X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

দারিও ফো ও তার বাঘের কেচ্ছা

মোজাম্মেল হোসেন
২৯ মার্চ ২০২১, ১১:১৭আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২১, ১১:১৭

নাট্যকার দারিও ফো শতবর্ষে পদার্পণ করতে যাচ্ছেন। তিনি জন্মেছেন ইতালির সান জানোতে, ১৯২৬ সালের সালের ২৪ মার্চ। ফো একাধারে কমোডিয়ান, নাট্যপরিচালক, মঞ্চ-নির্দেশক, গায়ক, গীতিকার, চিত্রশিল্পী, রাজনৈতিক প্রচারক—নানা গুণে গুণান্বিত। আশিটিরও অধিক নাকট লিখেছেন। রাজনীতিকে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করা তার স্বাভাবিক বিষয়। তিনি আধুনিক নাটক থেকে হারিয়ে যেতে বসা ব্যঙ্গাত্মক বিষয়কে ‘সিরিয়াস’ দর্শক-পাঠকের সামনে এনেছেন। ১৯৯৭ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। দারিও ফো গল্প বলার ক্ষমতা পেয়েছিলেন তার নানার কাছ থেকে এবং ইতালির লোম্বার্ডি এলাকার জেলেদের কাছ থেকে।

তার উল্লেখযোগ্য কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘অ্যাক্সিডেন্টাল ডেথ অব অ্যান অ্যানার্কিস্ট’ ‘মিস্টারো বুফো’ এবং ‘ক্যান্ট পে ওন্ট পে’। অ্যানার্কিস্টের টেলিভিশন সংস্করণ ১৯৭৭ সালে প্রচারিত হবার পর এই নাটকটিকে গির্জা ঘোষণা করে জঘন্য ঈশ্বরবিরোধী নাটক হিসেবে। শুধু তাই নয়, এই নাটকে পুলিশকে ‘ধোয়া তুলসিপাতা’ হিসেবে উপস্থাপন না করায় ইতালির ফেডারেল পুলিশের নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তার স্ত্রী। নাটকটি এতটাই নন্দিত ও নিন্দিত হয়েছিল যে, নোবেল ভাষণে তিনি বিব্রতকর পরিস্থিতি উল্লেখ করতে ভোলেননি।  

বামপন্থী ফো ইতালির উপভাষা, বুলি ইত্যাদি ব্যবহার করে শ্রমজীবী তথা অনভিজাত জীবনের চিত্র অংকন করেছেন। ডানপন্থী রাজনীতির প্রতি তার ঘৃণা প্রকাশ পায় নানা বক্তব্যে। তিনি ২০০৬ সালে মেয়র পদে নির্বাচনে অংশ নেন। এসময় বার্লুসকোনির সহায়তা পাওয়া ‘অর্থলোভী জারজরা দশকের পর দশক ধরে এই শহর শাসন করে আসছে।’ বলে মন্তব্য করতেও ছিলেন দ্বিধাহীন। তিনি সমকালীন রাজনৈতিক প্রসঙ্গ এড়িয়ে চলা দূরে থাক বরং চাছাছোলা মন্তব্য করতে ছিলেন সিদ্ধহস্ত। আমেরিকায় ৯/১১-এর হামলার পর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমেরিকার অর্থনীতি প্রতিবছর দারিদ্র্যের অস্ত্রে কোটি মানুষকে হত্যা করে।

দারিও ফো ক্যারিয়ার সচেতন বা প্রচার-প্রতিষ্ঠা ও অর্থলোভী ছিলেন না, সেটা তার আত্মস্থ করা সহজই ছিল। ফলে অর্থভাব তার পিছু ছাড়েনি। দিবাস্বপ্নের মতো পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন নাটককে। একইসঙ্গে ছিলেন বুর্জোয়া থিয়েটারের বিরুদ্ধে। তার মননভূমি ছিলো বেকট প্রভাবিত। ২০১৬ সালের ১৩ অক্টোবর ৯০ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

প্রচ্ছদ দারিও ফো’র একটি কম আলোচিত মনোলগ রীতিতে রচিত নাটক The Tale of a Tiger—বা বাঘের কেচ্ছা। এই বাঘ আসলে কী বা কে? এই রূপকথার হেতুই বা কী? এইসব প্রশ্নের সূত্র ধরে নাটকের ভেতর-দরোজা খুলতে গেলে চীনা নেতা চিয়াং-কাই-শেক এসে বাস্তবজগতে হাজির হন। চিয়াং-কাই-শেকের সৈন্যরা, নাট্যকারের ভাষায় সাদা ডাকাতের দল ‘আমাদের’ দিকে গুলি ছুঁড়ছিলো। তাড়া খেয়ে ‘আমরা’ সাংহাই এসে পৌঁছানোর পর গিরিখাতের মাথায় চড়ে জান বাঁচাতে ব্যস্ত। নাটকের ‘আমি’ গুলিবিদ্ধ পায়ে গ্যাংগিনে আক্রান্ত হন। তার কমরেডরা তাকে বাঁশের সঙ্গে হাতপা বেঁধে বহন করতে শুরু করলেও, একইসঙ্গে যন্ত্রণা থেকে চিরমুক্তি দিতে তার খুলিতে গুলি করার উদ্যোগ নিলেও ‘আমি’ নিজেকে ঘটানার স্রেতে ছেড়ে দেন। তিনি কমরেডদের অনুরোধ করেন তার মাকে যেন বলা হয় তিনি বীরের মতো যুদ্ধ করে শহিদ হয়েছেন। এভাবে গ্যাংগিনে পচে মরেছেন তা যেন প্রকাশ না করে।

এই ঘটনার স্রোতের অন্ধকারে হাতরাতে হাতরাতে নাটকের ‘আমি’ বাঘের গুহায় প্রবেশ করেন এবং যেখানে একটি বাঘিনী বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করছে। বাঘিনী তার গ্যাংগিন চেটে তাকে সুস্থ করে তার স্তন্য পান করিয়ে বাঁচিয়ে রাখে। অপরদিকে তিনিও কিছুটা সুস্থ হবার পর বাঘের শিকার করে আনা মাংস মানুষের রেসিপিতে রান্না করে বাঘদের খাওয়ান। এমনই রূপকথা।

নাটকের ‘আমি’ সুস্থ হয়ে বাঘের গুহা ফেলে মানুষের সমাজে চলে যান, বা বলা যায় পালান। কিন্তু বাঘিনী তাকে নিস্তার দেয় না, সপরিবারে হাজির হন গ্রামে। গ্রামের মানুষ বাঘ দেখে ভীত হলেও ‘আমি’র সঙ্গে বাঘের পূর্বেকার সখ্য ও বন্ধুবাৎসল বাঘিনী হয়ে ওঠে গ্রামের মানুষের মতো। ধীরে ধীরে এই বাঘেরা হয়ে ওঠে নিরীহ মানুষের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের প্রতীক। বাঘ দেখে শত্রুসৈন্যরা এই গ্রামে নাকগলাতে আসে না। বাঘও তাদের হুঙ্কার দিয়ে ভয়ভীতি দেখাতে পারঙ্গম। বাঘের অনুপস্থিতিতে নাটকের ‘আমি’ও বাঘের পোশাক পরে বাঘের চরিত্রে অভিনয় করে শত্রুসৈন্য তাড়িয়ে দেয়।  

১৯৭৫ সালের জুনে তিনি সস্ত্রীক এবং থিয়েটার সংস্থার সদস্যদের সাথে চীন সফর করেন। সেসময় চীনে চলছে মাওয়ের লং মার্চ। একজন বিপ্লবী সৈন্যর আহত হওয়ার ঘটনা নিয়েই গড়ে ওঠে এই নাটক। যা কৌতুককর ও দিবাস্বপ্নে ঠাসা।

/জেডএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কেনাকাটার একাল-সেকাল
অনলাইন শপিংকেনাকাটার একাল-সেকাল
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ‘ইন্ডিয়া-আউট’ ক্যাম্পেইন: বাস্তবতা ও সম্ভাব্য ফলাফল
বিএনপির ‘ইন্ডিয়া-আউট’ ক্যাম্পেইন: বাস্তবতা ও সম্ভাব্য ফলাফল
নায়কের জন্মদিনে নায়িকারা...
নায়কের জন্মদিনে নায়িকারা...
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের