চলমান সংকটকালে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যের নির্বিঘ্ন বিস্তার নিশ্চিতে জনসাধারণের ওপর রাজনৈতিক আধিপত্য আর নজরদারি ভাবিয়ে তুলেছে তাদের। ভাবিয়ে তুলেছে আত্মমর্যাদার প্রশ্নে, যাপন নামের উদযাপন নয়; বরং প্রকৃত জীবনের প্রশ্নে। এই ভাবনা থেকে সম্প্রতি চার শিল্পী একটি ওয়েবভিত্তিক যৌথ অনলাইন প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন। নিজেদের অঙ্কিত ছবি নিয়ে প্রদর্শনীটি উন্মুক্ত হয়েছে দৃশ্যশিল্প বিষয়ক ওয়েবপেইজ Canvassar.com (ক্যানভাসার) এবং ক্যানভাসারের ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে (artcanvassar)। চলছে প্রদর্শনী ‘কিপিং আওয়ার হেড অ্যাবাভ ওয়াটার।’ ২৩ জুলাই শুরু হয়া প্রদর্শনীটি আগামী ৩ আগস্ট পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
প্রদর্শনীটিতে অংশ নেওয়া চার জন শিল্পী হলেন অন্তরা দে, ধীমান সরকার, বজলুর রশিদ শাওন এবং শিকদার সৈকত। এদের প্রত্যেকেরই শিল্পচর্চার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রথম পীঠস্থান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। শিল্পচর্চার নানা স্থবিরতাকে প্রশ্ন করে নিজেদের চিন্তাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পছন্দ করেন তারা। বন্ধুত্ব আর শিল্পভাবনার প্রশ্নে নানা বিষয়ে আত্মিক মেলবন্ধনই এক প্লাটফর্মে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে তাদের।
করোনাকালীন বন্দিদশায় শিল্পী অন্তরা দে নিজের অন্তর্গত সত্তাকে আরও নিবিড়ভাবে বোঝা ও ভালোবাসার প্রয়াস থেকে আধাবিমূর্ত ঢঙে কিছু অভিব্যক্তির উপস্থাপন করেছেন ‘লাভ দাইসেল্ফ ইন দ্য করোনা ডেস’ (Love Thyself in the Corona Days) সিরিজে; যা তার মনোজাগতিক বিচিত্র অবস্থার একটি স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ। শিল্পী মূলত দৈনন্দিন জীবনের নানা টানাপড়েন ও যন্ত্রণার একপ্রকার উপশম হিসেবে চিত্রজমিনে রঙ ও টেক্সচারের নিঃসংশয় প্রয়োগে ছবি এঁকেছেন। শিল্পী ধীমান তার ভাবনায় সভ্যতার উন্নয়নের উপজাত হিসেবে দেখতে চান যাপন এবং সম্পর্কের ভারসাম্যহীনতাকে; তার একভারি পাল্লা সিরিজের কাজে সেই ভারসাম্যের অভাবকেই প্রকট করে হাজির করেছেন উদ্ভট ও বিচিত্র অনুষঙ্গের কোলাজে।
সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার আধিপত্য সময় ও স্থানের বৃহৎ প্রেক্ষাপট ছাড়িয়েও কীভাবে একবারে ক্ষমতাহীন ব্যক্তি মানুষের আটপৌরে জীবনকেও ক্রমাগত আক্রান্ত ও প্রভাবিত করে সেই ভাবনার নির্যাস পাওয়া যায় শিল্পী শাওনের কাজে। ‘অনডার দিস গভারন্যান্স’ (Under This Governance) বা এই শাসনের অধীনে সিরিজে নিজের পরিসরের ক্ষুদ্রতাবোধই বিবিধ উপমায় উঠে এসেছে তার ফটোকোলাজ ও ড্রইংয়ের স্টাইলে।
শিল্পী শিকদারের চর্চায় নানা স্থানিক অনুষঙ্গের উপমায় রাজনৈতিক কাজকর্মের যে প্রকাশ সচরাচর দেখা যায়, এবারের অনলাইন প্রদর্শনীতে তার ‘ইন দ্য শ্যাডো অব দিস গ্রেট কনটিনেন্ট’ (In The Shadow of This Great Continent) সিরিজে তারই দেখা মিললো কিছুটা ভিন্ন প্রকাশে। সাদা-কালোর কনট্রাস্টে খুবই সংক্ষিপ্ত রেখায় কিছুটা অজ্ঞেয়বাদী একজন মানুষের চরিত্র নির্মাণ করেছেন তিনি। যেখানে স্পষ্টভাবেই পাওয়া যায় শিকদারের ড্রইংয়ের নিজস্ব শক্তিমত্তা ও আত্মবিশ্বাস।