নতুবা ভেজা কাঁপড় দিয়ে শরীরমুছে পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।
৮। প্রচণ্ড গরমে চলার পথে ফ্রিজের ঠান্ডা পানি পান করবেন না। কারণ অনেক সময় হঠাৎ ঠান্ডা পানি খেলে গলা ব্যথাসহ বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিতে পারে। বাইরে থেকে ঘেমে ঘরে ফিরেও সঙ্গে সঙ্গে হিমশীতল পানি খাওয়া ঠিক নয়।
৯। ইউনাইটেড হাসপাতাল লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার ডা. ফজলে রাব্বী খান জানান, তীব্র গরমে রোদে দীর্ঘ সময় অবস্থান করা ছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি না পান করার কারণে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি না পান করলে ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে লবণ ও তরল বেরিয়ে যাওয়ায় পানিশূন্যতা দেখা দেয়। যার ফলে শরীর হয়ে যায় অবসন্ন ও পরিশ্রান্ত। তাছাড়া কিছু ওষুধ, যেমন; মূত্রবর্ধক, বিটা-ব্লকার্স কিংবা অ্যান্টি-কলিনার্জিক্স, অতিরিক্ত মদ্যপান বা মাদক সেবনও শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এই ঝুঁকি শিশু, বয়স্ক মানুষ (৬৫ বছরের অধিক বয়স), স্থূল ব্যক্তি, গর্ভবতী মহিলা এবং হৃদরোগ বা ডায়াবেটিসে আক্রান্তের বেশি হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
১০। প্রয়োজনে একাধিকবার গোসল করা যেতে পারে। শরীরে ট্যালকম পাউডার ব্যবহার না করাই ভালো। রাতে শোয়ার সময় শরীরে ঢিলেঢালা সুতির পোশাক পরে ঘুমান।