X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

প্রিয় দশ

দিপন দেবনাথ
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:১৪আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:৫৬

পিপাসা রাত

এমন পিপাসা রাতে, এমন অদ্ভুতরকম
না জানা অনুভূতির অনুপুঙ্খ ক্ষণে
নিস্তব্ধতা পানে বাঁচে
কিছু নিশাচর

কিছু পরমুখো
কড়া নাড়ে দরজায়
ফেরি করে পরাশ্রয়ী ভাবালুতা
উষ্ণাশিস অনুষঙ্গ পরিযায়ী ভালোবাসা

এমন অচেনা রাত দুর্বার সীমা ছাড়িয়ে
গোলার্ধ মেরুপথ পরিভ্রমণ শেষে
পিপাসা বাঁচিয়ে রাখে
খুব অনিমিখে
খুব—


ছককাটা জানালা

পায়ের শব্দে কখনো ঘুম ভেঙে গেলে
জেনে নিও হাঁটছি পুরনো বারান্দায়

চোখ মেলো না যেন
অন্ধ চোখেই বরং বয়ে যেও
যতদূর যাওয়া যায়। খুঁজতে যেও না
সেসকল পিছুটান, দুরন্ত সময়ের অবগাহন

জানি না, যত্নে আঁকা চুম্বনগুলো মুছে গেছে কি না
বায়নাগুলো কেমন আছে গহিনে!
কেমন আছে ফিরে তাকানোর গল্পগুলো
কেমন করে গুটিয়ে নিয়েছে ইচ্ছেডানার রং

সবকটা জীবন বোধহয় ঠাঁই নিয়েছে ঠিকঠাক
ছককাটা জানালায়


অস্ফুটকাল

চোখ তুলতেই মাথার ওপর টুকরো আকাশ
চিন্তার ফাঁক গলে জড়িয়ে পড়ল আলো
অগোছাল মাধবীলতার খোলা চুল
ঝরে পড়ল অস্ফুটকালের বৃষ্টি
টুপটাপ শব্দে পূর্ণেন্দু পত্রীর আলাপ
কালো শ্রাবণ মেঘের গন্ধে দারুণ ঘনঘটা
ভেসে যাচ্ছে রাত, ভেসে যাচ্ছে বিশ্বচরাচর

আকাশের কোণে গাঙচিলটাও শুনছে
রঙিন বেণির গান, কিংবা তাতা থৈ থৈ
মিলিয়ে নিচ্ছে তাল, তবুও
হারিয়ে ফেলছে দিশা
হারিয়ে যাচ্ছে প্রায় সবটাই


মুখোশ গ্রাফিতি

শরীরের বাইরে যে জীবন
অবসর খোঁজে রোজ—আমাকে ভাবায়
ঝিঁঝিদের মতো সন্ধ্যা নামার অপেক্ষায়
আঁধারের আশ্রয়ে জাগিয়ে রাখে নিউরন
ক্রমশ গুটিয়ে নিতে নিতে পলি দীর্ঘ আস্তরণ
দেখি দূর আকাশ প্রতিচ্ছবি আঁকে
আয়নার মতো দাঁড় করিয়ে দেয় মুখোমুখি
চ্যালেঞ্জ করে যাপিত জীবন পন্থা
মুখ লুকিয়ে নিই অপরিপক্ক দৃষ্টি মেখে
চোখ রাখতে ভয় সেসব অবাধ্য পরিণয়

জাগ্রত কিছু দ্বিধা ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়ে
পদচিহ্ন আঁকে প্রতিটি সময়ের স্ফটিকে
অভিযোজনের দায় কেবল যাপিত জীবনের
দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হয় সেই প্রতিচ্ছবি
ছুঁয়ে যায় তোমার মহানগরের দেয়াল
দখলে নিয়েছে রব উঠেছে এই তো ক'দিন আগে
তবু তার ইতিহাস মুখোশ গ্রাফিতি আঁকে
মুখোশ আড়ালে জীবন আমাকে ভাবায়


দৃশ্যকাব্য

জীবনের গল্প লিখে ছোট্ট দুটি হাত
এলোমেলো চুল আর মায়াজল চোখ
না বলা অভিমান খুঁজে ভাষাহীন অনুযোগ
উদ্বেলিত হাসিতে ভাসে নাগরিক জীবন
ভেসে যায় স্মৃতির বাসর কঠোর আবদ্ধ দিন
জীবনের টুকরো জীবন হাসে-খেলে আঙিনায়
চারদিকে শুনি আধো আধো শব্দ আর
এলভিস প্রিস্টলি—
Home is where the heart is
And my heart is anywhere you are....

গায়ের ওম পালকের উত্তাপ ছড়ায় আলো
বানভাসি হতে চায় বিবাগী এ মন
দুর্বিপাকের গ্রন্থমালা হারিয়ে যায় অনায়াসে
বক্ষদেশে হেঁটে যায় তার আগামীর দিনলিপি
আঙুলের ছোঁয়া মুছে দেয় জন্মের পরিতাপ
এমন দিনটি খোয়া গেছে ইন্দ্রের দিনপঞ্জি থেকে
যে'দিন শুধু গুনগুন করে জীবনের কথা বলে
বাঁধভাঙা হাসি উচ্ছ্বাস অনুক্ত ভাবাবেগ—আর
এলভিস প্রিস্টলি—
Anywhere you are is Home....
Home...Home... Home....


মসূরী

পাহাড়ের ভাঁজে পাহাড়, মাথা তুলে আকাশ
মেঘের আদরে ভাসে সবুজনীলা চাদর
চায়ের ধোঁয়ায় মশগুল ফরচুন বারান্দা
ক্লান্তি—ক্লান্ত মন খুঁজে পায় গহিন আশ্রয়
বিদেশিনী ভালোবাসা গুটি গুটি পায়
নেমে আসে অবশেষে রোজ আয়োজন
অঝরে প্রলেপে জড়ায় আবেশ বৃষ্টি
চুপি চুপি কুয়াশায় ডানা গুটিয়ে আলো
আগামী ভোরের আশায় নেয় শ্রান্তির ঘুম

মিটমিট জ্বলে ওঠে পাহাড়কন্যা দেরাদুন
মসুরির আঁচল ছায়ায় জেগে থাকে রাত আর
ক'জন স্বপ্নবিলাসী দূর পরিব্রাজক
গ্যারিসন জানালা যেন স্বপ্ন দুয়ার, মেলে ধরে
ক্লান্তির শত সাতকাহন, রুপালি গিটার গায়
অপ্রতীম সুর, লিখে রাখে সে রাতের অব্যক্ত সংলাপ
মল রোড জোছনা আলোক সম্ভারে বয়ে যেতে যেতে
জর্জ এভারেস্ট যেন দুহাত মেলে বলে
‘যাব সাম ঢালে আনা... যাব দীপ জ্বালে আনা...’


কিছু প্রেম, কিছু অন্য

৪৪

বিচ্ছিন্ন হস্তাক্ষরে কার আছে স্বাক্ষর
কে কবে লিখল অশ্রুসিক্ত শৃঙ্গ, দেখিনি কোনো—
কান পাতিনি গুঞ্জনে ভুলপথে কার নাম
কার আঁচল ডুবল কবে আধবুক জলে
রোদ্দুর যেতে যেতে খুন, বুকে কার উদয়াস্ত
নিভেছে আঙুল, কার ঘুম জেগেছে বেহাগ বেলায়
মাখিনি সেসব—রাখিনি কিছুই

প্রেক্ষাপট নেমেছে যখন পর্দার গায়ে
ছবিই ভাসুক না-হয় গঙ্গার জলে, সারস
উত্তাপ মাখুক নিশীথের নায়ে, বিষণ্ণ
রিক্ত সুর ডুবে যাক তীরে পঙক্তির কোলে

৪০
আমি অসীম হতে চেয়েছিলাম
'অ' আমাকে অবরুদ্ধ করেছে বারবার
সমস্ত পিছুটান, মায়াজাল, বন্ধন ছিঁড়ে
নির্বাণ চেয়েছিলাম আমি
কিন্তু কীভাবে যেন সীমাবদ্ধতার জঞ্জাল
আমাকে বেঁধেছে বারংবার
অস্বীকার করার স্পর্ধা নেই যে
আমি জানিনি ঠিক কীভাবে অসীম হতে হয়


অন্তঃপুর

ভাঙা নদী বালিয়াড়ি—দীর্ঘ এক পথ
পথের প্রান্তে বসন্ত—তোমার ঠিকানা  
হাঁটছি এ পথ কোনো প্রস্তরযুগ থেকে
নাভিকমল বিস্তৃত কোনো পদতল থেকে
অথচ দেখো! মাপছি আজও পথের রেখা
বিম্বিত আবছায়া আলো
কিনারায় ঘুরপাক দৃষ্টির বলীরেখা

পথের ধারে বাণী অর্চনা
আমিও লিখেছি তাই—চন্দন পাথরের গায়
তোমায় অর্ঘ্য দিয়ে রোজ, তবুও দুঃসহ
আকাশ নেমেছে প্রতিযাত্রায়, মুছে দিতে
আঙুল নিশানা—তোমার সুগন্ধ স্পর্শ রেখায়

পথের প্রান্ত চেয়ে তবুও
হেঁটেছি সুমেরু দিগন্ত সীমানায়
অবিচল সকল নির্লোভ জোছনায়
হাঁটতে হাঁটতে পেরিয়ে এসেছি বহু খ্রিস্ট অব্দ
একটি ফুল কুড়াব বলে তোমার বারান্দায়—


মেট্রোর প্রেম

মেট্রোর দরজায় দাঁড়িয়ে মেয়েটি
চোখ যেন সাগরের ঢেউ খুলে যায়
ছেলেটির ঘড়ি দুলছে টিউশন টেবিলটায়
ধীরে চলো... ধীরে চলো বলছে মেট্রো লাইন
থামছে না যেন অপেক্ষার সহস্র প্রহর
মেয়েটির চোখ, স্টেশন সিঁড়ি, বারান্দায়

ক্যালেন্ডারের পাতা, মাসের শেষ দিন
আজকে সকল প্রেমিক ঘোচাবে সব ঋণ
প্রেমিকার চুড়ি, ফুচকার দাম
ফুটপাত স্যান্ডেলে নেই দরদাম—
পৃথিবীর সমস্ত বিস্ময়
কখন বাজবে ছয়, থামবে ঘড়ি
অপেক্ষায় দুইখানে দুই জোড়া চোখ
মেট্রোর স্টেশনে আজ খুব তাড়াতাড়ি...

/জেড-এস/
সম্পর্কিত
প্রিয় দশ
দোআঁশে স্বভাব জানি
প্রিয় দশ
সর্বশেষ খবর
‘বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠালে প্রণোদনা ৩ শতাংশ বিবেচনা করা হবে’
‘বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠালে প্রণোদনা ৩ শতাংশ বিবেচনা করা হবে’
হেলিকপ্টারের সিটে বসতে গিয়ে পড়ে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
হেলিকপ্টারের সিটে বসতে গিয়ে পড়ে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
রাজধানীর ১০ থানায় কিশোর অপরাধ বেশি: ডিএমপি কমিশনার
রাজধানীর ১০ থানায় কিশোর অপরাধ বেশি: ডিএমপি কমিশনার
বলিউডে কোণঠাসা প্রিয়াঙ্কা!
বলিউডে কোণঠাসা প্রিয়াঙ্কা!
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম