X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

আমি বড়জোর ‘কালচারাল এনথ্রোপলজি’ বলবার চেষ্টা করেছি

সাক্ষাৎকার গ্রহণ : শারমিনুর নাহার
১৭ জানুয়ারি ২০২২, ২২:৩৭আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০২২, ২২:৩৭

[মিহির সেনগুপ্তের জন্ম ১ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭ সালে, ঝালকাঠি জেলার কেওড়া গ্রামে। শৈশব কেটেছে কীর্তনখোলা, সুগন্ধা, ধানসিড়ির তীরে। ১৯৬৩ সালে পুরো পরিবার কলকাতায় চলে যায়। ১৯৬৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। একাডেমিক পড়াশোনা ছেড়ে ‘ব্যাংক অব ইন্ডিয়া’য় যোগ দেন। ‘বিষাদবৃক্ষ’ গ্রন্থের জন্য পেয়েছেন ১৪১১ বঙ্গাব্দের আনন্দ পুরস্কার। বিদুর (১৯৯৫), ভাটিপুত্রের পত্র বাখোয়াজি (১৯৯৫), সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম (১৯৯৬), বিষাদবৃক্ষ (২০০৪) এবং শরণার্থীর মুক্তিযুদ্ধ (২০১৫)। মিহির সেনগুপ্ত বিগত প্রায় চল্লিশ বছর ধরে হুগলির ভদ্রেশ্বর শহরে বসবাস করতেন। প্রতিবছর বাংলাদেশে আসতেন। তার কথা মতে, এটা না করলে না কি প্রাণ পান না। আবার এলেই পরদিন ঝালকাঠি, নিজেকে অনুসন্ধান।] 


শারমিনুর নাহার : দাদা সিরিয়াসলি লিখবেন, এই তাড়না কখন নিজের মধ্যে অনুভব করেছিলেন?
মিহির সেনগুপ্ত : আমি কখনই লিখব বলে ভাবিনি। বরাবরই পড়তে ভালো লাগত। বিভিন্ন রকমের বই পড়তাম। আমার বিশেষ আকর্ষণ ছিল ইতিহাস, দর্শন আর সাহিত্য তো বটেই। আমার লেখা শুরু করবার একটা ঘটনা আছে। ১৯৯২ সালের শারদীয় ‘দেশ’ পত্রিকায় তপন রায়চৌধুরীর, (হয়তো তোমাদের অনেকেরই পড়া) ‘রোমন্থন অথবা ভীমরতি প্রাপ্তর পরচরিতের চর্চা’ লেখাটা পড়ে। আমার মনে হয়েছিল এমন তো আমিও লিখতে পারি। আমারও তো এমন অনেক কিছু বলার আছে।

শারমিনুর নাহার : তপন রায়চৌধুরীর এই লেখা বাংলা সাহিত্যের ভিন্ন আঙ্গিকের লেখা, এর পরে অনেকেই এমন লিখতে চেষ্টা করেছেন... 
মিহির সেনগুপ্ত : হ্যাঁ, তপন বাবুর আগে এমন লেখা কেউ লিখেননি। এটা নিয়ে সেসময় একটা হইচই পড়ে গিয়েছিল। আমি তখনও উনাকে চিনতাম না। উনি যে আমার পাশের বাড়ির লোক, সেটাও জানতাম না। লেখাটা পড়ে আমি উনাকে একটা চিঠি লিখি। তা ছিল প্রায় ৮০-৮৫ পৃষ্ঠার একটি চিঠি। অত বড় লেখা তো আর পাঠানো যায় না। আমি ছোট একটা চিঠিতে প্রথমে জানালাম। উনি বললেন, পাঠিয়ে দিন। আমি পাঠিয়েছিলাম। যদিও তপনদা নিজে বলেননি, ওনার এক বন্ধুর কাছে শুনেছি—চিঠিটা যখন পৌঁছায় তখন তপনদা ফ্রান্সের কোনো একটা শহরে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখানে চিঠিটা পান। পড়বার পড়ে তপনদার সেই বন্ধু বলেছিলেন, তিনি নাকি হাউমাউ করে কাঁদছিলেন। পরে কলকাতায় এলে দেখা হয়েছিল। আমি চিঠির সঙ্গে কতগুলো ছবিও পাঠিয়েছিলাম। পরে সেখান থেকে কয়েকটা ওনার ‘বাঙালনামা’য় ব্যবহার করেছিলেন।
 
শারমিনুর নাহার : খুব মজার, এক প্রতিভা আর এক প্রতিভাকে উন্মোচিত করেছে। 
মিহির সেনগুপ্ত : হতে পারে, এককথায় লেখাটির মধ্যদিয়ে যেন আমি আমাকে নতুন করে চিনলাম। আমার ভেতরে একটা তাড়না এলো, মনে হলো আমারও তো অনেক কথা বলবার আছে। আমিও তো এভাবে লিখতে পারি।

শারমিনুর নাহার : চিঠির সেই জবাবটাই ‘ভাটিপুত্রের পত্র বাখোয়াজি’ তাই না? 
মিহির সেনগুপ্ত : তপনদাই বলেছিলেন তখন, এটা ছাপতে দাও। ১৯৯৫ সালে এটা ছাপা হয় ‘ভাটিপুত্রের পত্র বাখোয়াজি’ নামে। এর পরে যেটা হলো আমার ভেতরে ক্রমাগত লেখা আসতে থাকল। একসঙ্গে তিনটি বই লিখতে শুরু করলাম। তখন চাকরি ট্রান্সফার হয়ে চলে গেলাম ঝাড়খণ্ডে। সন্ধ্যাবেলা অফিসের পরে কোনো কাজ নেই। বসে বসে লিখতাম। মহাভারতের চরিত্র বিদুকে নিয়ে লিখলাম ‘বিদুর’ এবং ‘সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম’। এই দুটি এবং ভাটিপুত্র তিনটি প্রায় পরপর প্রকাশিত হয়। 

শারমিনুর নাহার : খুব তাড়া করে লিখলেন?
মিহির সেনগুপ্ত : লেখা তো আসবার একটা ব্যাপার আছে। ৪৭, ৪৮ বছর বয়সে আমি লিখতে শুরু করি। আমি ফিল করেছি যে আমার ভেতরে অনেক কিছু আছে লিখবার মতো। সেজন্য খুব দ্রুত লিখেছি। যখন থেকে শুরু করেছি তারপর থেকে প্রতিবছরই একটা, দু’টো এসেছে।

শারমিনুর নাহার : ‘বিষাদবৃক্ষ কি আপনার আত্মজীবনী? 
মিহির সেনগুপ্ত : না, ঠিক আত্মজীবনী নয়। এটা মোমোরাইট—‘স্মৃতিকথা’ বলতে পারো। ছেলেবেলার দশ বছরের স্মৃতি নিয়ে লেখা। আমার বেশিরভাগ লেখাই এমন, শুধু মহাভারতের লেখাটা ছাড়া। অনেকটা আত্মজৈবনিক অবস্থান থেকে লেখা। আমি খুব কল্পনাবিলাসী নই। কল্পনার দেখা ঠিক আমার আসে না। ‘শরণার্থীর মুক্তিযুদ্ধ’ বলে এবার ‘কাগজ প্রকাশন’কে যেটা দিলাম সেটাও অনেকটা স্মৃতিকথা ধরনের। কয়েকজনের তো হুবহু নামই ব্যবহার করেছি। ‘বিষাদবৃক্ষ’ লিখতে আমার প্রায় ৬ বছর লেগেছে। চার বার লিখেছি, ২০০৩ সালে প্রকাশিত হয়। 

শারমিনুর নাহার : এমন যদি প্রশ্ন করি যে আপনি নিজে নিজের লেখাকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন, তার উত্তর কেমন হবে?
মিহির সেনগুপ্ত : দোখো, আমার লেখাগুলো কোনো চরিত্রভিত্তিক নয়, কোনো গল্প, উপন্যাসও নয়। কথাশিল্পীর মতো আমি কোনো কল্পনার আশ্রয় নেইনি। আমি মার্কেজ নই। তাই কোনোভাবেই কিন্তু তুমি আমায় কথাশিল্পী বলতে পারবে না। আমি বড়জোর ‘কালচারাল এনথ্রোপলজি’ বলবার চেষ্টা করেছি। যে অঞ্চল নিয়ে লেখা সেই অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি, মানুষ ইত্যাদি নিয়ে লেখা। তারা একক চরিত্র হিসেবে যতটা না প্রাধান্য পেয়েছে তারচেয়ে প্রতিনিধিত্বমূলক চরিত্র হয়ে উঠেছে প্রধানভাবে। আর তার পেছনে রয়েছে ব্যাপক সমাজচিত্র। ফলে তুমি আমায় কথাশিল্পী বলতে পারবে না কোনো অর্থেই। কিন্তু ‘সমাজ কথাকার’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতে পারবে। আমি হিন্দু-মুসলমান কমিউনিটি নিয়ে, তাদের সম্পর্ক নিয়ে, নিম্নবর্গের সঙ্গে উচ্চবর্গের সম্পর্ক, বৈবাহিক সম্পর্ক ইত্যাদি নিয়ে লিখতে চেষ্টা করেছি। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ হলো, এর ফলে এখানকার সমাজের পরিবর্তন কিভাবে হলো এসব। আমার কিন্তু হাসিনা-খালেদার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই, কে ক্ষমতায় এলো আর কে গেল সেসব আমি রচনা করিনি। আমার মনোযোগের জায়গা হলো সেই শিশু যে যুদ্ধের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছে। যাকে প্রসব করবার পরে তার মা গুলি খেয়ে মরেছে। পরে সে যার দুধ খেয়ে মানুষ হয়েছে সে তার মুসলমান জননী। যারা সমাজের মধ্যে একটি আলাদা সমাজ তৈরি করেছে। হিন্দু-মুসলামনের পারস্পরিক বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে থেকে যে নতুন সমাজ গড়ে উঠছে, আমার নজর সেই দিকে। মূলত সামাজিক পরিবর্তন আমি তুলে ধরবার চেষ্টা করেছি। এখন তা পেরেছি কি পারিনি, ক্ষমতা-অক্ষমতা পাঠকরা বিবেচনা করবেন।

শারমিনুর নাহার : যখন সমাজ লেখেন তখন কি সেই অঞ্চলের ইতিহাস অনুসন্ধানের চেষ্টা করেন, লিখিত ইতিহাস সবখানে তো নেই, তথ্য সংগ্রহ করেন কিভাবে? 
মিহির সেনগুপ্ত : খুব যে সিস্টেমেটিক ওয়েতে তথ্য সংগ্রহ করেছি এমন নয়। তবে আমার সচেতন চেষ্টা ছিল। আমি কিন্তু বছরে একবার দুইবার দেশে আসি, বরিশাল যাই। ‘ধানসিদ্ধির পরন কথা’ লিখতে গিয়ে অনুসন্ধান করেছি। ইতিহাস দেখতে চেষ্টা করেছি। তবে যেহেতু লিখিত তেমন কোনো ইতিহাস নেই। তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমাকে জীবিত মানুষের সাহায্য নিতে হয়েছে। ‘ধানসিদ্ধির পরন কথা’য় যে ধানসিদ্ধির কথা আছে, সম্ভবত সেটাই জীবনানন্দের ধানসিড়ি নদী। ঝালকাঠিতে যে নদী সুগন্ধা, ধানসিড়ির সঙ্গে মিশেছে—যদিও এটা প্রমাণসাপেক্ষ। তবে এটা ঠিক যে ধানসিড়ি সুগন্ধার গর্ভজাত। উনিশ শতকের গোড়ার দিকে ব্রিটিশরা এটা কাটায়। স্থানীয় ভাষায় এটাকে বলা হয় দোন। এখানকার বসতি প্রাচীন। নৃতত্ত্ব থেকে আমরা তো এটা জানিই যে নদী বিধৌত এলাকায় প্রাচীন বসতি গড়ে ওঠে। কিন্তু এটা কত প্রাচীন তা অবশ্য সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারব না। আমি মানুষজনের সঙ্গে কথা বলেছি। ঘুরে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করবার চেষ্টা করেছি। খুব ভালো তথ্য দিয়েছে লাঠিয়াল বাহিনীর লোকজন। তারা পরম্পরা অনুযায়ী আছে, সেজন্য ভালো বলতে পেরেছে। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে আমি ফোক, লোকাচার, তাদের খাবারের ধরন ইত্যাদি বিষয় সচেতনভাবে দেখবার চেষ্টা করেছি। 

শারমিনুর নাহার : মানে কথক হিসেবে?
মিহির সেনগুপ্ত : বলা যায় কথক হিসেবেই তাদের কথা শুনেছি। দেখবার চেষ্টা করেছি।
 
শারমিনুর নাহার : এটা গেল উপাদান সংগ্রহ। আপনি যে স্ট্যাইলে লেখেন, সত্যি বলতে আমি নিজে আকৃষ্ট হয়েছি সেখানে। এই বলার ভঙ্গি কি সচেতনভাবেই তৈরি হয়েছে? 
মিহির সেনগুপ্ত : কি হয় জানত, প্রত্যেক লেখকেরই একটা নিজস্ব স্ট্যাইল থাকে। আমার দাদা অভিজিৎ সেন, আমি বরাবরই তাকে দেখে আকৃষ্ট হই। তার মতো বড় মাপের লেখক আমি নই। কিন্তু আমি লেখালিখি শুরু করবার সময় থেকেই খুব সচেতনভাবে চেষ্টা করেছি যেন তার লেখার কোনো ছাপ আমার মধ্যে না আসে। এই ব্যাপারে সেও সচেতন, আমিও সচেতন। অভিজিৎ আমার থেকে বছর দেড়েকের বড়। সুতরাং ‘উই আর মোর ফ্রেন্ড টু ইস্ আদার’। দিনে অন্তত তিনবার আমাদের মধ্যে কথা হয়, মাসে অন্তত দুবার দেখা হয়। আমি বরাবরই যেটা মাথায় রাখবার চেষ্টা করি—আমি একটা লেখা লিখছি, এটা গল্প, উপন্যাস বা প্রবন্ধ, নিবন্ধ সেসব সব কথা বাদ দিয়ে একটা লেখা লিখছি। এই অবস্থানটাই মূল ধরি। প্রত্যেক লেখকেরই একটা নিজস্ব ভাষা খুঁজে নিতে হয়, সেই ভাষাটাই তার স্ট্যাইলের জন্ম দেয়। 

শারমিনুর নাহার : খুব চমৎকারভাবে আপনি সাধু-চলতির মিশ্রণ করেন, যেটা হয়তো অনেকেই করবার চেষ্টা করেছে, কিন্তু আপনার এই স্ট্যাইলের মধ্যে একটা মজা আছে, ব্যঞ্জনা আছে। 
মিহির সেনগুপ্ত : এই স্ট্যাইলটা আমি সচেতনভাবে করেছি। যখন আমি সংলাপ বলছি তখন বরিশালের ভাষা ব্যবহার করছি। আবার যখন ন্যারেটিভ লিখছি তখন ভাষাটা আলাদা হয়ে গেছে। তখন দুই একটা তৎসম শব্দ ঢুকে যাচ্ছে। এর একটা অন্যরকম ইফেক্ট আছে। একটা সমস্যা হয়ে যায় প্রুভ রিডারদের—তারা ভাবে ভুল—সংশোধন করতে যায়। এটা বই আছে ‘মধ্যদিনের গান’ এটা ঢাকা, কলকাতা দুই জায়গা থেকেই প্রকাশিত হয়েছে। এখানে সংলাপের ভাষা শুধু নয় কোথাও কোথাও ন্যারেটিভেও ‘ঝাড়খণ্ডি ভাষা’ ব্যবহৃত হয়েছে। এটা মিশ্রভাষা কোনো একক ভাষা নয়।
 
শারমিনুর নাহার : ‘শরণার্থীর মুক্তিযুদ্ধ’ বইটা নিয়ে কিছু বলুন।
মিহির সেনগুপ্ত : মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা দেশে এসেছিলাম। আমার স্ত্রী তখন কলেজে পড়ান। (খুব হেসে বললেন) আমার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কটা কেন জানি এমনই যখনই দেশে আসি তখনই কোনো না কোনো গন্ডগোলে পড়ি। একাত্তরে যুদ্ধ শুরু হবার পরে, এটা ছিল একেবারে মিডল স্টেজে। তখন আমি দিনাজপুরে যাচ্ছিলাম। অভিজিৎ তখন উত্তর দিনাজপুরে থাকে, তার প্রথম সন্তানের জন্ম হবে। আমি ট্রেনে, তখন কয়েকজন ছেলে, যারা ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়ে দেশে যাচ্ছে। তাদের সঙ্গে সারা রাত গান করেছিলাম। কি ভীষণ প্রাণ, আনন্দ, উদ্দীপনা আমাদের। এই বইটাতেই তাদের কথাই আছে। তখন প্রায় এক মাস আমি বর্ডারের কাছাকাছি ছিলাম। একেবারে উদাসীনের মতো ঘুরেছি, দেখেছি। আর কলকাতায় তো মেডিক্যাল সার্পোট, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করেছি। চাঁদা তুলেছি, আমি ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে ছিলাম। সে এক আনন্দময়, উজ্জ্বল দিন। পরে যখন ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলো, সারা শহরের বাতি (কলকাতা) একসঙ্গে জ্বলে উঠল। কি ভীষণ আবেগ, একটা স্বাধীন দেশের জন্ম হলো একটা তেজদীপ্ত ব্যাপার। 

শারমিনুর নাহার : তরুণদের সঙ্গে আপনার যোগাযোগ ভালো, নিয়মিত আমাদের সাহিত্য পাঠও করেন। তরুণদের লেখা নিয়ে কোনো বক্তব্য আছে?
মিহির সেনগুপ্ত : না, ভালো করছে সবাই। এখানে ‘নভেলা’ বলে যেটা হচ্ছে, আমার খুবই ভালো লেগেছে। যদিও ব্যাকরণগতভাবে আমি নভেলা আর বড় গল্পের কোনো পার্থক্য দেখি না। আসলে বড় হোক আর ছোট হোক লেখার প্রসাদগুণটাই মূল। মানুষ তার সময় গুণ হিসেবে সেটাকে সাইজ করে। এখন তো কবিতা হয়ে গেছে এসএমএস। এসেছে অনুগল্প। তবে বড় লেখারও চাহিদা আছে। এ প্রসঙ্গে ভিন্ন সময়েও বলেছি। শুধু আমি নই, আমাদের অনেকই বলেছে ভালো হচ্ছে খুব। এখন তো অনেক ভালো ছোটগল্পও লেখা হচ্ছে। তবে শুধু এ বাংলা নয়, কলকাতাতেও যারা লিখছে সবার জন্য আমার একটা কথা বলার আছে—ক্লাসিক্যাল সাহিত্যের দিকে তরুণদের একটু ঝোঁক কম। 

শারমিনুর নাহার : যদি এভাবে বলি, দেশে এসে যা খুঁজতে চান তা কি পান, সেই দিনগুলো আর কোনো তফাৎ কি বোধ করেন?
মিহির সেনগুপ্ত : ভালো বলেছ। আমি যখন বাংলাদেশ থেকে যাই তখন আমার বয়স ১৬ বছর। আমার দাদা অভিজিৎ গেছে ১০ বছর বয়সে। এর পরে দীর্ঘকাল আমি এই অভাবটা বোধ করেছি। এখানকার ভূ-প্রকৃতি, এসোসিয়েসন। দীর্ঘকাল পরে যখন প্রথম আসি, মেলামেশা করতে শুরু করি তখন আমার মনে হয় আমার আলাদা কোনো সত্তা গড়ে ওঠেনি। আমার মনে হয়েছে আমি সেই ধারাবাহিকতার মধ্যেই আছি। একটা সময় আমি সত্যিই অনুভব করেছি আমি যা খুঁজছি তা ফিরে পেয়েছি।

শারমিনুর নাহার : সারা জীবনের অন্বেষা...
মিহির সেনগুপ্ত : হুম, শৈশব। বড় বড় সাহিত্যিকরা তাই বলেন, মানুষ সারা জীবন তার শৈশবকেই খোঁজে। টলস্টয় খুঁজেছেন, গোর্কি খুঁজেছেন। আমি একটা ট্রমার মধ্যে ছিলাম। এখন আমি সেই শৈশবকে খুঁজে পেয়েছি। 

শারমিনুর নাহার : দাদা, অনেক ধন্যবাদ সময় দেওয়ার জন্য।
মিহির সেনগুপ্ত : তোমাকেও অনেক ধন্যবাদ, ভালো থাকবে।
 
২৪ মার্চ ২০১৫ , বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশিত

/জেডএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী