X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিনোদন সাংবাদিকতায় একটা অবক্ষয় চলছে : দাউদ হোসাইন রনি

সাক্ষাৎকার গ্রহণ : আহমেদ সুজন
০৪ আগস্ট ২০১৯, ১৭:৪০আপডেট : ০৫ আগস্ট ২০১৯, ১৭:০২

বিনোদন সাংবাদিকতায় একটা অবক্ষয় চলছে : দাউদ হোসাইন রনি দাউদ হোসাইন রনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সাংবাদিকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। কালের কণ্ঠ পত্রিকায় তার ‘ব্যবচ্ছেদ’ শিরোনামে লেখা চলচ্চিত্র বিষয়ক কলাম বেশ জনপ্রিয়তা পায়। বর্তমানে তিনি দৈনিক কালের কণ্ঠে সহকারী ফিচার সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ৷এছাড়া পত্রিকাটির দৈনিক বিনোদন পাতা 'রংবেরং' ও সাপ্তাহিক বিনোদন পাতা 'রঙের মেলা'র সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। চলচ্চিত্র সাংবাদিকতায় আসার আগে মঞ্চেও কাজ করেছেন।
সম্প্রতি তিনি কথা বলেছেন চলচ্চিত্র সাংবাদিকতার বিভিন্ন দিক নিয়ে।

বিনোদন সাংবাদিকতায় একটা অবক্ষয় চলছে : দাউদ হোসাইন রনি

 প্রশ্ন : বিনোদন সাংবাদিকতা আর চলচ্চিত্র সাংবাদিকতাএ দুটির মধ্যে তফাৎ কোথায়?

উত্তর : বিনোদনের আওতার মধ্যেই চলচ্চিত্র। তবে হ্যাঁ, শুধু চলচ্চিত্র সাংবাদিকতার একটা ঐতিহ্য আছে। বিনোদন মাধ্যমের মধ্যে চলচ্চিত্র সবচেয়ে বড়। যত ধরনের কলা আছে, সবগুলোর সমন্বয় ঘটে চলচ্চিত্রে। চিত্রকলা, সংগীত, নৃত্য, অভিনয়, ফটোগ্রাফি, স্থাপত্যকলাসহ সব কলা নিয়েই চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্র সাংবাদিককে এই সবগুলো কলা সম্পর্কে ভালো ধারণা নিয়েই সাংবাদিকতা করতে হয়।

 

প্রশ্ন : চলচ্চিত্রের সাংবাদিকতা বাংলাদেশে এখন কোন পর্যায়ে আছে?

উত্তর : আমাদের চলচ্চিত্র যেমন, সাংবাদিকতার অবস্থাও তেমন। চলচ্চিত্র উন্নত হলে সাংবাদিকতার মানও বাড়ে। একটা আরেকটার পরিপূরক। মূল ধারার চলচ্চিত্রের আঁতুড়ঘর তো বিএফডিসি। ওখানকার কলাকুশলীদের মানসিকতা যেমন হবে একজন সংবাদকর্মীর মানসিকতাও সেভাবেই গড়ে উঠবে। ইন্ডাস্ট্রির মতাদর্শ সাংবাদিকের ব্যক্তিগত মতাদর্শে প্রভাব ফেলে। এফডিসির প্রযোজক-পরিচালক-শিল্পী সমিতিতে যে আড্ডাটা হয়, সেখানে যেসব বিষয়ে আলোচনা হয়, অবচেতন মনে সাংবাদিকরা সেটাই ধারণ করেন। চলচ্চিত্র নিয়ে ভিন্ন চিন্তা যাদের, যারা দেশ-বিদেশের সিনেমার খবর রাখেন, তারা এফডিসির এসব আড্ডায় অনুপস্থিত। মোরশেদুল ইসলাম, অমিতাভ রেজা, জাহিদুর রহিম অঞ্জন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকীরা যদি কাজী হায়াৎ, বদিউল আলম খোকন, এফআই মানিকদের সঙ্গে একই টেবিলে বসে ফিল্মি বাহাস করতেন তাহলে আলোচনাগুলো ভিন্ন ডাইমেনশন পেত। কিন্তু সেটা হয় না এবং সাংবাদিকদেরও সেই বাহাসের মধ্যে থাকার সৌভাগ্য হয় না বললেই চলে। এসব কারণেই চলচ্চিত্র সাংবাদিকরা একটা গণ্ডির মধ্যে আটকে পড়েছেন।

 

প্রশ্ন : ‘ব্যবচ্ছেদনামে কালের কণ্ঠে নিয়মিত চলচ্চিত্র সমালোচনা লিখতেনবেশ জনপ্রিয় হয়েছিল সেটাকত সালে শুরু করেছিলেন এবং কতদিন করেছেন?

উত্তর : কালের কণ্ঠ প্রকাশের শুরুতেই, ২০১০ সালে। ২০১৩ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে লিখেছি। এরপর অনিয়মিতভাবে লিখেছিলাম আরো দু-একটি।

 

প্রশ্ন ; চলচ্চিত্র সমালোচনায় আগ্রহী হলেন কেন?

উত্তর : চলচ্চিত্রের সর্বভূক দর্শক বলতে পারেন আমাকে। ১৯৯৪-৯৫-৯৬ সালে যতগুলো বাংলা চলচ্চিত্র হলে মুক্তি পেয়েছে, সবগুলোই আমি দেখেছি। বেশিরভাগই দেখেছি ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শো। হলিউড-বলিউড থেকে শুরু করে ইরানি, কোরিয়ান, তুর্কি, স্প্যানিশ এমনকি আফ্রিকার অনুন্নত দেশগুলোর চলচ্চিত্রও দেখতাম নিয়ম করে। তাছাড়া আমি মঞ্চনাটক করতাম। যে কারণে চিত্রনাট্য, অভিনয়, লাইট, সংগীত, সেটসহ যাবতীয় কারিগরি কাজ সম্পর্কে আমার ধারণা আছে। সেই জায়গা থেকে চলচ্চিত্র নিয়ে লেখা আমার জন্য সহজই ছিল। মঞ্চে কাজ করার সুবাদে সাংবাদিকতা শুরু করি মঞ্চনাটক দিয়েই। এরপর হলিউড-বলিউড, দেশীয় সংগীত, টিভিনাটক নিয়ে সাংবাদিকতা করেছি। তবে কালের কণ্ঠে এসে চলচ্চিত্র সাংবাদিকতা করার সিদ্ধান্ত নিলাম। সিনিয়র ভাইয়েরা আমাকে নিরুৎসাহিত করে বলেছিলেন, ক্যারিয়ার হুমকিতে পড়বে। কারণ তখন চলচ্চিত্রে একটা অশুভ সময় যাচ্ছিল। কিন্তু আমি এটাকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিলাম। ফিল্মফেয়ার, হলিউড রিপোর্টার, আনন্দলোকে নতুন ছবি নিয়ে সমালোচনা পড়তাম নিয়মিত। কালের কণ্ঠের রঙের মেলায় চলচ্চিত্র নিয়ে পূর্ণ পৃষ্ঠার আয়োজনের পরিকল্পনা হলো যখন, তখন ভাবলাম চলচ্চিত্র সমালোচনা নিয়ে একটি বিভাগ করলে কেমন হয়! নাম দিলাম ‘ব্যবচ্ছেদ’। ‘চিত্রালি’তে একসময় চিত্রসমালোচনা জনপ্রিয় হয়েছিল, সেটাও মাথায় ছিল। তবে নতুন পাঠকরা এটাকে কীভাবে নেবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল। প্রতি সপ্তাহে মুক্তি পাওয়া দুটি চলচ্চিত্রের একটি দেখে সমালোচনা লিখতাম। কোন চলচ্চিত্র নিয়ে লিখব, এটা আগেই সিদ্ধান্ত নিতাম না। হলে গিয়ে নতুন যে চলচ্চিত্রটি পেতাম, সেটাই দেখতাম। আমার কাছে ‘জঙ্গল দ্বীপের টারজান’ যেমন সমালোচনার যোগ্য, তেমনি ‘মনের মানুষ’ও। শুরু থেকেই পাঠক এই বিভাগটি লুফে নিয়েছিলেন। কোনো সপ্তাহে ‘ব্যবচ্ছেদ’ না থাকলে, পাঠকরা অফিসে একের পর এক ফোন করতেন।

 

প্রশ্ন : বলা হয় চলচ্চিত্রে এখন গল্পের অভাব। নতুন নতুন গল্প দরকার। চলচ্চিত্র সাংবাদিকতা কি চলচ্চিত্রের গল্প হতে পারে?

উত্তর : অবশ্যই পারে। তবে কোনটা গল্প আর কোনটা গল্প না, সেটা একটা ক্রিটিক্যাল বিষয়। একটা গল্প হয়তো আপনার কাছে ভালো লাগল, আমার ভালো নাই লাগতে পারে। এই যে আমি ও আপনি কথা বলছি, এটা নিয়েও চলচ্চিত্র হতে পারে। গল্পটা খুবই দরকারি কিন্তু সেটাই সব নয়। যে গল্প আপনার পছন্দ হচ্ছে না, দেখা যাবে অন্য এক পরিচালক একই গল্প নিয়ে চলচ্চিত্র বানিয়ে আপনার মন জয় করে নিয়েছেন। গল্পের অভাব না বরং গল্পটাকে সঠিকভাবে তুলে আনা যাচ্ছে না বলেই দর্শক বলছেন ‘গল্প নেই’। সবটাই নির্ভর করে নির্মাণের ওপর।

 

প্রশ্ন : এখন ছবি মুক্তির আগে ও পরে প্রমোশন হয়। দেখা যাচ্ছে, শো শেষে সিনেমা হলের গেটে ক্যামেরা নিয়ে দাঁড়িয়ে দর্শকদের অনুভূতি নেয়া হচ্ছে। এগুলোকে কি আপনি চলচ্চিত্র সাংবাদিকতার কোনও ফর্মে ফেলতে পারবেন?

উত্তর : ফেলা যায়। আমরা যখন শুরু করি তখন ছিল অ্যানালগ মিডিয়া। এখন ডিজিটাল হওয়ায় সাংবাদিকতায় সুযোগ বেড়েছে। ধরুন, ফেসবুকে আপনার বিশ হাজার অনুসারী, অনেক পত্রিকার সার্কুলেশন কিন্তু দশ হাজারও নেই। তার মানে দাঁড়ায়, ঐ পত্রিকার চেয়ে বেশি মানুষের কাছে আপনি পৌঁছাতে পারছেন।

 

প্রশ্ন: এক ওয়েবসাইট জরিপে দেখা গেছে, ‘গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা’ বিভাগে পড়াশোনা শেষে অনেকেই সাংবাদিকতায় আগ্রহী হন না। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই ব্যাপারটিকে আপনি কীভাবে দেখছেন? এটা কি সাংবাদিকতা পেশার ক্ষেত্রে কোনও সংকট?

উত্তর : না। আমার মনে হয় না। আমি সংবাদকর্মী হিসেবে ১৯ বছরের জীবনে দেখেছি অনেকেই এ পেশায় এসেছেন কিন্তু টিকতে পারেননি। তাছাড়া সাহিত্য নিয়ে পড়লেই যে আপনি বড় সাহিত্যিক হবেন, তার কোনো নিশ্চয়তা আছে? কাজী নজরুল ইসলাম কি বাংলা সাহিত্যে অনার্স-মাস্টার্স করেছিলেন? বরং অনার্স-মাস্টার্সে কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্য পড়ানো হয়। একাডেমিক পড়াশোনা আপনাকে পদ্ধতি শেখাতে পারে, কিন্তু সাংবাদিক হতে গেলে আপনার মধ্যে জীবনদর্শন ও সৃজনশীলতা থাকতে হবে। আর চলচ্চিত্র নিয়ে সাংবাদিকতা করতে হলে, এই মাধ্যমের প্রতি আপনার দীর্ঘদিনের আগ্রহ থাকতে হবে। ভেতরে প্যাশনটা থাকতে হয়। সহজাত প্রতিভা বলেও কিছু বিষয় থাকে।

 

প্রশ্ন : ফেসবুকে লাইক, কমেন্ট, শেয়ার পেয়ে কেউ যদি মনে করেন তিনি চলচ্চিত্র সমালোচনায় অনেকদূর এগিয়ে গেছেন, এই সাইকোলজিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

উত্তর : সর্বোপরি এটাকে আমি নেগেটিভ চোখে দেখি না। তবে নেগেটিভাবে নেওয়ার কারণও হয়তো থাকতে পারে। ফেসবুকে কেউ যদি নিজের মত প্রকাশে লয়্যাল হন, তাতে কোনো সমস্যা নেই। চলচ্চিত্র ভালো না লাগলে সরাসরি সেটা প্রকাশ করার স্বাধীনতা যে কারোই আছে। কিন্তু যখন ক্রিটিকাল সমালোচনায় যাবেন, আপনার কিছু দায়বদ্ধতা থাকতে হবে। পত্রিকায় যা ছাপা হয় সেটার দায় সাংবাদিক ও প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে অনেকেই সেই দায়টা নেন না। সিনেমা দেখে এসে অনেকেই অনেক কিছু লিখে ফেলেন, সেটাকে ব্যক্তিগত মতপ্রকাশ বলেই ধরে নিতে হবে। কারণ, দেশীয় চলচ্চিত্রের কাজ কীভাবে হয়, কী কী সীমাবদ্ধতার ভেতর দিয়ে আমাদের ফিল্মমেকারদের যেতে হয়, সেটা না জানলে তো সমস্যা। 

প্রশ্ন : অঞ্জু ঘোষ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তার নাচ ও অঙ্গভঙ্গি নিয়ে সমালোচনামূলক লেখা হয়েছিল পত্রিকায় এবং এই লেখা তার ক্যারিয়ারে নেগেটিভ প্রভাব ফেলেছিল। তাহলে কি বলা যায়তারকাদের ক্যারিয়ার ওঠানামায় সাংবাদিকের হাত থাকে? একজন সাংবাদিক কি একজন ফিল্মস্টার থেকেও ক্ষমতাবান?

উত্তর: মোটেও না। আমি তা মনে করি না। লিখে কোনো সাংবাদিক কাউকে ওঠাতে পারেন না, নামাতেও পারেন না। কারো ক্যারিয়ার ওঠানামা করে বিশেষ কোনো ঘটনার প্রেক্ষিতে। ঘটনাটা ঘটান সেই তারকাই, সাংবাদিকের কাজ হলো সত্য প্রকাশ করা। এখানে সাংবাদিকের কোনো কৃতিত্ব নেই। আমজাদ হোসেনের ‘কাল সকালে’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন অপু বিশ্বাস। এই ছবি মুক্তির পর অপুকে নিয়ে কতজন সাংবাদিক লিখেছিলেন? কিন্তু যখন ‘কোটি টাকার কাবিন’ জনপ্রিয় হলো, সবাই হুমড়ি খেয়ে লিখেছেন অপু বিশ্বাসকে নিয়ে। যার সংবাদমূল্য আছে সাংবাদিকরা তাকে নিয়েই লেখেন। আবার কোনো সাংবাদিক যদি কোনো কারণ ছাড়াই কোনো তারকাকে নিয়ে সংবাদ করেন, সেটা ওই তারকার জন্যই নেগেটিভ। ইস্যু ছাড়া নিউজ বরং বিপদ ডেকে আনে। ধরুন ‘খ’ নামক কোনো নায়ককে ব্যক্তিগতভাবে আমি পছন্দ করি না, কিন্তু তার পর পর তিনটা ছবি হিট হয়ে গেল। আমার কোনো ক্ষমতা নেই তাকে ইগনোর করার, তাকে নিয়ে না লেখার।

প্রশ্ন: সাংবাদিক ও তারকার মধ্যে কেমন সম্পর্ক হওয়া উচিত বলে মনে করেন আপনি?

উত্তর: আমি মনে করি সাংবাদিক ও তারকার মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা ঠিক নয়, সহযোগিতামূলক সম্পর্ক থাকা উচিত। বন্ধুকে নিয়ে সবসময় সমালোচনা করা যায় না। ব্যক্তিজীবনে আমরা বন্ধুর দোষ-ত্রুটি গোপন করি। তাই প্রকৃত সাংবাদিকের তারকার বন্ধু হওয়া সম্ভবও না।

 

প্রশ্ন: অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে আমাদের দেশের বিনোদন সাংবাদিকতা কোন জায়গায় আছে?

উত্তর: আমরা অনেক ক্ষেত্রেই পিছিয়ে আছি। তবে একটা ক্ষেত্রে এগিয়ে আছি, সেটা হলো মানবিকতা। হলিউড-বলিউডের অনলাইন পোর্টালগুলো খুলে দেখুন, ওরা কী করে! হাঁটতে গিয়ে অমুক নায়িকার হিল ভেঙেছে, সেটার নিউজ। তারকাদের পেছনে রীতিমতো গোয়েন্দাগিরি করে তারা, ওয়াশরুমে ক্যামেরা রেখে অপ্রস্তুত ছবি তুলেও ছেপে দেয়। বাংলাদেশের কোনো সাংবাদিক এটা করবে না। এতটা অমানবিক আমরা নই, হা হা হা।

প্রশ্ন: কিছু অনলাইন পত্রিকা চটকদার শিরোনামে তারকাদের নিউজ করে। ভেতরে গেলে দেখা যায় অন্য নিউজ। এটা কী নৈতিকতার সমস্যা নাকি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যই প্রধান?

উত্তর: এটা অসৎ উদ্দেশ্যে হয়। পাঠকের ওপর ছেড়ে দেয়া উচিত। পাঠক এক দুইবার ধরা খাবে, পরে ঠিকই বুঝে যাবে অমুক সাইট ভুয়া। পাঠক কোনটা নেবে কোনটা নেবে না, এটা তাদের হাতেই ছেড়ে দেওয়া দরকার।

প্রশ্ন : চলচ্চিত্র রিভিউয়ের জন্য সাংবাদিকতার জ্ঞান থাকার দরকার আছে?

উত্তর: না, চলচ্চিত্রের জ্ঞান থাকলেই চলবে। তারকাদের অনেক ব্যাপার থাকে। যেটাতে তারা বেশি আউটপুট পাবে ভাবে, সেটাকেই তারা গুরুত্ব দেয়। দর্শকের রিভিউয়ের ক্ষেত্রে ডকুমেন্টেশন ভ্যালু সেভাবে হয়তো থাকে না, কিন্তু সাংবাদিকদেরটায় থাকে। এ কারণটাও তারকাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। তবে আমি বরং উল্টোটা দেখেছি, ভক্তের করা রিভিউ তারকারা সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন।

প্রশ্ন: একসময় ‘চিত্রালী’,‘পূর্বাণী’,‘বিচিত্রা’ পত্রিকাগুলোর কভারস্টোরির একটা সাহিত্যমান ছিল। এখন দেখা যায়, যতটুকু দরকার ঠিক ততটুকুই নিউজ করা হচ্ছে বা প্রয়োজন ছাড়া কিছু বলা হচ্ছে না। আমরা কি চলচ্চিত্র সাংবাদিকতায় শিল্পমান হারিয়ে ফেলছি?

উত্তর : সাহিত্য রসবোধ থাকা উচিত চলচ্চিত্র ও বিনোদন সাংবাদিকের। যথাযথ সাহিত্যও কিন্তু পাঠককে বিনোদন দেয়। কিন্তু সবাই আসলে কাজটা পারেন না। অনেকে আবার মেকি সাহিত্যচর্চা করতে গিয়ে মূল প্রসঙ্গ ছাড়িয়ে যান। নদীর বর্ণনা, নায়িকার চোখ-চুলের বর্ণনা দিয়ে ভরিয়ে ফেলেন কিন্তু আসল খবর এড়িয়ে যান। আমি মনে করি, তথ্যকে সাহিত্যের সহায়তায় প্রকাশ করলে ভালো হয়। আরো কিছু বিষয় আছে। আমাদের তারকারা বলেই দেন, ‘তুমি তোমার মতো লিখে দিও’। এখন সাংবাদিক বেচারা করবেটা কী? সে নিজের মতোই লিখবে। কোনো সেন্সিবল মানুষের সঙ্গে কথা বললে যে সাহিত্যমান বের হবে একজন অতিমাত্রায় ক্যারিয়ারের প্রতি মনোযোগী কাঠখোট্টা তারকার সঙ্গে কথা বললে সেই সাহিত্য বের হবে না। আনোয়ার হোসেন, রাজ্জাক, ববিতা, গোলাম মুস্তাফা, আলমগীরদের সঙ্গে কথা বললে যা লেখা যায়, সেটা এখনকার বেশিরভাগ তারকার সঙ্গে আলাপ করেই লেখা সম্ভব হবে না। আরোপিত হয়েই লিখলে পাঠক ধরে ফেলেন। আর হ্যাঁ, বিনোদন সাংবাদিকতায় একটা অবক্ষয় চলছে। অনেকে তারকার ভক্ত সাংবাদিক হয়ে যাচ্ছেন। কেউ আসেন স্রেফ গীতিকার-চিত্রনাট্যকার হতে, ঘটনাচক্রে সাংবাদিক হয়ে যান। কারণ তিনি জানেন, সাংবাদিক হলেই শোবিজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা তাকে পাত্তা দেবে। এক অর্থে এরা আসলে সাংবাদিকতা পেশাটাকে ব্যবহার করেন। 

প্রশ্ন: ‘ব্যবচ্ছেদ’-এ লেখার কারণে কোনও ক্ষমতাবান তারকা বা ভক্তশ্রেণির কাছ থেকে হুমকি পেয়েছেন কখনো?

উত্তর: সরাসরি পাইনি। শাকিব খান এই সময়ের সবচেয়ে বড় তারকা। তার প্রশংসা যেমন করেছি, মন্দ দিকও তুলে ধরেছি। আমার সঙ্গে যখনই দেখা হতো তিনি কখনোই এসব বিষয়ে কথা বলতেন না, খুবই আন্তরিক ব্যবহার করতেন। ২০০৪ সালে মেইনস্ট্রিমের দৈনিক পত্রিকায় তার প্রথম বড় ইন্টারভিউটি আমিই করেছিলাম। তিনি কখনোই সেটা ভোলেননি। তবে অপর একজন অভিনেতার পরপর তিনটা ছবির রূঢ় ব্যবচ্ছেদ করেছিলাম। তিনি হয়তো ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। আমাকে নিয়ে একটা মিটিং করেছিলেন পরিচালক সমিতিতে, সিদ্ধান্ত হয় আমাকে এফডিসিতে ঢুকতে দেওয়া হবে না। একজন পরিচালক আমাকে মিটিংয়ে বসেই ফোন দিয়ে এসব জানালেন। যদি পরে আরেকজন পরিচালক ফোন করে জানিয়েছেন, অমুক পরিচালক [আগের পরিচালক] সেই মিটিংয়ে আপনাকে নিয়ে সবচেয়ে বাজে মন্তব্য করেছেন। যদিও মিটিংয়ের পর কিছুই হয়নি, নির্দ্বিধায় এফডিসিতে গিয়েছি। শহীদুল ইসলাম খোকন, জাকির হোসেন রাজুরা সমালোচনাটাকে ভালোভাবে নিতে পারতেন। এই গুণটা সবার মধ্যে দেখিনি। আরেকজন নায়ক-প্রযোজক চেষ্টা করেছিলেন আমাকে সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তার ছবির প্রশংসামূলক সমালোচনা করাতে। আমি নির্দয়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। এরপর তিনিও আর এগোননি। 

প্রশ্ন: তারকাদের সাইকোলজি বোঝার জন্য সাংবাদিকের কোনও টার্ম আছে?

উত্তর: না। সেন্সকে কাজে লাগাতে হয়। প্রতিটা মানুষই আলাদা। সবার মনের দরজা খোলার তরিকা এক হবে না, এটাই স্বাভাবিক। লেখার বেলায়ও তাই, জয়া আহসানের জন্য আপনি যে শব্দ বরাদ্দ রাখবেন, সে শব্দটা নিশ্চয়ই অপু বিশ্বাসের ক্ষেত্রে বেমানান ঠেকবে।

প্রশ্ন: শাকিব খানের পর কে ইন্ডাস্ট্রির বড় তারকা হবে বলে মনে করেন?

উত্তর: যে কেউই। এমনকি আপনিও। চলচ্চিত্র ডিরেক্টরস মিডিয়া। প্রযোজক-পরিচালকরা আন্তরিক হয়ে যাকে নিয়ে বাজি ধরবেন, তিনিই হবেন বড় তারকা। অভিনয় না জানা একজন মানুষও এই তরিকায় বড় তারকা বনে যেতে পারেন। তারকা আর অভিনেতার সংজ্ঞা এ কারণেই আলাদা। 

প্রশ্ন: আপনার দীর্ঘ ১৯ বছরের চলচ্চিত্র সাংবাদিকতার ক্যারিয়ারে কেমন দেখলেন ঢাকাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিটাকে। এই ইন্ডাস্ট্রির ভবিষ্যৎ কী?

উত্তর: ‘খারাপ অবস্থা’, ১৯ বছর ধরে তা-ই তো শুনে আসছি। কাগজে-কলমে কেনো এটাকে ইন্ডাস্ট্রি বলা হয়, আজও বুঝতে পারিনি। তবে এটা বুঝেছি, এখানে সিনেমা বানানো খুব সহজ, নায়ক-নায়িকা হওয়াও খুবই সোজা। একই রকমভাবে আমি বিশ্বাস করি, এখানে সিনেমা বানিয়ে ব্যবসাসফল হওয়াও সহজ। গড়পড়তা মানের চেয়ে একটুখানি বেশি চমক দিতে পারলেই দর্শক হুমড়ি খেয়ে পড়ে। পেশাদার কোনো প্রতিষ্ঠান যদি এখানে বিনিয়োগ করে, সফল হবেই। কারণ এখন যারা সিনেমা বানায় তারা কেনো বানায় নিজেরাও জানে না। না আছে কোনো পরিকল্পনা, না আছে সৃজনশীল বা শিল্প নিয়ে কোনো লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

//জেডএস//
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
ওজন কমিয়ে সাকিব পুরো ফিট, সন্তুষ্ট সহকারী কোচ
ওজন কমিয়ে সাকিব পুরো ফিট, সন্তুষ্ট সহকারী কোচ
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা