নিঃসঙ্গতা একটা সরু গলি
নিঃসঙ্গতা নিয়ে তুমি কী ভাবছ আজকাল? কোলকাতায়
এসে দেখো একটা লোক
নিজের মেদ ঝরিয়েও একাকী বোধ করছে
এমন যে মনে হয় সব সম্পর্কের শুরুই ছিল গোবিন্দপুরের মাধ্যাকর্ষণে
এই যে সরু গলি থেকে বেরিয়ে এসেই মনে পড়ছে
তুমি নেই। একটু আগেই অথচ
স্তনের শরম, খাঁটি
হৃদয় আঁচের ভার
ছাঁকা বাতাসের কাছে—
মোটকথা, ইত্যাদি এমন কিছুর মতো ঘিরে ছিলে
এখন স্বরবর্ণের দেশে বিকেল হচ্ছে
বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে মানুষের ক্লান্ত শিস শুনে মনে হয়
শব্দের খেত-খামার পেরিয়ে চলেছি
কিন্তু আমার থেকে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল
যে সারস উড়ে যাচ্ছে তাকে যদি লাটাই গুটিয়ে নেওয়া যেত
যে ট্রেন হাতনাড়ায়, কেবলই হারায় তা হাততালি ভেঙ্গে আজ ফিরে আসছে
একটি গোলাকার শৈশবকাল গড়িয়ে যাচ্ছে
এই সবকিছুর মধ্যে যেটুকু বাস্তব
শুধু সেটুকুই ঘটে
অসীমের কথা
জীবন এতটাই মৃদু যে, বৃত্তান্ত যতই অসহ হোক, মাত্র চোখ ভিজে যায়—
সন্ধের ঢালু আলো আমায় একদিন পাখি করে দেবে—আমি বলেছিলাম
তারপর খাঁচার ভিতর আপনি অনুভব করলেন এক টুকরো আকাশ হয়ে আছে—উড়ান চটে যাওয়া।
এখন তার শব্দ হচ্ছে
কে যেন একটা বল গড়িয়ে দিয়ে দেখছে এক অক্ষম মানুষকে মাধ্যাকর্ষণ কতটা স্বাধীন দেয়,
অসীমের মতো চলে যেতে।
এখন তার শব্দ হচ্ছে
যেন ছিলাম এক বিচূর্ণ খনিজের মতো তোমার প্রিয়—আয় হীরের টুকরো আয়—বলে
আমাকে অনবরত নিরাকার বেঁধে ফেলা হয়
মনে হয় ভাসতে গেলেও আমি আটকা পড়বো বেতারে
এক স্থাবর অভিমান—শ্যাওলা দেওয়ালে একাকিত্বের মতো ধরে যাচ্ছে, চারিদিকে
আমি কতদূর থেকে নিজের শেষাংশের কাছে এসেছি আজ। এত সহজে চলে যাবো?
সময় খুব কম মানে ত্রিকালও কমে আসছে, নিশ্চয়ই।
সারাদিন থেকে একটি কবিতায় শব্দ হচ্ছে
অসহ্য মনে পড়ছে তা, সারাদিন
এক বৃদ্ধের ভিতর
মৃদু সুগন্ধ খালি মনে পড়ায় সব অক্ষর শুধু শূন্যতার আবাহন
এক বৃদ্ধের ভিতরে
ঝুল-টুল সরিয়ে দেখি মানুষকে গভীরভাবে ভালোবাসার মধ্যে
একটি বিচ্ছিন্নতা থাকলে—সূর্যোদয়
ভ্রু তুলে প্রকৃতির কাছে অপেক্ষা মাত্র—তুমি আসলে নেই ঈশ্বর—
কিন্তু পুজোর অভ্যেস কত প্রত্যক্ষ সে তুলনায়
জীবন নুয়ে পড়ে
আমি দেখি কীভাবে মুখের পেশি ফস্কে দয়া ফুটে উঠছে মুখে
পুরো এলাকা পীচ ঢেলে মসৃণ করে দিলে পথ চলার ব্যথা কমে যাবে?
একটা ধীর গতির যান—তার ভিতরে বসে কেউ প্রার্থনা করে
ঘুরে যাও—চাকা ঘুরে যাও
অনেকদিন হল
যেন পলাতক—আশ্রয় নিতে ভিতরে ঢুকে দেখছি অন্ধকারে মিশে যেতে কে যেন ঝিঁঝিঁর ডাকের ছদ্মবেশ নিচ্ছে
আমার মনে হল মৃত্যু এলে হৃদয় হাট করে খুলে যায়—ওই দুয়ারটুকু খুলে যাওয়ার মতো আর কিছু থাকতে পারে
না
একটা পুরোনো গান
কোথাও ফিরবার নেই
পৃথিবীর আকাশে পৃথিবীর উদয় দেখা যাচ্ছে
সামনে ঘষা কাচ এলে মনে হয়
তুমি কত আবছাভাবে বেঁচে থাকো
গয়নার আলো-মলিন ইতিহাস তোমার গায়ে এককালে ছিলো
ধোঁওয়া উঠছে এখন,
ঝুপসি বাড়ি ঘর থেকে
বেঁচে থাকার ঠাণ্ডা ঘ্রাণ তুমি কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?
সব মুছে দেবো এবার
আমাদের ভাঙা চারপাইয়ে কার মিলনের কঙ্কাল পড়ে আছে?
আকাশ খুঁড়তে খুঁড়তে একসময় আলোহীনতার জল—
তার দেখা পেলাম
শরীরে নক্ষত্র লেপ্টে কোথায় চললে?—
একটা পুরোনো গান তোমায় কাছে ডাকছিল
রঙিন পাখির ডাক
সদ্য বাড়ি হারানো মানুষের বুকের মধ্যে হারানো বাড়িটা থেকে গিয়েছে
বাড়ি অব্দি সে পথ মায়াময় কর্দমাক্ত
প্রবল অন্ধকারের মধ্যে দূর থেকে জেগে আছে এক বিন্দু বই পড়া আলো
আমার মনে হল একটু পরে এখানেই জন্মভূমি শুরু হবে
মনে হলো এ আমার মায়ের ঝিঁঝিঁ-ডাকা সন্ধেবেলা
হল এক প্রহর দূরেই ভোর। কেউ লম্বা ঝুঁটির শব্দ করে সূর্য ডেকে তোলার চেষ্টা করবে
এ সময় চোখ বুজলে একটা সাদা অন্ধকার ঘিরে ধরে
আমি একটা বোকা হরবোলাকে চিনতাম যে রঙিন পাখির ডাক তুলতে পারেনি কোনওদিন
নিশ্চয়ই বড় পুরোনো স্মৃতির ওপর আগাছা ছেয়ে গিয়েছে
অজস্র নীল নেতিয়ে পড়া ফুল
আমার মনে হল কোথাও এক শান্ত সম্মতি আছে, নইলে এতদিন থাকাই হত না।