X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১
জন্মদিনে

মাহবুব কবিরের বাছাই কবিতা

মাহবুব কবির
০২ জুন ২০২২, ১২:৫৭আপডেট : ০২ জুন ২০২২, ১২:৫৭

সন্ধ্যাকুড়া

কুয়াশায় হিমে সন্ধ্যাকুড়া টিলা চুপচাপ কাঁপে।
শিকড় জড়িয়ে ধরে গজারিতলায় বসে থাকি—
অবশেষে ঠিলা-ভরা গরম চোলাই হাতে হাতে…।

আদিবাসী হদি পরিবারটির সবকিছু আজ ইসলাম।
অনেক অনেক বিধিনিষেধ তাদের বাস্তবতায়—
গজারির বল্কলে পেরেক মারা মিশনের চোখ দেখলাম।
তবু ওরা একান্ত গোপনে ঐতিহ্যের ভাত পচায়,
ধরা খেলে রিলিফের সুবিধাদি বন্ধ হয়ে যাবে—
সাত ভূতে ঘরদোর তছনছ করবে।

রাত গাঢ় হলে টিলা থেকে হামাগুড়ি দিয়ে নামি—
পাহাড়ে এত শীত,
বাতাসে এত বিষ,
শীতের দেবতা চায় আরও ভোগ গান মাতলামি!

মদন সরকার

বাংলার শেষ কবিয়াল মদন সরকার কুঁজো হতে হতে
চাকা হয়ে গেছেন।
এখন তিনি কারো মুখ দেখতে পান না—
শুধু পা দেখেন আর মাটি দেখেন,
মাটিকে দিগন্ত ভেবে ভ্রম করেন।
ডাক পেলে এ বয়সেও মাইল মাইল
গড়িয়ে গিয়ে মঞ্চে ওঠেন, আসর মাতান।

এখন বাংলা স্টেশনে রেললাইনের পাশে
ঠাটা রোদের মধ্যে হাতুড়ি পেটাচ্ছেন মদন সরকার।
তার অসমর্থ হাতে পৃথিবীর সর্বকনিষ্ঠ হাতুড়ি।
তার কাছে নিচু এলাকার নিচু ঘরদোরের মানুষজন আসে।
জংধরা প্রায়-বাতিল কুপিবাতি, হারিকেন, মগ,
লোটার অসুখ সারাতে আসে তারা।
মদন সরকার হারিকেনে পানি ভরে
খালি চোখেই নিশ্চিত হচ্ছেন
কোথায় ছিদ্র, ফুটো।
ছিদ্রের ওপর সিসা বসিয়ে টুকটুক করে
হাতুড়ি পেটাচ্ছেন তিনি,
নিচু মানুষের নিচু ঘরদোরের অন্ধতা সারাচ্ছেন।

হিজলজন্ম

সমুদ্রের সবচেয়ে ছোট মেয়ে এই হাওর। আষাঢ়ে ভাসা জল আর হু হু
ভাটি হাওয়ায় বুক অবধি ডু্বে আছি। শরীরজুড়ে প্রাগৈতিহাসিক গন্ধ।
গুপ্তস্রোত রহস্য করে বলে, জলের পাহারাদার।

আসে অনেকেই। জলপোকা, ভাটিয়ালি পাখি আর সর্পবন্ধুদের থেকে
ক্রয় করি জলদ অভিজ্ঞান।

মাইল মাইল দূরে দ্বীপের মতো তোমাদের গ্রাম। যখন মেঘের পায়ে
ঘুঙুর, বাতাসের পিঠে ভেঙে পড়ে বাতাসের পাহাড়। আতঙ্কিত
তোমাদের নাও-ট্রলার ঘাড় কাত করে আকাশের দিকে তাকায়, ডুবে
মরার ভয়ে দ্রুত ডাঙার দিকে ছোটে।
আমার স্বপ্ন মেঘ,
মেঘ আমার নারী।
জলমগ্ন ছ’মাস। তারপর ধীরে ধীরে বড় হয় যত স্বপ্ন-মেধা-শ্রম, সব
আমার সবুজ সন্তান।

হত্যামুখর দিন

উল্লাসে ফেটে পড়া ছোট ছোট ছুরি
আর চাকুদের পিতা রক্তাপ্লুত নেশায় চুর,
ঝিম মেরে বসে আছে কাছেই,
তার চোখ হিলহিলে তৃপ্তিতে ঢুলুঢুলু, আঁকাবাঁকা।

এদিকে, ছুরিদা ও চাকুদা চামড়া ছাড়াতে ছাড়াতে
কী দ্রুত ছড়িয়ে দিচ্ছে
ফরফর ধ্বনি।
এইভাবে দিকে দিকে ছুরি আর চাকুদের
উৎসব আজ। আজ ঈদ।
হত্যামুখর দিন।
আহা,
নতুন পোশাকে আনন্দে মেতেছে শিশুরা।

পৃথিবী

বাহ্! পৃথিবীটা দেখছি একেবারে নবীনা
এর নদীতে ডুব দেওয়া ভালো।
এরকম সচ্ছল নদীর ছলচ্ছলে
মনপবনের নাও ভাসিয়ে দেওয়া মন্দ নয়।
বাইসন ম্যামথের পেছনে ছুটতে ছুটতে
একদিন এরকম একটি পৃথিবীর সঙ্গে
দেখা হয়েছিল,
তার কথা মনে পড়ে।

আমি প্রতিদিন নতুন নতুন পৃথিবীর
সাক্ষাৎ পেতে ভালোবাসি।
আমি জানি অতীত মানে পুরনো নয়;
সে প্রতিদিন অষ্টাদশী রমণী, প্রতিদিন
বিবাহবার্ষিকী, প্রতিদিন দাঁত ব্রাশ করা।

পৃথিবী রজঃস্বলা চিরকাল,
আমি এর সঙ্গে খেলা করব এখন।

বেসরকারি কবিতা

বিয়ে করেছি বাগেরহাটে
সুন্দরবনের কাছে শরণখোলায়।
শাশুড়ি পাতে হরিণের মাংস তুলে দিয়ে বলেন—
বাঘের মতো খাও, বাঘ হও।

জেলে

আমার মায়ের নাম গ্রাম।
পিতা নাকি দূরের শহর!
নদী আর খাল দুটি বোন,
হাওর-বাওড় সহোদর।

আমি ভালবাসি সমুদ্র-দুহিতারে—
দিগন্তের হাওয়া এসে শোনায় সুদূরতা,
মেঘের ঠিকানা, ঝড়ের বার্তাদি।

পিতা ভুলে গেছে আমাদের—
চুপি-চুপি কাঁদে মা আমার।
আমি তো ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জেলে,
ফেঁসে গেছি জলচক্রে, জালে—
ফেঁসে গেছি রক্ত-মাংসের কঙ্কালে।

হে জল হে প্রাচীন ধারা—
ক্ষমো এই জন্ম এই মৃত্যু,
তোমার কাছেই সত্য আমার
মৎস্য ধ্রুবতারা।

নগেন

উত্তরপাড়ার নগেন দাঁড়িয়ে এক পা তুলে হিসু করে।

ফাঁটা বাঁশের চিপায় পড়েছিল সে।
এক গৃহবধূকে রেপ করতে গিয়ে যত বিপত্তি।
গণধোলাইয়ে অণ্ডকোষে লাথি খেয়ে
একখান বিচি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল তার।
অনেক কষ্ট ভোগ করতে হয়েছে তাকে।
বহু দিন বহু মাস জলবিয়োগে— স্ত্রী সংসর্গে
অশেষ যন্ত্রণা সয়েছে সে।

শেষে বিদেশ গিয়ে সস্তায় কুত্তার বিচি প্রতিস্থাপনে
ভালো হলো আমাদের নগেন।
সেই থেকে দাঁড়িয়ে এক পা তুলে হিসু করে সে।

নদীতীরে বসে থাকি

মা সারাক্ষণ ভেবেছে—
নদীতে নিখোঁজ আমার বাবা ও ছোট বোনটি ফিরে আসবে,
থালায় ভাত বেড়ে বসে থেকেছে—
তারা ফিরে আসবে।

মা অন্ধ হয়ে যাওয়ার পর—
লাঠি ঠুকে ঠুকে নদীতীরে গিয়ে বসে থেকেছে—
তারা ফিরে আসবে।

মা চলে যাওয়ার পর—
একদিন তার কবরও নদীতে চলে যায়।
আজ আমি নদীতীরে বসে থাকি—
নদী ডাকে, আয়… আয়… আয়…।

সন্তানের পাশে

বাইরে পরিতৃপ্ত নারী ঘরে ফিরে স্বামীর সঙ্গে
সঙ্গম করতে চাচ্ছে না।
স্ত্রীর অনিচ্ছা সত্ত্বেও সম্ভোগ ধর্ষণের পর্যায়ে পড়ে কি না,
প্রকৃতিবিরুদ্ধ কি না—
তা ভাবতে ভাবতে লোকটি
সন্তানের পাশে ঘুমিয়ে পড়েছে।

বাইরে পরিতৃপ্ত পুরুষ ঘরে ফিরে স্ত্রীর সঙ্গে
সঙ্গম করতে চাচ্ছে না।

/জেডএস/
সম্পর্কিত
প্রিয় দশ
দোআঁশে স্বভাব জানি
প্রিয় দশ
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা