X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

চেতনা ঘায়েল করা সুবাস

আফসানা বেগম
২৭ মার্চ ২০২৪, ১৫:৫৪আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২৪, ১৬:২১

জীবনে যা ঘটে তা-ই সরাসরি সিনেমা হলের বড়ো পর্দায় দেখলে কতজন দর্শক সহ্য করতে পারবে? মানুষের জীবনের প্রাত্যহিক টুকরো ঘটনা যখন রাখঢাকবিহীন হুবহু উঠে আসে, তখন মানুষ হিসেবে মুখ লুকানোর জায়গা থাকে না। মার্ক টোয়েন যথাযথই বলেছেন, ‘সত্য কল্পকাহিনির চেয়ে ভয়ংকর’।

সত্য হয়ত এজন্যেই এতটা ভয়ংকর যে, তাকে টলানো যায় না। সত্য ধ্রুব। কল্পকাহিনির বরং বহুদিকে প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, বহুরকমের পরিণতিতে পৌঁছানোর থাকে। সত্য তার জায়গা থেকে কোনোদিকে যায় না। কাঙ্ক্ষিত দিকে নেয়ার জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত সত্যকে যতই সাজানো মিথ্যের মোড়কে মোড়ানো হোক, তা সত্যকে কেবল সাজানো রূপই দেয়, তার আদি অকৃত্রিম ভয়াবহতা এতটুকু লুকাতে পারে না। তবুও, শিল্পে তা লুকিয়ে শিল্পীর নিজের মতো করে উপস্থাপন করার প্রবণতা দেখা যায়। কারণ, শিল্পীও তো মানুষ! তার মানবিকতা সত্য উন্মোচনের ক্ষেত্রে অনেক সময় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু মানবিক দৃষ্টিকোণ কি অত্যাচারিতের পক্ষে মানুষকে সত্য ভাষণ দিতেও উদ্বুদ্ধ করে না? বুকের ভিতরের তাড়না থেকে শিল্পী যখন অত্যাচারিতের আর্তনাদ শিল্পে তুলে আনেন, তাকে কণ্ঠস্বর দেন যেন সে নির্যাতন থেকে উত্তরণের প্রচেষ্টা শুরু করতে পারে, তখন শিল্পীর সত্য উপস্থাপন ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। অত্যাচারিতের আর্তনাদ চার দেয়ালে গুমরে গুমরে পথ হারালেও শিল্পীর কল্পনা তাকে এড়াতে পারে না। হাল আমলে মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্র নুরুল আলম আতিকের পরিচালনায় পেয়ারার সুবাস ঠিক তেমনই এক নির্যাতিতের আর্তনাদ, যা চলচ্চিত্রকারের বুকের পাঁজর ভেঙে দিয়ে তার প্রতিধ্বনি দর্শকের বুকে অনুরণিত করেছে।

পেয়ারার সুবাসের দৃশ্যের পর দৃশ্য এক স্বচ্ছ দেয়ালের মতো যা দিয়ে কদর্যতা আড়াল করা যায় না। তাই দৃশ্যগুলো দেখতে গিয়ে দর্শকের মনে অস্বস্তি তৈরি হয়, চোখ বুজে কদাকার চিত্রবিন্যাসকে অবিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে। কিন্তু পর্দায় যা ঘটে দর্শক খুব ভালো করে জানেন, এটাই তার চারপাশে ঘটছে, এটাই ঘটে। কাকের মতো চোখ বুজে থাকলেই সমাজের অসুস্থতা থেকে তার মুক্তি ঘটবে না। ঠিক যেমনটা চোখ বুজে মুখ ফিরিয়ে রাখলেই প্রলয় বন্ধ থাকে না। তাই দর্শককে প্রলয়ের মধ্যে দিয়েই যেতে হয় আগাগোড়া। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারী নির্যাতন আর যৌন অবদমনের চূড়ান্ত রূপটা অদ্ভুত শিল্পময়তায় অথচ সরাসরি তখন তার সামনে ফোটে। সহ্য করতে যতই বুক ফাটুক, দর্শক চেয়ার ছাড়তে পারে না। দৃশ্যের পর দৃশ্যের টানে তাকে এগিয়ে চলতে হয় ডিসটোপিয়ার চূড়ান্ত পরিণতি দেখতে।

পেয়ারার সুবাস চলচ্চিত্রটি একরকমের নগ্নতা। মেকআপের তলে এর কোনো পোশাকি চেহারা নেই যা দেখতে বেশিরভাগ দর্শক থিয়েটারে যায়। আর যা দেখাতে কলাকুশলীরাও অভ্যস্ত থাকে। তাই এই চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট কলাকুশলী ও দর্শক—দুয়ের জন্যই চ্যালেঞ্জ। দেখা যাক, চ্যালেঞ্জে তারা কতটুকু উতরেছেন।

অন্ধকারাচ্ছন্ন এক বাড়িতে নতুন বিয়ে করা বউসহ টিনের গেটের সামনে এসে দাঁড়ায় মুন্সী। বউটা হয়ত আলো ঝলমল কোনো বাড়ি আশা করেছিল, তাই হতাশ হয়ে বলে, ‘এইডা কোথায় আনছেন আমারে?’ মুন্সী মধ্যবয়সে রূপসি তরুণী স্ত্রীসহ বাইরে দাঁড়িয়ে দরজায় ধাক্কা দেয়। ভিতর থেকে তখন বাড়ির অন্যরা নতুন বউকে শরবত আর আতশবাজি দিয়ে বরণ করার আয়োজনে ব্যস্ত...এই হলো প্রথম দৃশ্য। প্রথম দৃশ্যের মধ্যে দিয়েই বিবাহপরবর্তী কিছু ঘটনা দেখার জন্য দর্শক তৈরি হয়। কী হতে পারে, সুখ না অশান্তি?

মুন্সীর কফিন আর কাফনের ব্যবসা—বিদায় স্টোর; ঘরের মধ্যেও কফিন রাখা আর তার ভিতরে পোষা খরগোশ। নতুন বউটাকে কফিন দেখে ভয় পেতে দেখে দর্শকও হয়ত শিউরে ওঠে। অশান্তির আভাস পায়। কিন্তু তখনো জানা নেই কোনদিক দিয়ে অশান্তি ছুটে আসছে। বউটার ধ্যাবড়ানো কাজলে আর ঘামে বিরক্তি স্পষ্ট থাকে। মুখ দেখা না গেলেও, কেবল তার কণ্ঠ শোনা যায় যে, সে শুনেছিল সুগন্ধীর ব্যবসা আর স্বামী কি না করে মরার ব্যবসা। সে হয়ত সচ্ছল আর স্বাচ্ছন্দ্যের স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু বাড়িঘরের খাপছাড়া পরিস্থিতি তাকে প্রথমেই হতাশ করে। মজার ব্যাপার, যে সংসারের প্রতি তার শুরুতেই বৈরাগ্য আসে, ঠিক সেখানেই যখন প্রতিযোগিতার পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখন উলটো পুরোদমে সে গেঁড়ে বসতে চায়। মুহূর্তেই সংসারটা নিজের মুঠোয় নেয়াকে ন্যায্য কাজ বলে মনে হয় তার। আধিপত্যের নেশা কার নেই! ঘটনাটা ঘটে যখন প্রায় তারই সমবয়সি মুন্সির কন্যা এসে বারান্দায় দাঁড়ায় যেখানে মুন্সী বসে ছিল। কন্যা বাবার পুনর্বিবাহের কথা শুনেই জ্ঞান হারায়। দুই দরজার মিলে যাবার ব্যর্থ প্রচেষ্টার লম্বালম্বি সরু ফাঁক দিয়ে নতুন বউ পেয়ারা তার সমবয়সি সৎ কন্যাকে দেখে, দেখে তার জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়ার দৃশ্য। দেখে বাবাকে দখল করার প্রয়াস আর কন্যার দখল হারানোর বেদনা। আর দেখা মাত্রই নতুন মালকিন হিসেবে তার মধ্যে আধিপত্যের নেশা জেগে ওঠে। যে সংসারকে একটু আগে তার উড়িয়ে দিয়ে চলে যেতে ইচ্ছে করছিল, সেখানেই তখন মুখ ঝামটা আর ঔদ্ধত্য নিয়ে এগিয়ে আসে। বস্তুত এই যে আধিপত্যের নেশা, এটাই পেয়ারার সুবাসের পরতে পরতে লেগে আছে।

সুবাস কেন? এতকিছু থাকতে কেনইবা সুবাসের সঙ্গে সমস্তকিছু সম্পর্কিত এই চলচ্চিত্রে? সুবাস পেতে লাগে তীব্র এক ইন্দ্রিয়। এই চলচ্চিত্রের দৃশ্যগুলোতে লেগে আছে সুগন্ধ, আবার দুর্গন্ধও। গন্ধের সঙ্গে জীবনের কতকিছুর সম্পর্ক! গন্ধ যেমন বর্তমানকে বোঝায় আবার অতীতের স্মৃতি উস্কায় বা ভবিষ্যতের সম্ভাবনার ইঙ্গিত বহন করে। পেয়ারার সুবাস চলচ্চিত্রে নির্যাতনে ক্ষয়ে যাওয়া শরীর-মনকে আগরবাতির গন্ধে পুড়ে পুড়ে নিঃশেষ হওয়ার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। তাই বারবার এসেছে আগরবাতির ধোঁয়া কিংবা মোমের ক্ষয়ে যাওয়ার দৃশ্য। জীবনের কুৎসিত পরিণতি বোঝাতে পোকায় কিলবিল করা মৃত পশুর দেহ, কখনো স্থির, কখনো ভাসমান। চলচ্চিত্রটিতে প্রচুর তুলনামূলক ইঙ্গিতবাহী দৃশ্যের ব্যবহার আছে যা এক দৃশ্যের সঙ্গে আরেক দৃশ্যের যোগাযোগ স্থাপন করে। কিংবা দর্শককে দৃশ্যের সঙ্গে একাত্ম হতে সাহায্য করে। গন্ধ বা নির্বাক গন্ধের দৃশ্য দর্শককে আরো বেশি কাহিনির ভিতরে নিমগ্ন হতে সহায়তা করে। তাই পুরো চলচ্চিত্র জুড়ে গন্ধজনিত মেটাফোরের ব্যবহার চমকপ্রদ। বলতে গেলে নামের মধ্যে ‘সুবাস’ কথাটা থেকেই মেটাফোরের শুরু।

পেয়ারার আধিপত্য চর্চার প্রারম্ভে সে নিজেই স্বামীর আধিপত্যের নেশার শিকার হয়। মধ্যবয়স্ক স্বামী এতিম মেয়েটাকে টাকা দিয়ে কিনে আনে ভোগ করার জন্য। কিন্তু পেয়ারা বিক্রি হয়ে যাচ্ছে জেনেও সুখের বা স্বাচ্ছন্দ্যের সংসারের কল্পনা ছাড়তে পারে না। পরে তার হতাশা প্রকাশিত হয় স্বামীর প্রতি বিরক্তির মাধ্যমে। এতটাই বিরক্তি যে স্বামীর গায়ের ঘামের বা ময়লার গন্ধও সে সহ্য করতে পারে না। স্বামীর প্রিয় কাঁঠাল খাওয়ার ব্যাপারেও তার প্রবল আপত্তি। এইসব ছোটো ছোটো অপছন্দ-আপত্তির ছুঁতোয় সে স্বামীর থেকে দূরে সরে থাকে। হয়ত ভাবে সে না চাইলে তার গায়ে হাত দিতে পারবে না পুরুষটি। কিন্তু স্ত্রী পেয়ারার গন্ধের বিষয়ে ক্রমাগত আপত্তি স্বামীকে চূড়ান্তভাবে ক্রোধান্বিত করে। আর সেই ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটে ধর্ষণের মাধ্যমে। তখন তুমুল এক অস্বাভাবিক দৃশ্য দর্শকের সহনশীলতার মাত্রাকে আঘাত করে। জিইয়ে রাখা শিং মাছ ভাঙা হাড়ি থেকে বেরিয়ে ঘর জুড়ে লাফায়, নোংরা গন্ধময় এক পরিবেশ তৈরি করে তারই মধ্যে স্বামীটি ভয়ে লুকিয়ে থাকা পেয়ারাকে খাটের নীচ থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে এনে ধর্ষণ করে। আর এটাই শেষ নয়, এরপর বারংবার ধর্ষণের দৃশ্য আসে, তবে শরীর দেখিয়ে নয়, গন্ধ এবং কদর্যতার আবহ তৈরির মাধ্যমে। ভয়াবহ শরীরী অত্যাচারের দৃশ্য দর্শক হৃদয়াঙ্গম করে যাতে শরীর প্রদর্শন বাহুল্য। শব্দের আবহ আর মেটাফোরের ব্যবহার এভাবেই চলচ্চিত্রটিকে অন্যমাত্রা দিতে সক্ষম হয়।

আধিপত্যের চরম চর্চা প্রতিষ্ঠিত করতে পেয়ারাকে ঘরে তালাবদ্ধ রাখা হয়। জানালায় সেঁটে দেয়া হয় কাঠ যেন বাড়ির অন্যান্যদের সঙ্গে তার যোগাযোগ না হয় কিংবা অন্যরা ওই ঘরের ভিতরের অনাচার উঁকি দিয়ে দেখতে না পারে। এই জীবন চলতেই থাকে। পেয়ারা ঘরের মধ্যে মলমূত্রে মাখামাখি হয়ে পড়ে থাকে। সেখানেও গন্ধের উপস্থিতিই দর্শককে তার দুর্দশার কথা বলে। ফাঁকফোকর দিয়ে বাইরের পৃথিবী দেখা ছাড়া তার জীবনে না থাকে কোনো কাজ, না কোনো বিনোদন। আর সেভাবেই একদিন ফোকর দিয়ে চোখ পড়ে তার পুরোনো প্রেমিক অথবা সুহৃদের আগমন—মুন্সীর কফিনের ব্যবসার নতুন কাঠের মিস্ত্রি হিসেবে।

নতুন মিস্ত্রির আগমনও মেটাফোরের মধ্যেই ঘটতে দেখা যায়। তার ঘাড়ে আর হাতে থাকে কবুতর। কবুতরকে আকাশে উড়িয়ে অশান্তি আর অস্বস্তির সংসারে যেন শান্তির পতাকা উড়িয়ে নতুন মিস্ত্রির আবির্ভাব ঘটে। ওদিকে তার পদার্পণে জীবনের আশা ছেড়ে অন্ধকার গহ্বরে ডুবতে থাকা পেয়ারা নতুন করে বাঁচার উদ্যোম খুঁজে পায়। হতাশার অতল থেকে নিজেকে টেনে তুলে কৌশল করে বেঁচে থাকার চেষ্টায় মনোনিবেশ করে। নির্যাতনের ভয়াবহতা থেকে পেয়ারা নিজেই নিজের জন্য মুক্তি ঘোষণা করে নানান কায়দায় যা কিনা কেবল তাকেই মুক্তি দেয় না, তার স্বামী মুন্সীকেও ফেলে কঠিন বিপদে। নিজের উপরে ঘটা নির্যাতনের প্রতিশোধ পেয়ারা এভাবেই নেয় যা নির্যাতিতের ক্ষেত্রে উত্তরণের আভাস।

অত্যাচারিত যে চিরকাল অত্যাচারের মধ্যে পতিত থাকবে না, চলচ্চিত্রে এই মৌলিক বিষয়টি স্পষ্টভাবে এসেছে। হাতের কাছে যে অস্ত্র আছে তাই দিয়েই নিজেকে বাঁচানোর আকাঙ্ক্ষা এবং প্রতিরোধের সাহস হিসেবে পেয়ারার আবিষ্কৃত অদ্ভুত এক কৌশল সে ক্ষেত্রে অতুলনীয়। নতুন মিস্ত্রির হাতে থাকা সাদা পায়রা যেন পেয়ারাকে ক্রমাগত মুক্তির লোভ দেখায়। আর তারপর মুক্তির আকাঙ্ক্ষার পথ ধরে কদর্য জীবন থেকে নিষ্ঠুরতার মধ্যে দিয়েই মুক্তি পেতে হয় দুজনকে।

পেয়ারার সুবাস চলচ্চিত্রের কাহিনির মূল বিষয় যে এই সমাজে বাস করেও কারো কাছে একেবারে নতুন মনে হবে, তা নয়। চিরকালের ধারায় নারী নির্যাতন, যৌন অবদমন ও আধিপত্যের লড়াই—এ তো চিরাচরিত বিষয়। কিন্তু পেয়ারার সুবাসে যা আনকোরা তা হলো এর নির্মাণ ও উপস্থাপন। আমাদেরও শোভন চালচলনের মাঝখানে জীবনের ভিতরকার বীভৎস চেহারা অবিকৃতভাবে তুলে আনার জন্য পরিচালক আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। আর এই বীভৎসতাই চলচ্চিত্রটির চালিকা শক্তি। মূল চরিত্রগুলো তো বটেই, পাশাপাশি মুন্সির কন্যা, কাঠমিস্ত্রি, বাসার কাজের জন্য নির্ধারিত নারী, এ ছাড়া বাড়িতে আশ্রিত আরো কয়েকজন—প্রত্যেকের চরিত্রে সাধারণ বিষয় ছিল, অভাব ও সুযোগের সন্ধান। চলচ্চিত্রটিতে অভিনয়ে অংশগ্রহণকারীরা পরিচালকের সদিচ্ছাকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছেন। তাই আয়োজনটিকে একটি সফল দলীয় প্রয়াস বলা যায়। তারিক আনামের মতো শক্তিশালী অভিনেতাকে মূল চরিত্রে দেখা গেছে। জয়া আহসান তার গ্ল্যামারাস ভাবমূর্তির বাইরে গিয়ে চরিত্রের সঙ্গে মিশেছেন। আহমেদ রুবেল স্বভাবসুলভ অকৃত্রিম অভিনয় উপহার দিয়েছেন। অন্য প্রত্যেকের চরিত্রেরই বিশেষত্ব ছিল যা তারা অভিনয়ের গুণেই বিশেষ করে তুলেছেন। তবে মুন্সির কন্যার ভূমিকায় সুষমা সরকারের চালচলন, শরীরী ভাষা আর ডায়ালগের থ্রো ছিল অসাধারণ। চরিত্রের সঙ্গে মিশে যাওয়া হয়ত একেই বলে।

চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় বা কাহিনি ছাপিয়ে মেটাফোরের ব্যবহার নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা চলতে পারে। চারদিকে শুধু পানি আর পানি—এরকম দমবন্ধ হওয়া পরিবেশের সঙ্গে মানুষের জীবনের বন্দিত্বের তুলনা দর্শকের মনে অদ্ভুত প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। ধীর গতির জীবন যেন কচ্ছপ বা শামুকের চলন। ধোঁয়ার ঊর্ধ্বগতি মানুষের একটাই জীবনকে পুড়িয়ে উবে দেয়ার নামান্তর। বস্তুত আমাদের সমাজে উচ্চবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত, শিক্ষিত এবং অল্প শিক্ষিত—প্রত্যেক পটভূমিতেই এরকম কাহিনির উদ্ভব হওয়া সম্ভব। কারণ একই নির্যাতন, একই বন্দিত্ব এই সমাজের প্রতিটি স্তরে বিরাজমান। স্তরবিশেষে বন্দিত্ব বা অত্যাচারের ধরন আলাদা কেবল। তাই ধারণা করি, পেয়ারার সুবাস নারীর উপরে অত্যাচারের বিরুদ্ধে যেমন একটি সরব প্রতিবাদ, তেমনি ভিন্ন স্তরের ভিন্ন পরিস্থিতির নারীর উপরে অবিচার-অনাচারের কাহিনিও ভবিষ্যতে চলচ্চিত্রকার বা শিল্পীর হাতে উঠে আসবে—সমাজ সচেতনতায় যা হবে গুরুত্বপূর্ণ অবলম্বন। একটি শিল্প যখন অন্য শিল্প-সৃষ্টির অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে, তাকেই প্রকৃত শিল্প বলা যেতে পারে। বস্তুত পেয়ারার সুবাস ঠিক তাই।

/জেড-এস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
একসঙ্গে এই অভিনেতারা...
একসঙ্গে এই অভিনেতারা...
প্যারিস অলিম্পিকে ফিলিস্তিনি অ্যাথটলেটদের আমন্ত্রণ জানাবে আইওসি
প্যারিস অলিম্পিকে ফিলিস্তিনি অ্যাথটলেটদের আমন্ত্রণ জানাবে আইওসি
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
ঘামে ভেজা চুলের যত্নে কী করবেন
ঘামে ভেজা চুলের যত্নে কী করবেন
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই