X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

বইয়ের যথাযথ রিভিউ হয় না

সাক্ষাৎকার গ্রহণ : মুশফিকুর রহমান
১৮ জানুয়ারি ২০২২, ১৮:২৪আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০২২, ১৮:৩৫

প্রশ্ন : অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২২ বইমেলা কেমন চান?       

উত্তর : অমর একুশে গ্রন্থমেলা আমাদের প্রাণের মেলা। এর সর্বশ্রেষ্ঠ সৌন্দর্য দেখতে চাই। কিন্তু আমাদের সামনে করোনা ভাইরাসের নতুন ভেরিয়েন্ট অমিক্রনের আতঙ্ক। আশা করি এই শঙ্কা কাটিয়ে উঠব আমরা। এখানে ভালো মানের বই প্রকাশিত হবে; লেখক-পাঠক আমরা সবাই মিলিত হব।

 

প্রশ্ন : এ বছর আপনার কি কি বই আসবে? কোন প্রকাশনা থেকে?

উত্তর : এ বছর আমার তিনটা বই বের হবে। 'প্রেম ও রাজনীতি’ প্রকাশ করবে পাঠক সমাবেশ। বটেশ্বর বর্ণন প্রকাশ করবে আমার এবং আমার স্ত্রী নাসিমা আনিসের যৌথ বই ‘এমেন মানুষ হতে চেয়েছিল’। ইতোমধ্যে আমার আরেকটি উপন্যাস ‘ডানা’ প্রকাশ করেছে অনন্যা প্রকাশনী।

 

প্রশ্ন : প্রকাশিতব্য বই সম্পর্কে জানতে চাই।

উত্তর : নানান ক্ষেত্রে দুর্নীতি। আর এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা অনেকেই খুব বেশিকিছু বলতে পারি না। কেউ কেউ টাকা-পয়সা চুরি করে এবং বিদেশে পালিয়ে যায়। আমরা তাদের স্পর্শ করতে পারি না। কিন্তু ক্ষোভটা মনের মধ্যে থেকে যায়। বর্তমানে আধুনিক উপন্যাসের একটা ব্যাপার হচ্ছে 'রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে হবে'। ‘প্রেম ও রাজনীতি’ উপন্যাসটি তে দেখা যাবে, একজন দুর্নীতিগ্রস্থ রাজনীতিবিদ এবং তার মেয়েকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মেয়েটির প্রণয় এবং সেখানে প্রচ্ছন্ন রাজনীতির সূক্ষ্ম মারপ্যাঁচ। উপন্যাসটিতে দেখাতে চেয়েছি, সমাজ যখন পচে যায়, পরিবারেও সে পচন ধরে, সবকিছুই নষ্ট হয়ে যায়।

‘এমেন মানুষ হতে চেয়েছিল’ গল্পে মূলত একটি কিশোর উপযোগী বই। এখানে ফিকশন-ফ্যান্টাসি-বন্ধুত্বের সাথে সাথে করোনা মহামারিতে পৃথিবীব্যাপী মানুষের আতঙ্ক আর মনস্বতাত্ত্বিক ব্যাপার উঠে এসেছে। বইটিতে চারটি গল্প রয়েছে। গল্পে অদ্ভুত মানব সদৃশ্য প্রাণী এমেন এবং বুড়িগঙ্গা পাড়ে বেড়ে ওঠা সাম্য হাসনকে দেখা যাবে।

‘ডানা’ উপন্যাসটি আলফ্রেড হিচককের ‘The Birds’ এবং হেনরি ইবসনের ‘A Doll’s House’ দ্বারা অনুপ্রাণিত। এ উপন্যাসে রিনি-আশফাক দম্পতির পারিবারিক-সামাজিক জীবনের গল্প এবং অসংখ্য নাম জানা-অজানা পাখির কলতানের মধ্যে শিকল ভাঙার শব্দ রয়েছে। পুরনো-জড়াগ্রস্ত সমাজের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং মুক্তিরবার্তা নিয়ে প্রকাশ হবে এই উপন্যাসটি।

 

প্রশ্ন : অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২১-এর অভিজ্ঞতা কেমন?

উত্তর : ২০২১ সালে আমার যে বইগুলো বের হওয়ার কথা ছিল, সেগুলো বের হতে পারেনি। আমি একটা বছর অর্থাৎ ৩৬৫ দিন পিছিয়ে গেছি। যার কারণে আমি ভীষণ মনোকষ্টে ছিলাম। গতবছরে বইমেলায় বইগুলো প্রকাশিত না হওয়ার কারণে আমার অন্যান্য লেখায় ভাটা পড়েছে। একজন লেখকের জন্য বইমেলা হচ্ছে আনন্দের বিষয়, সৃষ্টিশীলতা এবং সৃজনশীলতার ব্যাপার। ধরুন, আমি যদি লেখক হয়ে থাকি এবং আমার সৃষ্টিশীলতায় যদি প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়, সে প্রাকৃতিকভাবেই হোক বা অন্য যেকোনোভাবেই হোক, এটা আমি সহ্য করতে পারব না।

 

প্রশ্ন : বইমেলার পর আমাদের বই খুঁজে পাওয়া যায় না এবং বইয়ের দোকানও স্বল্প। এই পরিস্থিতিতে বই পাঠকের কাছে পৌঁছাতে আপনার ভাবনা যদি জানাতেন।

উত্তর : বইমেলায় দুই-তিন রকমের প্রকাশক আছেন। কিছু প্রকাশক আছেন যারা তরুণ কবিদের বই ছাপিয়ে দেবার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কাছে টাকা হাতিয়ে নেয়। তারপর লেখককে খুশি করতে ৫০ কপি বই দিয়ে দেয়। তাতে হয় কি, বইগুলো লেখকের কাছেই থেকে যায়। সেটা বিপণন যেটাকে বলে সেটা আর হয় না। এটা একটা খুব খারাপ দিক।

এছাড়া অনেক প্রকাশনা আছে যাদের বেশ ভালো আউটলেট আছে। আবার অনেক প্রকাশনা আছে যাদের আবার কোনো আউটলেট নেই। তারা বিপণনটা করবে কি করে?

আমাদের যে বিপণন ব্যবস্থা ছিল নানান কারণে তা পরিবর্তন হওয়া উচিত এবং হয়েছে। আশার কথা, বেশকিছু বইকেন্দ্রিক অনলাইন প্লাটফর্ম তৈরি হয়েছে এবং হচ্ছে। অনেক খারাপ ব্যাপারের মধ্যেও এটা একটা ভালো দিক। আমি একে সাধুবাদ জানাই। অনলাইনে বই বিক্রি হচ্ছে এতে লেখকদের কিছুটা স্বস্তি এই ভেবে যে, বইগুলো হয়তো পাঠকের কাছে পৌঁছুবে। তাছাড়া আমাদের চিরায়ত প্রথা বইমেলায় সবার হাতে হাতে-ব্যাগে ব্যাগে নতুন বই ঘুরে বেড়াচ্ছে, বিশেষ করে শিশুরা শত শত বই কিনছে; এটা বেশ জীবন্ত এবং প্রাণবন্ত। এজন্য বইমেলা শেষে, অনলাইনে যে বিক্রি হয় এ দুটি পাশাপাশি যুগপৎভাবে চলা উচিত।

আমরা বই লিখছি-প্রচ্ছদ হচ্ছে-প্রকাশক বই প্রকাশ করছে। একুশে বইমেলায় বইটা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু মূল বিষয়টা কিন্তু হচ্ছে না, সৃজনশীল বলেন বা জ্ঞানচর্চা বলেন এটা কিন্তু হচ্ছে না। কেন হচ্ছে না? কারণ আমাদের বাংলাদেশে বইয়ের যথাযথ রিভিউ হয় না। এখানে এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে বই দিচ্ছে, সে তার ইচ্ছেমত হাবিজাবি রিভিউ লিখে দিচ্ছে। এগুলোতে তো আসলে সৃজনশীলতা বাড়চ্ছে না। বরঞ্চ বইটা অবমূল্যায়িত হচ্ছে, পাঠক বিভ্রান্তির মধ্যে পড়চ্ছে। যে বই পাতে তোলার মতো না তাকে আপনি সিংহাসনে বসিয়ে রাখছেন, এটা কি করে সম্ভব!!

বাইরের দেশে একটা বই প্রকাশ করার আগে এবং পরে প্রকাশক বইটা রিভিউ করিয়ে নেয় যে বইটার রিভিউ হলে এটা কতদূর যেতে পারবে। অর্থাৎ, বাইরের দেশে এটার একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ আছে, যেটা বাংলাদেশে নেই বললেই চলে। যদিও গুরুত্বপূর্ণ বন্ধুর কাছে রিভিউ করিয়ে নেবার পর আমি একটা পুরুষ্কারও পেয়ে গেলাম! কিন্তু সাহিত্য কিংবা সৃজনশীলতার বিচারে আমি সেই পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য নাও হতে পারি। সেজন্য আমি মনে করি, রিভিউটা খুবই জরুরি। এ ধরনের নানান রকম পাঁকে পড়ে জ্ঞান ও সৃজনশীল পুস্তকগুলো বইমেলায় ডানা মেলতে পারছে না। বইগুলো যে পাঠকের হাতে পৌঁছাতে পারছে না, এর দায় এই শিল্পের সাথে জড়িত লেখক-পাঠক-প্রকাশক এবং সংশ্লিষ্ট সকলের।

/জেডএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী