X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১
বইপড়ার গল্প

বই এক বিকল্প পৃথিবীর জন্ম দেয় আমার ভেতর

কুমার চক্রবর্তী
৩০ এপ্রিল ২০১৮, ১৫:৪১আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০১৮, ১৬:২৪

বই এক বিকল্প পৃথিবীর জন্ম দেয় আমার ভেতর

একজন লেখকের সার্বক্ষণিক সঙ্গী বই। নিজেকে সৃজনমুখর করতে বইয়ের বিকল্প নেই। বইয়ের স্পর্শ, গন্ধ ও অক্ষর-সমুদ্র সবসময়ই আন্দোলিত করে লেখককে। বাংলা ট্রিবিউন সাহিত্য বিভাগের লিখিত প্রশ্নে আমরা শুনতে চেয়েছি এ সময়ের পড়ুয়া লেখকের বইপড়ার গল্প। 

বাংলা ট্রিবিউন : আপনার পড়া প্রথম বইয়ের নাম মনে আছে? বইটি কীভাবে পেলেন? প্রচ্ছদ বা ভিতরের পৃষ্ঠাগুলো কেমন, পড়ার অনুভূতি কেমন—ইত্যাদি গল্প শুনতে চাই।

কুমার চক্রবর্তী : প্রথম পড়া বই হয়তো আদর্শলিপি, কিন্তু আপনি হয়তো বোঝাতে চাচ্ছেন কোনো সাহিত্যের বই। যদি তা-ই হয় তবে সেটা পথের পাঁচালী। খুব সম্ভবত প্রচ্ছদে ছিল ভাই-বোনের হেঁটে চলার অাবছা কোনো ছবি। বইটির শেষ দিকের পাতা খোয়া ছিল যার কারণে আমি কষ্ট পেয়েছিলাম খুব। আমাদের ছোটকালে পাড়ায় উপন্যাস-পড়ুয়া সীমাবদ্ধ গোষ্ঠী ছিল, এই গোষ্ঠীর মধ্যে আমরা বই আদান-প্রদান করতাম। তো এই বইটিও আমার এক বন্ধুর, তার নাম ছিল রঞ্জন,  কাছ থেকে পড়ার জন্য এনেছিলাম। মনে আছে, পাক্কা দুই ঘণ্টা তার বাসার বাইরে অপেক্ষা করে বইটি পেয়েছিলাম বন্ধুর কাছ থেকে। তখন আমি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ি। বইটির  শেষ দিকের কিছু পৃষ্ঠা না-থাকায় সমাপ্তি-অংশ না-পড়ার বেদনায় মুহ্যমান ছিলাম কিছুদিন। আর এই বই পড়ার পর নিজেকে ভাবতে লাগলাম অপু।

 

বাংলা ট্রিবিউন : সর্বশেষ কী বই পড়লেন—বইটির পাঠ অভিজ্ঞতা জানতে চাই।

কুমার চক্রবর্তী : সবেমাত্র পড়লাম দ্য লাইফ অব দ্য মাইন্ড, লেখক হান্না আরেন্ড। তিনি ছিলেন জার্মান-ইহুদি। ওয়ারশতে গিয়ে তাঁর কথা শুনি তারপর তাঁর দুটো বই সংগ্রহ করি। তিনি বিংশ শতাব্দীর একজন বিখ্যাত রাজনৈতিক-চিন্তক যাকে ইংরেজিতে বলে ‘সেমিনাল থিঙ্কার’।  মারবুর্গ  বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্টিন হাইডেগারের সহপাঠী, স্বল্পকালস্থায়ী তাঁর তীব্র-প্রেমিকা, ১৯৩৩ সালে প্যারিসে চলে আসেন তারপর ১৯৪১ সালে পাকাপাকি আমেরিকায়। তাঁর ওপর হাইডেগারের প্রভাব ছিল তুমুল। উল্লিখিত বইটির মূল বিষয় ‘চিন্তা’।                                                                                             

চিন্তন, অভীপ্সা আর ন্যায্যতার মাধ্যমে মানসিক কার্যকলাপের অবস্থাকে তিনি পরখ করে দেখেছেন এই বইয়ে। তিনি এই বইটি শুরুই করেছেন প্লেটোর বিখ্যাত এক উক্তি দিয়ে : ‘আমরা প্রত্যেকেই এমন এক-একজন মানুষ যে  খোয়াবে দেখে নানান বিষয়, আর ভাবে যে সে তা পরিপূর্ণভাবে জানতে পেরেছে, কিন্তু জাগার পর দেখে, কিছুই জানে না সে।’ প্লেটোর ইঙ্গিতটি সহজেই বোধগম্য। তো বইটিতে তিনি চিন্তাকে সন্দেহ করেছেন বিশেষত যদি তা হয় ফাঁপা। নিজেকে বলেছেন, তিনি, কান্টের ভাষায়, ‘প্রফেশনাল থিঙ্কার’ নন। জগতের অবভাসিক প্রকৃতি, ভাষা ও রূপক, রূপক ও অনির্বচনীয়তা, চিন্তা ও ইচ্ছার দ্বন্দ্ব ইত্যাদি বিষয়ের অবতারণার মাধ্যমে লেখক পৃথিবী-বিষয়ে মনের ক্রিয়ার নানা দিক উদ্ঘাটন করতে চেয়েছেন বইটিতে। এটি তাঁর শেষ প্রকাশিত গ্রন্থ যার পুরোটা  তিনি সমাপ্ত করে যেতে পারেননি। তাঁর আরেকটি বিখ্যাত বই দ্য হিউম্যান কন্ডিশান। এই গ্রন্থে তিনি অবতারণা করেন ‘ভিটা অ্যাকটিভা’ তত্ত্বের, যেখানে কর্মপ্রক্রিয়ায় মানবীয় সক্ষমতার  ব্যাখ্যা দেন তিনি। আমরা কী করছি, এটাই এই বইটির ‘বেগ্রিফ ( begriff)' বা মূল ভাব। মূলত দ্য হিউম্যান কন্ডিশান বইয়ে তিনি উপস্থাপন করেছেন ‘ভিটা অ্যাকটিভা’( শ্রম, কর্ম, ক্রিয়া) আর দ্য লাইফ অব দ্য মাইন্ড বইয়ে ‘ভিটা কনটেমপেটিভ’ (চিন্তন, অভীপ্সা, ন্যায্যতা) ধারণার। বইটিতে তিনি বলতে চেয়েছেন, বিচার বা মীমাংসাতত্ত্বের কাজ হলো ভালো বা মন্দকে নির্ণয় করা যা দৃশ্যমান, অন্যদিকে  চিন্তার কাজ হলো অদৃশ্যের সাথে মোকাবেলা। তাই ফাঁপা চিন্তা কখনোই জ্ঞান নয়। আধুনিকতার ঘোরতর সমালোচক ছিলেন তিনি। আধুনিকতাকে বলতেন পৃথিবীচ্যুতি, কারণ আধুনিকতা  সমগ্র চেতনার পরিবর্তে খণ্ডিত চেতনাকে পুনর্বাসিত করেছে।

 

বাংলা ট্রিবিউন : কিনে রেখেছেন, পড়া হয়নি কিন্তু পড়ার জন্য ভেতরে এক ধরনের চাপ অনুভব করেন—এমন বই সম্পর্কে জানতে চাই।

কুমার চক্রবর্তী : হ্যাঁ, এ ধরনের বই বেশ কিছু আছে : যেমন, রবার্ট মুজিলের দ্য ম্যান উইদাউট কোয়ালিটিস সংগ্রহ করেছি বছর চারেক আগে, ধরে পড়া হয়নি। মুজিল বিংশ শতাব্দের প্রধান একজন আধুনিকবাদী  অস্ট্রীয় ঔপন্যাসিক, এই বইটা তাঁর শ্রেষ্ঠ কাজ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসিরা তাঁর বই নিষিদ্ধ করে, ১৯৩৮ সালে অস্ট্রিয়া তৃতীয় রাইখের অধীনে গেলে তিনি স্ত্রীসহ সুইটজারলান্ডে পালিয়ে যান, সেখানেই হৃদরোগে মারা যান ১৯৪২ সালে, ৬১ বছর বয়সে।  তাঁর দাহকার্যে মাত্র আটজন উপস্থিত ছিল, দেহভস্ম তাঁর স্ত্রী পরে বনের মধ্যে ছড়িয়ে দেন। সুইস কর্তৃপক্ষ তাঁকে আশ্রয় দিতে গররাজি ছিল প্রথম দিকে, তখন তিনি তাঁর স্ত্রীকে বলেছিলেন, ‘দেখো এখন তারা আমাদের আশ্রয় দিতে দোনোমোনো করছে, দেখবে একদিন এর জন্যই তারা গর্ববোধ করবে।' বইটি আমাকে আকৃষ্ট করেছে কিন্তু উপন্যাস যেভাবে পড়তে হয়, আগপাশতলা, সেভাবে পড়তে চাই।
প্রায় কুড়ি বছর আগে সংগ্রহ করা মার্টিন হাইডেগারের বিং অ্যান্ড টাইম আধাখেঁচড়া পড়া, ভালোভাবে পড়া হয়নি এখনো। এরকম বেশকিছু বই আছে : কনফেসনস (সেন্ট অগাস্তিনের), ওয়ান্ডারলাস্ট, দ্য হিডেন লাইফ অব ট্রি, দ্য ট্রুথ অব পোয়েট্রি, সাইকোলজি অব মাইন্ড, ইভালিউশন অ্যান্ড দ্য বার্থ অব কনশাসনেস, ফিনেগানস ওয়েক, দ্য ইগো অ্যান্ড হিজ অওন ইত্যাদি সংগ্রহে থাকা বইগুলো পড়ার চাপ অনুভব করছি। চাপ অনুভব করছি মিশিমার দ্য ফরবিডেন কালার্স পড়ার জন্য। বাংলা বই ভাষা স্বাচ্ছন্দ্যের কারণে সাথে সাথেই পড়ে ফেলি কিন্তু ইংরেজি বইগুলো কষ্ট করে পড়তে হয়। জিনাত ( বুক হাইস) থেকে পঁচিশ বছর আগে ছাড় মূল্যে কেনা জয়েসের ফিনেগানস ওয়েক কেনার পর পড়তে গিয়ে দেখি, প্রথমেই ভূমিকায় শেমুস ডিন বলছেন,  'the first  thing to say Finnegans Wake is that it is, in an important sense, unreadable. ধাক্কা খেলাম। তারপর পড়তে গিয়ে দেখি, পয়ষট্টিটি ভাষার মিশেলে এ এক শব্দান্ধ-জাদুঘর। রেখে দিই। মাঝে মাঝে বের করি, রেখে দিই। প্রথম পৃষ্ঠায় , শুরুটা :  riverrun, past, Eve and Adam’s, from swerve of shore to bend of bay, brings us a commodius, vicus of recirculation back to Howth Castle and Environs. বুঝলাম, অর্থ নয়, বোধ দিয়ে তা পাঠ করার চেষ্টা ছাড়া কোনো উপায় নেই। ব্যবহৃত শব্দের অনুভূত অর্থ ও সৃষ্ট বোধ দিয়ে তা বুঝতে হবে। তো চেষ্টা অব্যাহত আছে আজ অব্দি।

 

বাংলা ট্রিবিউন : কোন কোন বই পড়ার আকাঙ্ক্ষা আছে, কিন্তু সংগ্রহে নেই?

কুমার চক্রবর্তী : আগে ছিল, কিন্তু এখন বই পড়ার আকাঙ্ক্ষা আমার কমে গেছে। তবে অভ্যাসবশত এখনো প্রচুর বই পড়ি । বাঁচার জন্য, যাপনের জন্য  পড়া আর কি। যেমন খেতে ভালো লাগে না কিন্তু খেতে হয়, টয়লেটে যেতে মন চায় না কিন্তু যেতে হয়—অস্তিত্ব রক্ষার জন্য তেমন কিছু। তবে হাইনরিশ ফন ক্লাইস্ট-এর গল্প ও উপন্যাসিকা বিশেষত মাইকেল কোহলাস, হেনরি জেমসের ছোটগল্প, সেফেরিস ও কাভাফি ছাড়া অন্য আধুনিক গ্রিক কবিদের কবিতা, বিভূতিভুষণের অন্তরঙ্গ দিনলিপি ও ভ্রমণবিষয়ক লেখা, নেরভালের অরেলিয়া, দস্তয়ভস্কির ডেমনস ও দি ইটারনাল হাসবেন্ড, টলস্টয়ের দ্য মেমোয়ার্স অব আ ম্যাড ম্যান, লেরমন্তভের হিরো অব আওয়ার টাইম, স্পিনোজার এথিকস, সুধীন্দ্রনাথ দত্তর অসমাপ্ত আত্মজীবনীটি পড়ার আংশিক আকাঙ্ক্ষা কাজ করছে। এই বইগুলো আমার কাছে নেই। বলে রাখি, আমি শরীরী, সংবেদী ও স্নায়ুবিক লেখা পছন্দ করি, সে-ধরনের লেখার খোঁজ পেলে আগ্রহ সৃষ্টি হয়।

 

বাংলা ট্রিবিউন : কোন বইটি সবচেয়ে প্রিয়, বার বার পড়তে চান? কেন?

কুমার চক্রবর্তী : বারে বারে পড়তে চাই কি না জানি না কিন্তু অনেকবার পড়ি এমন বইয়ের নাম করা কঠিন। তবে কয়েকটির নাম করা যায় : জীবনানন্দ দাশের কবিতাসমগ্র, এলিঅটের  ফোর কোয়াট্রেটস, অক্তাবিয়ো পাসের কবিতাসংগ্রহ, শোপেনহাউয়ারের দ্য ওয়ার্ল্ড অ্যাজ উইল অ্যান্ড রেপ্রিসেনটেশন, ভাস্কর চক্রবর্তীর কবিতাসমগ্র, সিকদার আমিনুল হকের কাব্যসমগ্র, মিগেল দ্য উনামুনোর দ্য ট্র্যাজিক সেন্স অব লাইফ, রিলকের নোটবুকস অব মালটে লাউরিডস ব্রিগ্রে, দস্তয়ভস্কির নোটস ফ্রম দ্য আন্ডারগ্রাউন্ড, আরও কয়েকটি। পড়ি, কারণ এসব বই আমার প্রিয়, প্রিয় কারণ এসব বইয়ে আমি উপাদান ও আত্মভাব খুঁজে পাই। আত্মার প্রতিধ্বনি পাই।

 

বাংলা ট্রিবিউন : কোন  বইটি আপনার জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে? কী করেছিলেন?

কুমার চক্রবর্তী : নিজ-পছন্দের সব বই-ই নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল আমার ওপর। কারণ, এসব পছন্দের বইগুলো জীবনকে অস্বাভাবিক করে তুলেছিল; করে তুলেছিল বিবিক্ত, অসামাজিক, লাজুক, ভঙ্গুর, অলস, দায়িত্বহীন, মদ্যপ, পানখোর, তামাকু, ফাঁকিবাজ, অবাস্তব, অর্থহীন, অপরিচিত, বহিরস্থিত, প্রেমিক, মানবিক, অহংবাদী; কী নয়? এগুলো স্বাভাবিক জীবনের পরিপন্থী ফলে যা হবার তা-ই হলো। বইয়ের কারণেই হলাম মিসফিট যা বহির্বিশ্বের সাথে আমাকে এক  স্নায়ুযুদ্ধে  অবতীর্ণ করে দিল। অনবরত আত্মসংঘর্ষের,  আত্মলোপের তাজা বারুদ পেয়েছি এসব বই থেকে। হলাম সলিপসিস্টিক। হলাম আচ্ছন্ন, জীবনেই যেন মৃত্যুকে যাপন করা। সুতরাং বইয়ের প্রভাব আমার জীবনে, মোটাদাগে, প্রচলিত অর্থে নেতিবাচক। ফরাসি একটি শব্দ আছে ‘সলিত্যের’(solitaire)  যার অর্থ বিবিক্তিবিলাসী, বই আমাকে তা-ই করেছে। সুতরাং বইয়ের প্রভাব নেতিবাচক; তবে এই নেতিবাচকতা কখনো কখনো নান্দনিক, অন্তত আমার ক্ষেত্রে।

 

বাংলা ট্রিবিউন : নির্জন দ্বীপে একজনমাত্র লেখকের বই নিয়ে যেতে বললে, কোন লেখককে বেছে নেবেন, কেন?

কুমার চক্রবর্তী : কুমার চক্রবর্তী। এই লেখকের বই সাথে নিতে চাই। কারণ তার বইগুলো পড়া হয়নি আমার। নির্জন দ্বীপে সেগুলো পড়ব আর নির্জনতার ভাষায় তা অনুবাদ করব। তারপর সমুদ্রের প্রতিটি প্রতিগামী  ঢেউয়ে  একটি করে অক্ষর এক-একদিন ভাসিয়ে দিতে থাকব অনন্তের, অতলগর্ভের উদ্দেশে। তাতেই হয়তো সময় কাটবে নব্য ক্রুসোর দ্বীপান্তরের।

 

বাংলা ট্রিবিউন : বই না পড়ে আপনি বাঁচতে পারবেন কি না? কেন?

কুমার চক্রবর্তী : খুব পারব। কেন নয়? যেভাবে আমরা বাঁচতে চাই বা বাঁচি, ঠিক সেভাবেই বাঁচা যায় না আগাগোড়া। বাঁচা মানে ছাড়াও। যে-বইগুলো পড়েছি এদের স্মৃতি ও জাবরকাটা নিয়ে খুব চালিয়ে যেতে পারব। কারণ, বই হলো কাম বা কামের মতো কিছু একটা, চলে গেলে কষ্ট হবে, তবু তা  মেনে নেব, নিতে হয়, ধীরে ধীরে। তাছাড়া বই যে-কাজটি করে তা খুব গুরুত্বপূর্ণ : বই জীবনকে নানাভাবে চেনায়, কখনো দূরদৃষ্টি দিয়ে কখনো নিকটদৃষ্টি দিয়ে। আর সেই চেনাজানার বৃত্তে বইয়ের বিকল্প-কিছু খুঁজে নেয় জীবন। বই একধরনের অনৈচ্ছিক স্মৃতি উপহার দেয় অনুধ্যানী পাঠককে যা দিয়ে পাঠক তার হারিয়ে যাওয়া জীবনকে পুনরুদ্ধার করে। মোদ্দা কথা, বই এক বিকল্প পৃথিবীর জন্ম দেয় আমার ভেতর, সেখানে বই না-থাকলেও অনায়াসে বাঁচা যেতে পারে। যেমন আমি, গাছপালার মাঝ দিয়ে হাঁটতে (দৌড়াতে নয় কিন্তু!) ভালোবাসি, গান শুনতে ভালোবাসি, চুপ থাকতে ভালোবাসি; এটা, এই ক্রিয়া আমার চিন্তাপ্রণালির সাথে সংযুক্ত। আর এটা আমি পেয়েছি বই থেকে। অর্থাৎ বই-ই বলেছে যে, আমাকে ছেড়ে তুমি গাছের কাছে যাও, অনেক বেশিকিছু পাবে। আর সত্যি তা-ই হয়েছে। বই নানা অবভাস সৃষ্টি করতে পারে। বই হচ্ছে সেই ভয়াবহ প্রেম যে ক্ষণস্থায়ী কিন্তু কী-যেন একটা রূপান্তর ঘটিয়ে দিয়ে যায়।

 

বাংলা ট্রিবিউন : অন্যকে কোন বইটি পড়ার পরামর্শ দেবেন, কেন?

কুমার চক্রবর্তী : এ মুহূর্তে বলতে পারি প্লেটোর আপোলোগিয়া বা অ্যাপোলজি। কারণ অনেক-অনেকদিন আগে সক্রেটিসের একটি উক্তি পড়েছিলাম, unexamined life is not a worth living : অপরীক্ষিত জীবন, কোনো যাপিত-জীবনই নয়। তখন জানতাম না কোথায় রয়েছে এই উত্তালবাক্য। তো এই পঙক্তি এই বইয়ের। আমার মনে হয়, জীবনের পক্ষে, বেঁচে থাকার পক্ষে এর চেয়ে ‘লেনিটিটিভ’ বা মুগ্ধকারী উক্তি আর হয় না। পরাজিতদের দাঁড়াতে শেখায়, জয়ী করে এই বাক্য। এই বইয়ে বলা হয়েছে, জানাটা জ্ঞান নয়, বরং যা জানো না তা জানাই জ্ঞান। এই বই মানুষের মানসিকভাবে বিজয়ী হওয়ার বই। মানুষের অন্তর্জগতের সৌন্দর্য প্রকাশক প্রথম  রচনা এটা। এটাই একমাত্র বই যা রচনার পর থেকে মানুষকে শাসন করছে, নির্দেশনা দিচ্ছে ভালোবাসার সাথে। এর প্রতিটি বাক্য এক-একটি চিন্তা বা দর্শন বা দূরকল্পনের বীজতলা হয়ে উঠতে চায়। আত্মবাদ, রহস্যবাদ, অস্তিত্ববাদ, বিজ্ঞানবাদ, ন্যায়বাদ, এসবকিছুরই সূত্র রয়েছে এই বইটিতে। 

 

বাংলা ট্রিবিউন : আপনার লেখা কোন বইটিকে আপনি বেশি গুরুত্ব দেন, কেন?

কুমার চক্রবর্তী : একটিও না। বললে তা হবে জেরবারি কথা। কারণ, আমি আমার পাঠক না। গ্রহণ বা বাতিলের হকদার আমি নই। 

//জেডএস//
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পুরস্কার পেলেন কুবির চার শিক্ষার্থী
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পুরস্কার পেলেন কুবির চার শিক্ষার্থী
গরমে বেড়েছে অসুখ, ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি রোগী হাসপাতালে
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগরমে বেড়েছে অসুখ, ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি রোগী হাসপাতালে
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ এপ্রিল, ২০২৪)
মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আসা ৫ টন কফি পাউডার জব্দ
মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আসা ৫ টন কফি পাউডার জব্দ
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন