নরসিংদী গিয়েছিলাম লটকন বাগান দেখতে। দুপুরে প্রচণ্ড রোদ আর গরমে ত্রাহি অবস্থা। ঠিক করলাম বিকেলটা কোনও নদীর পারে কাটাতেই হবে। আমরা যখন ভৈরব রওনা দিই, তখনও সূর্য ঢালছে তার তেজ।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে চলতে চলতে পৌঁছে গেলাম দুর্জয় মোড়ে। মোড় থেকে বায়ে ঘুরে আবার পথচলা শুরু। ভাঙা রাস্তার ঝাঁকুনি খেতে খেতে বেশ কয়েক চোট বকাঝকাও হয়ে গেল, ‘কোথায় চলেছি আমরা? এত ঝাঁকুনি কেন!’ চলতে চলতে রেললাইন পেরিয়ে আরও কিছু দূর। এবার ডানে মোড়। এদিকে বিকেল প্রায় হয়ে এসেছে, কিন্তু রাস্তা তো শেষ হয় না! গাড়ি চলছে সাজানো গোছানো একটি গ্রামের রাস্তা দিয়ে। আমরা তখন ব্যস্ত দুদিকের প্রকৃতি দেখায়। গ্রামের রাস্তা ধরে যেতে যেতে এক বাঁক নিতেই হঠাৎ চোখের সামনে ভেসে উঠলো বিশাল নদী!
হঠাৎই যেন হারিয়ে গেল ঘরবাড়ি, গাছপালার দল। যেন গুহা থেকে বেরিয়ে দেখা পেলাম বিশাল আকাশের! সে সৌন্দর্য চোখ ধাঁধানো। নদীর উপর দিয়ে সরু রাস্তা, সে রাস্তা দিয়েই চলছি আমরা। আর চোখ ভরে দেখছি প্রমত্তা মেঘনার রূপ। মনে হচ্ছে যেন নদীর মাঝ দিয়ে চলছি। গাড়ি সাইড করে নেমেই ভৌঁ দৌড়!
নদীর পাড় জুড়ে বিশাল সবুজ চরের মতো জায়গা। যত দূর চোখ যায় কেবল সবুজ আর সবুজ। সেই সবুজেই আছড়ে পড়ছে মেঘনার পানি। ভেসে আসছে কচুরিপানা। সেই কচুরিপানা ঘেঁষে ভিড়ে আছে নৌকা। সেই সবুজে শেষ বিকেলের রোদ পড়ে জ্বলজ্বল করছে প্রকৃতি। অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্যটি যে বাস্তব, বিশ্বাস হতে চায় না। মনে হয় যেন পটে আঁকা ছবি, কিংবা কোনও স্বপ্নদৃশ্য।
আকাশে মেঘ জমে ছিল বেশ কিছুক্ষণ ধরেই। হঠাৎ করেই বইতে শুরু করলো ঠাণ্ডা বাতাস। সেই সঙ্গে ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি। দৌড়ে পালাচ্ছে আশেপাশের সবাই, আমি দাঁড়িয়ে আছি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে। আহা জীবন, আহারে জীবন!
এমন চমৎকার বিকেল কাটানোর জন্য রাস্তার ঝাঁকুনি নস্যি। গরমের দাবদাহও নগণ্য। নদীর পাড়ে এমন চমৎকার সময় কাটাতে চাইলে চলে যেতে পারেন আপনিও। দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসতে পারবেন মেন্দিপুর থেকে। বর্ষা মৌসুমই এখানে বেড়ানোর জন্য আদর্শ।
যেভাবে যাবেন
কিশোরগঞ্জ জেলার একটি উপজেলা হচ্ছে ভৈরব। ভৈরবের উপজেলার ইউনিয়ন সাদেকপুরেই অবস্থিত মেন্দিপুর মেঘনা বেড়িবাঁধটি। ভৈরবের দুর্জয় মোড় থেকে বাঁয়ে চলে যাবেন। রসুলপুর পার হয়ে মেন্দিপুর পড়বে। মেন্দিপুরে মাঝ দিয়ে চলে গেছে উপজেলার সর্ববৃহৎ ভৈরব-মেন্দিপুর প্রধান সড়ক। আর ওই সড়কের শেষ প্রান্তে মেঘনা নদীর পাশে গড়ে তোলা হয়েছে মেন্দিপুর বেড়িবাঁধ প্রকল্প।