ঝলক
সঞ্চিত নৈরাশ্যের মাঝে তুমি এলে বিদেশি ভ্রমর
নয়নের নিকট হতে আমাকে দেখাবে বলে
এই ফুল কতটা লোকজ, কতটা গ্রামীণ!
আমি মাফলারে দীর্ঘায়িত শীত চাপা দিয়ে
সুন্দরের মর্মরিত অধিপাঠ করবো বলে;
তোমাকে বলেছি—ফুল নয়,
আমি ফলের গীতিময়তা ভালোবাসি।
কখনও অতিরঞ্জিত কখনও বা অতিমাত্রিক।
জানি, তবু তুমি ফুলের পক্ষে সাক্ষ্য দেবে।
বলিষ্ঠ ও স্বতন্ত্র পাপড়ির প্রত্যাশিত দুঃখ, শোক
জরা ও যন্ত্রণার আবেদন বয়ে আনবে।
আমার চোখ উঠবে ভিজে।
বাতাস বইবে তখনই হঠাৎ বেহুদা বসন্তের
ঝরে পড়বে পালক। স্থিরচিত্রে গজিয়ে উঠবে
দুরভিসন্ধির বল্লম হাতে জলে-স্থলে অসংখ্য প্রজাপতি
কতিপয় কীট ও পরাশ্রয়ী দুরাচার।
ফলে ছাতিম ফুলে মিশে যাবে যৌনতার ঘ্রাণ
এই নিয়ে শিশির আর সন্তানে চলবে কর্মহীন এক ক্যারিক্যাচাল।
তাদের ভেদ আর ভাষণে নরক হবে গুলজার।
আজানের পর আজান চলবে, সুতরাং শান্ত হলেও
বাহাস চলবে দেদারছে চলন্তকাল।
আমার বিবিধ কালের, সালের জমানো বিস্ময়গুলো
বিকিরণে বিস্তারিত হবে,
ভেঙে যাবে ব্যাঞ্জনবর্ণের হাট।
গ্যাঁট খুলে গেলে তসবির দানাগুলো যেভাবে ছিটকে পড়ে
ব্যক্তিগত নির্মিত শৈলীর নীতি ও রীতির শীলিত স্বরূপ—
সেইভাবে অকারণে ফুল ও ফলের প্রভূত সংগ্রামে
অন্ধের আলেয়া নিয়ে আমাকে দেখতে হবে;
কেবলই পোড়া পোড়া চিত্রদাহ।
ফুল বলবে আমাকে ভাঙো। ফল বলবে আমাকে জোড়ো।
আমি কি আর আস্ত হবো না?
কুড়িয়ে পাওয়া যুদ্ধাহত কিছু বৈকালিক বাতাস
যদি আমার পক্ষে থাকে, শোনো—
স্বোপার্জিত অভিজ্ঞতায় শ্যাওলা বা পারদের ন্যায়
ফের আমি একত্রিত হবো।
ভ্রমর, ওগো ভ্রান্তিবিলাসী ভ্রমর—স্বরবর্ণের দেশে গিয়ে
তুমি বরং ফুল ফোটানোর কৌশলটুকু খোলাসা করে দিয়ে এসো
তাতে চুমুর চক্রান্তে বাধা পড়ুক
সে দেশের প্রতিটি বালিকা ও বালক।
মিলনাকাঙ্ক্ষায় তাদের হাতে দিও, যদি পারো—
পাপড়ি ও পরাগের ঝলক।
বৈশাখী পাড়া
হাত থেকে পড়ে বৈশাখী ফুল
ভেসে নিলো ঠাঁই নদীর দুকূল
এপাড়ে তোমার শত অশ্বশালা
ওপাড়ে গাঁথে মেয়ে পুষ্পমালা
আমি তো নৌকাতে বুদ্ধিবিহীন
মাঝির মাত্রাতে সীমিত স্বাধীন
ধরেছি এ হাল দেখে ছায়াপথ
হাসে মিটিমিটি যে তারা অসৎ
কানে কানে বলে বিবাহ বাতিল
উজানের কথা ঢালে উড়ন্ত চিল
পরেছে মেহেদী হাতের আঙুল
ভাবনায় ভেসে যায় বৈশাখী ফুল
বৃষ্টিতে ভিজে, কেঁদে হলো সারা
অচেনা আলোয় বৈশাখী পাড়া
ঘিরে থাকে গান কনের দু’পাশ
বাজিতে হেরে হয় একান্ন তাস
ঝড়ের ঝাপটাতে ভাঙে ঘাসফুল
আমি বর ডুবেছি বেদনা ব্যাকুল
ক্ষণিক তামাশা চলে দৃশ্য কেটে
দুঃখে দরদ হাসে বক্ষটা ফেটে
তাদের কী দোষ যারা দিশেহারা
ঘুরে মরে বিবাহ বৈশাখী পাড়া
তদন্ত
বনের গভীরে থাকে ভয়। সুনিশ্চিত।
গন্ধে ভাসে মাংসমাখানো মৃৎ
এখানে লাল কালিতে লেখা আছে
বড় বড় অক্ষরে—‘বিপদ আসন্ন’।
রংচটা দিনের বিষণ্ন আলোয় আমি তো নগণ্য।
মোটা মোটা শতাব্দী জুড়ে তোমাকে ধাওয়া করছে
আঁদ্রে জিদের অবৈধ পত্রাবলী।
মোনালিসার ফেডআউট গাম্ভীর্য।
বৈধ নাবিকের হারিয়ে যাওয়া অবৈধ লগবুক।
আমি দ্য ভিঞ্চির আদেশে
ফ্রয়েডের ফলস প্রেতাত্মায় ভর করে
ধরতে এসেছি তোমার যাবতীয় ধনতান্ত্রিক অপরাধ।
চাঁদ আছে চারিপাশে। আলো তার অলৌকিক।
জোনাকির জালিয়াতি ভেদ করে
ফুটে থাকা অন্ধকারে ফিরে এসে দেখি—
তাঁবু আমার পরিত্যক্ত, ভিতরে তার অনিত্য আলামত
দূরে, দূর্গ ঘেঁসে ছুটে যাচ্ছো তুমি
যেন সিঁথির মতো সরু পথ।
কাপঝাঁপ
জানো তো নিশ্চয়, সংস্কৃত দর্শন থেকে এসেছে দেখা।
তো, সে দেখছে আমাদের, আমরা দেখছি তাকে।
এই দেখা প্রতিটি বিন্দু-বিসর্গ ভেদ করে,
যোগীর যাতনাকে যোগ করে।
তারপরও ধমক আসে, বর্ধিত স্বরে প্রশ্ন আসে—
এই তোমরা কে হে!
এই শুনে, আমি করবো আমতা আমতা
তুমি জ্বলবে তেলে, মিথ্যের মতো বলবে—আমরা মানুষ!
বেগুন হাতে আশকারা পাওয়া পিচ্চি সেই এলিয়েন
এই শুনে, হামের মতো ঘন-ঘন হাসবে মিটিমিটি।
বলবে—অজানা উজবুক, জানো না বুধবারে ঘাটে বসতে নেই?
যতসব হেলেঞ্চা শাক! নন্দন-খাওয়া নচ্ছার
এক্কেবারে কাপঝাঁপ! হেমায়েতপুর কোথাকার!
বাউলামী
বাউল তুমি ঘুমিয়ে পড়ো চাঁদ উঠবে সেই আকাশে
উড়ো মেঘের হোক প্রতিবাদ কণ্ঠ দাঁড়াও আমার পাশে
এক হৃদয়ে হাজার ধ্বনি ফুল বললেই ফলের আভা
ডুবো পাহাড় উঠুক জেগে অন্তরে থাক তোমার কাবা।
সুরের সাথে বাজুক সাধু হাজার হাতের লক্ষ তালি
ইচ্ছে করেই পথ হারাবো সামনে পথিক শূন্য গলি
গানের টানে হও উতলা গোলাপ রাখো আসন ঘিরে
এই পাখিটা সেই পাখিটা গাইতে গিয়েই মরলো তিরে।
চিবুকটা হোক চকচকে আলো পড়ুক ল্যাম্পপোস্টের
মধ্যবিত্ত ভাসুক ভাবে কথার জ্বালায় কাঁদলো তো ঢের!
গৌণ এলে মৌন থাকো একতারাটাই পথ দেখাবে
বায়না করে আয়না ধরে আমার মতো কে আর কবে?
যাই চলে যাই উল্টো স্রোতে জ্বালাও আগুন নিরাসক্ত
হেলান দিয়ে বিলাপ শোনে গুচ্ছ গুচ্ছ সুরভক্ত
চোখ বলছে দুয়ার খোলো মন বলছে বন্ধ আঁখি
বাউল করে বাউলামী আর বিস্মিত হয় বাংলা পাখি।