X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিষিদ্ধ বই এবং নিষিদ্ধ-বই সপ্তাহ

আদিত্য শংকর
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২১:০০আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২১:০০

পড়ার স্বাধীনতাকে অটুট রাখতে প্রতিবছর সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে বিশ্বব্যাপী নিষিদ্ধ-বই সপ্তাহ পালন করা হয়। এই ধারাবাহিকতায় এ বছর চলতি সেপ্টেম্বরের ২৭ তারিখ থেকে অক্টোবর মাসের ৩ তারিখ পর্যন্ত নিষিদ্ধ-বই সপ্তাহ পালন করা হচ্ছে। ১৯৮২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই সচেতনতামূলক কার্যক্রমটি চালু হয়। ওই বছর লাইব্রেরি-কর্মী জুডিথ ক্রুগ (১৯৬৭ সাল থেকে আমৃত্যু আমেরিকান লাইব্রেরি অ্যাসোসিয়েশন-এর ইন্টেলেকচুয়াল ফ্রিডম কমিটি’-র সভাপতি ছিলেন) এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে এই কার্যক্রমটি চালু হয়। ক্রুগ এ সম্পর্কে বলেছিলেন, নিষিদ্ধ বইগুলো আমেরিকান জনসাধারণের নজরে আনার ব্যাপারে কী করা যায় সেসব নিয়ে অ্যাসোসিয়েশন অফ আমেরিকান পাবলিশার্স তার সঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করে, আর ওই বছর বেশকিছু বই নিষিদ্ধ করা হলে এই চেষ্টাটা আরও জোরদার হয়।

এরপর ক্রুগ এই ব্যাপারটি নিয়ে আমেরিকান লাইব্রেরি অ্যাসোসিয়েশনের ‘ইন্টেলেকচুয়াল ফ্রিডম কমিটি’-র সবার সঙ্গে কথা বলেন, পরে সবার মিলিত প্রচেষ্টায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে নিষিদ্ধ-বই সপ্তাহ চালু হয়। যে সপ্তাহে নিষিদ্ধ কোনো বই পড়া, কেনা এবং সেসব নিয়ে সেমিনার করা বৈধ।

সপ্তাহব্যাপী এই কার্যক্রমকে সামনে রেখে পরিচিত কিছু নিষিদ্ধ বইয়ের তালিকা প্রকাশ করা হলো।

নিষিদ্ধ বই এবং নিষিদ্ধ-বই সপ্তাহ

১. জর্জ অরওয়েলের ‘এনিমেল ফার্ম’ : অরওয়েল এই উপন্যাসে রাশিয়ার কমিউনিজমকে নিয়ে সমালোচনা করেছেন। যার কারণে উপন্যাসটি ১৯৪৫ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ছাড়াও অন্যান্য কমিউনিস্ট দেশে নিষিদ্ধ করা হয়। বর্তমানে এটি উত্তর কোরিয়াতে নিষিদ্ধ আছে এবং ভিয়েতনামে সেন্সরড অবস্থায় প্রকাশিত হয়।

২. বরিস পাস্তেরনাকের ‘ডক্টর জিভাগো’ : রাশিয়ান বিপ্লব পরবর্তী মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর সমালোচনা করে লেখা এই বইটি সোভিয়েত ইউনিয়নে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত নিষিদ্ধ ছিলো। এমনকি বরিস পাস্তেরনাক রাশিয়ান সরকারের জোরাজুরিতে ১৯৫৮ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার প্রত্যাখান করতে বাধ্য হন।

৩. ইসাবেল এলেন্ডির ‘দ্য হাউজ অফ দ্য স্পিরিট’ : ইসাবেল এলেন্ডির জাদুবাস্তব উপন্যাস ‘দ্য হাউস অফ দ্য স্পিরিট’ চিলির এক পরিবারকে নিয়ে লেখা। তবে উপন্যাসে সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের বর্ণনা থাকার কারণে চিলির পিনোসেটের শাসন আমলে উপন্যাসটি নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো।

৪. সালমান রুশদীর ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ : ধর্ম অবমাননার কারণে সালমান রুশদীর এই বইটি বাংলাদেশ, মিশর, ভারত, ইরান, কেনিয়া, কুয়েত, লাইবেরিয়া, মালেশিয়া, পাপুয়া নিউ গিনি, পাকিস্তান, সেনেগাল, সিংগাপুর, তানজানিয়া এবং থাইল্যান্ডে এখনও নিষিদ্ধ রয়েছে।

৫. এরিস্টোফেনিসের ‘লাইসিস্ট্রাটা’ : খ্রিস্টপূর্ব ৪১১ সালে লেখা বিখ্যাত এই নাটকটিতে নাট্যকার যুদ্ধবিরোধী বাণী দিয়েছিলেন যার কারণে, ১৯৬৭ সালে গ্রীসে বইটি নিষিদ্ধ করা হয়।

৬. জে আশারের ‘থার্টিন রিজনস হোয়াই’ : কিশোর-কিশোরীদের আত্মহত্যাকে ইঙ্গিত করে লেখা এই উপন্যাসটি প্রকাশের পরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্কুল এবং লাইব্রেরিগুলোতে নিষিদ্ধ করা হয়। উপন্যাসটি নিয়ে নেটফ্লিক্সে একটি সিরিজও নির্মিত হয়েছে।

৭. খালেদ হোসেইনির ‘দ্য কাইট রানার’ : ২০০৩ সালে প্রকাশিত হওয়া আফগান বংশোদ্ভূত মার্কিন লেখক খালেদ হোসাইনির উপন্যাস ‘দ্য কাইট রানার’ বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলেছিলো। ২০০৭ সালে এই উপন্যাসটিকে অবলম্বন করে একই নামে সিনেমা মুক্তি পায়। কিন্তু ২০০৮ সালে জঙ্গীবাদ এবং ইসলাম প্রচার এবং যৌনতার বিষয়বস্তু থাকার অভিযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্কুল এবং লাইব্রেরিগুলোতে বইটি নিষিদ্ধ করা হয়।

৮. হ্যারিয়েট বিচার স্টো-এর ‘আংকেল টমস কেবিন’ : ১৮৫২ সালে প্রকাশিত হওয়া ‘আংকেল টমস কেবিন’ উপন্যাসে দাসপ্রথা-বিরোধী বাণী প্রচার করা হয়। যার কারণে গৃহযুদ্ধের সময়ে আমেরিকায় বইটি নিষিদ্ধ করা হয়।

৯. নেলসন ম্যান্ডেলার ‘দ্য স্ট্রাগল ইজ মাই লাইফ’ : দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী এই নেতার আত্মজীবনীমূলক বইটি ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকাতেই নিষিদ্ধ ছিলো।

১০. ডি. এইচ. লরেন্সের ‘লেডি চ্যাটারলি’জ লাভার’ : ১৯২৮ সালে প্রকাশিত এই বইটি আশ্লীলতার অভিযোগে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং চায়নাতে বিভিন্ন সময়ে নিষিদ্ধ করা হয়।

১১. জেমস জয়েসের ‘ইউলিসিস’ : জেমস জয়েসের ‘ইউলিসিস’ ১৯১৮ সালে পাণ্ডুলিপি হিসেবে প্রকাশিত হবার পর আমেরিকা, কানাডা, আয়ারল্যান্ড এবং ইংল্যান্ডে পোড়ানো হয়। যৌনতার বিষয়বস্তু থাকার প্রেক্ষিতে ১৯২৯ সালে ইংল্যান্ডে সরকারিভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। একই কারণে ১৯২০ সালে আমেরিকাতেও বইটি নিষিদ্ধ করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৩৩ সালে কোর্টের একটি রুল জারির মাধ্যমে আমেরিকাতে বইটির বৈধতা দেওয়া হয়।

১২. জেফ্রি চসারের ‘দ্য ক্যান্টারবেরি টেলস’ : ১৪৭৮ সালে প্রকাশিত ‘দ্য ক্যান্টারবেরি টেলস’ ১৮০০ সালের শেষ দিকে অশ্লীলতার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করা হয়।

//জেডএস//
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!