[কার্লোস সোলোরসানোর জন্ম ১৯২২ সালে গুয়াতেমালার সান মারকোস-এ। ১৬ বছর বয়সে মেহিকোতে যান, এরপর থেকে সেখনেই থেকেছেন। প্রথমে স্থাপত্যবিদ্যায় ডিগ্রি নিয়ে সাহিত্যে ডক্টরেট করেছেন। এরপর থিয়েটার বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন ফ্রান্স, ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্রে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন অতিথি অধ্যাপক হিসেবে। আলবেয়ার কামু ও মিশেল দে গেলদেরোদ-এর প্রতি তার ঋণ স্বীকার করেছেন বারবার—তাদের বলেছেন ‘অসাধারণ বন্ধু ও শিক্ষক’। তার নাটকের চরিত্রদের মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে বিপরীতমুখী দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষ—বিদ্রোহপ্রবণতা এবং আত্মসমর্পণ এই দুই শক্তি যেন চরিত্রদের টেনে নিচ্ছে অনিশ্চিত কোনো মুক্তির দিকে। তার প্রধান নাটকগুলোর মধ্যে আছে দোনা বেয়াতরিস (১৯৫০), লা মুয়েরতে ইসো লা লুস (১৯৫১), এল এসিসেরো (১৯৫৪), লাস মানোস দে দিয়োস (১৯৫৬), এল ক্রুসিফিকাদো (১৯৫৭), এল সেনিয়ো দেল আনজেল (১৯৬০), এল সাপাতো (১৯৬৫)। ক্রসরোডস (ক্রুসে দে বিয়াস) নাটকটি ১৯৫৮ তে লেখা হলেও প্রথম মঞ্চস্থ হয় ১৯৬৬ সালে। এই নাটকের সেটিং একটি প্রতিকী রেইল স্টেশন। কী করে আত্মপ্রবঞ্চনা ও স্ব-আরোপিত অন্ধত্ব মানুষকে প্রতিনিয়ত যন্ত্রণাবিদ্ধ সময় উপহার দেয় তার এক চমৎকার উদাহরণ এই একাঙ্ক। নাটকটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন, ফ্রানসেসকা কোলেসিয়া এবং হুলিয়ো মাতাস।]
চরিত্র : ফ্ল্যাগম্যান, ট্রেইন, পুরুষ, মহিলা।
ফাঁকা মঞ্চ। অন্ধকার। এক মাথায় একটা সেমাফোরে পালাক্রমে লালবাতি আর সবুজ বাতি জ্বলছে। একদম মাঝখানে সিলিং থেকে একটা বড় ঘড়ি ঝুলছে—কাঁটা-কাঁটায় পাঁচটা
[চরিত্ররা যান্ত্রিকভাবে চলাফেরা করবে, নির্বাক চলচ্চিত্রের চরিত্রদের মতো অনেকটা। ‘পুরুষটি’র চলাফেরার গতি দ্রুত, ‘মহিলা’র ধীর। পর্দা উঠলে দেখা যায় ফ্ল্যাগম্যানকে-সেমাফোরের উল্টোদিকে, হাতে একটা জ্বলন্ত লন্ঠন। সে খুব আড়ষ্ট অথচ নির্বিকারভাবে দাঁড়িয়ে আছে]
ফ্ল্যাগম্যান : [আকাশের দিকে তাকিয়ে, নৈর্ব্যক্তিক কণ্ঠে] উত্তরের ট্রেইন দক্ষিণে যায়, উত্তরের ট্রেইন দক্ষিণে যায়, উত্তরের ট্রেইন দক্ষিণে যায়, উত্তরের ট্রেইন দক্ষিণে যায়... [বেশ কয়েকবার সে এটাই বলতে থাকে। এই সময় ‘ট্রেইন’ একবার মঞ্চ অতিক্রম করে। ট্রেইন তৈরি হবে তিনজনকে দিয়ে—পরনে ধূসর পোশাক। যেতে-যেতে তারা একটা মূকাভিনয় চালিয়ে যায়—একহাত বাড়িয়ে দিয়ে সামনের জনের কাঁধ ধরে রেখে অন্য হাত ঘুরিয়ে-ঘুরিয়ে—ফ্ল্যাগম্যানের একটানা কথা বলার একই তালে] উত্তরের ট্রেইন দক্ষিণে যায়, উত্তরের ট্রেইন দক্ষিণে যায় ইত্যাদি। [ট্রেইনের তীব্র হুইসেল। তিনজন দিয়ে তৈরি ট্রেইনের শেষজন একটা লাফ দিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়—সেই আমাদের নাটকের ‘পুরুষ’ চরিত্র। এরপর ট্রেইন ডানদিক দিয়ে বের হয়ে যায়।
পুরুষ : [হাতে তার ছোটো ক্যাম্বিসের ব্যাগ। চারদিকে তাকায়, বড় ঘড়িটা দেখে তারপর নিজের হাতঘড়ির সাথে মিলিয়ে নেয় সময়। বয়সে তরুণ-পঁচিশমতো হবে, শান্ত মুখ। [ফ্ল্যাগম্যানকে সম্বোধন করে] শুভ অপরাহ্ণ! [উত্তরে ফ্ল্যাগম্যান একই কথা বলে! ...উত্তরের ট্রেইন দক্ষিণে যায়, উত্তরের ট্রেইন দক্ষিণে যায়] আমার টিকিটে যে জায়গার কথা লেখা, এটা কি সেই জায়গা? [টিকিটটা ফ্ল্যাগম্যানের সামনে এগিয়ে দেয়; ফ্ল্যাগম্যান মাথা নেড়ে হ্যাঁ বোঝায়] একটা ট্রেইনের তো এখনই এখানে থামার কথা, তাই না?
ফ্ল্যাগম্যান : [লোকটির দিকে না তাকিয়ে] ট্রেইন এখানে কখনো থামে না
পুরুষ : আপনিই কি ফ্ল্যাগম্যান?
ফ্ল্যাগম্যান : লোকজন অনেক নামে ডাকে আমায়
পুরুষ : তাহলে আপনি হয়তো কোনো মহিলাকে দেখেছেন আশপাশে
ফ্ল্যাগম্যান : আমি দেখিনি কাউকে
পুরুষ : [এগিয়ে] দেখুন আমি যাকে খুঁজছি সে...
ফ্ল্যাগম্যান : [থামিয়ে] সবাই একই রকম দেখতে
পুরুষ : না, একদমই না, সে একদম আলাদা। তার মতো একজনের জন্যই আমি অপেক্ষা করছি বহু বছর। একটা সাদা ফুল পরে থাকবে সে তার পোশাকের সাথে-সাদা... নাকি হলুদ? [হঠাৎ বিচলিত হয়ে সে পকেট হাতড়ে একটুকরো কাগজ বের করে পড়ে] না, ঠিক আছে, সাদা... এই চিঠিতে সেটাই লিখেছে। [ফ্ল্যাগম্যান কয়েক পা সরে যায় অস্বস্তি বোধ করে] দুঃখিত, আপনাকে এইসব শোনাচ্ছি; কিন্তু আপনি এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারবেন—তাকে, মানে এই মহিলাকে, খুঁজে পাওয়া কতটা জরুরি আমার জন্য, কারণ...
ফ্ল্যাগম্যান : [আবার থামিয়ে] কোন মহিলার কথা বলছেন?
পুরুষ : যাকে আমি খুঁজছি
ফ্ল্যাগম্যান : আমি তো জানি না আপনি কাকে খুঁজছেন
পুরুষ : এইমাত্র যার কথা বললাম আপনাকে
ফ্ল্যাগম্যান : ওহ...
পুরুষ : হয়তো সে এই জায়গা দিয়ে হেঁটে চলে গেছে, আপনি দেখতে পাননি। [ফ্ল্যাগম্যান কাঁধ নাড়ে] তাকে দেখতে কেমন সেটা আপনাকে বলছি আমি—তাতে যদি আপনার মনে পড়ে। লম্বা, ছিপছিপে, কালো চুল মাথায় আর বড় নীল চোখ। একটা সাদা ফুল লাগানো থাকবে তার পোশাকে... [ব্যাকুলভাবে] এমন কাউকে দেখেননি?
ফ্ল্যাগম্যান : কাউকে চিনি না এমন কাউকে আশপাশে দেখেছি কি না জানি না
পুরুষ : কিছু মনে করবেন না; কিন্তু যদিও আমি একটু নার্ভাস তাও আমার মনে হচ্ছে আমরা একই ভাষায় কথা বলছি না মানে আমি বলতে চাচ্ছি আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন না...
ফ্ল্যাগম্যান : সেটা আমর কাজও না
পুরুষ : সে যাই হোক, আমার ধারণা একজন ফ্ল্যাগম্যানকে প্রশ্নের উত্তর দিতে জানতে হয়। [সুর বদলে] সে লিখেছে ঠিক পাঁচটায় এই রেইল ক্রসিং [টিকিটটা পড়ে]—কী নাম এই ক্রসিংয়ের, উচ্চারণই করতে পারছি না—কিন্তু আমি জানি তার এখানেই থাকার কথা। আমরা এই জায়গাটা ঠিক করেছিলাম কারণ আমাদের দুজনের বাসা থেকে মাঝামাঝিতে পড়ে এটা। এই ধরনের একটা... একটা... রোম্যান্টিক ডেইটেও একটা সমতা থাকা দরকার, কী বলেন? [ফ্ল্যাগম্যান কিছু না বুঝে তাকিয়ে থাকে] হ্যাঁ রোম্যান্টিকই বললাম [অকৃত্রিম গর্বে] আপনার বিরক্তি বা একঘেয়ে লাগতে পারে তবু বলি—একদিন এক সাপ্তাহিকে এক বিজ্ঞাপন দেখলাম। তার দেওয়া বিজ্ঞাপন। কী ভালো ছিল সেটার ভাষা! সে লিখেছিল আমার মতো তরুণ কাউকে তার দরকার—একটা সম্পর্ক তৈরি করার জন্য, যাতে তার খুব একা থাকতে না হয়। [বিরতি] আমি লিখলাম, সেও জবাব দিলো। আমি তাকে আমার ছবি পাঠালাম একদিন, সেও পাঠাল তারটা—আহ কী অসাধারণ দেখতে সে!
ফ্ল্যাগম্যান : [অধিকাংশটাই শোনেনি] সে কি কিছু বিক্রি-টিক্রি করতে চাচ্ছিল?
পুরুষ : [বিস্মিত] কে?
ফ্ল্যাগম্যান : যে মহিলা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিলো!
পুরুষ : ওহোঃ! আমি বলি কী আর সারিন্দা কী বাজায়! সে অ্যাডটা দিয়েছিল... দিয়েছিল কারণ, সে বলেছিল, সে হচ্ছে গিয়ে, কী বলে, লাজুক প্রকৃতির, তার মনে হয়েছিল এটাই একমাত্র পথ...
ফ্ল্যাগম্যান : ...সবাই কিছু না কিছু বিক্রি করে বা করতে চায়
পুরুষ : [অধৈর্য হয়ে] আপনি আমার কথা বুঝতেই পারছেন না!
ফ্ল্যাগম্যান : এটা অবশ্য সম্ভব যে...
পুরুষ : আসলে আমি বলতে চাচ্ছি... কী হচ্ছে জানেন, আমি বুঝতে পারছি আমি কতটা অস্থির...মানে বুঝতে পারছেন তো?... মানে একজনের সাথে দেখা হচ্ছে যাকে চিনি না; কিন্তু আবার যাকে...
ফ্ল্যাগম্যান : সেটা কীরকম?
পুরুষ : [হতাশ হয়ে] মানে আমি তাকে ভালোবাবেই চিনি; কিন্তু কখনো দেখিনি
ফ্ল্যাগম্যান : সে আর নতুন কী, অহরহ ঘটে এসব
পুরুষ : আপনার তাই ধারণা?
ফ্ল্যাগম্যান : উল্টোটাও অবশ্য অহরহই ঘটে
পুরুষ : বুঝলাম না
ফ্ল্যাগম্যান : বোঝাটা জরুরিও না
পুরুষ : কীসব আগডুম-বাগডুম বকছেন! দেখুন, আমি আপনাকে বলছি আমার আচরণে একটু রোম্যান্টিক-রোম্যান্টিক ভাব থাকলেও যা-তা ঠাট্টা-তামাশা সহ্য করার লোক আমি নই! [ফ্ল্যাগম্যান আবার কাঁধ নাড়ায়] তা ছাড়া এইসব দেরি-টেরি আমি আর একদম নিতে পারছি না—এর মধ্যে এই অন্ধকার, মাথার ওপর অকেজো ঘড়ি... এ যেন এক সময়হীন স্থানহীন এক স্থান
[হঠাৎ ট্রেইনের তীব্র হুইসল শোনা যায়—সিমাফোরটা যেন হঠাৎ জেগে উঠে সবুজ বাতি জ্বালাতে থাকে। ফ্ল্যাগম্যান আবার শক্ত কাঠের মতো দাঁড়িয়ে গিয়ে শূন্যের দিকে তাকিয়ে তার একই সুরে বলতে থাকে—]
ফ্ল্যাগম্যান : দক্ষিণের ট্রেইন উত্তরে যায়; দক্ষিণের ট্রেইন উত্তরে যায়; দক্ষিণের ট্রেইন উত্তরে যায়; দক্ষিণের ট্রেইন উত্তরে যায়... ইত্যাদি
[ট্রেইনটা পেছনের স্টেইজের ডান থেকে বাম বরাবর বের হয়ে যায়]
পুরুষ : [চিৎকার করে] এই ট্রেইনেই হবে!... এটাতেই আসবে, এটাতেই... [দৌড়ে ট্রেইনের কাছে যায়, ট্রেইন না থেমে তাকে প্রায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে চলে যায়। মঞ্চের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকে সটান হয়ে—বোকা-বোকা ভাবে চেয়ে থাকে, হতাশ, মোহমুক্ত] ওটাতে ছিল না সে!
ফ্ল্যাগম্যান : খুবই স্বাভাবিক
পুরুষ : কী বলতে চাচ্ছেন?
ফ্ল্যাগম্যান : আসবে না
পুরুষ : কে?
ফ্ল্যাগম্যান : যার জন্য, মানে ভাঙিয়ে বললে, যে ছেলেটির জন্য আমরা অপেক্ষা করছি
পুরুষ : কোনো ছেলের কথা তো হচ্ছিল না
ফ্ল্যাগম্যান : ও-ই একই কথা...
পুরুষ : পুরুষ-মহিলা একই হয় কীভাবে?
ফ্ল্যাগম্যান : যার কথা বলছি সে হয়তো না; কিন্তু আবার এক অর্থে তো তা-ই, না?
পুরুষ : আপনার চিন্তা-টিন্তা তো দেখি খুব দ্রুত বদলায়
ফ্ল্যাগম্যান : কই জানি না তো!
পুরুষ : [রেগে] তাহলে কী কচুটা জানেন আপনি?
ফ্ল্যাগম্যান : [আবার নির্লিপ্তভাবে] ওরা কোথায় যায়...
পুরুষ : ট্রেইন?
ফ্ল্যাগম্যান : ওরা সব একই জায়গায় যায়
পুরুষ : তার মানে?
ফ্ল্যাগম্যান : ওরা আসে এবং যায়; কিন্তু দিনশেষে ওদের দেখা হয়...
পুরুষ : সে কীভাবে সম্ভব?
ফ্ল্যাগম্যান : এটাই সত্যি। অসম্ভবই সবসময় সত্যি হয়
পুরুষ : [শেষ বাক্যটা যেন তাকে টেনে বাস্তবতায় নিয়ে আসে, এবার রাগ পড়ে, শান্ত হয়] এক অর্থে ঠিকই বলেছেন। [দোনোমনা করে] যেমন ধরুন না এই ওর সাথে আমার দেখা হওয়া—একটা অসম্ভব ব্যাপার বলে মনে হচ্ছে; কিন্তু এই মুহূর্তে আমার সমস্ত অস্তিত্ব জুড়ে এটাই সবচেয়ে বড় সত্য। [হঠাৎ করে কণ্ঠে অপ্রত্যাশিত উদ্বেগ ও বেদনা] কিন্তু পাঁচটা দশ এখন, ওহ্! [নিজের ঘড়ির দিকে তাকায়] এবং এখনও এলো না [ফ্ল্যাগম্যানের হাত আঁকড়ে ধরে—ফ্ল্যাগম্যান অবিচলিত] একটু ভাবুন প্লিইজ, একটু বেশি করে ভাবুন, মনে করার চেষ্টা করুন। আমার বিশ্বাস আপনি চাইলে মনে করতে পারবেন—বলতে পারবেন তাকে দেখেছেন কি দেখেননি...
ফ্ল্যাগম্যান : কেবল একনজর কাইকে দেখেই বোঝা যায় না এই ব্যক্তিই পত্রিকায় ‘পাত্র চাই’ বিজ্ঞাপন দিয়েছে কি না!
পুরুষ : [আবার রাগ সংবরণ করে] কিন্তু আমি তো আপনাকে বললাম তাকে কেমন দেখতে!...
ফ্ল্যাগম্যান : [আবার সেই নির্বাকারভাবে] কিন্তু আমি তো ভুলে গেছি
[এর মধ্যে কালো পোশাক পরা এক মহিলা এসে দাঁড়ায় ‘পুরুষ’-এর পেছনে। তার গড়ন লম্বা ও চিকন-চাকন। মুখ ঢাকা মোটা কাপড়ে। মূকাভিনয়ের মতো করে ধীরে-ধীরে হাঁটে সে। একটা বড়সড় সাদা ফুল গাঁথা তার পোশাকে। ফ্ল্যাগম্যান মহিলার উপস্থিতি টের পেয়ে লন্ঠনটা উঁচিয়ে ধরে ভালো করে দেখে। আলো চোখে বেশি লাগায় ‘পুরুষ’ চোখ কোঁচকায় এবং এরপর হাত দিয়ে চোখ আড়াল করে। মহিলা যখনই বুঝতে পারে কেউ একজন তাকে দেখে ফেলেছে, সাথে সাথে ফুলটা টেনেটুনে ছিঁড়ে ফেলে, তারপর পার্সের ভিতর রেখে উল্টোদিকে মুখ করে দাঁড়ায় নিশ্চলভাবে।]
পুরুষ : [এখনও চোখ ঢেকে] ইশ্শ্ একদম চোখ ঝলসে দিচ্ছেন
ফ্ল্যাগম্যান : [স্বাভাবিক আড়ষ্টতায় ফিরে গিয়ে] ওহ দুঃখিত...
পুরুষ : কেউ একজন এসেছে, না?
ফ্ল্যাগম্যান : সেটা গুরুত্বপূর্ণ না
পুরুষ : [তীব্র আলোর ছটাটা কেটে যাওয়ায় মহিলার উপস্থিতি বুঝতে পেরে প্রায় দৌড়ে যায় তার দিকে। হঠাৎ থামে। আহ... [ম্রিয়মান] মাফ করবেন...
মহিলা : [একইভাবে দাঁড়িয়ে থেকে] কিছু বলছেন?
পুরুষ : [অপ্রস্তুত] আমি ভেবেছিলাম তুমি... মানে আপনি... অন্য কেউ...
মহিলা : হ্যাঁ...
পুরুষ : [কিছুটা দৃঢ়তায়]... অন্য কেউ যাকে আমি খুঁজছি। [মহিলা একই জায়গায়, একইভাবে দাঁড়িয়ে। নীরবতা] আমি কি আপনাকে... মানে... সামনে থেকে একবার দেখতে পারি?
মহিলা : সামনে থেকে?
পুরুষ : হ্যাঁ... দেখুন, আমার জন্য ভীষণ জরুরি এটা... আপনাকে দেখা... মানে সামনে থেকে
মহিলা : [না ঘুরে] কিন্তু... কেন? [ ধীরে-ধীরে ঘুরতে শুরু করে]
পুরুষ : না মানে... যাতে আমি... [মুখ সম্পূর্ণ ঢাকা দেখে কিছুটা পেছনে সরে যায়]... আপনার পোশাকেও কিছু আটকানো দেখছি না... তবুও...
মহিলা : [গলা কেঁপে ওঠে]... তবুও?
পুরুষ : আপনার শরীরের গড়ন সেই একই...
মহিলা : [কিছুটা ঠাট্টার স্বরে] তাই নাকি?
পুরুষ : [কণ্ঠে অবিশ্বাস] আমাকে বলবেন কি আপনি এখানে এলেন কীভাবে? কোনো ট্রেইন আসতে দেখলাম না তো!
মহিলা : [আমতা-আমতা করে] আমি এলাম... নির্দিষ্ট সময়ের আগে... তারপর অপেক্ষা করলাম...
পুরুষ : কোন নির্দিষ্ট সময়?
মহিলা : আমরা সবাই কোনো না সময়ের জন্য অপেক্ষা করছি। আপনি করছেন না?
পুরুষ : [ভারী গলায়] হ্যাঁ
মহিলা : আমার মনে হয় জীবনে একটা মুহূর্তই শুধু আসে একে-অন্যকে চিনে নেওয়ার, হাত বাড়িয়ে দেওয়ার। সেই মুহূর্তটা যেতে দিতে নেই
পুরুষ : কী বলতে চাইছেন বলুন তো? আপনি আসলে কে?
মহিলা : ভালো প্রশ্ন! এই মুহূর্তে আমি সে যা আমি সব সময় হতে চেয়েছি
পুরুষ : [দুর্বলভাবে] আপনার মুখ কি আমায় দেখতে দেবেন?
মহিলা : [ভয় পেয়ে] কেন?
পুরুষ : ওই মুখ আমার খুঁজে পাওয়া দরকার—ওই মুখ-শুধু ওই মুখ
মহিলা : [সরে গিয়ে] না, দুঃখিত, সম্ভব না!
পুরুষ : [যন্ত্রণাবিদ্ধ শরীর ও কণ্ঠ—মহিলার দিকে এগিয়ে] মাফ করবেন! আমি আসলে বোকার মতো আচরণ করেছি, আমি জানি। হঠাৎ মনে হয়েছিল আপনিই হয়তো সে; কিন্তু সেটা কেমন হাস্যকর! সেটা হলে তো আপনি সোজা আমার কাছেই আসতেন—সে রকমই তো কথা ছিল
মহিলা : [কাঁপা গলায়] হয়তো যাকে সে খুঁজছে তাকে চোখের সামনে দিয়ে চলে যেতে দেওয়ার চেয়ে খুঁজে পেতেই তার ভয় বেশি
পুরুষ : কেমন আজগুবি শোনাচ্ছে না কথাটা?—সেটা হওয়ার কথা না। [সুর বদলে] সে যাই হোক, আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। [সরে গিয়ে নিজের ছোটো সুটকেসটার ওপর বসে—মহিলার দিকে পিঠ দিয়ে] আমি বরং এখানেই অপেক্ষা করি
[‘মহিলা’ খুব ধীরে ধীরে তার মুখের কাপড় সরায়। তার মুখ এক বয়স্ক নারীর মুখ। কপাল বলিরেখায় কুঁচকে আছে। বার্ধক্যের মুখোশ যেন এই মুখ—শরীরের বার্ধক্যহীন গাঁথুনির বৈপরীত্য]
মহিলা : [ফ্ল্যাগম্যানকে-যে তাকিয়েই আছে তার দিকে] আপনি তো আমায় প্রথম থেকেই দেখেছেন, তাই না? ওকে বলেননি কেন?
ফ্ল্যাগম্যান : [আবার উদাসীনভাবে] কাকে?
মহিলা : [‘পুরুষ’কে নির্দেষ করে] ওকে, ওকে—কে হবে আবার!
ফ্ল্যাগম্যান : ও! আমি ওর কথা ভুলেই গেছিলাম
মহিলা : [হঠাৎ একঝলক যন্ত্রণায়] আমার কি বলা উচিত যে আসলে ও যার জন্য অপেক্ষা করছে সে আমিই? আমার মুখে সে কি অতৃপ্ত আকাঙ্ক্ষায় পূর্ণ আমার শরীরকে চিনতে পারবে? কীভাবে আমি বোঝাই যে তাকে আমার এখন আরও বেশি করে দরকার! ঘষামাজা করে নিখুঁত করা আমার ওই ছবিটার দিকে ও যে তাকিয়ে আছে—ওরকম বয়স একসময় আমার ছিল; কিন্তু সে সময়ে তাকে যেটুকু প্রয়োজন হতো তার চেয়ে অনেক বেশি প্রয়োজন এই সময়ে আমার!
[‘পুরুষ’ এক ধরনের মুগ্ধতা ও সম্মোহন নিয়ে ছবিটা দেখছে। ‘মহিলা’ তার মুখ ঢেকে ফেলে আবার এবং এগিয়ে যায় তার দিকে]
মহিলা : অনেক দেরি করছে?
পুরুষ : [না ঘুরে] তা তো করছেই...
মহিলা : না আসলে খুব কষ্ট হবে বুঝি!
পুরুষ : [জোর করে ঘুরে] আসতে তাকে হবেই!
মহিলা : সবকিছুর পরও আপনাকে বুঝতে হবে নিজেকে উন্মোচন করতে তার হয়তো ভয় হচ্ছে বা হয়তো সে অপেক্ষা করছে আপনি তাকে খুঁজে বের করবেন
পুরুষ : বুঝলাম না
মহিলা : [খুব কাছে গিয়ে] আমার এক বন্ধু... সবসময় সেই একাই থেকেছে... আর ভেবেছে কারও একজনের সাথে থাকাটাই তার জীবনের সেরা ব্যাপার হবে... [থামে। ‘পুরুষ’ তাকে শোনে আগ্রহ নিয়ে] দেখতে কুৎসিত বলে তার স্বপ্নের পুরুষ তার স্বপ্নেই থাকত, তাকে খোঁজার কোনো চেষ্টা সে করেনি কখনো। নিজের ছবি তুলতে সে পছন্দ করত—তারপর ছবিতে ঘষামাজা, সেটাকে খুঁতহীন করা। ছবি একদিকে তারই; কিন্তু আবার অন্য কারও। ছেলেদের সে চিঠি লিখত, ছবি পাঠাত সাথে। এমনকি তাদের বাড়ির কাছে কোথাও ডেকে পাঠাত; কিন্তু তারা এলে সামনে না এসে আড়ালে লুকিয়ে থাকত...
পুরুষ : এসব আমাকে বলছেন কেন?
মহিলা : [না শুনে] ... আর সে তাদের দেখত। ভেবে নিত তারা ওর জন্যই তো এসেছে—প্রতিদিন, নতুন কেউ; এভাবে সে জমা করেছে অনেক স্মৃতি—ঐসব ছেলেদের মুখ শরীরের অবয়ব... তারা সব ওর জন্যই অপেক্ষা করত
পুরুষ : কীসব অর্থহীন... আমার মনে হয়...
মহিলা : আপনিও বয়সে তরুণ আর শক্তপোক্ত শরীর আপনার... তাদের মতোই...
পুরুষ : [ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে] হ্যাঁ, কিন্তু...
মহিলা : ...এবং গতকালের চেয়ে সে আজ একদিন বেশি বুড়ো!
পুরুষ : [একটা ছোটো নীরবতার পর] সত্যিই বুঝতে পারছি না এসবের সাথে আমার কী সম্পর্ক থাকতে পারে... গুলিয়ে যাচ্ছে সব...
মহিলা : [আরও এগিয়ে গিয়ে মাথার ওপর হাত রাখে] হয়তো এখন বুঝতে পারবেন। চোখ বন্ধ করুন [মাথা থেকে হাত চোখ এবং মুখের ওপর আলতো প্রেমময়ভাবে নামিয়ে এনে] কখনো ‘ভয়’ অনুভব করেননি?
পুরুষ : ভয়? কীসের?
মহিলা : থাকার, বেঁচে থাকার... এ যেন সারা জীবন কিছু একটার জন্য অপেক্ষা করছেন তো করছেন; কিন্তু তা কখনোই ঘটে না... সেই ভয়
পুরুষ : কই না তো! [চোখ খোলে]
মহিলা : সত্যি করে বলুন। আচ্ছা, আবার চোখ বুজুন—এই চোখই এখন আপনাকে—আমাকে আলাদা করে রেখেছে। কখনো কি ভয় হয়নি?
[‘পুরুষ’ চোখ বোজে]
পুরুষ : ইয়ে... মানে... একটু...
মহিলা : [যেন কোনো অদৃশ্য কণ্ঠে] যন্ত্রণা... নিঃসঙ্গতায়...
পুরুষ : হ্যাঁ, মাঝে-মাঝে... [মহিলার হাত নেয় হাতে]
মহিলা : তারপর রাতে যখন ঘুমটা প্রায় চলে আসছে তখন... শরীরের সেই নিঃসঙ্গতা... একা শরীরটা যেটা বুড়িয়ে যাচ্ছে... যাচ্ছে...
পুরুষ : হ্যাঁ, কিন্তু...
মহিলা : হৃদয়ের নিঃসঙ্গতা ওদিকে প্রতি রাতে অসম্ভব এক নীরবতার বিরুদ্ধে আপনার অবসম্ভাবী চিৎকারকে দীর্ঘায়িত করে যাচ্ছে...
পুরুষ : এরকম কিছু একটার বোধ আমার হয়েছে... কিন্তু... এত পরিষ্কারভাবে না... এতটা নির্দিষ্টভাবেও না...
মহিলা : এমন যে... সম্ভবত আপনি সেই কণ্ঠস্বরের জন্য অপেক্ষা করছেন, তার কণ্ঠস্বর যাকে আপনিই সৃষ্টি করেছেন, আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী...
পুরুষ : হ্যাঁ... হতে পারে; না, তা-ই হবে!
মহিলা : চোখ খুলে সেই কণ্ঠস্বর চিনতে পারবেন তো?
পুরুষ : মনে হয় পারব
মহিলা : ...যদি এমনও হয় যে সে কণ্ঠস্বর বহু বছর আগে আপনি সৃষ্টি করেছেন একটু-একটু করে—হৃদয়ের গভীরতম স্থানে বসে, নিভৃততম সময়ে?
পুরুষ : সেটা ব্যাপার না, আমার বিশ্বাস আমি চিনতে পারব
মহিলা : তাহলে, তার জন্যই মানে সেই কণ্ঠের জন্যই অপেক্ষা করছেন?
পুরুষ : তার জন্যই, তাকেই খুঁজছি
মহিলা : সে-ও তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। [মুখের পর্দা ধীরে-ধীরে সরিয়ে পাক খেয়ে যাওয়া চামড়ার মুখটা উন্মোচন করে] সময়ের হাতে নিজেকে ছেড়ে না দিলে সে তোমার কাছে স্মৃতিই হয়ে থাকবে। সময়ই তার সবচেয়ে বড় শত্রু। প্রস্তুত তুমি?
[পরস্পরের খুব কাছাকাছি বসা তারা]
পুরুষ : হ্যাঁ
মহিলা : আচ্ছা তাহলে... তোমার চোখ খোলো
[‘পুরুষ’ আস্তে আস্তে চোখ খোলে, নিজের হাত মহিলার হাতের মধ্যে দেখে বিস্মিত। ঝটকা মেরে উঠে পড়ে]
পুরুষ : [বিভ্রান্ত] মাফ করবেন, আমার সব কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে...
মহিলা : [মিনতিমাখানো সুরে] ওহ, না... এসব বোলো না...
পুরুষ : খুব একটা বোকামি করে ফেললাম
মহিলা : [অনুনয় করে] কিন্তু তুমি বলেছিলে...
পুরুষ : কেমন হাস্যকর! এক মুহূর্তের জন্য ভেবেছিলাম আপনি সে! ভাবুন একবার। একটা পাগলা স্বপ্নের মতো...
মহিলা : [কষ্টে] হ্যাঁ, বলুন...
পুরুষ : বুঝতে পারছি না কীভাবে আপনাকে...
মহিলা : [নিজেকে শান্ত করে] বুঝতে পারছি—একটা ‘পাগলা স্বপ্নের মতো’... আর কিছু না...
পুরুষ : অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, আপনি যে এত সহজে বুঝতে পারলেন... [ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বিস্মিত] পাঁচটা তিরিশ!... [নীরবতা]
মহিলা : [করুণভাবে] হ্যাঁ... এখন আমারও ধারণা সে আর আসবে না
পুরুষ : সেটা কীভাবে সম্ভব?
মহিলা : এই ভালো
পুরুষ : [রূঢ় ভাবে] আপনি এটা বলার কে বুঝতে পারছি না
মহিলা : না, কেউ না। [পার্স খোলে] আপনি কি এই সাদা ফুলটা চান?
পুরুষ : [একরকম ছিনিয়ে নিয়ে] আপনি এটা কোথায় পেলেন? আমাকেই-বা দিচ্ছেন কেন?
মহিলা : পেলাম... পথে... তুলে রেখেছি...
পুরুষ : [উত্তেজনায়] তার মানে সে এসেছিল! হয়তো সে হারিয়ে গেছে মানে জায়গাটা সে খুঁজে পায়নি; অথবা আমি যখন আপনার সাথে বকবক করছিলাম সে হয়তো এখান দিয়েই চলে গেছে—
মহিলা : [আবার মুখের পর্দা ফেলে] আমি তো বলেছি, নিজেকে চেনার একটাই মুহূর্ত আসে; চোখ বুজে...
পুরুষ : কিন্তু এখন... কী করতে পারি এখন আমি... কী করে খুঁজে পাই...
মহিলা : অপেক্ষা... সবাই যেমন করে... অপেক্ষা করা [ফুলটা নিয়ে নেয়]
পুরুষ : আর আপনি?
মহিলা : আমি? আমি খুঁজতে থাকব, ডাকতে থাকব তাদের, চলে যেতে দেখব। বয়স যখন হবে তখন বুঝবেন। [ট্রেইনের হুইসল শোনা যায়। ‘মহিলা’ আস্তে আস্তে সরে যায়—হাঁটার মধ্যে অসম্ভব কষ্টের অনুভূতি] বিদায় তাহলে... বাই...
পুরুষ : [নিজেকে] ঠিক বুঝলাম না... কে এই মহিলা? এমনভাবে কথা বলছিল যেন চেনে আমাকে— [দৌড়ে যায় মহিলার দিকে। থামে। নিজেকে থামিয়ে রাখে] বাই...
[সেমাফোরে সবুজ বাতি জ্বলে। ফ্ল্যাগম্যান আবার শক্ত আড়ষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে তার কথার পুনরাবৃত্তি করে চলে—]
ফ্ল্যাগম্যান : উত্তরের ট্রেইন দক্ষিণে যায়, উত্তরের ট্রেইন দক্ষিণে যায়, উত্তরের ট্রেইন দক্ষিণে যায়, উত্তরের ট্রেইন দক্ষিণে যায়...
[ট্রেইন স্টেইজের পেছন অংশ অতিক্রম করে। ‘মহিলা’ সাদা ফুল নাড়ে—তার শরীরে দুঃখ ও ক্লান্তি। ধীর ও বড় পদক্ষেপে এগিয়ে যায় ট্রেইনের দিকে। ট্রেইনে চাপে। ফ্ল্যাগম্যান তার কথা আবার বলতে থাকে : দক্ষিণের ট্রেইন উত্তরে যায়, দক্ষিণের ট্রেইন উত্তরে যায়... এবং ট্রেইন ছাড়ে, মহিলাকে টেনে নিয়ে যায়—তার শরীর ছটফট করে, যন্ত্রণায় দুমড়ে-মুচড়ে যেতে থাকে। এ সমস্তটা মূকাভিনয়ে প্রকাশ করা হবে]
পুরুষ : [এবার নিশ্চিত দুঃখের সাথে ফ্ল্যাগম্যানকে বলে—ফ্ল্যাগম্যান আগের মতোই নির্লিপ্ত] ওর মধ্যে কিছু একটা ছিল যা... যাই হোক, আমার মনে হয় তার চলে যাওয়ায় ভালোই হয়েছে
ফ্ল্যাগম্যান : কার কথা বলছেন?
পুরুষ : ওই যে, ওই মহিলা—সাদা ফুলটা যে কুড়িয়ে পেল...
ফ্ল্যাগম্যান : ও, আচ্ছা, আমি খেয়াল করিনি
পুরুষ : করেননি, না? [বিমর্ষভাবে তাকায়] কিন্তু সত্যি করে বলুন তো আপনি অন্যজনকে দেখেননি?
ফ্ল্যাগম্যান : কোন অন্যজন?
পুরুষ : যাকে খুঁজছি আমি
ফ্ল্যাগম্যান : বুঝতে পারছি না কে হতে পারে...
পুরুষ : সাদা ফুল লাগানো যার পোশাকে; কিন্তু যাকে একটু আগেও দেখলেন সে কিন্তু না
ফ্ল্যাগম্যান : [কঠিনভাবে] আপনি যাকে খুঁজছেন না তাকে আমি দেখেছি, এবং যাকে খুঁজছেন তাকে দেখিনি!
পুরুষ : [বিরক্ত] আপনাকে দিয়ে কি কোনো কাজই হবে না? কোন ছাইয়ের কাজ করেন আপনি?
[ট্রেইনের তীব্র হুইসল]
ফ্ল্যাগম্যান : কী বললেন?
পুরুষ : [চিৎকার করে] বললাম কোন ছাইয়ের কাজ করেন আপনি?
[সেমাফোরে সবুজ বাতি। ধীরে-ধীরে ট্রেইনটা পেছনের স্টেইজ অতিক্রম করে]
ফ্ল্যাগম্যান : [যেন দূর থেকে বলছে] উত্তরে ট্রেইন দক্ষিণে যায়, দক্ষিণের ট্রেইন উত্তরে যায়, উত্তরের ট্রেইন দক্ষিণে যায়, দক্ষিণের ট্রেইন উত্তরে যায়...
[মরিয়া হয়ে যেন দুহাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে ‘পুরুষ’। ফ্ল্যাগম্যান তার একই গান একই সুরে গেয়ে যায়। ট্রেইন ধীরে-সুস্থে বের হয়ে যায়]
পর্দা