X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

উৎপল ও একটি নৈশট্রেন

নাজমুল হোসাইন
০৩ আগস্ট ২০২২, ১৪:১৩আপডেট : ০৩ আগস্ট ২০২২, ১৪:১৩

মানুষ নিজেকে নগ্ন দেখতে ভালোবাসে না!

অথচ প্রতিনিয়ত আয়না দেখে। নিজেকে খোঁজে। প্রত্যেকের এই অন্বেষণের গভীরতার তারতম্য রয়েছে। ভিন্নতা রয়েছে উপাদানের মধ্যেও, মানে, একেকজন একেক বিষয়ের মাঝে নিজেকে অন্বেষণ করে। নিজের ছায়া কোনো বস্তুর ওপর দেখেও স্বস্তি পায়। কেউ কেউ খুঁজতে গিয়ে নিজেকেই ওই বস্তুতে লীন করে দেয়। তখন অন্যপক্ষ হিসেবে ভিন্ন কেউ সেই ব্যক্তিকে খুঁজতে/বুঝতে গেলে লীন হয়ে যাওয়া বস্তুতে অন্বেষণ ব্যতীত বোঝা সম্ভব নয়। কেননা, এই মনস্তাত্ত্বিক ক্রিয়াটা বোঝা দরকার যে, কোন্ রসে ডুবিল এ-মরা গাঙে।

উৎপলকুমার বসু। যিনি তাঁর কবিতার গাঙে মিশে আছেন। তবে সেটা মরাগাঙ নয়, একেবারে স্রোতস্বিনী। এর রূপ বদলাচ্ছে, জল বদলাচ্ছে, বাঁক পরিবর্তন হচ্ছে। এমন গাঙ থেকে উৎপলের দেহকে তুলে এনে পোস্টমর্টেম করে জানার উপায় নেই যে, তাঁর শরীরের বিশেষ কোন মাংসপিণ্ডের সক্রিয়তার জন্য তিনি কবিতা লিখতেন। ফলে, আমাদের নির্ভর করতে হচ্ছে গাঙের জলের ওপর। আমরা প্রতিদিন যে জল পান করতে পারি তেষ্টা মেটানোর জন্য। এজন্য আমার/আমাদের নিকট উৎপলই একজন কবিতা, উৎপল একাধিক কবিতা। প্রকৃত উৎপলকুমার বসু কি উৎপলকুমার বসু নামক ব্যক্তি দ্বারা লিখিত কবিতাসম্ভার?

প্রত্যেক কবিই তাঁর কবিতায় কমবেশি মিশে থাকেন। কিন্তু এমন কবি খুব কমই আছেন যাঁদের ক্ষেত্রে ব্যক্তি কবি ও কবিতাব্যক্তিকে আলাদা করা যায় না। উৎপলকুমার বসু তাঁদের একজন।
প্রাসঙ্গিক একটি ব্যাপার : ব্যক্তি কবি ও কবিতাব্যক্তি—এই দুই ব্যক্তির মধ্যে আসলে কোনজন কবি? কে কাকে লেখেন?

প্রাসঙ্গিক আরও একটি বিষয় স্পষ্ট করে বলি : কবিতাব্যক্তি ব্যাপারটাকে আপনি জাদুবাস্তব বলবেন নাকি পরাবাস্তব বলবেন, তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। ‘কবিতাব্যক্তি’ শব্দটা চিন্তাপ্রসূত, যার সাথে সম্পর্কিত আমার কবিতাবিষয়ক ভাবনা। শুরুতেই যেমনটা বলেছি : আমার মনে হয়, একজন ‘প্রকৃত’ কবি কবিতায় এতটা ঢুকে পড়েন যে, তাকে কবিতা থেকে আর পৃথকভাবে বোঝার উপায় থাকে না। এটা বুঝতে পারা যায় ‘প্রকৃত’ কবির কবিতা পড়তে পড়তে। অর্থাৎ, কবিতা একধরনের ব্লাকহোল। কবিরা লিখতে লিখতে যেখানে অস্তিত্বহীন হয়ে যান। পাঠকরা পাঠ করতে করতে যেখানে অস্তিত্বহীন হয়ে যান। এভাবে, কবিতা হয়ে ওঠে অনেক ব্যক্তির একটি—আঁধার/আধার/ব্লাকহোল/অন্ধকূপ।

উৎপলকে নিয়ে কিছু বলতে এসে এসব বলার কারণ হলো যে-কয়েকজন কবিকে (কবিতাব্যক্তিকে!) না পড়লে আমার এসব চিন্তা স্পষ্ট হতো না, উৎপলকুমার বসু তাঁদের একজন। এজন্য, এই লেখাটা উৎপলকুমার বসুকে নিয়ে হলেও, এখানে, উৎপলও আংশিক। লেখাটা স্রেফ উৎপলকুমার বসুকে নিজে যেভাবে দেখেছি/দেখছি সেখান থেকে ভাবনাটুকু বলার একটা ফ্রেম।

সময় হলো তীব্র গতিশীল একটা পথ। বস্তুগত, অবস্তুগত সমস্ত কিছুই এই পথের ওপর অবস্থান করছে। যেটা স্থির থাকতে চাইছে সময়ের সাথে তার ঘর্ষণ হচ্ছে। ঘর্ষণে ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। আর যেটা সময়ের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে বা প্রবাহিত করে চলছে, তার আয়ু স্থূল কিছুর তুলনায় বেশি। খাপ খাইয়ে চলা বা প্রবাহিত হওয়া বা বিবর্তন এটা নির্ভর করছে উপাদানের ওপর। যার মধ্যে বিবর্তনের যতটুকু উপাদান রয়েছে, সে ততটুকু সময় পর্যন্ত টিকতে পারছে। এভাবে একদিন অধিক পঠিত কবিতাও অপাঠ্য হয়, হবে।

উৎপলকুমার বসুর কবিতায় তাঁর সামসময়িক অন্যান্য কবিদের কবিতার তুলনায় পরিবর্তন/বিবর্তনের উপাদান অধিক পরিমাণে রয়েছে।

কবিতার ভাষা ইঙ্গিতবাহী। একেকটা শব্দ একেক মাত্রার ইঙ্গিত বহন করে। অর্থাৎ, সব শব্দের ইঙ্গিত বহন করার মাত্রা সমান নয়। আসলে সমান নয়, ব্যাপারটা ঠিক তা না। ভাষা ব্যবহারকারী প্রত্যেকেই শব্দের ইঙ্গিতের জানালা খুলে দিতে পারেন একেকরকমভাবে। কিন্তু সকলের খুলে দেওয়ার মাত্রা সমান হয় না৷

উৎপলকুমার বসুর কবিতা পড়তে পড়তে মনে হয় : কবিতাগুলো সমকালীন কোনো কবির লেখা। কবিতায় তাঁর খুলে দেওয়া ভাষার ইঙ্গিতের জানালা দিয়ে তিনি বর্তমান সময় পর্যন্ত দেখতে পেরেছেন। আরো কতদূরের ভবিষ্যৎ পর্যন্ত তাঁর দৃষ্টি স্বচ্ছ ছিল, সেটা সময়ই বলে দেবে।

কবিতাব্যক্তি উৎপলকুমার বসুকে কতটুকু বুঝতে পারা যাবে, এটা উৎপলই বর্ণনা করেছেন।

‘চলে যায় নৈশট্রেন দূরে
অর্ধেক জাগ্রত রেখে আমাদের’

ধরা যাক, নৈশট্রেন হলেন স্বয়ং কবি। আর ‘অর্ধেক জাগ্রত’ পাঠক হয়ে রাতের আন্ধারের আড়াল নিয়ে চলে যাওয়া কবিকে (ট্রেনকে) বুঝতে চাই।
হয়তো টের পাওয়া যাবে, ট্রেনের ঝিকঝিক শব্দে, হুইসলের শব্দে। কিন্তু, অর্ধেক জাগ্রত পাঠকের পক্ষে রাতের ট্রেনকে স্পষ্ট দেখতে পাওয়া অসম্ভব। সেই ট্রেন শুধু অনুভূতি জাগিয়ে দিয়ে যায়। স্নায়ুর মধ্যে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দিয়ে চলে যায়। হুইসেল বাজিয়ে সমস্ত ইন্দ্রিয়ের জড়তা কাটিয়ে দিয়ে যায়।

 

/জেডএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রানা প্লাজায় নিহতদের ফুলেল শ্রদ্ধায় স্মরণ
রানা প্লাজায় নিহতদের ফুলেল শ্রদ্ধায় স্মরণ
ভাসানটেকে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃত্যু বেড়ে ৫
ভাসানটেকে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃত্যু বেড়ে ৫
জেলা আ.লীগ সম্পাদকের প্রতিদ্বন্দ্বী সভাপতির ছেলে, আছেন ছাত্রলীগ সম্পাদকও
উপজেলা নির্বাচনজেলা আ.লীগ সম্পাদকের প্রতিদ্বন্দ্বী সভাপতির ছেলে, আছেন ছাত্রলীগ সম্পাদকও
নির্মাণাধীন ভবনমালিকদের মেয়র তাপসের হুঁশিয়ারি
নির্মাণাধীন ভবনমালিকদের মেয়র তাপসের হুঁশিয়ারি
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…